দেশ বেড়ানো আর ফুটবল হলো জার্মানদের সবচেয়ে প্রিয় দু’টি অবসর বিনোদনের পন্থা৷ আবার সে দু’টো যদি একসঙ্গে পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই৷ কাজেই ৫০ হাজার জার্মান ইতিমধ্যেই ব্রাজিলে যাবার টিকিট কিনে ফেলেছেন৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানি থেকে ব্রাজিলে গিয়ে হোটেলে থাকা, একটা খেলার শহর থেকে আরেকটা শহরে যাওয়া, এ সবের খরচ কিন্তু জার্মানদের পক্ষেও কম নয়: মাথাপিছু দশ হাজার ইউরো, যা কিনা আজ জার্মানিতে একটা ছোটখাটো নতুন গাড়ির দাম৷ তবুও বিশ্বকাপ যাত্রার প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে লোন নিতেও অনেকে দ্বিধা করেননি৷
জার্মানির নাকি এবার চতুর্থবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবার ভালো সম্ভাবনা আছে, বলে ফ্যানদের ধারণা৷ কাজেই ব্রাজিলে গিয়ে জার্মান দলকে চ্যাম্পিয়ন হবার মতো সাপোর্ট দিয়ে ফ্যানরা যখন খোশমেজাজে বাড়ি ফিরবেন, তখন নাকি তাঁদের ‘প্রোডাক্টিভিটি' মানে উৎপাদনক্ষমতাই বেড়ে যাবে৷ অবশ্য চ্যাম্পিয়ন হবার স্বপ্ন যদি সত্যি না হয়, তাহলে যে উৎপাদনক্ষমতার কি হবে, তা নিয়ে জার্মান ফ্যানরা আপাতত মাথা ঘামাচ্ছেন না৷
২০১৪ বিশ্বকাপে যাঁদের জ্বলে ওঠার সম্ভাবনা
২০১৪ সালের বিশ্বকাপকে সেরা টুর্নামেন্টে পরিণত করায় রোনাল্ডো আর মেসির ভূমিকা থাকতেই পারে৷ কিন্তু আরো ১০ লুকানো রত্ন রয়েছে, যাঁরা সুযোগ পেলেই দেখাতে পারেন তাঁদের কেরামতি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খোয়াদভো আসামোয়া (ঘানা)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে অসাধারণ দক্ষতা ঘানার এই ফুটবলারের৷ ২৫ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় তাই মাঠে হয়ে উঠতে পারেন প্রতিপক্ষের বিভীষিকা৷ ২০১০ সালের মতো ঘানা যদি তাদের সেরাটা দিতে পারে, এক্ষেত্রে অবশ্যই ভূমিকা রাখবেন আসামোয়া৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
পল পগবা (ফ্রান্স)
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ফুটবলে পল পগবা অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন৷ স্যার আলেকজান্ডার ফার্গুসনের মুখেও এই ফুটবলারের প্রতি প্রশংসা উচ্চারিত হয়েছে৷ তাঁর সিদ্ধান্তেই এই কিশোর ফুটবলার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছেন৷ শক্তিশালী এই খেলোয়াড় যে বিশ্বকাপে মাঠ মাতাবে, তা বোধহয় বলাই যায়৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
অ্যাডাম লালানা (ইংল্যান্ড)
এবার বিশ্বকাপে ইংলিশ শিবিরের শিরোপা জেতার আশা অনেকটাই বেশি৷ ২০১৩/১৪ মৌসুমে লালানা যে আভিজাত্য এবং দক্ষতার সাথে খেলেছেন, তা এককথায় অসাধারণ৷ তাই এই মিডফিল্ডারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন অনেকেই৷
ছবি: Getty Images
মিরালেম পিয়ানিচ(বসনিয়া)
কিশোর এই ফুটবলারকে নিয়ে ইটালির মিডিয়ায় বরাবরই মতামাতি৷ বসনিয়ায় এই ফুটবলারকে বলা যায় স্বভাবজাত ফুটবলার৷ অসাধারণ পাস, দূর দৃষ্টি এবং ফুটবল নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে তাঁর৷
ছবি: Getty Images
ইয়োইচিরো কাকিতানি (জাপান)
জাপানের অন্যতম আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার কাকিতানি৷ তাঁর পেস, গতি এবং লিঙ্ক আপের দক্ষতা অসাধারণ৷ ২৪ বছর বয়সি কাকিতানি ব্রাজিল বিশ্বকাপে তাঁর সেরাটা দিয়ে সামুরাই ব্লুদের অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
কেভিন দে ব্রয়না (বেলজিয়াম)
বেলজিয়ামের স্বর্ণ প্রজন্মের অন্যতম অংশীদার কেভিন দে ব্রয়না৷ বুন্ডেসলিগায় তাঁর অসাধারণ অভিষেক এখনো মনের মধ্যে গেঁথে আছে ফুটবল ভক্তদের৷ মাত্র ২৩ বছর বয়সি এই শক্তিশালী ফুটবলারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন বিশ্ববাসী৷
