সৃষ্টির সূচনা থেকেই প্রাণীরা শরীরের হাড় ও পেশি কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলেছে৷ কিন্তু তাদের সেই মুভমেন্টের অনেক বিষয় আজও অজানা রয়েছে৷ জার্মানির এক গবেষক অত্যাধুনিক এক্স-রে যন্ত্র কাজে লাগিয়ে সেই রহস্য উন্মোচন করছেন৷
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক মার্টিন ফিশার শরীরের মুভমেন্ট নিয়েই মেতে আছেন৷ তিনি একাধারে প্রাণিবাজ্ঞানী, এবং জীবনশক্তিতে ভরপূর এক ভবিষ্যতদর্শী মানুষ৷ তিনি মানুষ ও প্রাণীর শরীরের গঠন নিয়ে কাজ করেন৷ কোটি কোটি বছর ধরে শরীরের বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি৷ তবে মৃত প্রাণীর শরীর পরীক্ষা করে তাঁর মন ভরেনি৷ তিনি জীবন্ত প্রাণীর ত্বকের নীচে উঁকি মেরে তাদের এগিয়ে চলার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন৷ তখন তাঁর মাথায় এক অদ্ভুত আইডিয়া এলো৷
অধ্যাপক ফিশার বলেন, ‘‘বৈজ্ঞানিক জীবনে আমি প্রথমে অ্যানাটমিস্ট হিসেবে কাজ করেছি, অনেক প্রাণীর শরীর ডিসেক্ট বা ব্যবচ্ছেদ করেছি৷ একসময় ইচ্ছা হলো, পেশি ও হাড় সক্রিয় অবস্থায় দেখি, তাদের কাজ বোঝার চেষ্টা করি৷ এর জন্য হাইস্পিড এক্স-রে যন্ত্রের মতো বিস্ময়কর উপকরণের প্রয়োজন৷''
ছদ্মবেশী প্রাণীরা
আত্মরক্ষা এবং ছদ্মবেশ- প্রাণিজগতে এই দুটো শব্দ ব্যাপক পরিচিত৷ গিরগিটিকে এক্ষেত্রে প্রধান উদাহরণ হিসেবে নেয়া যেতে পারে৷ কেননা বহুরূপী এই প্রাণীটি নিজের রং বদলানোর ক্ষমতা রাখে৷ তবে কেবল লুকানোর জন্যই নয়, আছে আরো উদ্দেশ্য..
ছবি: picture-alliance/CTK Photo/O. Zaruba
মুড বদলালে রঙ বদলায়
রং বদলানোর ক্ষেত্রে গিরগিটিদের বিশেষজ্ঞ বলা যেতে পারে৷ আগে ধারণা করা হতো অন্য প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচতেই গিরগিটিরা রঙ বদল করে৷ কিন্তু সম্প্রতি জানা গেছে এই রং বদলানোর ব্যাপারটা নির্ভর করে গিরগিটির মুডের উপর৷ যেমন সে আক্রমণাত্মক হলে বা রেগে গেলে রং বদলায়৷
ছবি: picture-alliance/MAXPPP/T. Suzan
রঙের উজ্জ্বলতা কমে বাড়ে
সব প্রজাতির গিরগিটিরা সব ধরনের রং বদলাতে পারে না৷ যেটা করে তাহল দিনের বিভিন্ন ভাগ অনুযায়ী নিজেদের রঙের উজ্জ্বলতা বাড়ায়-কমায়৷
ছবি: CC BY-SA 3.0/Poreddy Sagar
শিকার ধরা
গিরগিটিরা খুব ভালোভাবে ছদ্মবেশ ধরে শিকারের জন্য গাছের উপর চুপ করে বসে অপেক্ষা করে৷ কোনো নড়াচড়া করে না৷ তারপর পোকামাকড় কাছে এলে লম্বা জিহ্বা দিয়ে খপ করে খেয়ে ফেলে৷
ছবি: picture-alliance/CTK Photo/O. Zaruba
দৃষ্টিবিভ্রমে অনন্য জেব্রা
জেব্রার এই বেশ আসলেই ছদ্মবেশ৷ সাদা-কালো এই ডোরার কারণে একদল জেব্রা যখন মাঠে বসে থাকে তখন সিংহের দৃষ্টিবিভ্রম হয়৷ কেননা তখন পশুরাজ কোনো একটি প্রাণী দেখতে পান না৷
ছবি: AP
গাছের ডাল না পোকা!
