কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের অনুমোদন প্রত্যাহার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) তাদের ওই অনুমোদন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়৷
এফডিএ গত মার্চে করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় হাসপাতালে জরুরি প্রয়োজনে ম্যালেরিয়ার দুই ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবং ক্লোরোকুইন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল৷ দেশটির প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও এই ওষুধের পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালান৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের প্রাণঘাতী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সর্তক করলেও ট্রাম্পতা কানে না তুলে উল্টো বলেন, গত মে মাসে হোয়াইট হাউজের দুই কর্মীর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের পর প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে তিনি নিজে দুই সপ্তাহ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সেবন করেছেন এবং তার শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি৷
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রে এই দুই ওষুধের ব্যবহারও বেড়ে গিয়েছিল৷
কিন্তু এখন এফডিএ বলেছে, নানা পরীক্ষায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহারে কোভিড রোগীদের কোনো উন্নতি না হওয়ার অনেক প্রমাণ তারা পেয়েছেন৷ বরং এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগীর জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যায়৷
এই সময়ের দুনিয়াদারি
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কমছে, ফলে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে৷ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে৷ এর মধ্যে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ সমাবেশ চলছে বিভিন্ন রাজ্যে৷
ছবি: Reuters/R. Chiu
বর্ণবিদ্বেষবিরোধী আন্দোলন
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত (১৫ জুন) ২১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত৷ মারা গেছে এক লাখ ১৮ হাজার৷ কিন্তু এরপরও কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে৷ এর মধ্যে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনায় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন চলছে রাজ্যে রাজ্যে৷
ছবি: Reuters/S. Keith
ব্রুকলিনে এলজিবিটির সমাবেশ
নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে ১৪ জুন সমাবেশ করেছিলেন এলজিবিটি মানে সমকামী, উভকামী ও ট্রান্সজেন্ডারেরা৷ তাদের শ্লোগান ছিলো ‘ব্ল্যাক ট্রান্স লাইভস ম্যাটার’৷ কোনো কালো মানুষই যাতে বর্ণবিদ্বেষের শিকার না হয় সেজন্য এই প্রতিবাদ সমাবেশ৷
ছবি: Reuters/S. Keith
লস অ্যাঞ্জেলেসে মার্চ
ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে এলজিবিটি গোষ্ঠী ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ মার্চের আয়োজন করে৷ যেখানে অংশ নেয় হাজারো মানুষ৷ যথারীতি এখানে সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই৷
ছবি: Reuters/R. Chiu
মাস্কের বালাই নেই
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির কাছে ইস্ট ভিলেজ এলাকায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর প্রথমবারের মত ‘বার’ খুলেছে৷ আর খোলার সাথে সাথে গলা ভেজাতে সেখানে ছুটেছেন অনেক মানুষ৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বা মাস্কের কোন তোয়াক্কা করছেন না কেউ৷
ছবি: Reuters/J. Moon
গোসল করতে সাবধানতা
তুরস্কের ইস্তান্বুলে ঐতিহাসিক সেমবেরলিটাস হাম্মামে টার্কিশ বাথ নিচ্ছেন এক ব্যক্তি৷ আশপাশে আর কেউ না থাকলেও মাস্ক পরে শুয়ে আছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. Sezer
