1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাজারো আর্থিক দাবি অপূর্ণ, তবু কেন বেতন বৃদ্ধি নেতাদের?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৭ অক্টোবর ২০২৩

চাকরির দাবি, ডিএ বাড়ানোর দাবি তুললেই শুনতে হয় সরকারের অর্থ নেই। কিন্তু মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতন ঠিকই বেড়ে যায়।

গত ৭ সেপ্টেম্বরে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, মন্ত্রী থেকে বিধায়ক, সব স্তরেই ৪০ হাজার টাকা করে বেতন বাড়ানো হবে।

বিধায়করা বেতন ও ভাতা মিলিয়ে মাসে পান ৮১ হাজার ৮৭০ টাকা। আইন সংশোধিত হলে সেটা বেড়ে হবে মাথাপিছু এক লক্ষ ২১ হাজার ৮৭০ টাকা। একইভাবে নজরকাড়া হয়ে দাঁড়াবে মন্ত্রীদের প্রাপ্যও।

এর আগেও বেড়েছে মন্ত্রী-বিধায়কদের ভাতা। ২০১৯ সালে এক হাজার টাকা বেতন বৃদ্ধি হয়।  তার আগে ২০১৭ সালে বিধায়ক, মন্ত্রীদের বেতন আইন সংশোধিত হয়েছিল। 

সরকারি সিদ্ধান্তে প্রশ্ন

স্কুলের শিক্ষক থেকে গ্রুপ ডি কর্মী, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে মামলা ও তদন্ত চলছে। মেধাতালিকায় নাম থাকা চাকরিপ্রার্থীরা টানা অবস্থান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি কেন, প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।

মাসের পর মাস বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন নদিয়ার বাসিন্দা, চাকরিপ্রার্থী আবু নাসের। শিক্ষক নিয়োগের একাধিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নাসের ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিধায়করা জনপ্রতিনিধি, তারা জনগণের সেবা করেন। তাদের সকলের উচিত বর্ধিত বেতন প্রত্যাখ্যান করা।"

সরকারি কর্মীরাও বকেয়া মহার্ঘভাতার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ১০ ও ১১ অক্টোবর কর্মীদের একটা বড় অংশ কর্মবিরতি পালন করেন। তাদেরও প্রশ্ন, মন্ত্রী-বিধায়কদের বাড়তি বেতন দিতে যে টাকা খরচ হবে, তা কেন কর্মীদের বকেয়া মেটাতে সরকার ব্যয় করবে না?

রাজ্যের কাছ থেকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংগঠন এক জায়গায় এসেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ব্যানারে। মঞ্চের আহবায়ক ভাস্কর ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "একজন বিধায়ক মাসে ৮১ হাজার টাকা বেতন-ভাতা পেলেও বলা হচ্ছে, তাদের চা খাওয়ার টাকা থাকে না। পশ্চিমবঙ্গের জীবনযাত্রার মান এতটাই উন্নত হয়েছে যে ৮১ হাজার টাকায় চলছে না!"

নারাজ বিরোধীরা

সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, তারা বেতন বৃদ্ধিকে সমর্থন করছেন না। কোনো বিজেপি বিধায়ক বাড়তি টাকা নেবেন না। আইন অনুযায়ী টাকা অ্যাকাউন্টে এলে সেটা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হবে না।

শুভেন্দুর বক্তব্য, "যে রাজ্যে কর্মসংস্থান নেই, সাধারণ মানুষ কাজ করতে ভিন রাজ্যে যায়, যেখানে চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগের দাবিতে অবস্থান করেন, সরকারি কর্মীরা বকেয়া পান না, সেখানে মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কেন?" শুভেন্দু বলেছেন, তিনি বর্দিত বেতন নেবেন না। বাকি বিজেপি বিধায়করা কী করবেন, কোথা বাড়তি টাকা দান করবেন, তা পরে জানাবেন।

এই একই প্রশ্ন তুলেছেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, "শিক্ষা নেই, চাকরি নেই, ডিএ নেই। আর সরকার নেতা-মন্ত্রীদের বেতন বাড়াচ্ছে! এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে?"

‘আমাদের নিয়োগের জন্য কেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগ নিচ্ছেন না?’

This browser does not support the audio element.

রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা ভালো নয়, সে কথা শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের মুখেও বারবার শোনা গিয়েছে। এ কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছে তারা। রাজ্যে যখন বিপুল টাকা ঋণের বোঝা, সেই সময় বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি করে খরচের বহর আরো বাড়ানো হচ্ছে কেন, অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা এই প্রশ্ন তুলছেন।

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, "আমাদের রাজ্যে বিধায়কদের বেতন অন্যান্য রাজ্য থেকে কম। তাই বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত।"

থমকে বেতন বৃদ্ধি

এ বারের ঘোষণা কার্যকর করার জন্য দুটি সংশোধনী বিল রাজ্যকে পাশ করাতে হবে বিধানসভায়। কিন্তু দুটি বিলে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস অনুমোদন দেননি। 

সোমবার দুটি সংশোধনী বিল পেশ করা হলেও তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। সাবেক বাম বিধায়কের প্রয়াণে সভার কাজ মুলতুবি করে দেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির দাবি, এই বিল নিয়ে আলোচনা সম্ভবই ছিল না যেহেতু রাজ্যপাল এতে স্বাক্ষর করেননি। 

ফলে আপাতত বেতন বৃদ্ধির পরিকল্পনা কার্যকর হচ্ছে না। ভবিষ্যতে বিল পাশের পরও তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে রাজভবনে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা কার্যকর করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছে রাজ্য সরকার।

এই রাজনীতির টানাপোড়েন অনেকদিন চলছে। কিন্তু দাবিপুরণ হবে কবে? আবু নাসেরের প্রশ্ন, "মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন সবাইকে আইনি পথে চাকরি দেয়া হবে। মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতন বাড়ানোর জন্য যদি আইন সংশোধন করা যায়, তা হলে আমাদের নিয়োগের জন্য কেন মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় আইন পাশ করানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন না?"

ভাস্করের মন্তব্য, "শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন মৌলিক পরিকাঠামোর মান উন্নত করা দরকার। লক্ষ লক্ষ শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। তার বদলে বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধির উদ্যোগ প্রহসন ছাড়া কিছু নয়।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