1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাতের মুঠোয়, আপন পরিসরে বিনোদন

জনি হক ঢাকা
১৬ জুন ২০২৩

বাংলাদেশে সিনেমা, নাটক ও সংগীতাঙ্গনে চোখে পড়ার মতো বিবর্তন ঘটেছে। বিনোদনমূলক কন্টেন্ট উপভোগের বিকল্প মাধ্যম জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শিল্পীদের কাজের পরিধি বেড়েছে। একইসঙ্গে বাজার বড় হচ্ছে। ফলে আশার ফুল ফুটেছে বিনোদনের বাগানে।

ছবি: Moushumi Hamid

বাংলাদেশে সিনেমা আগের মতো এফডিসিকেন্দ্রিক নেই। এফডিসির বাইরেই বেশিরভাগ কাজ হচ্ছে ইদানীং। সিনেমাহল ছাড়াও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে। ওটিটিতে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ওয়েব সিরিজও। সেই সূত্র ধরে বলা যায়, নাটক এখন আর টেলিভিশন চ্যানেলনির্ভর নয়। ইউটিউবেই একক নাটক প্রকাশিত হচ্ছে বেশি। কারণ, দর্শকরা টিভি চ্যানেলে নাটক খুব একটা দেখছেন না।

অন্যদিকে গান-বাজনা তৈরির জন্য শিল্পীরা এখন আর বাণিজ্যিক স্টুডিওতে যান না। তাদের ঘরে ঘরে এখন স্টুডিও সেটআপ। একইভাবে বলা যায়, কনসার্ট রূপ নিয়েছে কোক স্টুডিও বাংলার মতো প্ল্যাটফর্মে।  সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এগুলো প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ও সহজলভ্যতার সুফল।

এসব বিবর্তনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশে এখন এমন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা ১১টি। এগুলো হলো চরকি, বঙ্গ বিডি, বিঞ্জ, বায়োস্কোপ, সিনেম্যাটিক, আই স্ক্রিন, দীপ্ত প্লে, বাংলাফ্লিক্স, টফি, টেলিফ্লিক্স এবং সিনেস্পট। এছাড়া বাংলাদেশে এখন দেখা যাচ্ছে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও, হইচই, আড্ডা টাইমস, ডিজনি প্লাস হটস্টার প্রভৃতি বিদেশি ওটিটি। করোনাকাল থেকে অনলাইনে নাটক, সিরিজ ও সিনেমা দেখার প্রতি দর্শকের আগ্রহ তৈরি হয়। দিনে দিনে সেটি বেড়েছে।

সারাবিশ্বেই এখন ওটিটির জনপ্রিয়তা আছে। বাংলাদেশে সেই হাওয়া লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। এর সুবিধা হলো ঘরে-বাইরে যেখানে ইচ্ছা ইন্টারনেটের মাধ্যমে স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিংবা স্মার্ট টিভিতে যেকোনো সময় বিজ্ঞাপন ছাড়াই কন্টেন্ট দেখা যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি আরও বেশি উপযোগী। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ট্রাফিক জ্যামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। তখন ওটিটিতে কন্টেন্ট দেখে সময় কাটছে অনেকের। বাসায় ফিরে সেই কন্টেন্টের পরের অংশ থেকে আবারও দেখা শুরু করা যায়। তাছাড়া সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমাহলের পরিবেশ দর্শকবান্ধব নয়। সেই সঙ্গে যানজটসহ আরও অনেক ঝক্কি তো আছেই। এর চেয়ে ড্রইং রুমে আরাম করে ওটিটিতে কন্টেন্ট দেখা দর্শকদের কাছে বেশি উপভোগ্য।

ওটিটি একটি দারুণ মাধ্যম: জয়া

This browser does not support the audio element.

