চাকরির দাবি, ডিএ বাড়ানোর দাবি তুললেই শুনতে হয় সরকারের অর্থ নেই। কিন্তু মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতন ঠিকই বেড়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
গত ৭ সেপ্টেম্বরে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, মন্ত্রী থেকে বিধায়ক, সব স্তরেই ৪০ হাজার টাকা করে বেতন বাড়ানো হবে।
বিধায়করা বেতন ও ভাতা মিলিয়ে মাসে পান ৮১ হাজার ৮৭০ টাকা। আইন সংশোধিত হলে সেটা বেড়ে হবে মাথাপিছু এক লক্ষ ২১ হাজার ৮৭০ টাকা। একইভাবে নজরকাড়া হয়ে দাঁড়াবে মন্ত্রীদের প্রাপ্যও।
এর আগেও বেড়েছে মন্ত্রী-বিধায়কদের ভাতা। ২০১৯ সালে এক হাজার টাকা বেতন বৃদ্ধি হয়। তার আগে ২০১৭ সালে বিধায়ক, মন্ত্রীদের বেতন আইন সংশোধিত হয়েছিল।
সরকারি সিদ্ধান্তে প্রশ্ন
স্কুলের শিক্ষক থেকে গ্রুপ ডি কর্মী, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে মামলা ও তদন্ত চলছে। মেধাতালিকায় নাম থাকা চাকরিপ্রার্থীরা টানা অবস্থান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি কেন, প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা।
তিন শতাংশে খুশি নয়, পুরো বকেয়া ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন
অনেক টালবাহানার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন শতাংশ ডিএ দিতে রাজি হয়েছেন। কর্মীরা পুরো বকেয়া ডিএ চান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তিন শতাংশে খুশি নয়
আন্দোলনরত সরকারি কর্মীরা বকেয়া ডিএ পুরোটা দেয়ার দাবি করেছেন। রাজ্য তাদের তিন শতাংশ ডিএ দেয়ার পরেও কেন্দ্রীয় কর্মীদের সঙ্গে তাদের ডিএ-র ফারাক এখনো ৩৪ শতাংশ। কর্মীদের দাবি, বকেয়া আরো ৩৪ শতাংশ ডিএ তাদের দিতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
৩৫ সংগঠন একসঙ্গে
সরকারি কর্মীদের ৩৫টি সংগঠন একসঙ্গে যৌথ মোর্চা গঠন করেছে। তারা যেমন অবস্থান ধর্মঘট করেছে, তেমনই শুক্রবার তারা কলকাতায় বিধানসভা অভিযানও করে। দাবি আদায় না হলে তারা আন্দোলন থামাতে চান না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন অনড় কর্মীরা
আন্দোলনরত সরকারি কর্মীদের বক্তব্য, জিনিসের দাম সমানে বাড়ছে। কিন্তু তার সঙ্গে মানানসই ডিএ দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার নিয়মিত তাদের কর্মীদের ডিএ বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু রাজ্য সরকার ডিএ দিতে গেলেই নানা টালবাহানা করছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রাজ্যের বক্তব্য
ডিএ নিয়ে বিরোধ এখন আদালতে গেছে। কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি চলার সময় রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, কর্মীদের দাবি মেনে ডিএ দেয়া সম্ভব নয়। কারণ, রাজ্য সরকারের হাতে ওই পরিমাণ টাকা নেই। কর্মীদের পুরো ডিএ মেটাতে গেলে সরকারের কোষাগার খালি হয়ে যাবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মন্ত্রীর দাবি
রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় চট্টোপাধ্য়ায়ের দাবি ছি্ল, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পায় রাজ্য। সেই টাকা পেলে কর্মীদের ডিএ দিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু এই দাবি মানতে রাজি নন কর্মীরা। তাদের মত হলো, রাজ্য সরকার সব কাজ করছে, সব প্রকল্প চালাচ্ছে, তাতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। শুধু ডিএ দেয়ার ক্ষেত্রেই অসুবিধা হচ্ছে?
