‘কেমডেন, আমি সত্যিই তোমার জন্য গর্বিত' – এক মা যখন তাঁর সন্তানের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন, তখন কতখানি আনন্দিত হয়ে তিনি এ কথা বলছেন তা সহজেই অনুমেয়৷ শেষ পর্যন্ত সন্তানকে হাঁটতে দেখে বাবার চোখেমুখেও ফোটে স্বর্গীয় হাসি৷
বিজ্ঞাপন
হাত-পা কিছুই নেই কেমডেনের৷ তার প্রথম হাঁটা তাই বাবা-মায়ের কাছে এতটা বেশি সুখের উপলক্ষ্য হয়ে ওঠে৷
প্রথম হাঁটার এই দৃশ্য ধারণ করেন মা, আর বাবা ছিলেন কেমডেনের সামনে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই ভিডিও দেখার পর থেকেই প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন সাধারণ মানুষ৷ হাজার হাজার মানুষ ভিডিওটি দেখেছেন তো বটেই, প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ কেবল প্রতিক্রিয়া হিসেবে কমেন্টও করেছেন৷ এই বাবা-মায়ের খুশির মুহূর্তে শরিক হয়েছেন তাঁরাও৷
ভিডিওতে দেখা যায়, কেমডেনের বাবা কোল গ্রিন ছেলেকে উৎসাহ দিয়ে বলছেন, ‘‘দেখো তুমি নিজে নিজে এগোচ্ছো, পড়ে যাচ্ছো না৷'' জবাবে ছেলেও একরাশ অবিশ্বাস আর উত্তেজনায় বলে, ‘‘আমি হাঁটছি''!
স্বাভাবিকভাবেই চার বছরের এই শিশুর প্রথম হাঁটা নিয়ে ভীষণ আপ্লুত ছিলেন বাবা-মা৷ পিপল ম্যাগাজিনের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, টেক্সাসের কেট হুইডেন ও কোল গ্রিন দম্পতি শিশুর জন্মের আগেই জানতে পেরেছিলেন যে তার হাত-পা নেই৷ পরে তাকে ডাক্তারও দেখানো হয়েছিল৷
‘‘আমি যখন প্রথম জানতে পারি যে ওর হাত, পা কিছুই নেই তখন আমি বুঝতেই পারছিলাম না যে, ওর কাছ থেকে আমি ঠিক কী প্রত্যাশা করব'', বলেন কেট৷
শিশুদের জন্য সেরা ১২টি দেশ
অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হলেও অনেক দেশ যে শিশুদের অধিকার রক্ষার বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় না – এ সত্যই প্রকাশ করল কিডসরাইটস ফাউন্ডেশন৷ তাই শিশু অধিকার রক্ষায় সেরা দেশগুলোর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রিটেনের মতো দেশও নেই৷
ছবি: picture-alliance/empics/G. Fuller
১২
স্লোভেনিয়া
শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার দিক থেকে সেরা দেশগুলোর তালিকা করতে গিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার, স্বাস্থ্য অধিকার, শিক্ষা অধিকার, সুরক্ষার অধিকার এবং শিশু অধিকারের জন্য অনুকুল পরিবেশ – এই পাঁচটি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়েছে কিডসরাইটস ফাউন্ডেশন৷ সার্বিক বিবেচনায় সেরা হওয়া দেশগুলির তালিকায় দ্বাদশ স্থানে রয়েছে স্লোভেনিয়া৷ মূল তালিকাটি দেখতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Imago/J. Alexandre
১১
একাদশ স্থানে রয়েছে বেলজিয়াম৷
ছবি: Colourbox
১০
স্লোভেনিয়া আর বেলজিয়ামের ঠিক ওপরেই রয়েছে ফিনল্যান্ড৷
ছবি: picture-alliance/dpa
০৯
নবম স্থানে রয়েছে উত্তর আফ্রিকার দেশ টিউনিশিয়া৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Mazraawi
০৮
ইউরোপ বা অ্যামেরিকার অনেক দেশ স্থান না পেলেও এশিয়ার থাইল্যান্ড কিন্তু ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে কিডসরাইটস ফাউন্ডেশনের তালিকায়৷ থাইল্যান্ড রয়েছে অষ্টম স্থানে৷
ছবি: picture-alliance/Pacific Press/V. Poti
০৭
নাগরিকের সার্বিক জীবনমানের নিশ্চয়তা দেয়ায় সুইডেনের সুনাম আছে৷ শিশু অধিকার রক্ষায়ও অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে তারা৷ এ তালিকায় সুইডেন আছে সাত নম্বরে৷
ছবি: Getty Images/D. Ramos
০৬
শিল্প-সাহিত্যের দেশ ফ্রান্সে শিশু অধিকার পরিস্থিতিও ভালোই বলতে হবে৷ তালিকায় ইউরোপের এই দেশটি আছে ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: Eric Cabanis/AFP/Getty Images
০৫
পঞ্চম স্থানে রয়েছে স্পেন৷
ছবি: Fotolia/PinkShot
০৪
চতুর্থ স্থানে আইসল্যান্ড৷
ছবি: Fotolia/yanlev
০৩
