দেশ হিসেবে ছোট হলেও হাঙ্গেরির সংসদ নির্বাচন ইউরোপীয় ইউনিয়নের গতি-প্রকৃতির উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে৷ দক্ষিণপন্থি প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বান তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় এলে ব্রাসেলসের সঙ্গে আরও সংঘাত অনিবার্য৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকেও ইউরোপীয় মূল্যবোধ উপেক্ষা করে চললে তার কী পরিণাম হওয়া উচিত? কিছু শাস্তিমূলক পদক্ষেপের বিধান থাকলেও ইউরোপের বাকি দেশগুলির পক্ষে সেই পথে এগোনো বেশ অস্বস্তিকর৷ বিশেষ করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত কোনো সরকারকে প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়া কঠিন কাজ৷
হাঙ্গেরির দক্ষিণপন্থি প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বান ইইউ-কে বেশ কিছুকাল ধরে এমন বিড়ম্বনায় ফেলেছেন৷ রবিবার তিনি তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতার শীর্ষে নির্বাচিত হতে পারেন৷ সে ক্ষেত্রে গোটা ইউরোপে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের পর তিনিই একটানা সবচেয়ে দীর্ঘ সময় জুড়ে ক্ষমতায় থাকার সাফল্য অর্জন করবেন৷ তবে একাধিক জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১০ ও ২০১৪ সালের বিপুল জনসমর্থন ধরে রাখতে পারবে না তাঁর ফিদেস দল৷ সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ওরবান আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ ফিদেস ও খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী কেডিএনপি দলের জোট গত দুই নির্বাচনে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দেশে অনেক আমূল পরিবর্তন আনতে পেরেছিল, যা ইউরোপে চরম বিতর্কের সৃষ্টি করে৷ সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা থেকে শুরু করে অভিবাসনের প্রশ্নে চরম অবস্থানের কারণে বার বার ইইউ-র সঙ্গে সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে৷
প্রথম দিকে ভিক্টর ওর্বান তাঁর চরমপন্থি নীতির কারণে একাই ইইউ-নেতৃত্বের বিরাগভাজন হয়েছেন৷ তারপর পোল্যান্ড-সহ ইউরোপের পূর্বাঞ্চলের একাধিক দেশে প্রায় সমমনস্ক সরকার ক্ষমতায় আসতে থাকায় ওরবান-এর শক্তি অনেক বেড়ে গেছে৷ ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকটের পর শরণার্থীদের বোঝা ইইউ দেশগুলির মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার যে বোঝাপড়া হয়েছিল, ওর্বান-সহ বেশ কয়েকজন নেতা তা মানেন নি৷
হাঙ্গেরির এবারের নির্বাচন আরেকটি কারণেও নজর কাড়ছে৷ নির্বাচনি ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তনের ফলে ভোটারদের একাংশ কিছুটা বিভ্রান্ত রয়েছে৷ সংসদের মোট ১১৯টি আসনের মধ্যে ১০৬টি আসনে প্রার্থীরা সরাসরি জনগণের ভোটে জয়ী হবেন৷ দল ও জনগোষ্ঠীর ভিত্তিতে বাকি ৯৩টি আসনের ফয়সালা হবে৷
বিরোধী জোটের জয়ের সম্ভাবনা এই মুহূর্তে অত্যন্ত ক্ষীণ হলেও ৭০ শতাংশের বেশি ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করলে ফিদেস দল সংসদে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন৷ সেক্ষেত্রে সরকার গঠনে অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে৷
সবচেয়ে কম শরণার্থী নেবে মাল্টা, সবচেয়ে বেশি জার্মানি
