1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাওরে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ এপ্রিল ২০১৭

বাংলাদেশে হাওর এলকায় প্রায় দুই কোটি লোকের বাস৷ তাদের ৮০ ভাগই হাওরের বোরো ধান এবং মাছের উপর নির্ভরশীল৷ এবার পাহাড়ি ঢলে ধান, মাছ দু’টোই গেছে৷ আশঙ্কা করা হচ্ছে মানবিক বিপর্যয়ের৷

Global Media Forum 2013 Fishing in Haor
ছবি: Islam Ashraful

পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টির আগেই হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কথা ছিল৷ কিন্তু কোনো বাঁধই নির্মাণ হয়নি৷ আর এর সঙ্গে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে ঘুর্নিঝড় এবং শিলাবৃষ্টি৷ পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মির রাজা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাধারণভাবে প্রতিবছরই পাহাড়ি ঢল আসে৷ কিন্তু এবার এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতি বৃষ্টি৷ কিন্তু হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ যথাসময়ে নির্মাণ না করায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে৷ গত ৫০ বছরে এমন হয়নি৷ সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ এলাকাসহ পুরো হাওরের বোরো ধান প্রায় পুরোটাই শেষ হয়ে গেছে৷''

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট ও কিশোরগঞ্জে এক লাখ ৭১ হাজার ১১৫ হেক্টর জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে৷ এতে ওই তিন জেলায় ২ কোটি ৫ লাখ মন ধান কৃষকের ঘরে উঠছে না৷ ফসলডুবির ঘটনায় মোট ক্ষতির পরিমাণ ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা৷ নিজের ক্ষেতের ধান নষ্ট হতে দেখে অনেক কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন৷

হাওর এলাকার জমি এক ফসলি৷ এক মওসুমের বেরো ধান দিয়ে সেখানকার অধিবাসীদের সারা বছর চলতে হয়৷ আর এর সঙ্গে বিকল্প জীবীকা হলো মাছ ধরা৷ কিন্তু এবার সেখানেও বিপদ৷ হাওরের ধানের শীষ পচে পানি দূষিত হয়ে পড়েছে৷ ফলে মাছ মরে যাচ্ছে৷ আর এই কারণে জলজ প্রাণিসহ হাঁসও মারা পড়ছে, মারা পড়ছে গবাদি পশু৷  সুনামগঞ্জের সাংবাদিক হিমাদ্রি শেখর ভদ্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হাওরের মানুষ একটি বোরো ফসল দিয়েই সারা বছর চলে৷ কিন্তু তাদের সব শেষ হয়ে গেছে৷ গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে৷ ফলে এরই মধ্যে অনেকেই গবাদি পশু বিক্রি করতে শুরু করেছেন৷''

হিমাদ্রি শেখর দাস

This browser does not support the audio element.

তিনি জানান, ‘‘শুধু সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায়ই ১৫ লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ তারা খাদ্য সংকটে আছেন৷''

মৌলভী বাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিদুৎ কান্তি দাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার ইউনিয়নের প্রায় সব কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত৷ মাছ মরে যাওয়া শুরু হওয়ার পর মৎস অফিস থেকে হাওরে চুন দেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু বিশাল এই হাওর চুন দিয়ে কি দূষণমুক্ত করা যাবে?''

তালিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘‘মাছ পচে যাওয়ার কারণে হাওরের পানি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে৷ পুরো এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে৷ শুধু আমার ইউনিয়নেই চার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘কুশিয়ারা নদীর পানি ও পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েক দিন আগের ঘূর্ণিঝড়৷ তবে ফসল রক্ষা বাঁধগুলো আগেই নির্মাণ করলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না৷''

রাজনগর উপজেলার কাউয়া দীঘি হাওর এলাকার কৃষক আকলু মিয়া ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘হাওরে পানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিলাবৃষ্টির ক্ষতি৷ ওই এলাকায় হাওরের বাইরে যারা ধান চাষ করেন, তারাও বসে পড়েছেন৷ কারণ, তাদের ফসল শেষ করে দিয়েছে শিলাবৃষ্টি৷ আমার নিজের ১০ একর জমির ধান শেষ করে দিয়েছে শিলাবৃষ্টি৷ এখন পুরো হাওর এলকাতেই ফসল হারানোর কান্না এবং হাহাকার৷''

এরইমধ্যে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ হাওর এলাকা পরিদর্শন করেছেন৷ তিনি হেলিকপ্টারে করে দুর্গত এলাকার পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখেছেন৷ দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷

কাশ্মির রেজা

This browser does not support the audio element.

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারে করে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলার ইটনা, বানিয়ার চর, গনিগঞ্জ, খালিয়াজুরি, দিরাই, জামালগঞ্জ, শাল্লা, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও ছাতক এলাকা পরিদর্শন করেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি৷

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে জানানো হয়, এ বছর জেলার সাতটি উপজেলার ৯৯ হাজার ৩৬৮ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ জেলার প্রায় ৮২ শতাংশ ফসলি জমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ এলাকার এসব চাষী তাদের একমাত্র ফসল বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল৷

এদিকে সংসদের বাইরে দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বিএনপি হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে৷ পাশপাশি সেখানকার ভুক্তভোগী কৃষকদের কৃষি উপকরণ দিয়ে পাশে দাঁড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘দেশে খুবই নীরবে একটি ভয়াবহ এবং ভয়ংকর দুর্যোগ ঘটে গেছে এপ্রিল মাসের শুরুতে৷  উজানের পানিতে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনার হাওর অঞ্চলের সাড়ে তিন লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে৷ এতে প্রায় ১০ লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷''

হাওর এলকার ক্ষত্রিগ্রস্তদের কাছ থেকে এরইমধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদ ও কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার৷ তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসহ নানা ধরনের সহায়তার কথা বলা হয়েছে৷ আর দুর্নীতি দমন কমিশন হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নিয়ে দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে৷

পরিবেশ ও হাওয়র উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মির রাজা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সবার আগে প্রয়োজন এখন হাওরের মানুষকে রক্ষা করা৷ তারা নিজেরা কোনোভাবেই এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে না৷ আমি এখানে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছি৷'’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