ছদ্মবেশীদের মধ্যে অন্যতম এই শুঁয়োপোকাটি৷ এটি প্রজাপতি প্রজাতির৷ এটা দেখতে অনেকটা সরু কচি গাছের কাণ্ডের মতো৷ তাই গাছের উপর যখন এটি বসে তখন একে চেনার উপায় থাকে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
অনুকরণকারী অক্টোপাস
এটি একটি অনুকরণকারী অক্টোপাস, যা ‘কার্নিভাল স্কুইড’ নামে পরিচিত৷ সমুদ্রের তলদেশে এটি মুহূর্তে নিজের আকার ও রং পরিবর্তন করে ফেলতে পারে৷ যেমন সাপ, স্কুইড, শামুকের আকার ধারণ করতে পারে৷
ছবি: imago
অস্তিত্ব বোঝা দায়
মঙ্ক ফিশ এমনভাবে সমুদ্র তলদেশে থাকে যে বোঝাই যায় না এটার অস্তিত্ব৷ তাই মাছ শিকার খুবই সহজ হয়, অতর্কিতে পেছন থেকে মাছকে শিকার করে এরা৷
ছবি: imago/Bluegreen Pictures
7 ছবি1 | 7
আজ ‘স্কিংক' গিরগিটির পালা৷ গবেষকরা এই প্রাণীর মাধ্যমে ডাইনোসরদের এগিয়ে চলার প্রক্রিয়া বুঝতে চান৷ কারণ ছোট্ট এই প্রাণীর শারীরিক গঠনের সঙ্গে প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরদের অনেক মিল রয়েছে৷ বিশ্বের দ্রুততম এক্স-রে যন্ত্র গবেষকদের হাতে এ বিষয়ে নতুন তথ্য তুলে দিচ্ছে৷
একটি ট্রেডমিলের উপর স্কিংক চলতে থাকে৷ সেকেন্ডে তার ২,০০০ এক্স-রে ছবি তোলা হচ্ছে৷ এই প্রথম তার এগিয়ে চলার অজানা ধাপগুলিও স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ অধ্যাপক মার্টিন ফিশার বলেন, ‘‘আমাদের কাছে প্রায় ৩০ কোটি বছরের পুরানো জীবাশ্ম রয়েছে৷ তবে তাতে শুধু হাড়গোড় অবশিষ্ট রয়েছে৷ প্রাচীন এই প্রাণী কীভাবে নড়াচড়া করত, আমরা তা জানতে চাই৷ তার জন্য জীবন্ত প্রাণী পরীক্ষা করতে হয়, তাদের মুভমেন্ট-এর এক্স-রে ছবি তুলতে হয়৷ অর্থাৎ মুভমেন্ট-এর বিবর্তন বোঝাই আমার গবেষণার উদ্দেশ্য৷''
গবেষকরা একাধিক প্রজাতির প্রাণীর এক্স-রে ছবি তুলেছেন৷ ইঁদুর, বানর, বিড়াল, ইগুয়ানা, ও গিরগিটি৷ প্রতিটি ছবি প্রাণিবিদদের সামনে অজানা প্রান্তর খুলে দিয়েছে৷ অধ্যাপক ফিশার বলেন, ‘‘আমার এক্স-রে ছবি দেখলে অদ্ভুত অনুভূতি হয়৷ সেটা সত্যি একটা আবিষ্কার৷ এ যেন অজানা দ্বীপে পা রাখার মতো৷ এই প্রথম আমি এক প্রাণীর ভিতরে উঁকি মারতে পারছি, যে সুযোগ এতকাল কারো ছিল না৷ এতে গভীর সন্তুষ্টি আসে, দারুণ অনুভূতি৷''
ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে মার্টিন ফিশার-এর বিশাল কদর৷ গবেষক হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার কাহিনি তুলে ধরে তিনি শরীর ও মনের বিবর্তনের কথা শোনান৷
ভয়ংকর সরীসৃপের পৃথিবী
সাপ আর মানুষের সম্পর্ক খুবই অদ্ভুত৷ পৃথিবীর দুই মেরু ছাড়া সব স্থানেই সাপের বসবাস৷ ছবিগুলো দেখলে বুঝবেন মানুষের জীবনের সঙ্গে এরা কীভাবে জড়িয়ে আছে৷