নেই সামাজিক দূরত্ব
লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রিটে নাইকি টাউন খোলার পর এভাবেই হুড়োহুড়ি করে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন ক্রেতারা৷
ছবি: Reuters/M. Childs
গণপরিবহণ
মেক্সিকোতেও গণপরিবহণ এবং গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে তুলে নেয়া হয়েছে কড়াকড়ি৷ সাবওয়ে স্টেশনে মাস্ক পরে চলাফেরা করছে সবাই৷
ছবি: Reuters/H. Romero
চিড়িয়াখানা
ব্রিটেনে চেস্টার চিড়িয়াখানা খোলার পর শিশুদের নিয়ে সেখানে গেছেন অনেক বাবা-মা৷ কিন্তু কারো মুখেই নেই মাস্ক৷
ছবি: Reuters/P. Noble
ফিজিওথেরাপিতে পিপিই
ব্রিটিনের নর্থউইচে ফিজিওথেরাপিস্টরা করোনার পরে আবারও তাদের কাজ শুরু করেছেন৷ রোগী এবং থেরাপিস্ট দু’জনেই পিপিই পোশাক পরেছেন থেরাপির সময়৷
ছবি: Reuters/M. Darlington
স্কুলে প্রতিরক্ষা
জর্ডানে শিথিল করা হয়েছে কড়াকড়ি৷ স্কুল খুলেছে৷ শিক্ষকরা প্রতিরোধক স্যুট ও মাস্ক পড়ে ক্লাস নিচ্ছেন৷
ছবি: Reuters/M. Hamed
খুলেছে ক্যাসিনো
নেভাদা’র লাস ভেগাসে ১৬ মার্চ থেকে ক্যাসিনো হোটেল সব বন্ধ ছিলো৷ ১২ জুন সব খোলার পর ক্যাসিনোতে আসতে শুরু করেছেন অনেকে৷ তবে সামাজিক দূরত্ব মেনে তারা জুয়া খেলছেন৷
ছবি: Reuters/S. Marcus
নতুন নিয়ম
ইসরায়েলের তেল আভিভে নতুন কিছু নিয়ম জারি করে গত মাসে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে৷ ছবিতে একদল মানুষ নির্বাক ডিস্কোতে অংশ নিচ্ছে৷ এর মাঝ দিয়ে কুকুর নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
তাপমাত্রা পরিমাপ
ব্রাজিলের সাও পাওলোতে জনপ্রিয় একটি শপিং মলে ঢোকার আগে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে৷ কারণ প্রত্যেকের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে৷ গত সপ্তাহে ব্রাজিলে কোয়ারান্টিনের পর প্রথম দোকান-পাট খুলেছে৷
ছবি: Reuters/A. Perobelli
জীবানুনাশকের ব্যবহার
জর্ডানের আম্মানে চলতি সপ্তাহে কড়াকড়ি তুলে নেয়ার পর রেস্তোরাঁ খুলেছে৷ তবে সব জায়গায় ছিটানো হচ্ছে জীবানুনাশক৷
ছবি: Reuters/M. Hamed
14 ছবি1 | 14
হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহারে হৃদযন্ত্রের গতি দ্রুত এবং অনিয়মিত হয়ে পড়ে৷ ফলে যারা আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে ভুগছেন তাদের প্রাণহানি হতে পারে৷
এ বিষয়ে এফডিএ বলে, অন্যরোগের চিকিৎসায় কয়েক দশক ধরে ব্যবহৃত এ ওষুধের কার্যকর প্রভাব কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে প্রমাণিত নয়৷
‘‘যে ওষুধের কার্যকারিতা এখনও প্রমাণিত নয় কিন্তু ঝুঁকি নিশ্চিত৷ আমরা জেনে-বুঝে সেটা ব্যবহার করতে পারি না৷’’
এডিএ-র এ সিদ্ধান্তের অর্থ, করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের আমদানি করা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বিতরণ বন্ধ থাকবে৷
অথচ যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরপরই ট্রাম্প এ ওষুধের পক্ষে জোর প্রচার চালান৷ এমনকি তিনি চাপ দিয়ে ভারত থেকে ওষুধ আমদানির ব্যবস্থাও করেন৷ ট্রাম্প প্রশাসনের দেখাদেখি অন্যান্য দেশও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার শুরু করে৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও প্রথমে এ ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়৷
অনুমোদন প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে সংস্থাটি মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের কথা উল্লেখ করে৷ ওই গবেষণায় দাবি করা হয়, ওষুধটি কিছু রোগীর হৃদরোগের সমস্যা ও মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে৷
কিন্তু পরে উপাত্তে গুরুতর ত্রুটি আছে বলে ল্যানসেট গবেষণাপত্রটি প্রত্যাহার করে নিলে ডাব্লিউএইচও আবার পরীক্ষা শুরুর অনুমতি দেয়৷