পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ আরো তীব্র হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে জার্মানিতে এলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
বিজ্ঞাপন
বার্লিনে জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলেনস্কি।
তিনি মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সেও যোগ দেবেন। সেখানে ৪০টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধানরা যোগ দেবেন। প্রচুর সামরিক বিশেষজ্ঞও থাকবেন।
জেলেনস্কির কাছে এই সময়টা রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তার হাতে গোলাগুলির সংখ্যা কমে গেছে। পশ্চিমা দেশগুলি উৎপাদন বাড়িয়েছে, কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি তা ইউক্রেনের হাতে পৌঁছবে না। রাশিয়াও আক্রমণ আরো তীব্র করতে পারে।
ইউক্রেনের সেনাকে এখন হিসাব করে গোলাগুলি খরচ করতে হবে। এই বিষয়টি নিয়ে মিউনিখে আলোচনা হবে। সেখানে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও যোগ দেবেন।
রুশ-অধিকৃত ইউক্রেনে শিশুদের শিক্ষার লড়াই
ইউক্রেনের কিছু অংশ দখল করে অবৈধভাবে রাশিয়ায় সংযুক্ত করার পর অনেক শিক্ষককে রুশ ভাষায় কাজ করতে এবং মস্কো-অনুমোদিত পাঠ্যক্রম অনুসরণ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
ছবি: Alexander Reka/Tass/IMAGO
ভূখণ্ড দখলের পর ভবিষ্যৎ দখলের লড়াই
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল - ঝাপোরিজঝিয়া, খেরসন, দোনেৎসক এবং লুহানস্ক রাশিয়াতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভূখণ্ড দখলের পর সেখানকার জনগণের, বিশেষ করে শিশুদের রুশিকরণের দিকে নজর দিয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
ছবি: Yuri Kadobnov/AFP/Getty Images
ইউক্রেন যুদ্ধকে বৈধতা দিয়ে পাঠ্যবই
ইউক্রেনের রুশ-অধিকৃত এলাকায় অভিভাবক ও শিক্ষকেরা মস্কোর আরোপ করা নতুন শিক্ষানীতি না মানলে ভয়ভীতি ও হুমকির সম্মুখীন হন। রুশ ভাষায় পাঠ্যক্রমে ইউক্রেন যুদ্ধের ন্যায্যতা প্রমাণ করে নতুন ইতিহাসের বইও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
লাখ লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিক তাদের প্রথম ভাষা হিসাবে রুশ ভাষায় কথা বলে। ২০১৪ সালের ইউরোময়দান আন্দোলনের পর কিয়েভ আইন পাস করে স্কুল, টেলিভিশন এবং সরকারি খাতের কর্মীদের মধ্যে ইউক্রেনীয় ভাষার ব্যাপক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে। ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধে রুশভাষী সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ এনেছিল মস্কো। এবার একইভাবে দখল করা পূর্ব ইউক্রেনে পালটা বয়ান তৈরির চেষ্টা করছে রাশিয়া।
ছবি: Gaelle Girbes/Getty Images
শিক্ষা যখন প্রোপাগান্ডা মেশিন
২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রাশিয়ার বিরুদ্ধে "শিক্ষাকে শিশুদের প্ররোচিত করার জন্য একটি প্রচার যন্ত্রে পরিণত করার" অভিযোগ করেছে। অনুসারে, মস্কো বর্তমানে ২০১৪ সালে সংযুক্ত করা ক্রিমিয়ান উপদ্বীপসহ ইউক্রেনের ১৮ শতাংশেরও কম এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের জন্য প্রায় ৯১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল অধিকৃত এলাকায়।
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
শিক্ষাবিদদের 'গেরিলা' কৌশল
অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় ভাষায় পড়াশোনা চালু রাখতে রুশ হুমকি উপেক্ষা করেই ঝুঁকি নিচ্ছেন কিছু শিক্ষক, ছাত্র এবং অভিভাবক। বাগানে গর্ত খুঁড়ে বা অন্য কোথাও লুকিয়ে রাখছেন ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন। স্কুল গ্রন্থাগারিকেরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে তারা সরবরাহ করছেন ইউক্রেনীয় বই। রুশ সামরিকবাহিনী প্রায়ই বিভিন্ন গ্রামে নির্বিচারে তল্লাশি চালায় বলেও জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
ছবি: Alexander Reka/Tass/IMAGO
5 ছবি1 | 5
ইউক্রেনকে সাহায্য করা নিয়ে অ্য়ামেরিকায় অচলাবস্থা
মার্কিন সেনেটে জো বাইডেনের ডেমক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই সেখানে ইউক্রেনকে ছয় হাজার কোটি ডলারের সামরিক সাহায্য দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে তা পাস হওয়া নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, সেখানে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে।
