‘ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি’ ডাব্লিউসিএস-এর ভারত শাখায় কর্মরত বিজ্ঞানী বিনয় কুমার ২০১৬ সালে কর্ণাটকের নগরহোল বনেঅভাবনীয় এই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করেন৷ এতে দেখা যাচ্ছে, একটি মহিলা হাতি মাটিতে পড়ে থাকা কাঠ-কয়লা গলায় ঢুকিয়ে একটু পর ছাই হিসেবে তা বের করে দিচ্ছে, যা দেখতে ধোঁয়ার মতো দেখাচ্ছে৷
অদ্ভুত এই ঘটনার তাৎপর্য বুঝতে পেরে এতদিন পর ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে৷
বণ্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা ভিডিওটি শেয়ার করেছে৷
বিনয় কুমার জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ-কে বলেন, একটি হাতির এমন অদ্ভুত আচরণে বিজ্ঞানী মহল বিস্মিত৷ ঘটনাটি কী ঘটেছে, কেন ঘটেছে, সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নয় বলেও জানান তিনি৷
তবে ডাব্লিউসিএস-এর বিজ্ঞানী বরুণ গোস্বামী ধারণা করছেন, চিকিৎসাগত কারণে হয়ত হাতিটি ঐভাবে কাঠ-কয়লা মুখে ঢুকিয়েছিল৷ কারণ, কাঠ-কয়লায় এমন উপাদান থাকে, যা দিয়ে বিষাক্ত পদার্থ দূর করা যায়৷ কাঠ-কয়লার এমন গুণের কারণে এর আগে তাঞ্জানিয়ার জানজিবারের বানরদের এভাবে কাঠ-কয়লার সাহায্য নিতে দেখা গেছে৷
এছাড়া অনেকে ধারণা করছেন, হাতিটি হয়ত দাঁতের ব্যথা কমাতে এই কাজ করেছে৷
জেডএইচ/এসিবি (ডিপিএ)
একটি আন্তর্জাতিক পশু অধিকার সংস্থা বলছে, পর্যটকরা যে নানা দেশে হাতির পিঠে চড়ে আনন্দ করেন, তার মাধ্যমে আসলে প্রকারান্তরে হাতিদের ওপর ভয়ংকর নিপীড়নকেই উৎসাহিত করা হয়৷ তাই সবাইকে হাতির পিঠে চড়তে নিরুৎসাহিত করেছেন তারা৷
ছবি: Jennifer Pastorini/Centre for Conservation and Research Sri Lankaলন্ডনভিত্তিক ‘ওয়ার্ল্ড অ্যানিমেল প্রোটেকশন’ (ডাব্লিউএপি) এশিয়ার কয়েকটি দেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে হাতিদের কাজ করতে বাধ্য করার প্রমাণ পেয়েছে৷ তাদের এক সমীক্ষার তথ্য প্রকাশ করে ডাব্লিউএপি জানিয়েছে, এশিয়ার অনেক দেশে, বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় কিছু স্থানে প্রতি চারটি হাতির মধ্যে তিনটিকেই নির্যাতন করে নানা ধরনের কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷
ছবি: Picture alliance/dpaepa/H. H. Youngডাব্লিউএপি জানাচ্ছে, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং ভারতে বুনো হাতিদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়৷ মূলত নির্যাতন করেই বশ করা হয় তাদের৷ এশিয়ায় হাতি কমছে৷ তবে এখনো এ অঞ্চলে ৫০ হাজারের মতো হাতি আছে বলে জানিয়েছে ডাব্লিউএপি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Celisবশ করার কাজটা সাধারণত শুরু করা হয় হাতিদের একেবারে শৈশব থেকে৷ শিশু হাতিকে প্রথমে মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়৷ কয়েক সপ্তাহ বন্দি রাখা হয় তাকে৷ বন্দিদশায় অনেক ধরনের নির্যাতনও সইতে হয় হাতিশিশুকে৷ সার্কাস বা অন্য কাজের জন্য ভবিষ্যতে যা যা তাকে করতে হবে, সেগুলো রপ্ত করতে দেরি হলে পিটুনি তো চলেই, কোথাও কোথাও নাকি ছুরিও চালানো হয় শিশুদেহে৷
ছবি: Picture alliance/AP Photo/World Animal Protectionথাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের মোট ২২০টি পর্যটন কেন্দ্রের তিন হাজার হাতির অবস্থা দেখে ডাব্লিউএপি জানিয়েছে, হাতিগুলোকে অনেকক্ষেত্রে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়৷ খুব কম ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত এবং উপযুক্ত খাবার দেয়া হয় বলে অপুষ্টিতেও ভোগে হাতিরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. S. Peiferমধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বেশ কিছু ওয়াইল্ড লাইফ টুরিজম সেন্টারে গিয়েও হাতিদের দুরবস্থা দেখেছে ডাব্লিউএপি৷ দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের হাতি সংরক্ষন কর্মসূচির ফাঁক গলে কালো বাজারে হাতি ক্রয়-বিক্রয়ও চলছে দেদার৷ মানুষের হাতির পিঠে চড়ার শখের শিকার করতে থাইল্যান্ডে একটা বাচ্চা হাতি নাকি ২৫ হাজার ডলারেও বিক্রি করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Kochetkovথাইল্যান্ডে পোষা হাতি আছে ৪ হাজারের মতো৷ প্রায় সব হাতিই পর্যটকদের বিনোদনে নিয়োজিত৷ এর বাইরে প্রায় আড়াই হাজার বুনো হাতিকেও মানুষের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে৷ এশিয়ার আরেক দেশ মিয়ানমারেও বিপুল সংখ্যক হাতিকে ‘কর্মজীবী’ হতে বাধ্য করা হয়৷ সে দেশে সরকারি হিসেবেই ২৮৫০টি হাতি বনাঞ্চলে গাছ বহন করে জীবিকা নির্বাহ করে৷
ছবি: Jennifer Pastorini/Centre for Conservation and Research Sri Lankaএশিয়ার হাতিদের সবচেয়ে বেশি দুর্দশা পর্যটন শিল্পে৷ থাইল্যান্ড সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সে দেশে পর্যটকদের শতকরা অন্তত ৪০ ভাগই নাকি হাতির পিঠে চড়তে না পারলে ভ্রমণসুখ যথার্থ হয়েছে বলে মনে করেন না৷ হাতিনিপীড়ন কমাতে পর্যটকদের তাই হাতির পিঠে চড়তে নিরুৎসাহিত করছে ডাব্লিউএপি৷
ছবি: Reuters/J. Silva