দোসরা এপ্রিল ভোরবেলা নেদারল্যান্ডসে এক সমকামী যুগলের ওপর হামলার পর সে দেশের পুরুষরা হাতে হাত ধরে সমকামীদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন৷ এর আগে টুইটারে এই প্রতীকী প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়৷
বিজ্ঞাপন
পূর্ব নেদারল্যান্ডসের আর্নহেম শহরে ঐ সমকামী যুগল একটি সেতুর ওপর দিয়ে হাত ধরাধরি করে যাওয়ার সময় একদল তরুণ তাদের গালিগালাজ করে৷ বচসা থেকে যে হাতাহাতি শুরু হয়, তাতে সমকামীদের দু'জনেই আহত হন ও তাদের একজনের সামনের কয়েকটি দাঁত ভেঙে যায়৷
এই ঘটনা জানাজানি হয়ে যাবার পর সুপরিচিত প্রকাশক ও সাংবাদিক বারবারা বারেন্ড টুইটারে আবেদন জানান, ‘‘সব হেটেরো এবং হোমো পুরুষেরা কি এ সপ্তাহে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে পারেন...?''
যেসব দেশে সমকামী বিয়ে বৈধ
এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২৩টি দেশে সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ১৪টি দেশ ইউরোপের৷ তালিকায় এশিয়ার কোনো দেশ নেই৷
ছবি: Reuters/C. Tilley
নেদারল্যান্ডস
২০০১ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নেদারল্যান্ডসে সমকামী বিয়ে বৈধ ঘোষণা করা হয়৷ ছবিতে সমকামী দম্পতিকে বিয়ের পর কেক কাটতে দেখা যাচ্ছে৷ ২০১১ সালে দেশটিতে সমকামী বিয়ে বৈধ হওয়ার ১০ বছর পূর্তিতে তাঁরা বিয়ে করেন৷
ছবি: Evert Elzinga/AFP/Getty Images
ইংল্যান্ড
২০১৩ সালের জুলাইতে সমকামী বিয়ে বৈধ করে আইন পাস হয়৷ এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এলটন জন তাঁর সঙ্গীকে বিয়ে করেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/L. Pitarakis
ফ্রান্স
দেখছেন দেশটির প্রথম সমকামী জুটির বিয়ের ছবি৷ ২০১৩ সালের মে মাসে ফ্রান্সে এই বিয়ের বৈধতা দেয়া হয়৷
ছবি: Reuters
লুক্সেমবুর্গ
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সমকামী বিয়েকে বৈধতা দেয়া হয়৷ এর চার মাস পর সঙ্গীকে বিয়ে করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী সাভিয়ের বেটেল (ডানে)৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
আয়ারল্যান্ড
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আয়ারল্যান্ডে ২০১৫ সালের মে মাসে গণভোটের মাধ্যমে সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Crawley
ইউরোপের অন্যান্য দেশ
২০০৩ সালে বেলজিয়াম, ২০০৫ সালে স্পেন, ২০০৯ সালে নরওয়ে, একই বছর সুইডেন, ২০১০ সালে পর্তুগাল, একই সময়ে আইসল্যান্ড, ২০১২ সালে ডেনমার্ক, ২০১৪ সালে ফিনল্যান্ড এবং ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে গ্রিসে সমকামী বিয়ের বৈধতা দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Blackwood
দক্ষিণ আফ্রিকা
আফ্রিকার প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৬ সালে থেকে সমকামী বিয়ে বৈধ৷ একই সময় থেকেই তাঁরা সন্তানেরও অভিভাবক হওয়ার অনুমতি পায়৷
ছবি: dapd
আর্জেন্টিনা
ল্যাটিন অ্যামেরিকার প্রথম দেশ হিসেবে ২০১০ সালে এরকম বিয়ের বৈধতা দেয় আর্জেন্টিনা৷ এরপর ঐ মহাদেশের ব্রাজিল, উরুগুয়ে ও কলম্বিয়ায় সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রাজিল
