1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দক্ষিণপন্থি প্রবণতা

কেনো ফ্যারসেক/এসবি৯ ডিসেম্বর ২০১২

ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায়ই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে চরম দক্ষিণপন্থি শক্তি৷ তবে হাঙ্গেরিতে বিষয়টি এমন এক মাত্রায় পৌঁছেছে যে, গোটা মহাদেশ জুড়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে৷

epa03494275 Protesters wave Hungarian national flags and hold placards, one reading "Never again fascism" (C-L), during a protest in front of the Parliament building in Budapest, Hungary, 02 December 2012. Upset has been caused by comments made by one of the Jobbik legislators, Marton Gyongyosi, who said that Jews working in the government or parliament should be "listed" for "posing a national security risk to Hungary." It took a full day for the government to issue a statement emphatically rejecting the comment from the Jobbik member, who has in the past cast doubt on the scope of the Holocaust. EPA/LASZLO BELICZAY HUNGARY OUT
ছবি: picture-alliance/dpa

‘নাৎসিরা নিপাত যাক', ‘অনেক হয়েছে, আর নয়' – বিক্ষোভকারীদের মুখে শোনা যাচ্ছিল এমন স্লোগান৷ গ্রাম থেকেও অনেক মানুষ এসে রাজধানী বুদাপেস্ট'এ এই নব্য-ফ্যাশিস্টদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে৷ হিটলারের নাৎসি জার্মানিতে ইহুদিদের যে ‘স্টার অফ ডেভিড' চিহ্ন পরতে বাধ্য করা হতো, বিক্ষোভকারীরাও সেরকম চিহ্ন পরে ছিল৷ হাঙ্গেরির গণতান্ত্রিক দলগুলির প্রতিনিধিরা নিজেদের মতভেদ ভুলে একসঙ্গে অঙ্গীকার করলেন৷ তাঁরা বললেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব মানুষকে চরম দক্ষিণপন্থিদের হাত থেকে রক্ষা করা হবে৷ হাঙ্গেরি আর কখনো বর্ণবাদ ও গণহত্যা বরদাস্ত করবে না৷ গত রবিবার বুদাপেস্টে সংসদ ভবনের সামনে দেখা গেল সচেতন নাগরিকদের এই সমাবেশ৷

বিতর্কের সূচনা হাঙ্গেরির চরম দক্ষিণপন্থি ‘জবিক' পার্টির সংসদীয় দলের উপ প্রধান মার্টন জিয়নজিয়োশি'র মন্তব্যকে ঘিরে৷ সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি হিসেবে এই দলের ১২ শতাংশ আসন রয়েছে৷ সেই সাংসদ দাবি করেন, দেশে ইহুদিদের আলাদা করে এক তালিকায় নথিভুক্ত করতে হবে৷ একবিংশ শতাব্দীর ইউরোপে এক জনপ্রতিনিধি সংসদে দাঁড়িয়ে এমন কথা বলায় বলাই বাহুল্য, চরম প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷ বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে৷ প্রায় ৩০টি দল ও সংগঠনের ডাকে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন৷ আয়োজকরা আরও বেশি মানুষ আশা করলেও শেষ পর্যন্ত প্রায় ১০,০০০ মানুষ এই সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ প্রায় দুই বছর পর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদেরও একই মঞ্চে দেখা গেল৷ ছিলেন ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতারা৷ চরম দক্ষিণপন্থিদের দৌরাত্ম্য তাঁদের যেভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছে, তা সকলের নজর কেড়েছে৷ বিষয়টিকে ‘মন্দের ভালো' হিসেবেই দেখছে তাঁরা৷

‘নাৎসিরা নিপাত যাক', ‘অনেক হয়েছে, আর নয়'ছবি: Attila Kisbenedek/AFP/Getty Images

গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের বিষয়ে সংসদে আলোচনা চলছিল৷ সে সময়ে ‘জবিক' পার্টির জিয়নজিয়োশি সরকারের কাছে এক অভিনব দাবি জানান৷ তিনি বলেন, হাঙ্গেরিতে যে সব ইহুদি বসবাস করে, তাদের আলাদা তালিকায় নথিভুক্ত করতে হবে৷ তারা দেশের জন্য ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে কি না, তাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে৷ সরকার ও সংসদের মধ্যে যে সব ইহুদি রাজনীতিক আছেন, তাদেরও বাদ দিলে চলবে না৷ এমন প্ররোচনার ফলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সঙ্গে হাঙ্গেরিতে ইহুদিদের সংখ্যার কোনো সম্পর্ক নেই৷

তবে আসল বিতর্কের কারণ জিয়নজিয়োশি'র দাবি নয়৷ সেই মন্তব্য শুনে বেশিরভাগ সংসদ সদস্য নীরব ছিলেন৷ এমনকি সরকারি দল ‘ফিদেস'এর সদস্যরাও প্রতিবাদ জানান নি৷ ২০১০ সালের নির্বাচনে ‘জবিক' পার্টি প্রায় ১৭ শতাংশ ভোট পায়৷ ইসরায়েলের কড়া সমালোচনার আড়ালে তারা ইহুদি বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করে৷ এবার ইহুদিদের তালিকার দাবি করে তাদের আসল রূপ বেরিয়ে পড়লো বলে মনে করা হচ্ছে৷ তারা নাৎসি জার্মানির বর্ণবাদের প্রবক্তা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাঙ্গেরির নিজস্ব নাৎসি পার্টির প্রতিও তাদের সহানুভূতি রয়েছে৷

সমস্যা হলো, রাজনীতির মূল স্রোতে একটি দল এমন খোলামেলাভাবে চরম দক্ষিণপন্থি ভাবধারা তুলে ধরছে, এমন ঘটনা বিরল নয়৷ কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান ও তাঁর সরকারি দলও দক্ষিণপন্থি মতবাদের সমর্থক৷ এমনকি তারা কখনো ‘জবিক' পার্টি'র অবস্থানের সঙ্গে স্পষ্টভাবে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টাও করে না৷

দেশের মধ্যে ইহুদিদের তালিকাবদ্ধ করার দাবির প্রেক্ষিতে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পর সরকারি দলের কিছুটা টনক নড়েছে৷ সংসদীয় দলের প্রধান আন্তাল রোগান রবিবারের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন৷ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও সমাজতান্ত্রিক দলের নেতাদের সঙ্গে এক মঞ্চে উপস্থিত হয়ে তাঁর অবশ্য বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল৷ রোগান এমনকি ‘জবিক' পার্টি ও ইহুদি বিদ্বেষের প্রকাশ্য সমালোচনাও করেন৷ এর আগে ‘ফিদেস'এর কোনো নেতার মুখে এমন স্পষ্ট ভাষায় এ সব কথা শোনা যায় নি৷ তিনি হাঙ্গেরির সব নাগরিকের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেন৷ উপস্থিত বিরোধী নেতারা অবশ্য তাঁকে মনে করিয়ে দেন যে, প্রধানমন্ত্রী অর্বান এখনো ‘জবিক' পার্টির দাবি সম্পর্কে মুখ খোলেন নি৷ দলের অন্যান্য নেতারাও ইহুদি-বিদ্বেষী লেখকদের তোয়াজ করে চলেন৷

হাঙ্গেরির নির্বাচিত সরকারের বিতর্কিত দক্ষিণপন্থি অবস্থান ও গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার প্রচেষ্টা গত প্রায় দুই বছর ধরে ইউরোপে বহুল আলোচিত বিষয়৷ সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার সদস্য হিসেবে হাঙ্গেরির তীব্র সমালোচনা করেছে৷ সাম্প্রতিক এই ঘটনার পরও সরকারের অবস্থানে কোনো রদবদল আশা করছে না বিরোধীরা৷ তাদের দৃষ্টিতে এমন এক দল দেশের জন্য এর কলঙ্ক৷ ইউরোপের বুকে এমন এক সরকারের কারণে ইইউ স্তরেও অস্বস্তি কাটার সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