১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থী নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল৷ তা কেটে গেছে৷ ভোটাভুটির মাধ্যমে ঠিক হয়েছে এই ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থীকে ভাগ করে নেবে ইইউ-র দেশগুলো৷ এ পর্যায়েও সবচেয়ে বেশি শরণার্থী নেবে জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Zak
জার্মানির স্বস্তি
অনেক শরণার্থী এসেছে জার্মানিতে৷ অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশির ভাগ দেশ শরণার্থী নিতে নারাজ৷ এ অবস্থায় ইইউ-র সব সদস্য দেশকে কোটা অনুযায়ী শরণার্থী নিতে হবে – এমন দাবি জানিয়েছিল জার্মানি৷ মঙ্গলবারের বৈঠকে দাবি পূরণ হয়েছে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থীকে ভাগ করে দেয়া হবে৷ জার্মানি নেবে ৩১ হাজার ৪৪৩ জন৷ বছর শেষে জার্মানিতে আগত মোট শরণার্থী ৮ লাখে হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Reuters/O. Orsal
জার্মানির পরই ফ্রান্স
কোটা অনুযায়ী শরণার্থী বণ্টনের দাবিতে ফ্রান্সও ছিল জার্মানির সঙ্গে৷ মঙ্গলবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শরণার্থীর চাপটা তাদের ওপরও খুব কম পড়বে না৷ এই দফায় ২৪ হাজার ৩১ জন শরণার্থী নেবে ফ্রান্স৷ছবিতে হাঙ্গেরি সীমান্তের এক শরণার্থী শিশু৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Nimani
চারটি দেশের ঘোর আপত্তি
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো শুরু থেকেই শরণার্থী নেয়ার বিপক্ষে৷ মঙ্গলবার হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া শরণার্থী নেয়ার বিপক্ষে ভোট দেয়৷ ভোটের পর চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী বহুস্লাভ সবটকা বলেন, ‘‘এটা খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত৷’’ সরাসরি আপত্তি জানালেও এখন রোমানিয়া ৪ হাজার ৬৪৬ জন, চেক প্রজাতন্ত্র ২ হাজার ৯৭৮ জন এবং স্লোভাকিয়া ১ হাজার ৫০২ জন শরণার্থী নেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Dospiva
দায়িত্ব মনে করে শরণার্থী নেবে লুক্সেমবুর্গ
৫ লক্ষ ৬২ হাজার জনসংখ্যার দেশ লুক্সেমবুর্গও শরণার্থী নেবে৷ ছোট দেশ তাই মাত্র ৪৪০ জন নেবে তারা৷ তবে দেশটির সরকার মনে করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্য ধরে রাখতে সব সদস্য দেশের শরণার্থী নেয়াটা এখন কর্তব্যের পর্যায়ে পড়ে৷ এমনিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ছোট দেশটির এখন বড় ভূমিকা পালন করাই স্বাভাবিক, কেননা, এ মুহূর্তে ইইউর সভাপতি দেশও লুক্সেমবুর্গ৷
ছবি: AP
সবচেয়ে কম শরণার্থী নেবে মাল্টা
ইইউ অঞ্চলের আরেক ছোট দেশ মাল্টা৷ আয়তন মাত্র ৩১৬ বর্গ কিলোমিটার আর জনসংখ্যা ৪৪ হাজারের একটু বেশি৷ এমন ছোট দেশটিও ১৩৩ জন শরণার্থী নেবে৷
ছবি: picture alliance /Robert Harding
আর যেসব দেশ শরণার্থী নেবে
ইইউ-র আরো কয়েকটি দেশও শরণার্থী নেবে৷ স্পেন নেবে ১৪ হাজার ৯৩১ জন, পোল্যান্ড ৯ হাজার ২৮৭ জন, নেদারল্যান্ডস ৭ হাজার ২১৪ জন, বেলজিয়াম ৪ হাজার ৫৬৪ জন, সুইডেন ৪ হাজার ৪৬৮ জন, অস্ট্রিয়া ৩ হাজার ৬৪০ জন, পর্তুগাল ৩ হাজার ৭৪ জন, ফিনল্যান্ড ২ হাজার ৩৮৮ জন, বুলগেরিয়া ১৬০০ জন, ক্রোয়েশিয়া ১ হাজার ৬৪ জন, লিথুয়ানিয়া ৭৮০ জন, স্লোভেনিয়া ৬৩১ জন, লাটভিয়া ৫২৬ জন, এস্তোনিয়া ৩৭৩ এবং সাইপ্রাস নেবে ২৭৪ জন শরণার্থী৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Zak
6 ছবি1 | 6
এসবি/এপিবি (রয়টার্স, এএফপি)
হাঙ্গেরিতে কি সত্যিই ক্ষমতায় ফিরছেন দক্ষিণপন্থিরা? এর প্রভাব কী হতে পারে? লিখুন নীচের ঘরে৷