ল্যাটিন অ্যামেরিকার তৃতীয় দেশ হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে ব্রাজিলে সমকামী বিয়ে বৈধ৷ ছবিটি ঐ বছরের ৮ ডিসেম্বর তোলা৷ সেদিন প্রায় ১৩০ সমকামী জুটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন৷ এক অনুষ্ঠানে এতজন সমকামীর বিয়ে করার ওটিই ছিল তখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদাহরণ৷
ছবি: Getty Images
যুক্তরাষ্ট্র
দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ২০১৫ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে সমকামী বিয়ে বৈধ ঘোষণা করে৷ উত্তর অ্যামেরিকার ক্যানাডা ও মেক্সিকোর পাঁচটি রাজ্যেও এখন এই বিয়ে বৈধ৷
ছবি: Reuters/C. Tilley
নিউজিল্যান্ড
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের একমাত্র দেশ যেখানে ২০১৩ সালের এপ্রিলে সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয়৷ ছবিতে নিউজিল্যান্ডের কুইন্সটাউন থেকে অকল্যান্ডগামী একটি ফ্লাইটে এমন একটি বিয়ে পড়ানোর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
এই টুইট থেকে একটি ভাইরাল হ্যাশট্যাগ সৃষ্টি হয় #আলেমানেনহান্ডইনহান্ড (অল-মেন-হ্যান্ড-ইন-হ্যান্ড), যার পর ডাচ উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী থেকে শুরু করে খেলাধুলার জগতের বিভিন্ন তারকা ও টেলিভিশনের ব্যক্তিত্বরা তাঁদের হাত ধরাধরি করে তোলা ছবি পোস্ট করতে শুরু করেন৷
বুধবার সন্ধ্যায় শত শত মানুষ হাতে হাত ধরে আমস্টারডামের পথে পথে ঘুরে রবিবারের ঘটনায় আক্রান্ত সমকামীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্ক অবধি পুরুষেরা হাতে হাত ধরে তোলা ছবি পোস্ট করে তাঁদের সংহতি জানাচ্ছেন৷
৩৫ বছর বয়সি ইয়াস্পার ভের্নেস-সেভ্রাতান ও ৩১ বছর বয়সি রনি সেভ্রাতান-ভের্নেসকে যে পাঁচজন কিশোর আক্রমণ করে, তাদের মধ্যে দু'জনের বয়স ১৪ এবং বাকি তিনজনের বয়স ১৬ বলে জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা এএফপি৷ আক্রমণের পর তারা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে৷ তাদের আদালতে পেশ করা হচ্ছে৷
নেদারল্যান্ডস হলো বিশ্বের প্রথম দেশ, যেখানে সমকামীদের বিবাহ বৈধ করা হয়৷ ২০০১ সালে সে দেশে সমকামীদের বিয়ে বৈধ করা হয়৷ কাজেই রবিবারের ঘটনায় নেদারল্যান্ডস বিশেষভাবে নাড়া খেয়েছে৷ এমনকি নিইমেগেন ফার্স্ট ডিভিশন ফুটবল ক্লাব তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টে স্টেডিয়ামের সামনে টিমের ফুটবলারদের হাত ধরাধরি করে, ক্যামেরার দিকে পিছন ফিরে তোলা একটি ছবি পোস্ট করেছে৷ ছবির ক্যাপশন হলো, ‘‘এন.ই.সি. সমকামী-বিরোধী সহিংসতা বর্জন করে''৷
এসি/এসিবি (এপি, এএফপি)
প্রতিবেদন সম্পর্কে আপনার বক্তব্য জানান নীচের ঘরে৷
সমকামী এক ইমামের কথা
দক্ষিণ আফ্রিকার এক মসজিদের ইমাম মুহসিন হেন্ড্রিকস গত ২০ বছর ধরে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন৷ তাঁদের জন্য একটি মসজিদও নির্মাণ করেছেন তিনি৷
ছবি: The Inner Circle
সমকামীদের জন্য মসজিদ
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরের ভিনবার্গ এলাকার একটি মসজিদের ইমাম মুহসিন হেন্ড্রিকস৷ বছর পাঁচেক আগে তিনি মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন৷ হেন্ড্রিকস একজন সমকামী৷ তাঁর মসজিদে ২৫ জন নিয়মিত নামাজ আদায়কারী আছেন৷ মাঝেমধ্যে সমকামীদের মধ্যে বিয়েও পড়ানো হয় ঐ মসজিদে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Bosch
