আর ডিজেল নয়, এ বার হাইড্রোজেনে চলবে ট্রেন। বাঁচবে পরিবেশ। ২০২৪ সালে এই ধরনের ট্রেনের ট্রায়াল রান হবে।
বিজ্ঞাপন
হাত মিলিয়েছে ডয়চে বান ও সিমেন্স মবিলিটি। জার্মানির এই দুই সংস্থা মিলে তৈরি করছে হাইড্রোজেন চালিত ফুয়েল সেল ট্রেন এবং একটি ফিলিং স্টেশন। জার্মানিতে ডিজেল ট্রেন ইঞ্জিনকে বিদায় জানিয়ে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে নতুন ইঞ্জিন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এই প্রযুক্তিতে ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে। আর ডয়চে বানের হিসাব, বছরে ৩৩০ টন কার্বন ডাই অক্সাইড দূষণের হাত থেকে বাঁচা যাবে। ফলে পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা নিতে পারে এই নতুন প্রযুক্তি।
জার্মানির সরকারি রেল কোম্পানি ডয়চে বান ও সিমেন্স মবিলিটি মিলে তৈরি করছে এই হাইড্রোজেন ট্রেন সেট। হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হবে বিদ্যুৎ, যা দিয়ে ট্রেন চলবে। এর বাই প্রোডাক্ট হবে জল। তিন বছরের মধ্যে এই ট্রেনের ট্রায়াল রান হবে। তার জন্য ডয়চে বান তাদের একটি মেইনটেনেন্স শপকে হাইড্রোজেন গ্যাস স্টেশনে রূপান্তরিত করছে।
মানবজাতির অবলুপ্তির আশঙ্কায় সোচ্চার যারা
যুক্তরাজ্যের ‘এক্সটিংকশন রেবেলিয়ন’ অ্যাক্টিভিস্টরা আবার পথে নামলেন৷ লকডাউনের পরেই এই পরিবেশপ্রেমী মঞ্চের অভিনব বিক্ষোভ কেমন ছিল, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/T. Melville
এক্সটিংকশন রেবেলিয়ন কী?
২০১৮ সালের অক্টোবরে শতাধিক সমাজকর্মী, অধ্যাপক ও অন্যান্য পেশাজীবীদের তৎপরতায় লন্ডনে যাত্রা শুরু করে ‘এক্সটিংকশন রেবেলিয়ন’ বা ‘এক্স আর’৷ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি ঠেকাতে অবিলম্বে যুক্তরাজ্য সরকারকে কঠোর কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে, এই দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করে তারা৷ অভিনব পদ্ধতিতে আন্দোলন ও প্রতিবাদের নিত্যনতুন ধারার কারণে প্রতি বছরই শিরোনামে উঠে আসে তাদের কাজ৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
২০১৯ সালের আন্তর্জাতিক কর্মসূচি
‘ইন্টারন্যাশনাল রেবেলিয়ন’ নামের দুই সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে এক্স আর বিশ্বের ৬০টি শহরে তাদের বার্তা ছড়াতে সক্ষম হয়৷ লন্ডনেই তাদের প্রতিবাদ বিক্ষোভে যোগ দেন ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ ব্যতিক্রমী দেওয়াল-লিখন, রঙবেরঙের পোশাক ও স্লোগানে ভরে ওঠে লন্ডন, নিউইয়র্ক, তেল আবিব, ইস্তাম্বুল, আমস্টারডাম, মেক্সিকোসহ আরো অনেক শহর৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
করোনার ২০২০: এবার যা হলো
২০২০ সালে করোনা সংকটের কারণে যুক্তরাজ্যে জনজীবন এতদিন ছিল স্তব্ধ৷ লকডাউন উঠতেই পথে নামলেন এক্স আর-কর্মীরা৷ পরিবেশের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যম, সমাজ ও গণতন্ত্রও উন্মুক্ত নয়, এমন বার্তা নিয়ে পথে নামেন তারা৷ ‘দ্য সান’, ‘দ্য টাইমস’, ‘দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ’ ও অন্যান্য সংবাদসংস্থার অফিসের বাইরে ধর্ণায় বসেন তারা৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
সারা বিশ্বে ‘এক্স আর’
যুক্তরাজ্যের বাইরেও হয়েছে একই ধাঁচের প্রতিবাদ৷ ২০১৯ সালের ইন্টারন্যাশনাল রেবেলিয়নের দিনগুলি ছাড়াও এই ধরনের কর্মসূচি দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, সিডনি, অ্যাডিলেড ও ব্রিসবেনে৷ এছাড়া জার্মানির বার্লিন, মিউনিখ, হাইডেলবার্গ, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস, লাউজান, স্পেনের মাদ্রিদ, সুইডেনের কোপেনহাগেন, নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতেও নানা ধরনের প্রতিবাদ দেখা যায়৷
