হলিউডের এই দুই দম্পতি একে অপরের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন। মার্কিন আদালত জনি ডেপের পক্ষে রায় দিয়েছে।
ছবি: Victoria Jones/Kirsty O'connor/dpa/PA Wire/picture alliance
বিজ্ঞাপন
অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ডকে দিতে হবে ১০ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। সাবেক স্বামী জনি ডেপকে এই অর্থ তুলে দিতে হবে স্ত্রী হার্ডকে। তবে পাইরেটস অফ ক্যারিবিয়ানের অভিনেতাকেও স্ত্রীকে সামান্য কিছু অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
মাত্র দুইবছর বিয়ে হয়েছিল হলিউডের দুই তারকা অভিনেতার। অ্যাম্বার হার্ডের সঙ্গে জনি ডেপের বিয়ে ছিল খানিক রূপকথার মতোই। কিন্তু দুই বছরের মধ্যে সেই বিয়ে ভেঙে যেতে বসে। এরইমধ্যে ওয়াশিংটন পোস্টে একটি জ্বালাময়ী পোস্ট এডিটোরিয়াল নিবন্ধ লেখেন অ্যাম্বার। সেখানে জনি ডেপের বিরুদ্ধে একাধিকবার শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ করেন অ্যাম্বার। ওই লেখার বিরুদ্ধে অ্যাম্বারকে উকিলের চিঠি পাঠান ডেপ। একইসঙ্গে অ্যাম্বারের বিরুদ্ধে ৫০ মিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা করেন তিনি। পাল্টা ডেপের বিরুদ্ধে ১০০ মিলিয়ন ডলারের মানহানির মামলা করেন অ্যাম্বার।
সাবেক স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলায় জনি ডেপ
চার বছর আগে ছিলেন স্বামী-স্ত্রী, তবে হলিউড তারকা জনি ডেপ আর অ্যাম্বার হার্ড এখন আদালতে পরস্পরের মুখোমুখি৷ স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন ডেপ৷ কে জেতেন তা দেখার অপেক্ষায় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ...
ছবি: Jim Lo Scalzo/REUTERS
মামলার কারণ
বিচ্ছেদের এক বছর পর, অর্থাৎ ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টে একটা লেখা লিখেছিলেন অ্যাম্বার হার্ড৷ মতামতধর্মী সেই লেখায় অসুখী দাম্পত্য জীবনের নানা কথা তুলে ধরেন ‘অল দ্য বয়েজ লাভ ম্যান্ডি লেন’ ছবির মাধ্যমে প্রথম দর্শকমনে স্থান করে নেয়া অ্যাম্বার৷জনি ডেপের দাবি ওই লেখার মাধ্যমে তার সাবেক স্ত্রী তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছেন এবং তাতে তার মানহানি হয়েছে৷ ওপরের ছবিতে অ্যাম্বার হার্ড৷
ছবি: Jim Watson/REUTERS
অ্যাম্বারের অভিযোগ
ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত লেখায় ২৩ বছরের বড় সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিলেন অ্যাম্বার হার্ড৷ ওপরের ছবিতে ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফেক্স-এ ফেয়ারফেক্স কাউন্টি সার্কিট কোর্টহাউসে মামলার শুনানিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে তাকে৷
ছবি: Evelyn Hockstein/AP/picture alliance
সব অভিযোগ মিথ্যা?