সমকামী মুসলিমদের সহায়তা
নিজে সমকামী হওয়ায় কেপটাউনের সমকামী মুসলিমদের অসহায়ত্বের কথা জানতেন হেন্ড্রিকস৷ তাই তাঁদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে ১৯৯৬ সালে ‘দ্য ইনার সার্কেল’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন তিনি৷ এই উদ্যোগেরই অংশ হিসেবে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়৷
ছবি: The Inner Circle
বিয়ে করেছিলেন হেন্ড্রিকস
অল্প বয়সেই নিজের সমকামিতার বিষয়টি অনুভব করেছিলেন হেন্ড্রিকস৷ কিন্তু তাঁর দাদা ইমাম ছিলেন৷ তিনি তাঁকে বলেছিলেন, সমকামীরা দোযখে যাবে৷ এছাড়া সেই সময় সমকামিতা বিষয়ে মুসলিম সমাজে মনে করা হত যে, বিয়ে হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে৷ সে কারণে এক নারীকে বিয়েও করেছিলেন হেন্ড্রিকস৷ কিন্তু বছরখানেকের মধ্যেই বুঝতে পারেন, বিরাট ভুল করেছেন৷ তবুও সেভাবে ছয় বছর কেটে যায়৷ দুই সন্তানের জন্মও হয়৷ পরে বিবাহবিচ্ছেদ হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/R.Bosch
সমকামিতা প্রসঙ্গে কোরান
ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে হেন্ড্রিকস বলেন, ‘‘কোরান সমকামিতার বিরুদ্ধে নয়৷ ইসলামি অনেক পন্ডিতও এখন সেটি বুঝতে শুরু করেছেন৷ এমনকি মহানবির (সা:) বাড়িতে এমন ব্যক্তিরা কাজ করতেন যাঁরা নারীদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতেন না৷ মহানবি (সা:) এর বাড়িতে সমকামী চাকর থাকার মানে সমকামীদের প্রতি তাঁর সমর্থন ছিল৷’’
ছবি: Imago/B. Strenske
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বে প্রথম
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সে দেশের ১৯৯৬ সালের সংবিধানে সমকামীদের অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে৷ এছাড়া আফ্রিকার একমাত্র দেশ হিসেবে সেখানে সমলিঙ্গ বিয়ের বৈধতা রয়েছে৷
ছবি: Johann Hattingh/AFP/Getty Images
আফ্রিকার ‘সমকামী রাজধানী’
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে সমকামীবান্ধব অনেক রেস্তোরাঁ, বার, হোটেল ও ক্লাব আছে৷ সেজন্য এই শহরটি আফ্রিকার ‘সমকামী রাজধানী’ বলেও পরিচিত৷
ছবি: dapd
আছে তিন লক্ষ মুসলিম
কেপটাউনে প্রায় তিন লক্ষ মুসলিমের বাস৷ সেখানকার অধিকাংশ মসজিদের ইমাম সমকামিতার বিরুদ্ধে৷ তাঁদের মধ্যে অনেকে সমকামীদের গৃহবন্দি করে রাখার পক্ষে৷ হেন্ড্রিকসের মসজিদ থেকে ১০ কিমি দূরের একটি মসজিদের ইমাম বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘সমকামিতা গ্রহণযোগ্য নয়৷ এটি নিষিদ্ধ৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gupta
পরিবর্তন আনছেন হেন্ড্রিকস
সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলায় কয়েকবারই তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু থেমে যাননি তিনি৷ বরং তাঁর দৃঢ়তার কারণে সমাজে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসছে৷ তাইতো তাঁর মসজিদের দুই কিলোমিটারের এর মধ্যে আরেকটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে যেখানে সমকামীদেরও নামাজ পড়ার অধিকার রয়েছে৷