অ্যামেরিকা থেকে গোলাগুলি আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইউক্রেন বিপাকে পড়েছে। সামরিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনে রাশিয়ার হাতে যদি পাঁচটা গোলা থাকে তো, ইউক্রেনের হাতে একটি গোলা আছে।
পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ানক হচ্ছে
সামরিক বিশ্লেষক মার্কাস রেইসনার ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থা ক্রমশ বিপজ্জনক হচ্ছে।'' তিনি জানিয়েছেন, ''অন্তত ১৫টি জায়গায় রাশিয়ার সেনা এগোচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে কিছু জায়গায় তারা ছয় কিলোমিটার এলাকা নিজেদের দখলে এনেছে। কিছু জায়গায় দেড় কিলোমিটার এলাকা তারা অধিকার করেছে।''
যুদ্ধে অঙ্গ হারিয়েও কাজে ব্যস্ত যে সৈনিকরা
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর একদল সৈনিকের কাজ ল্যান্ডমাইন খুঁজে বের করা৷ যুদ্ধে অঙ্গ হারিয়েও এই কাজ করে যাচ্ছেন তারা৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
স্যাপার সৈনিক
যে সৈনিক যুদ্ধের সময়ে সেতু বানানোর বা ল্যান্ডমাইন চিহ্নিত করার কাজ করেন, তাদের বলা হয় স্যাপার৷ ইউক্রেনের জাতীয় পুলিশের বিশেষ ‘ডিমাইনিং ইউনিটের’ সদস্য অলেকজি পলিয়াকোভকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷ ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের ইজুম শহরের একটি মাঠ থেকে মাইন সরাচ্ছেন তিনি৷ যুদ্ধে বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেছে তার পা৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
কেন এই কাজ করেন তারা
২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর ইউক্রেন সেনাবাহিনী থেকে তৈরি করা হয় এই ইউনিট৷ তাদের মূল কাজ যুদ্ধরত সৈনিকদের ল্যান্ডমাইন থেকে বাঁচাবার পাশাপাশি সাধারণ জনগণের বসবাসের এলাকা থেকেও মাইন সরানো৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
কৃত্রিম পা নিয়ে
৩৭ বছর বয়সি আন্দ্রেই ইলকিভ গত বছর এই খারকিভ অঞ্চলেই আরেকটি জায়গায় মাইন ফেটে নিজের বাঁ পাটি হারান৷ তবুও আবার কাজে ফিরেছেন তিনি৷ তার স্ত্রীকে কথা দিয়েছেন যে মানবতার খাতিরে তাকে ফিরে যেতে হবেই৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইলকিভের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা তার নতুন প্রস্থেটিক পা৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
কাজে অনড় ভালেরি
২০২২ সালের নভেম্বরে একইভাবে জখম হন ভালেরি ওনুল৷ বিস্ফোরণের পর তিনি জানতে পারলেন যে আন্দ্রির মতো পা হারিয়েছেন তিনি৷ সেই মুহূর্তেই তিনি ঠিক করেন যে কাজে ফিরে আসবেন৷ ভালেরি বলেন, ‘‘আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷ আমার মাথায় অনেক চিন্তা ভিড় করছিল৷ যখন জ্ঞান ফিরল, জানতাম যে আমাকে আবার কাজে যেতে হবে৷’’
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
কতটা কঠিন এই কাজ
আন্দ্রি জানান, ঠিক যে মাইন ফেটে তিনি জখম হয়েছিলেন, সেই দিনের কাজ ছিল খুব কঠিন৷ মাটির অনেকটা গভীরে লুকিয়ে রাখা ছিল ল্যান্ডমাইন৷ খুব ঠাহর করে না দেখলে বোঝা অসম্ভব, বলেন তিনি৷ বর্তমানে এই ডিমাইনিং ইউনিট কাজ করছে ইউক্রেনের খারকিভ ও খেরসন অঞ্চলে৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
5 ছবি1 | 5
'তিনি বলেছেন, 'এর প্রধান কারণ, ইউক্রেনের হাতে এখন গোলাগুলি খুবই কমে গেছে। তার সুয়োগ নিয়ে রাশিয়ার কামান এখন সুবিধাজনক জায়গায় পৌচ্ছে যাচ্ছে।''
'মর্কিন সাহায্য ও সমর্থন দরকার'
রেইসনার বলেছেন, ''এই বছর ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পৌঁছাবে। ইউরোপ ও ৫০টি দেশ ইউক্রেনকে সমর্থন করছে। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ''
ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে গিয়ে প্রসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করেন জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস। তিনি বাইডেনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ও সমর্থন ছাড়া ইউক্রেন নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না।
সুরক্ষা বিশষজ্ঞ গুস্তাভ গ্রিসেল বলেছেন, ''২০২৪ হলো ইউক্রেনের পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর। তাদের এবার পুরোদস্তুর আগ্রাসনের মুখে পড়তে হবে।''