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম যেন বাংলাদেশের মেধাবী নির্মাতাদের জন্য খরতাপে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে এসেছে। বেশ কয়েকজন তরুণ ওয়েব সিরিজ নির্মাণে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। শুধু দেশেই নয়, ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ের জন্য কন্টেন্ট বানিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন নির্মাতা নজর কেড়েছেন। এরমধ্যে অন্যতম আশফাক নিপুণ। তার ওয়েব সিরিজ ‘মহানগর' ও ‘মহানগর ২'-এর একেকটি সিজনের ২০০ মিনিট কন্টেন্ট দেখেছেন দর্শকরা। তাদের বেশিরভাগই ‘মহানগর' এবং ‘মহানগর ২' একটানা উপভোগ করেছেন। ফলে কারিগরি দিক চিন্তা করলে প্রশ্নটা এসেই যায়, ৮-৯ পর্ব টানা দেখার আগ্রহ ধরে রাখা এই ওয়েব সিরিজের সিনেমা হওয়ার দাবি ছিল কিনা? আশফাক নিপুণ মানছেন, কন্টেন্টের গুণমান অনুযায়ী সেটি সম্ভব ছিল। কিন্তু তিনি ঝামেলা দেখছেন অন্য জায়গায়, "আমার এই সিরিজের যে বিষয়বস্তু, সেটি সেন্সর বোর্ড কখনোই পাস করতো না। কারণ আমাদের সেন্সর পদ্ধতিতে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার বিধিনিষেধ রাখা হয়েছে। পৃথিবীর কোনো ওটিটিতেই নীতিমালা কিংবা সেন্সরশিপ নেই। তাই এই গল্প ওটিটিতে বলতে পেরেছি। সেই জায়গা থেকে বাস্তবতা হলো, ‘মহানগর' এবং ‘মহানগর ২' সিনেমা হিসেবে বানালে মুক্তিই পেতো না! সেন্সর বোর্ড হয়তো আটকে দিতো। আমাদের আশেপাশে যখনই এ ধরনের অনিয়ম নিয়ে গল্প বলা হয়েছে, তখনই সেসব কাজ আটকে গেছে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার শঙ্কায়। অথচ একটা নিয়ম কিংবা রাষ্ট্র কোনও শিল্পকে আটকে দিতে পারে না।”

বোঝা যাচ্ছে, ওটিটিতে কাজের স্বাধীনতা অন্যান্য মাধ্যমের চেয়ে একটু বেশি। এমন অবস্থা যতদিন থাকবে ততদিন এর উন্নতি হবে বলে মনে করেন অভিনেতা সোহেল মণ্ডল। তিনি চলচ্চিত্র ও ওটিটি দুই মাধ্যমেই কাজ করছেন। তার কথায়, ‘‘যেকোনও নতুন প্ল্যাটফর্ম বুঝতে পাঁচ-সাত বছর লেগে যায়। এটা ঠিক যে, ওটিটি যত উন্নতি করবে ততই আমাদের মতো অভিনেতাদের কাজের স্থায়ীত্ব বাড়বে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যে ধরনের কাজ হচ্ছে তাতে আশাবাদ রাখা যেতেই পারে।''

শুধু টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য কাজ করেন এমন অভিনেতা-অভিনেত্রী এখন হাতেগোনা পর্যায়ে নেমে এসেছে। ওটিটিসহ ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য তারা এখন বেশি সময় দিচ্ছেন। ফলে শিল্পীদের আয়ের নিশ্চয়তা অনেকাংশে বেড়েছে।

অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সত্যিকার অর্থেই যারা অভিনেতা-অভিনেত্রী, তাদের অনেকেই অনেকদিন ধরে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। যাদের কথা আমরা প্রায় ভুলে গিয়েছিলাম কিংবা অনেকদিন ধরে যাদের দেখিনি তাদের প্রত্যাবর্তনের খুব ভালো একটা সুযোগ হয়েছে ওটিটির সুবাদে। এটি অভিনয় জানা শিল্পীদের উপযোগী মাধ্যম। যারা অভিনয় জানেন, তারা এখন সুবিধা করতে পারছেন। তাছাড়া যেসব কন্টেন্ট নির্মাতা একটু অন্যভাবে ভাবেন, তারা এতদিন হয় সিনেমার বাজেট পাচ্ছিলেন না কিংবা নাটকে তাদের পোষায়নি। তারা এখন ওটিটিতে নিজেদের কাজ দেখানোর সুযোগ পাচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী এখন ওটিটি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। সেই জায়গা থেকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার জন্য বাংলাদেশের অন্যতম একটি মাধ্যম হতে পারে ওটিটি।''