ছবি: Subrata Goswami/DW
কর্মীদের প্রতিবাদ
এই পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মীরা বিধানসভা অভিযান করেন। মিছিলে প্রচুর সরকারি কর্মী যোগ দেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
থামিয়ে দেয়া হলো
তবে বিধানসভা পর্যন্ত তাদের যেতে দেয়া হয়নি। রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। জলকামানও তৈরি ছিল। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বেষ্টনী ভেঙে যাওয়ার চেষ্টা করেননি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এবার কী হবে?
সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্য সরকার আর বাড়তি ডিএ দিতে চায় না। আন্দোলনকারীরাও পিছু হঠতে রাজি নন। তারা অনশন ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। অনশন করতে গিয়ে কয়েকজন অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে চান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
8 ছবি1 | 8
মাসের পর মাস বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন নদিয়ার বাসিন্দা, চাকরিপ্রার্থী আবু নাসের। শিক্ষক নিয়োগের একাধিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নাসের ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিধায়করা জনপ্রতিনিধি, তারা জনগণের সেবা করেন। তাদের সকলের উচিত বর্ধিত বেতন প্রত্যাখ্যান করা।"
সরকারি কর্মীরাও বকেয়া মহার্ঘভাতার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। গত ১০ ও ১১ অক্টোবর কর্মীদের একটা বড় অংশ কর্মবিরতি পালন করেন। তাদেরও প্রশ্ন, মন্ত্রী-বিধায়কদের বাড়তি বেতন দিতে যে টাকা খরচ হবে, তা কেন কর্মীদের বকেয়া মেটাতে সরকার ব্যয় করবে না?
রাজ্যের কাছ থেকে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংগঠন এক জায়গায় এসেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ব্যানারে। মঞ্চের আহবায়ক ভাস্কর ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "একজন বিধায়ক মাসে ৮১ হাজার টাকা বেতন-ভাতা পেলেও বলা হচ্ছে, তাদের চা খাওয়ার টাকা থাকে না। পশ্চিমবঙ্গের জীবনযাত্রার মান এতটাই উন্নত হয়েছে যে ৮১ হাজার টাকায় চলছে না!"
বিক্ষোভে রাস্তায় চাকরিপ্রার্থীরা, তাদের জীবনে উৎসব নেই
করোনার পর এবার শারদোৎসবে মেতেছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ। তবে চাকরিপ্রার্থীরা উৎসবের মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসবের দিনেও প্রতিবাদ
এক বছর পরেও ছবিটা বদলালো না। ২০২১ সালের দুর্গোৎসবেও ঘরবাড়ি ছেড়ে এভাবেই আন্দোলনের মধ্যে কাটিয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। এই বছরও কাটাচ্ছেন। তারা উৎসবে নেই, প্রতিবাদে আছেন। এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের কাছে উৎসবের আলাদা তাৎপর্য নেই। তাদের দাবি, পরীক্ষা দিয়ে পাস করার পরেও দুর্নীতির জন্য চাকরি পাননি। তাই সকলে যতদিন চাকরি না পাচ্ছেন, ততদিন প্রতিবাদ চলবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তিন দফার প্রতিবাদ
এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৯-এ। তিন দফায় এই আন্দোলনের বয়স আজ সাড়ে পাঁচশ দিন পেরিয়ে গেছে। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগে দুর্নীতি ছিল। কতজন এইভাবে চাকরি পেয়েছেন তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঝড়-জল উপেক্ষা করে
এই কয়েকবছরে গান্ধীমূর্তির পাদদেশের এই ধর্নামঞ্চ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এই মানুষগুলোর কাছে অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা, নেই শৌচাগারও। ঝড়-বৃষ্টি-রোদ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন অবস্থান করে চলেছেন এরা। কেউ অসুস্থ বাবা-মাকে বাড়িতে রেখে কেউ বা কোলের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে। আন্দোলন এখন এদের জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসবের দিনেও
