হাইতিতে যখন একদিকে ভোটের আগে অন্তর্বর্তী কাউন্সিল গঠন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, অন্যদিকে গ্যাং-ওয়ার বাড়ছে।
বিজ্ঞাপন
গত ফেব্রুয়ারি থেকে হাইতিতে অপরাধী গোষ্ঠীগুলির তাণ্ডব চলছে। তারা জেল ভেঙে কয়েক হাজার অপরাধীকে মুক্তি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী হেনরি পদত্যাগ করতে রাজি হয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়টি ঠিক হলেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইস্তফা দেবেন। কিন্তু এই বিষয়ে আলোচনা খুবই ধীর গতিতে চলছে। অ্যামেরিকা ও অন্য দেশগুলি চাপ দিয়েও কিছু করতে পারছে না।
জাতিসংঘে গায়ানার রাষ্ট্রদূত ক্যারোলিন রডরিগেস-বিরকেট বলেছেন, ''আমি নিশ্চিত, আর কিছুদিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। যা ইঙ্গিত এসেছে, তাতে মনে হয়, সবকিছু ঠিক দিকেই এগোচ্ছে।''
সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি: যুক্তরাষ্ট্র
অ্যামেরিকা তাদের নাগরিকদের বিমানে করে নিরাপদে প্রতিবেশী দেশ ডমিনিকান রিপাবলিকে নিয়ে গেছে। সেখান থেকে তাদের ফ্লোরিডাতে নিয়ে আসা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি জানিয়েছেন, মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
হাইতিতে জেল ভাঙল হাজার হাজার বন্দি
দেশের প্রধানমন্ত্রীকে গোপন নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাজধানীতে ব্যাপক উত্তেজনা। শুরু অপরাধী গোষ্ঠীগুলির সংঘর্ষ।
ছবি: Ralph Tedy Erol/REUTERS
হাইতিতে জেল ভেঙেছে বন্দিরা
হাইতির প্রধান জেলে রোববার আক্রমণ চালায় একটি গ্যাংয়ের সদস্যরা। ওই জেলে অন্তত তিন হাজার ৬৮৭ জন বন্দি ছিল বলে মানবাধিকার সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে। এখন জেলে আছে শখানেক বন্দি। বাকিরা পালিয়েছে।
ছবি: Odelyn Joseph/AP/picture alliance
তিনজনের মৃত্যু
হামলাকারীরা জেলে আক্রমণ চালানোর পর পরাস্ত হয় জেলের গার্ড এবং পুলিশ। সংঘর্ষে অন্তত তিনজন বন্দির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ছবি: Odelyn Joseph/AP/picture alliance
প্রতক্ষ্যদর্শীদের বয়ান
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জেলের ভিতর এবং বাইরে রীতিমতো যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়েছিল। ঘটনার পর দেখা যায়, জেলের সদর দরজা খোলা। বাইরে ভিড় জমান বন্দিদের আত্মীয়রা।
ছবি: Ralph Tedy Erol/REUTERS
ঘটনার দায় স্বীকার
ঘটনার পর দায় স্বীকার করেছেন হাইতির একটি শক্তিশালী গ্যাংয়ের প্রধান জিমি চেরিজিয়ার। এর আগে পুলিশ অফিসার ছিলেন তিনি। জিমি জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রীকে উৎখাত করা।
ছবি: Ralph Tedy Erol/REUTERS
প্রধানমন্ত্রীর ভবনের সামনে আগুন
রাজাধানীর রাস্তাজুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে বিভিন্ন এলাকায়। প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনেও বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। সম্প্রতি গ্যাংয়ের লড়াই বন্ধের জন্য কেনিয়ার সাহায্য চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হেনরি। সেখান থেকে ফেরার সময়েই এই ঘটনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রীকে গোপন জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ছবি: Ralph Tedy Erol/REUTERS
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
হাইতি সরকারের তরফে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ওই জেলে হত্যাকারী, ধর্ষণকারীদের মতো অপরাধীদের রাখা হয়েছিল। তাদের অধিকাংশই পালিয়েছে। ১৮ জন কলম্বিয়ার সেনা এখনো জেলে আছেন। ২০২১ সালে হাইতির প্রেসিডেন্টকে হত্যার অপরাধে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
ছবি: Andrew Kasuku/AP Photo/picture alliance
হেনরি যা বলেছিলেন
প্রধানমন্ত্রী হেনরি ২০২১ সালে প্রেসিডেন্টের হত্যার পর ক্ষমতা দখল করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছিলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত সে পথে তিনি হাটেননি।
ছবি: Odelyn Joseph/AP Photo/picture alliance
হাইতির পরিস্থিতি
গ্যাংয়ের লড়াইয়ে জর্জরিত হাইতি। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। কেনিয়ার কাছ থেকে এর আগেও সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করেছে হাইতির সরকার, কিন্তু লাভ হয়নি। জাতিসংঘের নিরাপত্তারক্ষীরাও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সমর্থ হচ্ছে না।
ছবি: Ralph Tedy Erol/REUTERS
8 ছবি1 | 8
মার্কিন সেনা জেনারেল লরা রিচার্ডসন বলেছেন, ''যাই হোক না কেন, সেনা প্রস্তুত আছে।''
সহিংসতা ছড়াচ্ছে
মঙ্গলবার রাজধানী শহরের আশপাশের এলাকাতেও সহিংসতা ছড়িয়েছে। এখানেই সব বিলাসবহুল হোটেল ও রেস্তোরাঁ আছে। গত সপ্তাহেই একজন গ্যা-লিডার হুমকি দিয়ে বলেছে, এবার রাজনীতিকদের টার্গেট করা হবে।
স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, অপরাধী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে গুলির লড়াই চলছে। বিভিন্ন রাস্তায় এই লড়াই হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত ১৫ জন মারা গেছেন।
একজন হকার বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, তিনি রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে জিনিস বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন পুরো এলাকা জুড়ে লড়াই হচ্ছে। ফলে তিনি কিছুই বিক্রি করতে পারছেন না। ক্রেতারাও ভয়ে রাস্তায় নামছেন না।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের হুঁশিয়ারি
সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে হাইতিতে লাখ লাখ মানুষ ঘর ছেড়েছেন। প্রচুর মানুষ মারা গেছেন। অনেক নারী ধর্ষিতা হয়েছেন। অনেককে অপহরণ করা হয়েছে। খাবারের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। অক্সিজেন ও রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম জানিয়েছে, এই অবস্থা চলতে থাকলে অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষ অবশ্যম্ভাবী। রাজধানী শহরে তারা খাবার বিতরণ করতে পারছেন না। কারণ, অধিকাংশ রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
হাইতিতে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা সর্বশক্তি দিয়ে মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা চাই ও সব জায়গায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিতে হবে।