দুই বাংলার নন্দিত অভিনেত্রী জয়া আহসান এখনও ওটিটির জন্য কাজ করেননি। তবে এই মাধ্যমকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার হাতে বড় পর্দার কিছু ছবির শুটিং-প্রচারণা বাকি ছিল। এ কারণে একটু ধীরে এগোচ্ছিলাম। ওটিটির কাজ হাতে নেইনি ঠিক, কিন্তু এ নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। আমার যেহেতু বেশকিছু কাজ হাতে ছিল, সে কারণে করা হয়নি। ওটিটি একটি দারুণ মাধ্যম। বিশেষ করে আগে দর্শক টানতে শুধু বড় তারকাদের নিয়ে কাজ হতো বেশি। ওটিটি প্রমাণ করে দিয়েছে, চরিত্রনির্ভর দুর্দান্ত অভিনয়শিল্পীদের দিয়েও দর্শককে আকৃষ্ট করা যায়। ওটিটির এই দিকটি আমার সবচেয়ে ভালো লাগে।''

ওটিটির সুবাদে অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে শুরু করে পরিচালক-চিত্রনাট্যকারসহ সবার কাজের জায়গা বেড়েছে। বাংলাদেশি পরিচালকদের মধ্যে রায়হান রাফী সিনেমা হল এবং ওটিটি দুই মাধ্যমের জন্যই কন্টেন্ট তৈরি করে সফল হয়েছেন। জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় ‘পোড়ামন ২' ও ‘দহন', লাইভ টেকনোলজিস প্রযোজিত ‘পরাণ', ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় ‘দামাল' বানিয়েছেন তিনি। ওটিটিতে মুক্তিপ্রাপ্ত রায়হান রাফী পরিচালিত ওয়েব ফিল্মগুলো হলো– ‘জানোয়ার', ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি', ‘টান', ‘ফ্লোর নম্বর সেভেন', ‘নিঃশ্বাস'। এছাড়া তিনি নির্মাণ করেছেন ওয়েব সিরিজ ‘ফ্রাইডে'।

রায়হান রাফীর কাছে প্রশ্ন ছিল, ওটিটি আর সিনেমাহলের কন্টেন্টের পার্থক্য কোথায় দেখেছেন? তার অভিজ্ঞতা বলছে, সিনেমায় বেশি বাজেট থাকে। ফলে বড় পরিসরে গল্প বলা যায়। ওটিটিতে বাজেট থাকে মোটামুটি।

তবে চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি আলাদা করে বাজেটের কোনও সীমাবদ্ধতা দেখেন না, ‘‘বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর কন্টেন্টের বাজেট কিন্তু সিনেমাহলের চেয়েও বড় হয়। আমাদের দেশীয় বাজারের আকার হিসাব করেই ওটিটির জন্য কত বড় স্কেলে কন্টেন্ট সাজাবো সেটা নির্ধারণ করি। সেক্ষেত্রে বাজারের আকার যখন বাড়তে থাকবে তখন সিনেমাহলের জন্য যত পরিমাণ বিনিয়োগ হয়, ওটিটি কন্টেন্টের জন্য তার চেয়েও বেশি বাজেট থাকতে পারে। বিশ্বব্যাপী এটাই কিন্তু ট্রেন্ড। সিনেমাহলের বাজেটের সঙ্গে এর কোনও তুলনা করা যায় না। কোনোটা হবে সিনেমাহলের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি, কোনোটা হবে সিনেমাহলের চেয়েও কম। সেখানে বাজেটের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো কোন ধরনের দর্শককে লক্ষ্য রেখে কন্টেন্ট বানানো হচ্ছে। ফলে বাজেট কখনও বেশি হতে পারে, কখনও কম হতে পারে।''

