প্রথমে জন বোল্টন, তারপর ভাতিজি মেরি ট্রাম্প বই লিখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে বিড়ম্বনায় ফেলেছেন৷ আইনি পথে বাধা সৃষ্টি করা যায়নি৷ ফলে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জীবন বেশ ঘটনাবহুল৷ তিনি মোটেই চান না, সব বিষয় জনসমক্ষে আসুক৷ কিন্তু পরিবারেরই এক সদস্য তাঁর সম্পর্কে একটি বই লিখে বেশ কিছু বিস্ফোরক দাবি করছেন৷ বইয়ের শিরোনাম ‘...আমার পরিবার কীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তিকে সৃষ্টি করেছে’৷ ভাই রবার্ট ট্রাম্পকে দিয়ে সেই বই প্রকাশের পথে আইনি বাধা সৃষ্টি করে আবার বিফল হলেন ট্রাম্প৷ সোমবার নিউ ইয়র্কে সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি ডনাল্ডের ভাতিজি মেরি ট্রাম্পের বই সম্পর্কে সব আপত্তি অগ্রাহ্য করলো৷ ফলে এর আগে একই আদালত বই প্রকাশের পথে যে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করেছিল, তা তুলে নেওয়া হলো৷ ফলে মঙ্গলবার বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হবে৷ প্রকাশনা সংস্থা সাইমন অ্যান্ড শুস্টার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে৷ এর আগে ২৮শে জুলাই বই প্রকাশের তারিখ স্থির করা হয়েছিল৷ জনসমক্ষে বইটিকে ঘিরে বিপুল আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷
রবার্ট ট্রাম্প আদালতের কাছে আর্জি জানিয়ে বলেছিলেন, এক চুক্তি অনুযায়ী পরিবারের সদস্যরা জনসমক্ষে নিজেদের বিষয়ে কিছু বলতে পারেন না৷ মেরি ট্রাম্পের বাবার মৃত্যুর পর সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে বিরোধ মেটাতে সেই চুক্তি হয়েছিল৷ সেই চুক্তি সত্ত্বেও আদালত ২০২০ সালের প্রেক্ষাপটে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে মত প্রকাশের অধিকারকেই প্রাধান্য দিয়েছে৷ তাছাড়া এর ফলে পরিবারের কী ক্ষতি হবে, রবার্ট ট্রাম্প সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো কারণ জানাতে পারেন নি বলে বিচারপতি মনে করিয়ে দিয়েছেন৷
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনস্তত্ত্বিক হিসেবে মেরি ট্রাম্প ডনাল্ড ট্রাম্পকে ‘নার্সিসিস্ট’ বা স্বকামী ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ তাঁর মতে, ব্যক্তি হিসেবে ডনাল্ড এমন সংজ্ঞার নয়টি পূর্বশর্তই পূরণ করেন৷
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে নিজের ভাবমূর্তি সম্পর্কে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের লেখা একটি বই প্রকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি৷ সেই বইয়ে হোয়াইট হাউসের অন্দরের অনেক অপ্রিয় বিষয় উঠে এসেছে৷ এবার ভাতিজির বইয়ে ব্যক্তি হিসেবে ডনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কেও ক্ষতিকারক বিষয় জনসমক্ষে চলে আসবে বলে আশঙ্কা করছিল হোয়াইট হাউস৷ করোনা সংকটসহ একাধিক সমস্যায় জর্জরিত ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে এমন সব ঘটনা মোটেই সুখকর নয়৷
এসবি/এসিবি (এপি, রয়টার্স)
২২ মে’র ছবিঘরটি দেখুন...
প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা করে ‘বেকার’ তাঁরা
ডনাল্ড ট্রাম্প আর ব্রাজিলের জাইয়া বলসোনারোর কাছে যেন মানুষের প্রাণের চেয়ে দেশের অর্থনীতিই বড়৷ তাদের এমন মনোভাবের বিরোধিতা করে বিপদে পড়েছেন কর্মকর্তারা৷
ছবি: imago images/ZUMA Wire/Y. Gripas
ডা. অ্যন্থনি ফাউচি
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় এলার্জি ও সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের প্রধান৷ এছাড়া হোয়াইট হাউসের করোনা ভাইরাস রেসপন্স টিমের একজন বিশেষজ্ঞ৷ করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দিতে একসময় ফাউচি নিয়মিত টেলিভিশনে উপস্থিত হতেন৷ কিন্তু ৪ মে’র পর আর তাঁকে টিভিতে দেখা যায়নি৷ কারণ নির্বাচনের বছর হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাড়াতাড়ি লকডাউন তুলে দিতে চান, যার বিরুদ্ধে ফাউচি৷ এজন্য তাকে আর টিভির সামনে আসতে দেয়া হচ্ছে না৷
ছবি: imago images/ZUMA Wire/Y. Gripas
ট্রাম্পের সমালোচনায় ওবামা
করোনা মহামারি শুরুর পর ট্রাম্পের নেয়া পদক্ষেপকে ‘অ্যাবসোলিউট ক্যাওটিক ডিজাস্টার’ বলেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ এদিকে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি এক সপ্তাহ আগে লকডাউনে যেতো তাহলে ৩৬ হাজার মানুষের প্রাণ হয়ত বেঁচে যেতো৷ দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৯৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Rehle
লুই হেনরিক মানদেত্তা
তিনি ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন৷ বর্তমানে এই দেশটিতে করোনার প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে৷ করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের সমর্থক ছিলেন মানদেত্তা৷ কিন্তু তাঁর চরম ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারো দ্রুত দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যেতে চান৷ তাই গত মাসের মাঝামাঝি মানদেত্তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/A. Anholete
নেলসন টাইখ
মানদেত্তার পর টাইখকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বানিয়েছিলেন বলসোনারো৷ প্রথমে টাইখ তাঁর প্রেসিডেন্টের মতোই কথাবার্তা বললেও পরবর্তীতে দুজনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়৷ এমনকি টাইখকে না জানিয়ে বলসোনারো একসময় জিম, বিউটি পার্লার ও সেলুনকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করেন৷ এছাড়া ম্যালেরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইন ব্যবহার নিয়েও বলসোনারোর সঙ্গে টাইখের বিরোধ দেখা দেয়৷ এর ফল হিসেবে গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেন টাইখ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Peres
করোনা নিয়ে বলসোনারো
মানুষ মারা গেলেও দ্রুত অর্থনীতি স্বাভাবিক করতে চান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট৷ যেমন গতমাসে টাইখকে নিয়োগ দেয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি জানি... জীবন অমূল্য৷ কিন্তু অর্থনীতি ও চাকরি অবশ্যই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে৷’’ তারও আগে বলসোনারো এক সাংবাদিককে বলেছিলেন, ‘‘কয়েকজন মারা যাবে৷ আমি দুঃখিত৷ এটাই জীবন৷’’ ব্রাজিলে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