ছবি: Getty Images
লুকাস মুরা (ব্রাজিল)
২১ বছর বয়সি এই ফুটবলার ব্রাজিল শিবিরে কয়েক বছর আগে প্রবেশ করেছে৷ ফরাসি ফুটবল ক্লাব পিএসজি-র গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়ারে পরিণত হয়েছেন তিনি৷ আর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের আক্রমণ ভাগেও এই প্রতিভাবান ফুটবলারের খেলা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন ভক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জেমস রোদ্রিগেজ (কলম্বিয়া)
এ বছর বিশ্বকাপে সবার চোখ থাকবে কলম্বিয়ার দিকে৷ কেননা দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দলটি এখন দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে৷ মোনাকো তারকা রোদ্রিগেজ কাঁধে রয়েছে দলের সব চাপ৷ ২২ বছর বয়সি এই ফুটবলারের গতি এবং খেলার ধরণ অসাধারণ৷ তিনি এই দলের একটি রত্নে পরিণত হয়েছেন৷
ছবি: Getty Images
এদুয়ার্দো ভার্গাস (চিলি)
ফার্গাস এখন ভ্যালেন্সিয়ায় রয়েছেন৷ তবে খুব শিগগিরই স্টুটগার্ডে জার্মান ভক্তরা প্রীতি ম্যাচে তাঁর দেখা পাবেন৷ তবে ২৪ বছর বয়সি প্রতিভাবান এই ফুটবলারের জন্য ব্রাজিল বিশ্বকাপ একটি নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইয়োর্দি ক্লাসি (নেদারল্যান্ডস)
ইয়োর্দি ক্লাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে সহজাত ফুটবলার৷ নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দলের পুরো দায়িত্ব এখন এই মিডফিল্ডার এ কাঁধে৷ মাত্র ২২ বছর বয়সেই ১০০ ম্যাচ খেলার মাইল ফলক ছুঁয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
এক বছর আগে তারা যখন এই ব্রাজিল যাত্রার – নাকি অভিযানের? – পরিকল্পনা করতে শুরু করেন, তখনও কেউ বিগত তিনটি বিশ্বকাপে জার্মানির ফলাফলের কথাটা ভেবে দেখেননি: ২০০২ সালে জার্মানি হারে ফাইনালে, ২০০৬ আর ২০১০ সালে সেমিফাইনালে৷ আর পাঁচ সপ্তাহের ছুটি কাটানোর জন্য – মাথাপিছু – দশ হাজার ইউরো খরচ করাটা বাহুল্য বলে মনে হতে পারে, কিন্তু যেদেশে মানুষ বছরে গড়ে ৩৪ হাজার ইউরো রোজগার করে, সেদেশে সেটা হাতের ময়লা কিংবা ‘পি-নাটস' না হলেও, তা-তে কারো দমার কথা নয়৷ বিশ্বকাপ তো আসেও প্রতি চার বছরে একবার৷
সারা বছরের উপার্জনের এক-তৃতীয়াংশ থেকে এক-চতুর্থাংশ বিশ্বকাপের পিছনে খরচ করা: এখন যদি জার্মানি – ঈশ্বর না করুন! – ফাইনালের আগেই কোনো স্টেজে আউট হয়ে যায়, তাহলে কি হবে? কোনো ক্ষতি হবে না, কেননা তাহলে জার্মান ফ্যানরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের ফ্যানদের সঙ্গে মিলে ‘পার্টি' চালিয়ে যাবেন৷ বুঝলেন না? বিশ্বকাপ হল ফুটবলের মহোৎসব, মানে যাকে বলে কিনা মোচ্ছব৷ তা-তেই যদি ফুর্তি না করা যায়, তাহলে ফুর্তি করা যাবে ক্যামনে?
কাজেই ইউরোপের অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে জার্মানি থেকেই সবচেয়ে বেশি ফ্যান ব্রাজিলে পাড়ি জমাচ্ছেন৷ জার্মানির সঙ্গে গ্রুপ ‘জি'-তে রয়েছে পর্তুগাল, ঘানা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ম্যাচগুলো হবে সালভাদোর, ফর্তালেজা ও রেসিফে-তে৷ ফ্যানদের কাছে গ্রুপ পর্যায়ের সব ক'টি ম্যাচের টিকিট থাকবে, বলে সাধারণত ধরে নেওয়া যায়৷ তবে জার্মানি গ্রুপে প্রথম না হয়ে যদি দ্বিতীয় হয়, তাহলে ফ্লাইট আর বুকিং কিছুটা এদিক-ওদিক করতে হবে৷
তার মুশকিল হলো এই যে, নকআউট পর্যায়ে স্টেডিয়ামে গিয়ে টিকিট পাবার আশা করছেন জার্মান ফ্যানরা৷ কিন্তু খেলা ঘাড়ে এসে পড়লে টিকিটের দাম হবে আকাশছোঁয়া – এককালে যাকে টিকিট ব্ল্যাক করা বলা হতো৷ কিন্তু ফ্যান কিংবা ব্ল্যাকার, উভয় পক্ষই জানে, সুদূর জার্মানি থেকে ব্রাজিলে এসে এই ফ্যানরা খেলা না দেখে বাড়ি ফিরবেন না৷