এ প্রসঙ্গে সোহেল মণ্ডল যোগ করেন, ‘‘ওয়েব ফিল্মে যেসব দৃশ্য সাজানো হয়, তাতে পর্যাপ্ত বাজেট থাকে এবং ফিল্মমেকিংয়ের সব প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়। অভিনয়, কস্টিউম, চিত্রনাট্যসহ সবকিছুই সিনেমার মতো করা হয়। তবে ছোট-বড় পরিসরের কিছু পার্থক্য তো থাকেই। শুরুতেই ভাবনায় থাকতে হবে সিনেমাহল নাকি ওটিটির জন্য বানানো হচ্ছে, সেভাবেই নির্মাণকাজ সাজানো দরকার।''

রেদওয়ান রনি নির্মাতা হিসেবে সফল হয়েছেন। টেলিভিশন চ্যানেলের গণ্ডি পেরিয়ে সিনেমাহলের জন্য বানিয়েছেন ‘চোরাবালি' ও ‘আইসক্রিম'। এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে চাকরি করছেন। তার অভিজ্ঞতায়, ‘বাণিজ্যিক ধারার মতো করেই ওটিটির কন্টেন্ট বানাতে হয়। পরিবেশনার মাধ্যম ভেবে চিত্রনাট্যের আদল এবং নির্মাণের ঢঙসহ মূল ভাবনা সাজাতে হয়। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম যেহেতু অনেক, কাজেই গুণমান নিশ্চিত করার তোড়জোড় থাকে। যার কন্টেন্ট ভালো তার সাফল্যের হারও বেশি। এখানে প্রতিযোগিতা চূড়ান্ত। যদিও সেটি অনেকটা অসম বটে। কারণ, নেটফ্লিক্সের কন্টেন্টের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে আমাদের। যে দর্শক নেটফ্লিক্স দেখছেন, তিনি চরকিও দেখছেন। এজন্য কন্টেন্টের মানের ব্যাপারে আপস করার সুযোগ নেই। কন্টেন্টের মান ভালো হলে দর্শক আটকে রাখা সহজ হয়।''

একই সুরে রায়হান রাফীর যুক্তি, ‘‘যেখানেই মুক্তি দেন না কেন, কনটেন্ট ভালো হতেই হবে। এর বিকল্প নেই।সিনেমা হলে দর্শককে এমন কিছু দেখাতে হয় যাতে তারা মুগ্ধ হয়ে অন্ধকার পরিবেশে পর্দায় তাকিয়ে থাকে। আর ওটিটির গল্পে চমক খুব জরুরি। এর মাধ্যমে যত বেশি আটকে রাখা যায় মানুষকে। আমার কাছে দুটোই সমান পরিশ্রমের।”

ঈদুল আজহায় সিনেমাহলে মুক্তি পাবে রায়হান রাফী পরিচালিত ‘সুড়ঙ্গ'। সিনেমাহলে এটি ব্যবসায়িক সাফল্য পেলে ওটিটিতেও জনপ্রিয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে আগামীতে এমন বড় বাজেটের সিনেমার সংখ্যা বাড়তে পারে। কারণ, সিনেমাহলের কন্টেন্টের বাজার বিস্তৃত হবে ওটিটিতে। তখন নতুন নতুন প্রযোজক বিনিয়োগে উৎসাহ পাবেন।

ওটিটি যত বিস্তৃত হবে, ততই সিনেমার দর্শক তৈরি হবে: রায়হান

This browser does not support the audio element.

