চীনের একজন স্কুবা ডাইভার কাছ থেকে হাঙর দেখবেন বলে একটি খাঁচায় করে পানির নীচে নেমেছিলেন৷ শুরুতে সব ঠিক ছিল৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ একটি হাঙর তাঁর খাঁচায় ঢুকে পড়ে৷ তারপর?
বিজ্ঞাপন
না, কিছুই হয়নি৷ মাত্র ২০ সেকেন্ড হাঙরটি খাঁচার ভেতরে ছিল৷ তারপর বের হয়ে যায়৷ তাই ঐ ডাইভারের কিছুই হয়নি৷ বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে নীচের ভিডিওটি দেখুন৷
দেখা শেষ হয়েছে? এবার আরেকটু বিস্তারিত জানা যাক৷ চীনা ঐ স্কুবা ডাইভারের নাম চ্যান মিং৷ তিনি বিজ্ঞাপন শিল্পে কাজ করেন৷ আর অবসর সময়ে স্কুবা ডাইভিংয়ের ইন্সট্রাক্টর হয়ে যান৷ গত অক্টোবর মাসে মিংসহ ২০ জন মানুষ মেক্সিকোর গুয়াডালুপে দ্বীপে পাঁচদিনের সফরে গিয়েছিলেন৷ ঐ সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল কাছ থেকে গ্রেট হোয়াইট শার্কদের চলাফেরা দেখা৷ সেটি করতেই তিনি পানির নীচের একটি খাঁচায় ঢুকেছিলেন৷ তারপর হাঙরকে খাঁচার কাছাকাছি আনতে ডাঙায় থাকা এক ব্যক্তি একটি দণ্ডের মাথায় টুনা মাছ লাগিয়ে হাঙরের সামনে ধরেছিলেন৷ হাঙর সেই মাছের আকর্ষণে সেটি ধরার চেষ্টা করে৷ কিন্তু ডাঙায় থাকা ব্যক্তিটি দণ্ডকে টেনে খাঁচার কাছে নিয়ে আসে৷ ফলে হাঙরও খাঁচার একেবারে কাছাকাছি চলে আসে৷ এভাবেই পর্যটকদের হাঙর দেখানো হয়৷
চেষ্টা করলে হাঙরেরও দাঁত দেখতে পাবে...!
ছবি: CC BY 4.0/Albert kok
হাঙর ভীতি
সেটাই তো স্বাভাবিক৷ হলিউডের বিখ্যাত ‘জস’ ছবির আগেও তা ছিল, পরেও থাকবে৷ তিন পয়সার পালা নাটকের গানে ছিল না? চেষ্টা করলে হাঙরেরও দাঁত দেখতে পাবে....আসলে কিন্তু হাঙরেরা যত মানুষ মারে, তার চেয়ে অনেক বেশি হাঙরকে মারে মানুষ৷ কাজেই ভয়টা হাঙরদেরই হওয়া উচিত!
ছবি: Pterantula (Terry Goss) via Wikimedia Commons
রিফ শার্ক বা শৈলশিরার হাঙর
পাঁচ ধরনের রিফ শার্ক আছে, ছবিতে তাদের একটিকে দেখা যাচ্ছে৷ রিফ বা ডুবন্ত শৈলশিরার অদ্ভুত জগতে হাঙররাই সবচেয়ে দুর্ধর্ষ শিকারি৷ তারা মাছ বা কাঁকড়া বা কচ্ছপ, সব কিছুই খায়৷
ছবি: CC BY 4.0/Albert kok
ছোট থেকে বড়
পৃথিবীতে প্রায় আড়াই’শ প্রজাতির হাঙর আছে৷ তাদের সকলের আকার বা আগ্রাসনের প্রকৃতি ও পর্যায় আলাদা৷ স্যান্ড টাইগার শার্কের ওজন প্রায় ১৬০ কিলোগ্রাম অবধি হতে পারে, দৈর্ঘ্যে তারা তিন মিটার ছাড়াতে পারে৷ বিরাট মুখ আর দাঁতকপাটি লাগানোর মতো দাঁতের পাটি থাকা সত্ত্বেও স্যান্ড টাইগার শার্করা কিন্তু আসলে শান্তশিষ্ট ল্যাজবিশিষ্ট৷ না চটালে তারা আক্রমণ করে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Sauer
শার্ক ফিন সুপের লোভে
হাঙরের পাখনার সুপ খুব সৌখিন সাহেবি খাবার৷ সেজন্য যে প্রতিবছর কত হাঙরকে প্রাণ দিতে হয়, তা জানা নেই, হয়ত দশ কোটি, এমনও শোনা গেছে৷ ফিন বা পাখনাটা হাঙর জীবন্ত থাকা অবস্থায় কেটে ফেলতে হয় – একে বলে ফিনিং৷ তারপর জীবগুলোকে আবার সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়, সেখানেই তারা মরে – যদি তারা তখনও জীবিত থাকে৷ ভালো রেস্টুরেন্টে এক প্লেট শার্ক ফিন সুপের দাম একশ ডলার অবধি হতে পারে৷
ছবি: Gerhard Wegner/Sharkproject
হাঙররা কত বয়স অবধি বাঁচে?
