এখনো আসছে দুঃসংবাদ৷ কোনো কোনো পরিবারে হজ করতে গিয়ে প্রাণ হারানো স্বজনের জন্য চলছে মাতম, অনেক পরিবার আবার উৎকণ্ঠা নিয়ে করছে স্বজনকে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষা৷ আর কত শোক সংবাদ? আর কত অপেক্ষা?
বিজ্ঞাপন
এই প্রশ্নগুলোই বারবার উঁকি দিচ্ছে সবার মনে৷ ২৪শে সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের মিনায় মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা ঘটে৷ সেদিন থেকেই হজ করতে যাওয়া বাংলাদেশিদের পরিবারগুলোতে শুরু হয়েছিল দুশ্চিন্তা, উৎকণ্ঠা৷ যেসব পরিবার স্বজনকে ফিরে পেয়েছে তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরলেই অনেকেরই উৎকণ্ঠা এখনো শেষ হয়নি৷ অনেকে আবার ডুবেছে স্বজনকে চিরতরে হারানোর শোকে৷ এ পর্যন্ত ৯২ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ নিখোঁজ রয়েছেন ৮০ জন৷
নিখোঁজদের জন্য এখন ব্যাকুলভাবে অপেক্ষা করছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা৷ স্বজনকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে কেউ কেউ বলছেন, ‘‘সন্ধান চাই, জীবিত অথবা মৃত৷''
মিনা থেকে কোনো খবর আসছে না বলে অনেকেই খুব হতাশ এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত৷
যাঁরা জীবিত ফিরে এসেছেন, তাঁদের বর্ণনায় উঠে এসেছে সেদিনের ভয়াবহ বিপর্যয়ের কথা৷ বিপর্যয়ের জন্য মূলত সৌদি আরব সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসায়িক মনোভাবকেই দায়ী করেছেন অনেকে৷ গাইবান্ধার এক হাজি বলেছেন, ‘‘ওই দিন সৌদি বাদশাহর এক ছেলে আর্মি নিয়ে এলো পাথর মারার জন্য৷ তখন সব হাজিকে আটকে দেওয়া হয়৷ লাখ লাখ হাজি তখন দলে দলে অপেক্ষা করতে শুরু করেন৷ বাদশার ছেলে যাওয়ার পর রাস্তা খুলে দিলে হাজিদের ঢল নামে৷ আর তাতেই ঘটে দুর্ঘটনা৷ বাদশার ছেলে ওই দিন না গেলে এ ঘটনা ঘটতো না৷''
তবে কেউ কেউ বলেছেন জন্ম-মৃত্যু আল্লাহর হাতে, তাই সৌদি আরবকে দোষারোপ করা ঠিক নয়৷
বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা পালিত হচ্ছে শুক্রবার৷ তবে বৃহস্পতিবার ঈদ উদযাপন করছিল সৌদি আরবের মানুষ৷ ঈদের দিনে হজের আনুষ্ঠানিকতাও ঠিকভাবেই চলছিল৷ একেবারে শেষ দিকে হুড়োহুড়ি শুরু হওয়ার কারণেই শুরু হয় বিপর্যয়৷
অথচ একটু আগেই সবই ছিল শান্ত
হজের একেবারে শেষ দিকের একটি আনুষ্ঠানিকতা ‘বড় জামারা’, অর্থাৎ ‘বড় শয়তান’-কে লক্ষ্য করে নুড়ি ছুড়ে মারা৷ নির্বিঘ্নেই শুরু হয়েছিল এই আনুষ্ঠানিকতা৷ প্রতীকী অর্থে শয়তানকে ঢিল ছোড়ার জন্য পাথর সংগ্রহ করার সময়ও বিশ্বের নানা দেশ থেকে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে কোনো উত্তেজনা বা আতঙ্ক লক্ষ্য করা যায়নি৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
একদিকে নিশ্চিন্ত মানুষ, অন্যদিকে....