এ প্রসঙ্গে রায়হান রাফী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমি সিনেমাহলের উপযোগী গল্প আর ওটিটির গল্প আলাদাভাবে ভাবি। যেমন ‘সুড়ঙ্গ'র অন্যতম প্রযোজক চরকি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হলেও শুরু থেকে আমাদের পরিকল্পনা ছিল, ছবিটি সিনেমা হলে মুক্তি দেবো। কারণ এটি সিনেমাহলের গল্প। এর বাজেট অনেক বড়। তাই চরকি ও আলফা আই স্টুডিওস যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে এটি। ওটিটি থেকে বাজেট এলে এবং বাইরের প্রযোজক বাজেট দিলে দুটো মিলিয়ে অঙ্কটা বড় হয়। বাইরের দেশে এমন দেখা যায়। আমাদের এখানেও এই ধারা অব্যাহত থাকলে ছবির বাজার বড় হবে।”

একই আশার কথা শুনিয়ে রেদওয়ান রনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চরকি বাংলাদেশে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হতে চেয়েছে যেখানে বাংলাদেশের মেধাবী নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী ও চিত্রনাট্যকাররা কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পেও চরকি অবদান রাখতে চায়। আমরা সিনেমাহলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে আসিনি। ভালো কন্টেন্ট তৈরি করাই চরকির উদ্দেশ্য।''

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সিনেমাহলের ব্যবসায় ধস নামাবে বলে শঙ্কা করা হয়েছিল। এ নিয়ে কানাঘুষা যে থেমেছে তা বলা যাবে না। তবে অভিনয়শিল্পী-নির্মাতারা ওটিটির পক্ষে। তাসনিয়া ফারিণ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একটি নতুন মাধ্যমের ফলে আমাদের কাজের সুযোগ বেড়েছে। ওটিটিতে সাবস্ক্রিপশন করে কনটেন্ট দেখতে হয়। সেক্ষেত্রে বাজেটের পরিমাণ বেড়েছে। এখন আমাদের কাজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পাচ্ছে। আমার সর্বশেষ কয়েকটি কাজের মধ্যে ওটিটি কাজগুলোর জন্যই দেশের পাশাপাশি কলকাতায় গিয়ে বেশ সাড়া ও প্রশংসা পেয়েছি। সেক্ষেত্রে এই প্ল্যাটফর্ম অবশ্যই আমাদের জন্য লাভজনক ও সুবিধাজনক।''

রায়হান রাফী উদাহরণ দিলেন, "বাসায় খাবার পার্সেল নিয়ে আসা এবং রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে না? বর্তমান সময়ে আমরা অনলাইনে প্রচুর খাবার অর্ডার দেই, কিন্তু রেস্টুরেন্ট কি খালি থাকে? রেস্টুরেন্টে গিয়ে অর্ডার করে খাওয়ার মজাই আলাদা। ওটিটি আর সিনেমাহলের ব্যাপারটা অনেকটা তেমন। ওটিটির পরিধি বাড়লে সিনেমার কোনও ক্ষতি নেই, বরং লাভ হবে। ওটিটি থাকলে আমাদের সিনেমার জন্যই ভালো। খেয়াল করলে দেখবেন– যারা ‘পরাণ' দেখেছেন, তারা কিন্তু অনেকদিন সিনেমা হলে যাননি। ওটিটিতে আমার কাজ দেখে তারা হলমুখী হয়েছেন। ‘হাওয়া'র সাফল্যের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। যারা এখন সিনেমাহলে আসে তারা কিন্তু ওটিটি দেখে। তাই ওটিটি যত বিস্তৃত হবে, ততই সিনেমার দর্শক তৈরি হবে। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার, দর্শকরা এখন বাংলা কনটেন্ট দেখতে চান। তারাই কিন্তু সিনেমাহলে আসছেন। এমন কিন্তু নয়– যারা সিনেমা হলে যান তারা ওটিটি দেখেন না। তাই বলা যায়– চরকি, বিঞ্জ-এর মতো প্ল্যাটফর্ম সিনেমাহলে দর্শক ফেরাতে ভূমিকা রেখেছে।”