গত দুইবছর ধরে ধর্না মঞ্চেই কেটেছে উৎসবের দিনগুলি। দুইটি ঈদ, দুইটি দুর্গাপুজার মত বড় উৎসব এভাবে কেটেছে চাকরিপ্রার্থীদের। বস্তুত তাদের জীবনে উৎসব নেই, আনন্দ নেই, আছে কেবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে চাকরি পাওয়ার লড়াই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অর্পিতার কাহিনি
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার অর্পিতা হাজরা। ধর্নামঞ্চে উপস্থিত থাকার জন্য যাতায়াত মিলিয়ে সাতঘণ্টা লাগে অর্পিতার। ভোর পাঁচটায় উঠে রান্না করে তারপর আসেন, আবার বাড়ি ফিরে ১০ বছরের মেয়েকে নিয়ে পড়াতে বসেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আনন্দ নয়, লড়াই
অর্পিতা জানালেন, ''ছোট্টো মেয়েটাকে নিয়ে যখন জামাকাপড়ের দোকানে গিয়ে শপিং করার কথা, পুজোর চারদিন কীভাবে কাটাব সেই পরিকল্পনা করার কথা, সেই সময় বসে রয়েছি রাস্তার ধারে। পুজোটা আমাদের কাছে প্রবল যন্ত্রণার। সকলকে আনন্দ করতে দেখে আরও যন্ত্রণা পাই ভেতরে ভেতরে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঈদও কেটেছে এখানেই
সরকারিভাবে বসতে নিষেধ ছিল, তাও এইবছর দুপুরের পরে এখানে বসেই ঈদ পালন করেছে কামরুজ্জামান, বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দেখা করাও হয়ে ওঠেনি। অন্যান্যবার দুর্গাপুজোতেও মুর্শিদাবাদের বাড়ির সামনের পুজোতেই হাজির থাকে কামরুজ্জামান। এইবছর ধর্নামঞ্চেই কাটবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিরানন্দ পিঙ্কি
হুগলির পিঙ্কি সাধুখাঁ জানালেন, ''আমাদের এবারের পুজোর দিনগুলো এভাবে কাটার কথা ছিল না। চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে বাচ্চার হাত ধরে মণ্ডপে মণ্ডপে অনন্দ করে বেড়ানোর কথা ছিল। যেদিন থেকে জানতে পেরেছি আমরা দুর্নীতির শিকার, সেদিন থেকে আমাদের জীবনের আনন্দ চলে গিয়েছে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
সীমার প্রশ্ন
পুজোমণ্ডপে না গিয়ে কোলের বাচ্চা নিয়ে ধর্নামঞ্চে অবস্থান করছেন সীমা। তিনি বললেন, ''নিজের মনেই যদি আনন্দ না থাকে বাচ্চাকে কীভাবে আনন্দ দেব বলতে পারেন?''
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসব আর নেই
আশিকুল ইসলাম জানালেন, ''যোগ্য হয়েও চাকরি পাইনি। এই আনন্দে এখন আর কোনও উৎসাহ পাই না। দিনলিপি থেকে মুছে গেছে উৎসব।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
দুর্গারা পথে
মুর্শিদাবাদের রহুল বিশ্বাস বললেন, ''একদিকে দেবী দুর্গা পুজিত হচ্ছেন আর এখানে দুর্গারা বঞ্চিত হয়ে পথের ধারে পড়ে আছে। সরকার চাইলে যেকোনও সময় আমাদের এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিরুপায় তপতী
বাড়িতে সন্তানকে রেখে চুঁচুড়া থেকে প্রতিদিন এই ধর্নামঞ্চে আসেন তপতী দাস। পুজোমণ্ডপে গেলেও মন পড়ে থাকবে এই ধর্নামঞ্চে। তিনি জানালেন, ''আমরা নিরুপায়। বাধ্য হয়ে একটা আশা নিয়েই দিনের পর দিন বসে রয়েছি এখানে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
চোখে জল জয়ন্তের
সাড়ে তিন বছরের বাচ্চা ফোনে তাকে বার বার বাড়িতে আসতে বলছে। বাবার কোলে চড়ে ঠাকুর দেখার বায়না ছোট্ট ছেলেটার। কথাগুলো বলতে বলতে চোখ মুছতে থাকে বীরভূমের জয়ন্ত। ''যখন সারা কলকাতা আলোর রোশনাইতে মেতে উঠেছে, আমরা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে, অন্ধকারেই পড়ে আছি। দুইটি পুজো এভাবেই কেটেছে, চাকরির নিয়োগপত্র হাতে না পেলে জীবনের সব পুজো এখানেই কাটাতে পারি।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিয়োগপত্র চাই