মানবাধিকার বিষয়ক যে কোনো তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে সুইজারল্যান্ড৷ এখানে তারা তৃতীয় স্থানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
০২
কিডসরাইটস ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা অনুযায়ী, শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ মুহূর্তে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা দেশ নরওয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
০১
সেরা পর্তুগাল শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় অর্থের গুরুত্ব অনেক, তবে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সবচেয়ে বেশি গরুত্বপূর্ণ৷ সেই বিবেচনায় অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশও শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বেশি প্রশংসনীয় হতে পারে৷ কিডসরাইটস ফাউন্ডেশন এভাবে পুরো বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করে বলে সেরাদের তালিকায় উঠে গেছে এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড৷
ছবি: Ilike - Fotolia.com
12 ছবি1 | 12
‘‘কিন্তু মাত্র দু'মাস বয়সে একদিন আমার পাশে শোয়ানো অবস্থায় হঠাৎ খেয়াল করলাম যে সে তার হাতের ওপরের অংশটা দিয়েই একটি খেলনা সরানোর চেষ্টা করছে৷ এই দৃশ্য দেখে আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলাম৷ তখনই বুঝেছিলাম যে ও আরও অনেক কিছুই করতে পারবে৷''
মায়ের এই বিশ্বাস বিফলে যায়নি৷ ভাইরাল হওয়া এই ভিডিও-র একেবারে শেষে দেখা যায় আত্মবিশ্বাসী কেমডেন ক্যামেরার পেছনে থাকা মাকে বলছে, ‘‘মা আমিও ভিডিওটা দেখবো!''
এএম/ডিজি
শিশুরা খেলার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়
একটি শিশু নিজের বাড়িতেই নিরাপদ বোধ করে৷ কিন্তু বাবা-মায়ের মধ্যে যদি বনিবনা কম থাকে ,তাঁরা যদি মানসিক চাপে থাকেন,তবে শিশুর ওপর সারাজীবনের জন্য তার প্রভাব পড়ে৷ মানসিক চাপ শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠার পথে বাধা সৃষ্টি করে৷
ছবি: Anke-Martina Witt
শিশুদের অবসর সময়
সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য ছোট বয়স থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুদের অনেক কিছু শিখতে হয়, অনেক কিছু করতে হয়৷ তাই শিশুরা যাই করুক না কেন ওদের খেলার সময় প্রয়োজন৷ বন্ধুদের সাথে খেলার মধ্য দিয়েই যে ওরা সমস্ত স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে৷
ছবি: DW/S. Bogdanic
টিভির সামনে আধঘণ্টার বেশি নয়!
টেলিভিশন, কম্পিউটার, ট্যাবলেট – এগুলো বিনোদন আর তথ্য দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক চাপ বাড়ায়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, একঘণ্টা কম্পিউটার বা টিভির সামনে বসে থাকার চেয়ে খোলা বাতাসে খেলাধুলা বা ব্যায়াম শিশুদের বেশি দরকার৷ আর তিন বছরের কম বয়সি শিশুদের দিনে আধঘণ্টার বেশি টিভি দেখা উচিত নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অ্যান্টি স্ট্রেস
বাড়ি স্ট্রেমুক্ত করতে ঘরে ফেরার পর সবাই কিছুক্ষণ সোফায় বসে আড্ডা দিন৷ তারপর খাবার টেবিলে সারাদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা বা জরুরি কিছু থাকলে, তা নিয়ে আলোচনা করুন৷ যে কোনো সমস্যা সমাধান একত্রে করলে অনেক সহজ হয়৷ শিশুরা ছোট থেকেই যেন এটা শেখে, তার চেষ্টা বড়দেরই করা উচিত৷
ছবি: imago/epd
শিশুদের শিশুর মতো বড় হতে দিন
কিন্ডারগার্ডেনে শিশুদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে৷ নিজেকে চেনা এবং অন্যে সাথে সম্পর্ক তৈরি করা সেখানেই শেখে শিশুরা৷ পায় সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ৷ তাই লক্ষ্য রাখতে হবে তারা যেন নির্ভয়ে সব কিছু বলতে ও করতে পারে৷ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়াটা মূল লক্ষ্য নয়, জরুরি হলো আত্মবিশ্বাসী হতে পারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খুঁজে বের করতে হবে...