ছবি: Imago Images/AAP/J. Carrett
জেল ভরায় বিশ্বাসী
নিজেদের আদর্শের কথা কর্তৃপক্ষের কানে তুলতে দলে দলে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যেতে প্রস্তুত এক্স আর-কর্মীরা৷ এ বছর শুধু লন্ডনেই গ্রেপ্তার হয়েছেন ৭২জন এক্স আর-কর্মী৷ এক্স আরের ওয়েবসাইট বলছে, এই পন্থার অনুপ্রেরণা তারা পেয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল রাইটস আন্দোলন, অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভোটাধিকার আন্দোলন, পোলিশ ও পূর্ব-জার্মান গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
সোশাল মিডিয়ায় ‘এক্স আর’
‘দ্য অবজার্ভার’ পত্রিকার একটি প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯ সালের ইন্টারন্যাশনাল রেবেলিয়নের সময় ৭০ হাজারেরও বেশি বার অনলাইনে উঠে এসেছে এই মঞ্চের কথা৷ এর মধ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশই ছিল যুক্তরাজ্যে৷ ১৫ শতাংশ জার্মানি থেকে, ১৫ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ায় ও ১২ শতাংশ অ্যামেরিকা থেকে৷ বিভিন্ন সোশাল মিডিয়াতেও এক্স আরের উজ্জ্বল উপস্থিতি রয়েছে৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
জনগণের প্রতিক্রিয়া
২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় লন্ডনের কিছু অঞ্চলের বাসিন্দাদের মতামত নেওয়া হয়৷ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ জানান, তারা এক্স আরের কর্মসূচি সমর্থন করেন৷ শুধু তাই নয়, এরপর আরেকটি বড় আকারের সমীক্ষায় সেই একই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ শতাংশতে৷
ছবি: Reuters/H. Nicholls
বিখ্যাত এক্স আর সমর্থক
ব্রিটিশ অভিনেত্রী এমা টমসন, পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবের্গ, মহাকাশবিজ্ঞানী জেমস হানসেন ও সমাজতাত্ত্বিক নোয়াম চমস্কির মতো ব্যক্তিত্বরা ইতিমধ্যেই তাদের এক্স আর-সমর্থনের কথা বলেছেন৷ এছাড়াও, ২০১৯ সালের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকজন অধ্যাপক, ডাক্তার, বিজ্ঞানী ও সংস্কৃতিকর্মী৷
ছবি: picture-alliance/PA Wire/K. O'Connor
8 ছবি1 | 8
ডয়চে বানের বোর্ড সদস্য সাবিন জাসকি বলেছেন, ''এই ট্রেন হবে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব।'' আর সাধরণ ব্যাটারিকে রিচার্জ করেই ট্রেন চলানো সম্ভব হবে। জার্মানিতে প্রায় ৪০ শতাংশ ট্রেন ডিজেলে চলে। কিন্তু ২০৫০ সালের মধ্যে বা সম্ভব হলে তার আগে রেল কোম্পানি কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করতে দায়বদ্ধ। জাসকি বলেছেন, ''আমরা আর পেট্রোল-জাত জ্বালানি ব্যবহার করব ন। সে জন্যই আমরা ঠিক করেছি, ডিজেলে কোনো ট্রেন চলবে না।''
ডয়চে বান চাইছে, ২০৩৮ সালের মধ্যে পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে চলে যেতে। কারণ, ওই সময়ের মধ্যে দেশে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেয়া হবে।
সরকারও হাইড্রোজেন ভিত্তিক জ্বালানি তৈরির জন্য ৯০০ কোটি ইউরো দিচ্ছে। এখন অবশ্য গ্যাস ও কয়লা থেকেই হাইড্রোজেন নেয়া হয়। কিন্তু আগামী দিনে পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেনের দাম অনেকটাই কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। তখন পরিবহন ও অন্য ক্ষেত্রে পেট্রোল, ডিজেল বা পেট্রোল-জাত পদার্থের ব্যবহারও অনেক কমবে।