আশফাক নিপুণ বলেন, "টেলিভিশন চ্যানেলের কন্টেন্ট কম বাজেটে তৈরি হয়। কোন কাজটি অল্প বাজেটে করা দেখলেই বোঝা যায়। অল্প বাজেটের কনটেন্ট দেখতে দর্শকদের সমস্যা নেই। কিন্তু আরেকটু উন্নতমানের দৃশ্য দেখার ইচ্ছে হয় তাদের। তারা আরেকটু উন্নত ফিকশন দেখতে চায়। ওটিটিতে সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য মানুষ এখন টেলিভিশনের চেয়ে ওটিটির দিকে ঝুঁকছে বেশি। গত ঈদে হইচইয়ের ‘মহানগর ২' ও চরকির ‘মাইসেলফ অ্যালেন স্বপন' কন্টেন্ট দুটি নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে, টেলিভিশনের কোনও অনুষ্ঠান নিয়ে ততটা হয়নি। কারণ এখন সবচেয়ে বেশি মূল্যবান হলো সময়। দর্শকদের হাতে সময় কম। কোনও কন্টেন্ট দেখতে তারা যেটুকু সময় দেন তাতে প্রত্যাশা থাকে বেশি। ওটিটি এখন সেটি পূরণ করতে পারছে। ফলে মানুষজন এখন এসব কন্টেন্টের দিকে ঝুঁকছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যদি ওটিটির মতো বাজেট রেখে বৈচিত্র্যময় বিষয় নিয়ে কাজ করে তাহলে হয়তো সেদিকে মানুষ আবার ফিরবে।”

একদিক দিয়ে সিনেমা হলের চেয়ে ওটিটিকে এগিয়ে রাখছেন আশফাক নিপুণ। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "একইসঙ্গে ১০০টির বেশি দেশে হইচই দেখা যায়। ফলে সেখানে বাংলা ভাষাভাষি ছাড়াও অন্য দর্শকরা সাব-টাইটেল দেখে আমাদের কন্টেন্ট উপভোগ করছেন। কিন্তু আমাদের সিনেমা দেশের বাইরে এখন যদিও উত্তর আমেরিকাসহ অন্যান্য অনেক দেশে যাচ্ছে, কিন্তু সেগুলো খুব সীমিতসংখ্যক সিনেমাহল পায়। আমাদের পাশের দেশেও বাংলা সিনেমা নেওয়া খুব কঠিন। সেই জায়গা থেকে বলতে পারি, ওটিটিতে মুক্তি পাওয়ার সুবাদে একইসঙ্গে একই সময়ে দেখা যাওয়ায় ‘মহানগর' এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।”

তবে জয়া আহসানের চোখে, বড় পর্দার আবেদন বরাবরই অন্যরকম। তার কথায়, "নানান প্রযুক্তি এলে আমাদের সেসব মেনে নিতে হয়। তবে আমি অবশ্যই চাই, দর্শকরা যেন বড় পর্দার রস আস্বাদন করতে পারে। আমার নতুন ছবি ‘অর্ধাঙ্গিনী' মুক্তির পরও দেখেছি– সিনেমাহলে বসে সবাই একসঙ্গে হাততালি দিচ্ছে, কাঁদছে, হাসছে। এসব বড় পর্দার ক্ষেত্রেই সম্ভব। আমি চাই বড় পর্দায় আমার কাজ থাকুক। কিছু কিছু বিষয় বড় পর্দার জন্যই। ওটিটির আদল একটু ভিন্ন হয়। আমার কাছে দুটোই খুব প্রয়োজন। বলা যায়, দর্শকদের সামনে বুফের মতো করে আমরা নানান রকম খাবার দেবো। দর্শক তার রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেবে। তবে যেটাই বানাই না কেন, তাতে যেন শিল্পমান ও রুচিবোধ থাকে। ওটিটিতে এমন কিছু ভালো কাজ করতে চাই। বাংলাদেশি পরিচালকদের সঙ্গে বেশি কাজ করার ইচ্ছে আছে। আমার কাছে অনেক প্রস্তাব এসেছে। একটু বুঝেশুনে ওটিটির কাজ হাতে নিতে চাই। ওয়েবের জন্য খুব ভালো ও রোমাঞ্চকর কিছু কাজ করতে চাই। তারই অপেক্ষা এখনও করছি।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