হাজিদের নির্বিঘ্নে শয়তানকে লক্ষ্য করে নুড়ি বা পাথর ছোড়ার এই ছবি দেখে কে বলবে এই আনুষ্ঠানিকতা সারতে গিয়েই জীবনাবসান হতে পারে অনেকের! অথচ তা-ই হয়েছে৷ পায়ের নীচে চাপা পড়ে সাতশ’রও বেশি মানুষ মারা গেছে, আহতের সংখ্যাও অনেক৷
ছবি: Reuters/Ahmad Masood
উদ্ধার তৎপরতা
ভিড়ের চাপ এবং হুড়োহুড়িতে হতাহতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই নিরাপত্তাকর্মীরা ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে৷ ততক্ষণে অবশ্য মৃত্যুর মিছিলটা অনেক দীর্ঘ গয়ে গেছে!
ছবি: Reuters/Saudi Civil Defense agency
নির্দেশনা না মানায়
সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ-র ধারণা, হজযাত্রীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ঠিকভাবে না মানায় এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে৷
ছবি: Reuters/Stringer
সৌদির সমালোচনায় খামেনেই
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি-খামেনেই দুর্ঘটনার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের ‘অব্যবস্থাপনা’-কে দায়ী করেছেন৷ দুর্ঘটনায় ইরানের প্রায় একশ’র বেশি হজযাত্রী নিহত হয়েছেন৷ তাই দেশটিতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
পরিকল্পনা পর্যালোচনা
দুর্ঘটনার পর সৌদি বাদশা সালমান হজ পরিকল্পনা নতুন করে পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Douliery
পোপের শোক প্রকাশ
পোপ ফ্রান্সিস বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে তাঁর সান্ধ্য প্রার্থনাসভার সূচনায় মিনায় নিহতদের জন্য সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন৷ পোপ সেন্ট প্যাট্রিকস ক্যাথিড্রালে তাঁর প্রাথমিক প্রার্থনায় বলেন, ‘‘এই প্রার্থনার মুহূর্তে আমি তোমাদের সকলের সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি প্রার্থনায় মিলিত হচ্ছি৷’’
ছবি: Reuters
জার্মানির পক্ষ থেকে শোক
জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার মিনার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Andersen
ফুটবল, রাগবি ইভেন্টের ব্যবস্থাপনা আরও ভালো!
এ বছর ২০ লক্ষ হজযাত্রীর নিরাপত্তার জন্য প্রায় এক লক্ষ নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবস্থা করেছিল সৌদি আরব৷ কিন্তু তারা এত বড় জনসমাবেশের নিরাপত্তা দেয়ার মতো প্রশিক্ষিত নন এবং নিরাপত্তা কর্মীদের ভাষাজ্ঞানের অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইরফান আল-আলাউই৷ মক্কায় যে উন্নয়ন কাজ চলছে তার কঠোর সমালোচক আলাউই৷ তিনি মনে করেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে ফুটবল ও রাগবি প্রতিযোগিতা আরও ভালভাবে আয়োজন করা হয়৷
ছবি: Reuters/Saudi Red Crescent
২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড়
১৯৯০ সালে হজের সময় মক্কায় এক দুর্ঘটনায় পদদলিত হয়ে ১,৪২৬ জন নিহত হয়েছিল৷ ওটাই এখন পর্যন্ত হজ সম্পর্কিত দুর্ঘটনায় নিহতের সবচেয়ে বড় সংখ্যা৷ বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনার অবস্থান তার পরেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
দু’সপ্তাহের মধ্যে সৌদিতে আবার শোকের ছায়া
গত ১১ সেপ্টেম্বরও দুর্ঘটনার কারণেই খবরের শিরোনামে এসেছিল সৌদি আরব৷ সেদিন মক্কার মসজিদুল হারামে ক্রেন ভেঙে পড়ায় মারা যান ১০৯ জন৷ ৯ বছর আগে আরেকটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল সৌদি আরবে৷ সেবার শয়তানকে লক্ষ্য করে নুড়ি ছুড়ে মারার সময়ই নিহত হয়েছিলেন ৩৬৪ জন হাজি৷