দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক সারা বিশ্বে খ্যাত৷ কিন্তু সেখানেও ‘বিগ ফাইভ’-এর দু’টি প্রজাতির মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা বিরল৷ তাই ভিডিওটি ভাইরাল হতে বাধ্য ছিল৷
ছবি: YouTube
বিজ্ঞাপন
এ বছরের ২৮শে ফেব্রুয়ারি তারিখে আপলোড করা ভিডিওটি এক মাসের মধ্যে দেখেছেন প্রায় সাত লাখ মানুষ৷ যার ক্যামেরায় হাতি ও গণ্ডারের এই অনবদ্য মোলাকাতের দৃশ্য ধরা পড়েছে, তিনি হলেন সাফারি টুরিস্ট জো গ্রেগরি৷ গ্রেগরি নিজেই লেটেস্টসাইটিংসডটকম-কে সে কাহিনি শুনিয়েছেন৷
ক্রুগারের এই অংশটা ন্যাশনাল পার্কের এক প্রত্যন্ত প্রান্তে, যেখানে শুধু বোটে করে যাওয়া যায়৷ টুরিস্টরা সেখানে পৌঁছালে, তাঁদের লাঞ্চ খাইয়ে দুপুরের ‘গেম ড্রাইভে’ নিয়ে যাওয়া হয়৷ গেম ড্রাইভ বলতে গাড়িতে চড়ে ওয়াইল্ডলাইফ দেখতে যাওয়া৷
রেঞ্জাররা জো আর অন্যান্য টুরিস্টদের নিয়ে দ্বীপটির উপর জলাভূমি এলাকায় গাড়িতে চড়ে ঘুরছিলেন৷ হঠাৎ তাঁরা একদল হাতি ও একটি গণ্ডারের ঝোপঝাড় ভেঙে ধেয়ে আসার শব্দ শোনেন৷ তারপর দেখেন দুই মহারথীকে৷
প্রথমটি এক তরুণ মদ্দা হাতি, কিন্তু ‘মস্ত’, অর্থাৎ মদমত্ত৷ দ্বিতীয়টি একটি মদ্দা সাদা গণ্ডার৷ হাতি আর গণ্ডার হল ক্রুগারের ‘বিগ ফাইভ' বা পাঁচটি সবচেয়ে বিপজ্জনক জানোয়ার – অর্থাৎ হাতি, গণ্ডার, সিংহ, চিতাবাঘ ও বুনোমোষের মধ্যে এরা হলেন প্রথম ও দ্বিতীয়৷ দ্বিতীয়ত, হাতি আর গণ্ডার উভয়েই তৃণভোজী বলে এই দু’টি প্রাণীর মধ্যে কোনোকালেই বিশেষ সদ্ভাব নেই৷ কাজেই দুই পাড়ার মস্তানের মধ্যে হঠাৎ সাক্ষাৎ হলে গোলমাল বাধার শঙ্কা তো থাকবেই৷
পশুজগতে ঘুমের অভ্যাস
মানুষ হিসেবে দিনে আমাদের ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন পড়ে৷ হাতি, তিমিসহ নানা প্রাণীর ঘুমের সময় ও কায়দা কিন্তু বেশ বিস্ময়কর৷
ছবি: picture-alliance/OKAPIA KG, Germany
হাতি ঘুমায় বড় কম
নতুন এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফ্রিকার দুই মাদী হাতি দিনে মাত্র ২ ঘণ্টা ঘুমায়৷ কয়েকদিন তো তাদের একেবারেই ঘুমই হয়নি৷ ফলে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে কম ঘুমানোর ক্ষেত্রে তারাই রেকর্ড করেছে৷ গবেষকদের মতে, পরিবারের সুরক্ষার চিন্তায় হাতিদের ঘুম কম হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/T. Karumba
মাটিতে শুয়ে ছোট্ট ঘুম
হাতির মতো জিরাফও দিনেই ঝিমাতে ভালবাসে৷ দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ঘুমায় জিরাফরা৷ তবে মাটিতে শুয়ে মাত্র আধ ঘণ্টা ঘুম হয়৷ গবেষকদের মতে, মানুষের মতো তাদেরও ঘুমের মধ্যে ‘ব়্যাপিড আই মুভমেন্ট’ পর্যায় রয়েছে৷
ছবি: Florian Sicks
দাঁড়িয়ে ঘুমাতে ওস্তাদ
ঘোড়াদের দিনে সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টা ঘুমালেই চলে৷ তারাও দাঁড়িয়ে ঘুমাতে ভালোবাসে৷ তবে তার জন্য বেশি শক্তিক্ষয় হয় না৷ পায়ে শিরা ও ধমনীর এক জটিল কাঠামোর দৌলতে এভাবে ঘুমানোর সময় তাদের পেশি কাজে লাগাতে হয় না৷
