বন্যার কবলে পড়ে এক হাজার কিলোমিটারের মতো পথ পাড়ি দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে পৌঁছানো হাতিটিকে অবশেষে উদ্ধার করা হয়েছে৷ তবে উদ্ধার কাজ চলাকালে প্রায় মরতে বসেছিল হাতিটা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P.Rashid
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ এবং ভারতের উদ্ধারকারী দল বেশ কয়েকদিনে চেষ্টা করেও বুনো হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থ হয়েছিল৷ এমনকি তাকে আশ্বস্ত করতে আরো একটি হাতিও আনা হয়৷ কিন্তু মাদী হাতিটি কোনোভাবেই বশ মানছিল না৷ বরং জামালপুরে বন্যার পানির মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছিল৷ শেষমেষ হাল ছেড়ে দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ভারতীয় উদ্ধারকর্মীরা৷
তবে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি উদ্ধারকারীদের একটি চেষ্টাও সফল হয়েছে৷ মাদী হাতিটির শরীরে দূর থেকে চেতননাশক ঔষুধ প্রবেশ করাতে সক্ষম হন তাঁরা৷ কিন্তু বিপত্তি বাঁধে যখন হাতিটি একটি জলাশয়ে পড়ে যায় এবং ক্রমশ ডুবে যেতে থাকে৷ অসহায় উদ্ধারকারীদের তখন সহায়তায় এগিয়ে আসে কয়েকশত স্থানীয় জনতা৷ তাঁরা জলাশয়ে ডুব দিয়ে হাতিটিকে বেঁধে ফেলে এবং সবাই মিলে টেনে ডাঙ্গায় তোলে৷ হাতিটি তখন পুরোপুরি অচেতন ছিল৷
ডাইনোসর বিলুপ্ত, এবার হাতিও কি ধীরে ধীরে যাবে?
অতিকায় ডাইনোসর আর নেই৷ এখনো টিকে থাকা স্থলচরদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাণী হাতিও কি এবার বিলুপ্ত হয়ে যাবে? আন্তর্জাতিক হাতি দিবসে প্রশ্নটা খুব বড় হয়ে উঠেছে৷ ছবিঘরে দেখুন কেন এবং কীভাবে খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে হাতি৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/M. Hicken
আর মাত্র ১০ বছর?
হাতি যে হারে কমছে, তাতে ১০ বছর পর চিড়িয়াখানা ছাড়া আর সব জায়গা থেকে এই প্রাণীটির চিহ্ন মুছে গেলে নাকি অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না৷ আশঙ্কাটা যে মোটেই বাড়াবাড়ি নয়, তা দুটো তথ্য দিলেই বুঝতে পারবেন৷ একশ’ বছর আগে আফ্রিকায় মোট এক কোটি হাতি ছিল৷ এখন সেখানে মাত্র সাড়ে চার থেকে সাত লাখের মতো হাতি টিকে আছে৷ এশিয়ায় আছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ হাজার হাতি৷ গত দশ বছরে নাকি সারা বিশ্ব থেকে ৬২ ভাগ হাতি কমেছে!
ছবি: picture-alliance/R. Harding
দাঁতের জন্য মরছে হাতি
কথায় আছে, মরা হাতির দাম লাখ টাকা৷ সত্যিই তাই৷ বিশেষ করে হাতির দাঁত তো হীরা-মুক্তা-জহরতের মতোই মূল্যবান৷ সেই দাঁতের লোভে আফ্রিকার জঙ্গল থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে একশ’টি হাতি মারা হয়৷ হাতির দাঁত সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় চীনে৷ গত জুলাই মাসে জুরিখ বিমানবন্দরে ২৬২ কিলোগ্রাম ওজনের হাতির দাঁতসহ ধরা পড়ে এক চীনা নাগরিক৷
ছবি: Reuters/R. Sprich
জঙ্গিদের টাকার উৎসও হাতি!
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অবৈধ ব্যবসা এই হাতির দাঁতের কেনাবেচা৷ মাদক এবং মানবপাচারের পরই এর স্থান৷ অনেক যু্দ্ধ-দাঙ্গা-হাঙ্গামার পেছনেও ভূমিকার রাখে হাতির দাঁত৷ আফ্রিকা অঞ্চলের দুই ইসলামি জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম এবং আল-শাবাব বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্র কেনে হাতির দাঁতের বিনিময়ে!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/African Parks
জঙ্গল কমছে, কমছে হাতি
জনসংখ্যা বাড়ছে৷ আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ পড়ছে জঙ্গলের ওপর৷ মানুষ জঙ্গল কেটে সেখানে গড়ছে বাসস্থান, কলকারখানা৷ ফলে জঙ্গলের প্রাণীরা পড়ছে বিপদে৷ হাতির জন্যও জঙ্গল ক্রমশই কমছে, বাড়ছে বিপদ৷ গত এক শতকে আফ্রিকার জনসংখ্যা চারগুণ বেড়েছে৷ হাতির সংখ্যা সেখানে এক কোটি থেকে কমে সাত লাখ বা তারও কম হওয়াই তো স্বাভাবিক, তাই না?
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
হাতিরক্ষায় তৎপর ওবামা
চীনের পর হাতির দাঁত সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় যুক্তরাষ্ট্রে৷ তবে ধীরে ধীরে হয়ত সেখানে অবৈধ এ ব্যবসাটা কমবে৷ গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এই ব্যবসা একেবারে বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/M. Hicken
5 ছবি1 | 5
পরিবেশ সংরক্ষণবাদী অশিত রঞ্জন পাল জানিয়েছে, হাতিটি সম্ভবত বাংলাদেশে পৌঁছানোর আগেই ভারতের মধ্যে একহাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিল৷ বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক ‘প্রথম আলো' লিখেছে, ‘‘গত ২৮ জুন ভারতের আসাম রাজ্য থেকে বন্যার পানিতে ব্রহ্মপুত্র নদ বেয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে হাতিটি৷''
এদিকে, শুক্রবার হাতিটির জ্ঞান ফিরেছে৷ তবে তাকে এখনই ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন, বন কর্মকর্তার৷ হাতি উদ্ধারে তৈরি দলের সমস্যা তপন কুমার দে জানিয়েছেন, হাতিটিকে যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে কোনো পাকা রাস্তা নেই৷ তাই আপাতত হাতিটিকে সুস্থ করতে কিছুদিন সেখানে রেখে খাবার ও ঔষুধ দেয়া হবে৷
তিনি বলেন, ‘‘হাতিটি সুস্থ হয়ে গেলে একজন মহুত এবং অন্য একটি পোষা হাতির সহায়তায় তাকে একটি পাকা রাস্তার কাছে নেয়া হবে৷''
সুস্থ হয়ে উঠলে হাতিটির পরবর্তী গন্তব্য হবে গাজীপুর সাফারি পার্ক বলেও জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা৷ ভবিষ্যতে তাকে ভারতে ফিরেয়ে দেয়ার কোনো নতুন উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা, তা অবশ্য এখনো জানা যায়নি৷