ছবি: Reuters/N. Chitrakar
পরিবারের সদস্য
এই ছবিটি চীনের একটি পরিবারের৷ সাপটি যেন ওই পরিবারের সদস্য৷ তাই শিশুটি স্বজনের মতোই সাপটির পাশে ঘুমিয়ে আছে৷ চার মিটার লম্বা এই অজগরটি বাড়ির মধ্যেই ঘোরাঘুরি করে৷
চীনে সাপের স্যুপ ভীষণ জনপ্রিয়৷ চীনাদের ধারণা, এই স্যুপ খেলে যে কোনো ধরণের ক্ষত খুব দ্রুত সেরে যায়৷ এছাড়া শরীরের রক্ত সঞ্চালনও ভালো হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Philippe Lopez
সাপ দিয়ে মালিশ
আজকাল বাংলাদেশেও ‘ম্যাসাজ’ বা মালিশের কদর বেড়েছে৷ কিন্তু তাই বলে সাপ দিয়ে মালিশ! হ্যাঁ ইন্দোনেশিয়ার কয়েকটি দ্বীপে গেলে আপনি এই মালিশের সুবিধা পেতে পারেন৷
ছবি: Getty Images
বিখ্যাত কিন্তু লুপ্তপ্রায়
জার্মানির ওষুধ কোম্পানির লোগো এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পতাকায় সাপের এই প্রতীক আছে৷ এই প্রতীকটি বিশ্বব্যাপী খুবই প্রসিদ্ধ৷ এটি আসলে এসক্লেপিয়াস সাপ৷ এদের বিষ নেই৷ তবে আবাস স্থলের অভাবে এদের সংখ্যা দিন দিন কমছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stenzel
ভয়ংকর বিষধর, কিন্তু কাজের
বিষধর সাপকে কে না ভয় পায়? কিন্তু সাপের বিষ অনেক কাজে লাগে৷ জার্মানিতে হামবুর্গের পাশেই রয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় সাপের খামার৷ সেখানে প্রতিদিন ১৫০০ সাপের বিষ বের করা হয়৷ স্বল্প মাত্রায় এই বিষ ওষুধে ব্যবহার করা হয়, যা বেশ উপকারী৷ হাইপারটেনশনের ওষুধ ও সাপের বিষের প্রতিষেধক হিসেবেও তাদের বিষই ব্যবহৃত হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Berry
টাইগার পাইথনের আক্রমণ
ফ্লোরিডার এভারগ্ল্যাডিস ন্যাশনাল পার্কে একটি অজগর হইচই ফেলে দিয়েছিল৷ সাপটি খাঁচা থেকে বেরিয়ে পড়েছিল৷ ফলে সবার মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ সাপটি ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু শুধু একটি অজগরের জন্য মেরে ফেলা হয়েছিল ৬৮টি অজগর৷
ছবি: picture alliance / AP
বীণ বাজিয়ে নাচানো
প্রাচীন কাল থেকে ভারতকে বলা হয় ‘সাপুড়েদের দেশ’৷ নানা জায়গায় বীণ বাজিয়ে সাপের নাচ দেখায় তারা৷ সত্যি কথা হলো, বীণের শব্দে সাপ নাচে না৷ আসলে বীণের নড়াচড়ার সঙ্গে সে নড়তে থাকে৷
ছবি: picture alliance / WILDLIFE
ভয়হীন
হিন্দু ধর্মে সাপ হলো শিবের বাহন৷ এছাড়া সাপের দেবী মনসারও পূজা করা হয়৷ অনেকের অন্ধবিশ্বাস, সাপ পূর্বপুরুষের দেহ ধারণ করে পৃথিবীতে আসে৷ এছাড়া অনেক পৌরাণিক গ্রন্থে ইচ্ছাধারী নাগিনের কথাও আছে৷ এজন্য ভারতের অনেক সাধুকে সাপ নিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়৷