ছবি: DPA
অন্য ধরনের আধা-ঘুম
ডলফিন বা শুশুক মস্তিষ্কের একটা অংশ ‘সুইচ অফ’ করে দেয়৷ এটা না করলে তাদের ডুবে মরতে হতো, কারণ, প্রতি ৫ মিনিট অন্তর তাদের তাজা বাতাস নিতে সমুদ্রপৃষ্ঠে যেতে হয়৷ ফুসফুসে জল যাতে না ঢোকে, সেই খেয়ালও রাখতে হয়৷ দু’ঘণ্টা পর মস্তিষ্কের অন্য অংশের ঘুমানোর পালা৷
ছবি: Pascal Kobeh
জলের নীচে আড়াআড়ি ঘুম
স্পার্ম হোয়েল গোত্রের তিমির ঘুমানোর ভঙ্গিকে গবেষকরা ‘ড্রিফট ডাইভিং’ নাম দিয়েছেন৷ ৩০ মিনিট পর্যন্ত তিমির দেহ নিথর হয়ে যায়৷ এখনো পর্যন্ত দিনে ৩ ঘণ্টা ঘুমের প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ বাড়তি ঘুমের জন্য এই গোত্রের তিমিরা ডলফিনদের কায়দা কাজে লাগায়৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife
ঘুম যখন মৃত্যুর ফাঁদ
ব্লু শার্ক গোত্রের হাঙরকে মৃত্যু এড়াতে সর্বক্ষণ গতিশীল থাকতে হয়৷ কানকোর মধ্য দিয়ে জল না বয়ে গেলে তারা অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না৷ অর্থাৎ জলের মধ্যে স্থির হলেই মৃত্যু অনিবার্য৷ তাই সমুদ্রপৃষ্ঠে সাঁতার কাটতে কাটতে ঘুমের সময় তারা নীচে ডুব দেয়৷ এমনটা চলতেই থাকে৷ সমুদ্র-গবেষকরা এই প্রক্রিয়াকে ‘ইয়ো-ইয়ো ডাইভিং’ বলে থাকেন৷
ছবি: gemeinfrei
ঘুমকাতুরে বাদুড়
দিনে মাত্র ৪ ঘণ্টা জেগে থাকে বাদুড় – তাও দিনের বেলা নয়, শুধু রাতে শিকারের সময়৷ শরীরে রক্ত সঞ্চালনের বিশেষ কাঠামোর দৌলতে তারা মাথা নীচু করে ঝুলতে পারে৷
বন্দিদশায় আলস্য
মানুষের জিম্মায় থাকার সময় স্লথ নামের বানরের মতো দেখতে স্তন্যপায়ী প্রাণী দিনে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমায়৷ পরিবেশভেদে তাদের ঘুমের প্রবণতা বদলে যায়৷ জঙ্গলে থাকলে হামলা প্রতিহত করতে আর খাদ্য সংগ্রহে তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়৷ তাই ঘুমের সময় কমে যায়৷
ছবি: Imago/imagebroker
ইউক্যালিপটাস ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়
কোয়ালা ভালুক দিনে প্রায় ৪০০ গ্রাম পাতা খায়৷ সেই পাতায় পুষ্টি বড় কম, সেইসঙ্গে রয়েছে টক্সিন৷ ফলে হজম করতে সময় লাগে৷ সেই সময়ে শক্তিক্ষয় কমাতে তারা দিনে প্রায় ২০ ঘণ্টা ঘুমায়৷
ছবি: AP
9 ছবি1 | 9
একজনের ওজন পাঁচ টন, তো অন্যজনের ওজন চার টন৷ একজনের শুঁড় আর সুবিশাল পায়ের চাপ৷ অন্যজনের খাড়া শিং! আর দু’জনেই টেস্টোস্টেরোন মানে ‘পুরুষত্বে’ ভরপুর৷
তাও হাতি ভায়া সম্মুখসমরে না গিয়ে, মাথার ওপর একটা গাছের ডাল ব্যালান্স করে, পরে সেটা শৃঙ্গী প্রতিদ্বন্দ্বীর নাকের সামনে ফেলে দিলেন – চ্যালেঞ্জ হিসেবে৷
গণ্ডার ভায়া একবার হাতির দিকে খানিকটা দৌড়ে গিয়ে দেখালেন: ‘‘আরে আমি কি তোকে ভয় পাই নাকি? তোর ওজন না হয় একটু বেশি...৷’’
হাতি ভায়া তখন ডালটা আবার মাটি থেকে তুলে নিয়ে শুঁড় দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন: ‘‘দেখলি আমার কিরকম গায়ের জোর?...’’
