প্রথমে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল হাওয়াই। তারপরই শুরু হলো কিলাউএয়া আগ্নেয়গিরির ডান প্রান্ত থেকে অগ্নুৎপাত।
হাওয়াইতে কিলাউএয়া আগ্নেয়গিরিতে অগ্নুৎপাত। ছবি: U.S. Geological Survey/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
রোববার আবার জেগে উঠল হাওয়াইয়ের আগ্নেয়গিরি কিলাউএয়া। আগ্নেয়গিরির দক্ষিণ প্রান্ত থেকে লাভাস্রোত বের হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় লাভাস্রোত জমে কয়েক মিটার উঁচু হচ্ছে। বাতাসে ছাই উড়ছে। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে চারপাশ। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ভয়ঙ্কর পরিমাণে লাভাস্রোত ও ছাই বেরিয়ে আসছে আগ্নেয়গিরি থেকে।
আগ্নেয়গিরির মধ্যে প্রচুর জল জমা হয়েছিল। প্রথম এক ঘণ্টা ধরে সেই জলও বেরিয়েছে। ২০১৯ সালেই বৈজ্ঞানিকরা এই আগ্নেয়গিরির ভিতরে জল জমে থাকার কথা জানিয়েছিলেন।
এই আগ্নেয়গিরিটি কিলাউএয়া জাতীয় উদ্যানের ভিতরে রয়েছে। মানুষ এখন জাতীয় উদ্যানের প্রবেশপথে ভিড় জমিয়েছেন ভালো করে অগ্নুৎপাত দেখার জন্য এবং ছবি তুলে রাখার জন্য। তবে শহরের সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি মানুষকে ঘরের মধ্যেই থাকতে বলেছে।
বিপদ মাথায় নিয়ে বসবাস
পৃথিবীর কোনো অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ, কোথাও সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বেশি, কোথায়ও পাহাড় ধস হয়, কোথাও ঘূর্ণিঝড় বেশি আঘাত হানে৷ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়৷
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/K. Ragaza
ভূমিকম্প
পৃথিবীর সবচেয়ে সক্রিয় সিসমিক বেল্টের মধ্যে ‘অ্যালপাইড বেল্ট’ দ্বিতীয়৷ এটি হিমালয়ের মধ্য দিয়ে জাভা থেকে সুমাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত৷ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের ১৭ শতাংশ এই অঞ্চলে হয়েছে৷ যার মধ্যে অন্যতম ২০১৫ সালে নেপালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার (প্রায় নয় হাজার মানুষ মারা যায়) এবং ২০০৫ সালে পাকিস্তানে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার (৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু) ভূমিকম্প হয়৷
ছবি: AP
সুনামি
ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট আরেকটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সুনামি৷ ২০১১ সালে উত্তরপূর্ব জাপানে সমুদ্রের তলদেশে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের কারণে হওয়া সুনামিতে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ মারা যায়৷ তার আগে ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়৷
ছবি: Fotolia/Friday
আগ্নেয়গিরি: রিং অব ফায়ার
প্রশান্ত মহাসাগর ঘিরে প্রায় ২৫ হাজার মাইল এলাকা জুড়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি অঞ্চলকে রিং অব ফায়ার বলে৷ ৭৫ শতাংশ সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এ অঞ্চলে অবস্থিত৷ যেগুলোতে মাঝে মধ্যেই অগ্নুৎপাত হয়৷ এই অঞ্চলে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার সুমবাওয়া দ্বীপে মাউন্ট তামবোরাতে ১৮১৫ সালে ভয়াবহ অগ্নুৎপাত বৈশ্বিক তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলেছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Marquez
ঘূর্ণিঝড়ের চলার পথে
ক্যারিবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় নিয়মিত আঘাত হানে৷ সাধারণত জুন থেকে নভেম্বরে ওই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে৷ তবে সবচেয়ে বিপদজনক সময় জুন থেকে অক্টোবর৷ ওই অঞ্চলে মার্কিন সংস্থা ‘ন্যাশনাল ওসানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যামিনিস্ট্রেশন’ (এনওএএ) এর উদ্যোগে ‘হ্যারিকেন প্রিপেয়াডনেস উইক’ পালন করা হয়৷ যেখানে স্থানীয়রা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রশিক্ষণ পান৷
ছবি: picture-alliance/AP
ভূমিধস
পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে অতি বৃষ্টিতে প্রায়ই ভূমিধস ঘটনা ঘটে৷ ২০১৭ সালের ১১ জুন ভারি বর্ষণে বাংলাদেশের রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়৷ নিহতরা নিম্নআয়ের মানুষ এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পাহাড়ের পাদদেশে ঘর বানিয়ে বসবাস করতো৷ বর্ষা মৌসুমে প্রশাসন থেকে সতর্ক করার পরও তারা নিরাপদ স্থানে সরে যায়নি৷
ছবি: Brasilien, Regen, Regenfällen, Katastrophe , Wetter
কেন এসব অঞ্চলে বসবাস করে মানুষ
এসব অঞ্চলে বসবাস করা বেশিরভাগ মানুষ সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে তেমন সচেতন নন৷ এছাড়া নিয়মিত ছোট ছোট দুর্যোগ ঘটলেও বড় আঘাত পরপর আসে না৷ তাই মানুষ নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রাণ বাঁচানোর সুযোগ পায় না৷ শেকড়ের টানেও মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঝুঁকি মাথায় নিয়েই এসব অঞ্চলে বাস করে যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Rezas
6 ছবি1 | 6
জাতীয় উদ্যানের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আগ্নেয়গিরি থেকে ক্ষতিকারক সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস বের হচ্ছে।
যাঁদের শ্বাসকষ্ট আছে বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা আছে, তাঁদের কাছে এই গ্যাস ক্ষতিকর। তাছাড়া বাচ্চা, গর্ভবতীদের জন্যেও এই গ্যাস খুবই খারাপ।
২০১৮ সালের পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার অগ্নুৎপাত হলো কিলাউএয়াতে।