মামলার বিবরণে জনি ডেপ দাবি করেন, তিন বছরের (২০১৫ থেকে ২০১৭) যৌথ জীবনে তিনি কখনোই অ্যাম্বারের গায়ে হাত তোলেননি বা তার ওপর যৌন নির্যাতন চালাননি৷ ছবিতে ফেয়ারফেক্স কাউন্টি সার্কিট কোর্টহাউসে নিজের উকিলের সঙ্গে কথা বলছেন অ্যাম্বার, দূর থেকে তাকে দেখছেন জনি ডেপ৷
ছবি: Jim Lo Scalzo/REUTERS
জনি ডেপের মেসেজ
তবে অ্যাম্বার হার্ডকে পেটানো বা তার ওপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করলেও পুরোনো কিছু টেক্সট মেসেজ তুলে আনায় বিব্রত হতে হয় জনি ডেপকে৷ অ্যাম্বারকে পাঠানো মেসেজগুলো যে তার তা স্বীকার করে ৫৯ বছর বয়সি অভিনেতা বলেন, সেই বার্তাগুলো পাঠিয়েছিলেন খুব কষ্টের সময় এবং সেগুলোর জন্য তিনি লজ্জিত৷ ছবিতে নিজের উকিলকে অ্যাম্বার হার্ডের আলিঙ্গন৷
ছবি: Steve Helber/REUTERS
জনি ডেপের পাল্টা অভিযোগ
মামলার শুনানিতে ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’-খ্যাত জনি ডেপ দাবি করেন, তিনি কখনো কোনো রকমের নির্যাতন না চালালেও অনেকবার তর্কাতর্কির সময় সাবেক স্ত্রী অ্যাম্বার তার সঙ্গে সহিংস আচরণ করেছেন৷
ছবি: Steve Helber/REUTERS
অ্যাম্বারের বক্তব্য
অ্যাম্বার হার্ডও তার বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ, অর্থাৎ ডেপকে পেটানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ আদালতে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে যে বোতল বা অন্য কিছু ছুঁড়ে মারতেন তা ছিল আত্মরক্ষার কৌশল৷
ছবি: Steve Helber/REUTERS
‘আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে’
আদালতে ডেপ বলেন, ‘‘ও (অ্যাম্বার) যখন দাবি করে যে. আমি একজন মাতাল, কোকেইনে আসক্ত, যে কিনা স্ত্রীকে পেটায়... তখনই আমি হেরে গেছি৷ আমার সবকিছু তখনই শেষ হয়ে গেছে৷ মামলার রায় যা ই হোক না কেন, আমাকে সারাজীবনই এটা বয়ে বেড়াতে হবে৷’’
ছবি: Steve Helber/REUTERS
ডেপ-ভক্ত
ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফেক্স-এ ফেয়ারফেক্স কাউন্টি সার্কটি আদালতের বাইরে এক ডেপ-ভক্ত৷ তার হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘জনি, আমরা তোমাকে বিশ্বাস করি৷ নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো৷’’
ছবি: Sarah Silbiger/REUTERS
8 ছবি1 | 8
ছয় সপ্তাহ ধরে সেই মামলাই চলছিল আদালতে। বুধবার আদালতের জুরিরা তার রায় শোনান। সেখানে বলা হয়েছে, ডেপের অভিযোগ অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্য। সে কারণে তিনি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য। অ্যাম্বারকে দিতে হবে ১০ দশমিক তিন পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পোস্ট এডিটের একটি প্যারাগ্রাফ তুলে ধরে জুরিরা বলেন, সেখানে সত্যি সত্যিই ডেপের মানহানি হয়েছে।
অন্যদিকে, ডেপকে দিতে হবে দুই মিলিয়ন ডলার। অ্যাম্বারের মামলার শুনানি করতে গিয়ে জুরিরা জানান, ডেপের আইনজীবী যে বয়ান লিখেছিলেন এবং সে বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে যে মন্তব্য করেছিলেন, তার একটি অংশ মানহানির যোগ্য। সে কারণেই ডেপকে দুই মিলিয়ন ডলার দিতে হবে।
রায় শোনার পর ডেপ জানিয়েছেন, তার প্রতিবেশী, বন্ধু, পরিবার সকলে তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন। এই রায়ের পর আবার সকলকে তিনি ফিরে পাবেন।
অন্যদিকে অ্যাম্বার জানিয়েছেন, তিনি এই রায়ে খুবই হতাশ।
অ্যাম্বারের বক্তব্য, এই রায় নারী-নিগ্রহ, পারিবারিক সহিংসতা এই সবকিছুকে মান্যতা দিল। তিনি অত্যন্ত হতাশ এবং দুঃখিত।