প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে পড়াশোনা বা হোমওয়ার্ক করতে শিশুর মনোযোগ কখন সবচেয়ে বেশি৷ সরাসরি স্কুল থেকে আসার পর নাকি কিছুক্ষণ খেলার পর? সবচেয়ে বড় কথা – শিশুরা যাই করুক না কেন, মাঝে মাঝেই বিশ্রাম নিতে হবে তাদের৷ অর্থাৎ যে কোনো কাজের মাঝে কিছুক্ষণ হাঁচটাচলা, গান শোনা বা মুক্ত বাতাস সেবন করা৷ যা শুধু শিশুদের ক্ষেত্রে নয়, বড়দেরও প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শিক্ষার ধরন
আজকের দিনের চাকরিজীবী মা-বাবার জীবন চলে অতি দ্রুতগতিতে এবং তাঁদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে শিশুরা হাঁপিয়ে ওঠে৷ শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সব কিছুই সন্তানদের শেখানোর চেষ্টা থাকেন বাবা-মা৷ তাই তাঁরা নামি-দামি আধুনিক কিন্ডারগর্ডেনগুলোতে সন্তানকে ভর্তি করেন৷ তবে কিন্ডারগার্টেন বা স্কুল ভবিষ্যত জীবনে শিশুর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে একটা পাথেও মাত্র৷
ছবি: Getty Images/J. Macdougal
খেলার ছলে শিক্ষা
জার্মানির বোখুম শহরের একটি স্কুলে পড়াশোনাটা নতুনভাবে বা খেলার ছলে সেখানো হয়৷ সেখানে ‘প্রোমোশন’ বা ভালো রেজাল্টই বড় কথা নয়৷ ছোট ছেলে-মেয়েরা কারিগরি ক্লাসে তরোয়াল তৈরি করতে শেখে সেখানে৷ খেলার ছলে শেখে নানা কায়দাকানুন৷ তাছাড়া প্রতিটি শিশুর কাজ করার ধরনও আলাদা৷ তাই শিশুরাই প্রস্তাব দেয়, তারা কী করতে চায় বা না চায়৷ শিশুদের ইচ্ছেকে পুরো দাম দেওয়া হয় এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভয় ছাড়া শিক্ষা
স্কুলে খুব ভালো ফল করতে হবে – এর জন্য কোনো চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয়৷ কারণ এতে শিশুদের মধ্যে একটা ভয় তৈরি হয় আর ভয় মানুষের আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠতে সবচেয়ে বড় বাধা৷ তবে একটি কথা বাবা-মাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি শিশুই আলাদা৷ অর্থাৎ সবার গ্রহণযোগ্যতা সমান নয়৷ ‘আমাদের সন্তানের চেয়ে অন্য বাচ্চার রেজাল্ট ভালো কেন?’ – এ প্রশ্ন কখনই করা উচিত নয়৷
ছবি: Fotolia
ভয় মস্তিষ্ককে বিগড়ে দেয়
পরীক্ষার হলে সব কিছু ভুলে যাওয়াটা মোটেই নতুন নয়৷ একে আমরা ‘ব্ল্যাকআউট’ বলে জানি৷ এমনটা কিন্তু শুধুমাত্র ভয়ের কারণেই হয়ে থাকে৷ ‘‘ভয়ের সময় মানুষের শরীরে স্ট্রেস হরমোন ছড়িয়ে পড়ে এবং স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যায় বা বাঁধাপ্রাপ্ত হয়৷ অর্থাৎ শেখা বা জানা বিষয়ও মনে পড়ে না৷’’ বলেন জার্মানির মস্তিষ্ক গবেষক৷
ছবি: Fotolia/Photographee.eu
শিশুদের আত্মবিশ্বাস গড়তে বড়দের ভূমিকা
বর্তমানে আমরা, অর্থাৎ বড়রা যে মানসিক চাপের মধ্যে জীবনযাপন করছি, তা ইচ্ছে করে নয়৷ পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করছে৷ তাই যতটা সম্ভব শিশুদের মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন৷ কারণ শিশু বয়সেই তৈরি হয় ব্যক্তিত্ব, তাদের আত্মবিশ্বাস, যা বড় হতে, সুস্থ মানুষ হতে অনেক বেশি প্রয়োজন৷