গণ্ডার ভায়া তখন ব্যাকগিয়ার দিয়ে পিছু হটছেন৷ কিন্তু আসল কথা হলো, মারামারির দিকে দু'জনের কেউই গেলেন না৷ দু'জনেই জানেন কিনা, এইটুকু মস্তানির জন্য একটা বড় চোট পেয়ে কোনো লাভ নেই৷
তাহলে জিতল কে? জো গ্রেগরি নিজেই বলেছেন: দু'জনেই৷
এ থেকে কি আমাদের কিছু শেখার আছে?
এসি/ডিজি
প্রাণীর শরীরের বিভিন্ন অংশের অদ্ভুত ব্যবহার
হাতির দাঁত ও গণ্ডারের শিং-এর যে মূল্যবান ব্যবহার আছে তা আমরা অনেকেই জানি৷ এর বাইরেও অদ্ভুত ও অনেকটা অপ্রয়োজনীয় কারণে প্রাণীর শরীরের বিভিন্ন অংশ কাজে লাগায় মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Gacad
ভল্লুকের থাবা
ভল্লুকের পিত্ত ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে৷ এছাড়া তাদের থাবা খাবার হিসেবে খেয়ে থাকেন এশিয়ার কয়েকটি দেশের মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/ChinaFotoPress
কচ্ছপের খোলস
কয়েক শতাব্দী আগে কচ্ছপের খোলস দিয়ে অলংকার, শিল্পকর্ম, চুলের অ্যাকসেসরিজ ইত্যাদি তৈরি করা হতো৷ এ কাজে সাধারণত ‘হকসবিল’ কচ্ছপের খোলস ব্যবহৃত হতো৷ ফলে ধীরে ধীরে ঐ কচ্ছপের বিলুপ্তি ঘটছিল৷ তাদের বাঁচাতে ১৯৭৩ সালে কচ্ছপের খোলসের ব্যবসার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও বিশ্বের অনেক অঞ্চলে এখনও তা চলছে৷
ছবি: Robert Harding
নপুংসকতার চিকিৎসায় বাঘের হাড়
চীনে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে বাঘের চামড়ার কদর আছে৷ এর বাইরে বাঘের হাড় দিয়ে ওয়াইন তৈরি করা হয়৷ নপুংসকতা ও বাতের চিকিৎসায়ও বাঘের হাড় ব্যবহৃত হয়৷
ছবি: EIA
হাঙরের ডানা
স্যুপ হিসেবে খাওয়ার জন্য হাঙরের ডানা কেটে নেয়া হয়৷ কিন্তু হাঙরের মাংসের যেহেতু কোনো কদর নেই, তাই ডানা কাটা অবস্থাতেই হাঙরগুলোকে সাগরে ছেড়ে দেয়া হয়৷ কিন্তু ডানা না থাকায় হাঙরের পক্ষে সাঁতার কাটা সম্ভব হয় না৷ ফলে সাগরে নামিয়ে দেয়ার কয়েকদিনের মধ্যে কষ্ট পেয়ে প্রাণ হারায় সে৷
ছবি: Gerhard Wegner/Sharkproject
চিতার ত্বক
মধ্য এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ আর রাশিয়ায় পোশাক তৈরিতে চিতার চামড়ার ব্যবহার আছে৷ এছাড়া বাঘের মতো চিতার হাড়ও এশিয়ায় ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হরিণের লালাগ্রন্থি
সুন্দর গন্ধের জন্য পারফিউম তৈরিতে হরিণের লালাগ্রন্থি ব্যবহৃত হয়৷ লালাগ্রন্থি সংগ্রহ করতে হরিণকে মারার প্রয়োজন না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটিই করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/Mary Evans Picture Library
ধনেশ পাখির শিং, পালক
ছবিটি রাইনোসেরোস গোত্রের ধনেশ পাখির৷ পোষা প্রাণী হিসেবে তাদের ব্যবহার আছে৷ এছাড়া তাদের পালকও অনেক কাজে লাগে৷ হেলমেটেড ধনেশের শিং হাতির দাঁতের মতোই মূল্যবান৷