বনগাঁর সোমা মালাকার বললেন, ''দুর্নীতি করে যারা চাকরি পেয়েছে, তারা আজ পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দে পুজো কাটাচ্ছে। অথচ আমরা যোগ্য হয়েও পথে পড়ে রয়েছি। চাকরির নিয়োগপত্রই আমাদের কাছে পূজার প্রসাদ। যেদিন হাতে পাব সেদিনই আমাদের সত্যিকারের পুজো।'' বললেন, বনগাঁর সোমা মালাকার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
14 ছবি1 | 14
নারাজ বিরোধীরা
সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, তারা বেতন বৃদ্ধিকে সমর্থন করছেন না। কোনো বিজেপি বিধায়ক বাড়তি টাকা নেবেন না। আইন অনুযায়ী টাকা অ্যাকাউন্টে এলে সেটা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হবে না।
শুভেন্দুর বক্তব্য, "যে রাজ্যে কর্মসংস্থান নেই, সাধারণ মানুষ কাজ করতে ভিন রাজ্যে যায়, যেখানে চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগের দাবিতে অবস্থান করেন, সরকারি কর্মীরা বকেয়া পান না, সেখানে মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কেন?" শুভেন্দু বলেছেন, তিনি বর্দিত বেতন নেবেন না। বাকি বিজেপি বিধায়করা কী করবেন, কোথা বাড়তি টাকা দান করবেন, তা পরে জানাবেন।
এই একই প্রশ্ন তুলেছেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, "শিক্ষা নেই, চাকরি নেই, ডিএ নেই। আর সরকার নেতা-মন্ত্রীদের বেতন বাড়াচ্ছে! এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে?"
‘আমাদের নিয়োগের জন্য কেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগ নিচ্ছেন না?’
রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা ভালো নয়, সে কথা শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের মুখেও বারবার শোনা গিয়েছে। এ কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বকেয়া আদায়ের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছে তারা। রাজ্যে যখন বিপুল টাকা ঋণের বোঝা, সেই সময় বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধি করে খরচের বহর আরো বাড়ানো হচ্ছে কেন, অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা এই প্রশ্ন তুলছেন।
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, "আমাদের রাজ্যে বিধায়কদের বেতন অন্যান্য রাজ্য থেকে কম। তাই বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত।"
থমকে বেতন বৃদ্ধি
এ বারের ঘোষণা কার্যকর করার জন্য দুটি সংশোধনী বিল রাজ্যকে পাশ করাতে হবে বিধানসভায়। কিন্তু দুটি বিলে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস অনুমোদন দেননি।
সোমবার দুটি সংশোধনী বিল পেশ করা হলেও তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। সাবেক বাম বিধায়কের প্রয়াণে সভার কাজ মুলতুবি করে দেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির দাবি, এই বিল নিয়ে আলোচনা সম্ভবই ছিল না যেহেতু রাজ্যপাল এতে স্বাক্ষর করেননি।
ফলে আপাতত বেতন বৃদ্ধির পরিকল্পনা কার্যকর হচ্ছে না। ভবিষ্যতে বিল পাশের পরও তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে রাজভবনে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা কার্যকর করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছে রাজ্য সরকার।
এই রাজনীতির টানাপোড়েন অনেকদিন চলছে। কিন্তু দাবিপুরণ হবে কবে? আবু নাসেরের প্রশ্ন, "মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন সবাইকে আইনি পথে চাকরি দেয়া হবে। মন্ত্রী-বিধায়কদের বেতন বাড়ানোর জন্য যদি আইন সংশোধন করা যায়, তা হলে আমাদের নিয়োগের জন্য কেন মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় আইন পাশ করানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন না?"
ভাস্করের মন্তব্য, "শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন মৌলিক পরিকাঠামোর মান উন্নত করা দরকার। লক্ষ লক্ষ শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। তার বদলে বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধির উদ্যোগ প্রহসন ছাড়া কিছু নয়।"