গ্রিনল্যান্ড শার্ক নামধারী হাঙরগুলো নাকি ৪০০ বছর বয়স অবধি বাঁচে, বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে৷ অথচ গ্রিনল্যান্ড শার্ক কখনো কোনো মানুষকে আক্রমণ করেছে বলে শোনা যায়নি৷ তারা ঠান্ডা জলে থাকতে ভালোবাসে, ধীরেসুস্থে নড়াচড়া করে৷ এমনকি তাদের বিয়ে করার বয়স নাকি ১৫০ বছর!
ছবি: picture-alliance/dpa/Oceans Image
বিশাল মানেই যে বিপজ্জনক, এমন নয়
হোয়েল শার্ক বা তিমি হাঙররা দৈর্ঘ্যে ১৮ মিটার লম্বা হতে পারে, বলতে কি, সাগরে তারাই সবচেয়ে বড় মাছ৷ অথচ তারা খায় শুধু অতি ক্ষুদ্র প্ল্যাঙ্কটন! কিন্তু তিমি হাঙররাও আজ বিপন্ন৷ তাদের পাখনা, তেল অথবা মাংস, সব কিছুর চাহিদা আছে৷ আর আছে টুরিস্ট-ভর্তি ইকো-টুরিজম বোটগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষের বিপদ৷
ছবি: CC BY 2.0/Derek Keats
লেমন শার্ক
এরা হলো হাঙরদের মধ্যে ভালোমানুষ, খুবই অনাগ্রাসী বলে পরিচিত৷ আজ অবধি লেমন শার্কদের আক্রমণে কোনো মানুষ মারা গেছে বলে শোনা যায়নি৷ লেমন শার্করা দল বেঁধে থাকে৷ দলের মধ্যেও খুব একটা মারামারি, কামড়া-কামড়ি হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Horst Pfeiffer
7 ছবি1 | 7
কিন্তু মিংয়ের ক্ষেত্রে একটু ব্যতিক্রম ঘটেছে৷ হাঙরটি খাঁচা ভেঙে আচমকা ভেতরে ঢুকে পড়েছিল৷ সেই দৃশ্য দেখে ডাঙায় থাকা মানুষরা ভয় পেয়ে যান৷ তাদের মধ্যে একজন তাড়াতাড়ি করে খাঁচার উপরের অংশটি খুলে দেন৷ ফলে অন্তত ২০ সেকেন্ড পর চেষ্টা করে হাঙরটি খাঁচা থেকে বের হয়ে আসে৷ তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে হাঙরটির শরীরের কিছু অংশে আঘাত লাগে৷ তবে সেটি মারাত্মক কিছু নয় বলে পরবর্তীতে জানা গেছে৷
এদিকে হাঙরটি বের হয়ে যাওয়ার পর সবাই খাঁচায় থাকা মিংয়ের খোঁজ পেতে উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ে৷ তবে আশার কথা, মিং সুস্থ অবস্থায় পানি থেকে উঠে আসেন৷
পরে নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মিং বলেন, হাঙরের সঙ্গে এক খাঁচায় থাকতে তাঁর ভয় লাগেনি৷ ‘‘সত্যি বলতে কী, সেই সময় ভয় পাওয়ার মতো সময়ও ছিল না,'' জানান মিং৷ এই ঘটনায় তিনি যে আসলেই ভয় পাননি সেটি আপনি বিশ্বাস করতে পারেন এই তথ্য জেনে যে, তিনি পরেরদিনই আবার হাঙর দেখতে পানিতে নেমেছিলেন!