রাজধানীর হাতিরঝিলের পাড় থেকে বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন ডিবিসি নিউজের একজন কর্মীর গলা ও পেট কাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷ এ ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি তবে তদন্ত শুরু হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
নিহত ২৮ বছর বয়সি আব্দুল বারি ডিবিসি নিউজের প্রডিউসার ছিলেন৷ বুধবার সকাল ৭টার দিকে পুলিশ প্লাজার উল্টো দিকে লেকের ধারের সড়কে বারির ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায় বলে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ শাহানুর রহমান৷
তিনি বলেন, ‘‘বারির গলা ও পেটে ছুরিকাহতের চিহ্ন রয়েছে৷ লাশের পাশে তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, জুতা এবং একটি চাকু রাখা ছিল৷’’
মহাখালী ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় ডিবিসি নিউজের কার্যালয়ের কাছে একটি মেসে থাকতেন আব্দুল বারি৷ মঙ্গলবার তার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল বলে ডিবিসি নিউজের প্রধান প্রতিবেদক রাজিব ঘোষ জানান৷ তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আজ সকালে পুলিশের কাছ থেকেই আমরা বারির খুন হওয়ার কথা জানতে পারি৷’’
ডিবিসি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, সকালে কয়েকজন পথশিশু লেকের পাড়ে লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ সদস্যদের জানায়৷ পরে পুলিশ সেখান থেকে বারির লাশ উদ্ধার করে৷
‘শান্তির দেশে’ সাংবাদিকেরা কম নিরাপদ
যেসব দেশে যুদ্ধ বা সংঘাত চলছে, এক সময় সেখানে সাংবাদিকতার ঝুঁকি অনেক বেশি ছিল৷ কিন্তু রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে ভিন্ন কথা৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: UNESCO
করোনাকালেও ৫০ জনের মৃত্যু
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে সারা বিশ্বে নিহত হয়েছেন মোট ৫০ জন সাংবাদিক৷ সবারই মৃত্যুর কারণ সাংবাদিকতা৷২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে মৃত্যু হয় তাদের৷ ২০১৯ সালে সংখ্যাটা ছিল ৫৩৷ তবে মনে রাখা দরকার, ২০২০ সাল জুড়ে করোনার কারণে সাংবাদিকরা মাঠ পর্যায়ে তেমন কাজই করতে পারেননি৷
ছবি: Felix Marquez/AP/dpa/picture alliance
‘শান্তিময়’ দেশগুলোতে মৃত্যু বেশি
২০১৬ সালে নিহত সাংবাদিকদের শতকরা ৫৮ ভাগই ছিল যুদ্ধ চলছে এমন দেশগুলোতে৷ ২০২০ সালে সেরকম দেশে সাংবাদিক হত্যার হার কমে হয়ে যায় ৩২ ভাগ৷ অর্থাৎ, যুদ্ধের লেশমাত্র নেই এমন দেশগুলোতেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয় বাকি ৬৮ ভাগ সাংবাদিককে৷
ছবি: Colourbox
মেক্সিকোর ভয়াবহ পরিস্থিতি
২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি আট জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন মেক্সিকোতে৷ তারপরই রয়েছে ভারত, ফিলিপাইন্স আর হন্ডুরাস৷ ভারতে মারা গেছেন চার জন আর ফিলিপাইন্স এবং হন্ডুরাসে তিন জন করে৷
ছবি: Reuters/Diario El Mundo
জেনেবুঝে হত্যা
২০২০ সালে যে ৫০ জন সংবাদকর্মীকে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়, তাদের ৮৪ ভাগই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার৷ ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রকাশ করা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা বিশ্বে সাংবাদিকদের পরিকল্পিতভাবে হত্যার প্রবণতাও বেড়েছে, কারণ, ২০১৯ সালে এমন হত্যার ঘটনা ছিল ৬৩ শতাংশ৷
ছবি: bilderbox
জেলজুলুম
২০২০ সালে মোট ৩৮৭ জান সাংবাদিককে বিভিন্ন দেশে গ্রেপ্তার বা জিম্মি করা হয়৷৩৮৭ জনের মধ্যে নিখোঁজও রয়েছেন কয়েকজন৷
ছবি: Imago Images/S. Boness
5 ছবি1 | 5
ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার নাজমুল হাসান ফিরোজকে উদ্ধৃত করে ডিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘ধারণা করা হচ্ছে, প্রথমে তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে৷ পরে সে বাঁচার জন্য পানিতে নেমে পড়ে, কারণ তার জামা কাপড় ভেজা ছিল৷ পরে বারি আবার লেকপাড়ে উঠে আসলে তাকে মাটিতে শুইয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়৷’’
এ ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ৷ পরিদর্শক শাহানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, তারা তদন্ত শুরু করেছেন৷ তবে বারির হত্যাকারী সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট কোনো ধারণা পায়নি পুলিশ৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড: আশ্বাস ও বাস্তবতা
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নিজ বাসায় খুন হয়েছিলেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি৷ এরপর হত্যার রহস্য উন্মোচনে বিভিন্ন সময়ে নানা আশ্বাস এলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি৷
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশ
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ কিন্তু প্রকৃত খুনিরা আজও ধরা পড়েনি৷
ছবি: bdnews24.com
নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নতুন চমক
হত্যাকাণ্ডের সাত মাসের মাথায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন মহিউদ্দীন খান আলমগীর৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিলেন, যার মধ্যে পাঁচজনকেই আরেকটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তবে হত্যাকাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে আয়োজিত সভায় যোগ দিয়ে সাগরের মা সালেহা মনির আসল খুনি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘‘আমরা কোনো জজ মিয়া নাটক দেখতে চাই না৷’’
ছবি: Mustafiz Mamun
আবার নতুন মন্ত্রী, নতুন আশ্বাস
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, ‘‘আমরা কোনো জজ মিয়া নাটক করে মামলা ধামাচাপা দিতে চাইছি না৷ প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা বর্তমান সরকারের আমলেই হবে৷’’ উল্লেখ্য, সেই ‘বর্তমান’ সরকারের আমল শেষ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আরেকটি সরকারও যাত্রা শুরু করেছে৷
ছবি: bdnews24.com
এবার বিব্রত কামাল
নতুন সরকারেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল৷ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দকে সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯) তিনি বলেন, ‘‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে সরকার আন্তরিক৷ আশা রাখি, দ্রুতই এর একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারবো৷ খুনিরা দ্রুত ধরা পড়বে৷ এই দীর্ঘ সময়েও এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় আমি নিজেও বিব্রত বোধ করছি৷’’
ছবি: DW
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস এবং বাস্তবতা
হত্যাকাণ্ডের দু’দিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাগর-রুনি দম্পতির একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘের লেখাপড়ার সব দায়-দায়িত্ব নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন৷ এই দম্পতির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী এই আশ্বাস দিয়েছিলেন৷ কিন্তু তা পূরণ হয়নি বলে গতবছর ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছিলেন সাগরের মা সালেহা মনির৷
ছবি: Reuters/A. Alfiky
সাগরের মায়ের ক্ষোভ
হত্যাকাণ্ডের সাত বছরেও রহস্য উন্মোচন না হওয়ায় এবং প্রকৃত খুনিরা ধরা না পড়ায় রবিবার সাগরের মা সালেহা মনির প্রথম আলোকে বলেন, ‘‘রাষ্ট্র যদি না চায় তাহলে তো কারো বের করার ক্ষমতা নেই৷ সরকারের যদি সদিচ্ছা না থাকে, তাহলে আর কী৷ কত বড় বড় ঘটনা বের হয়ে গেল৷ নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার আসামিদের ফাঁসির হুকুম হয়ে গেছে আর সাগর-রুনির খুনের রহস্য বের হবে না?’’