গাড়ির চাকা; সেই চাকার রিম; সেই রিম ঢাকবার জন্য হাবক্যাপ, তা-ও আবার প্লাস্টিকের – অ্যালুমিনিয়ামের নয়৷ তা থেকে শিল্পকর্ম সৃষ্টি করার কথা ভাবতে পারেন? ব্রিটিশ শিল্পী টোলেমি এলরিংটন সে-কথা শুধু ভাবেননি, করেও দেখিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
হাবক্যাপ থেকে শিল্পকর্ম
02:31
গাড়ির চাকার হাবক্যাপ থেকে ভাস্কর্য: মাছ কিংবা পাখি কিংবা ব্যাঙ৷ ব্রিটিশ শিল্পী টোলেমি এলরিংটন জীবজন্তুর মূর্তি তৈরি করতে ভালোবাসেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘লোকে ভাবে হাবক্যাপ মানে হাবক্যাপ, কিন্তু আসলে তা নানা ধরনের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি৷ হাবক্যাপ নানা আকারের হয়, তা দিয়ে অনেক কিছু করা যায়, খেলা করা যায়৷ আসলে আমি সেটাই করছি: আমি যখন কাজ করি, তখন আমি কিন্তু খেলাই করছি৷''
নিজের স্টুডিও-তে প্লাস্টিকের হাবক্যাপগুলো নানা আকারে কেটে তারপর কাজ শুরু করেন এলরিংটন৷ আশির দশকে আর্ট আর ডিজাইন নিয়ে পড়াশুনো করেছিলেন৷ আজ স্বাধীনভাবে কাজ করেন৷ খুব কঠিন কোনো ভাস্কর্য হলে আগে থেকে স্কেচ করে নেন, কিংবা ফটো দেখে দেখে কাজ করেন৷ তবে হাবক্যাপটা কিভাবে তৈরি, প্রধানত তা থেকেই তিনি আইডিয়া পান৷ হাবক্যাপের আকৃতিই তাঁর শিল্পের প্রেরণা যোগায়৷
আবর্জনা থেকে বিস্ময় জাগানো শিল্পকর্ম
সমুদ্রসৈকত নোংরা করে ফেলে প্লাস্টিকের ব্যাগ, স্যান্ডেল, খেলনা, টুথব্রাশসহ নানারকম পরিত্যক্ত জিনিস৷ সবার চোখে আবর্জনা হলেও ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর কাছে এ সব অমূল্য বস্তু৷ তাই এগুলো দিয়েই দারুণ সব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করছে তারা৷
ছবি: Washed Ashore
আবর্জনাই যখন শিল্পীর হাতে...
এই বিশাল মাছঠি তৈরি হয়েছে শুধু সমুদ্র সৈকতে কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিকের আবর্জনা দিয়ে৷ ভালো মনের শিল্পীর হাতে আবর্জনাও কত অপরূপ, কত অসাধারণ কিছু হয়ে উঠতে পারে – এ ছবিটা তারই নিদর্শন, তাই নয় কি?
ছবি: Washed Ashore
যেখানে দেখিবে প্লাস্টিক
‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই/পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’ – ছাই কুড়ালে রতন তো পায়ই অনেকে৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সংগঠন প্লাস্টিক কুড়িয়েই তৈরি করছেন অমূল সব শিল্পকর্ম৷ শিল্প সৃষ্টির আগে ওরেগনের সমুদ্রসৈকত থেকে প্লাস্টিকের জিনিস সংগ্রহ করে, ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করার পর সব জিনিস রং অনুযায়ী আলাদা করাও কিন্তু খুব শ্রমসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ কাজ৷
ছবি: Washed Ashore
আসল উদ্যোক্তা
ছবির এই মানুষটির নাম অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি৷ ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ প্রকল্পের প্রধান তিনি৷ পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের নানা জিনিস দিয়ে নানা ধরনের প্রাণীর যে সব মূর্তি গড়া হয়, সেগুলোর সবচেয়ে কঠিন অংশটুকুও তিনিই করেন৷
ছবি: Washed Ashore
স্বেচ্ছাসেবা দিতে এসে শিক্ষার্থী
‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর উদ্যোগের অংশ হতে আজ অনেকেই আগ্রহী৷ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ‘ওয়াশড অ্যাশোর’-এর হয়ে কাজও করছেন অনেকে৷ পরিবেশ রক্ষা এবং পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে শরিক হয়ে শিল্প সৃষ্টির নেশায়ও মেতেছেন কেউ কেউ৷
ছবি: Washed Ashore
সচেতনতা বৃদ্ধি
প্লাস্টিকের বড় প্রাণী তৈরি করেই কিন্তু কাজ শেষ নয়৷ শিল্পকর্মগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করে তারা৷ এ সব প্রদর্শনীর একটাই উদ্দেশ্য – পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি৷
ছবি: Washed Ashore
মনে দাগ কাটার মতো বড়
‘ওয়াশড অ্যাশোর’ সব সময় প্লাস্টিকের বড় বড় মূর্তিই তৈরি করে৷ বেশির ভাগ মূর্তিই সাড়ে তিন থেকে চার মিটার লম্বা এবং প্রায় তিন মিটার উঁচু৷ সবচেয়ে বড় একটি পাখির মূর্তি৷ সেই পাখির ডানার দৈর্ঘ্যই সাত মিটারের মতো!
ছবি: Washed Ashore
সবাই তাদের অনুসরণ করুন
অ্যাঞ্জেলা হ্যাসেলটিন পোৎসি মনে করেন, ‘ওয়াশড অ্যাশোর’ যে কাজটি করছে তা যদি বিশ্বের সব প্রান্তে অনেক মানুষ করতে শুরু করে তাহলেই তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে৷ যেখানে-সেখানে প্লাস্টিকের জিনিস ফেলার প্রবণতা কমিয়ে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করা তাহলেই যে সম্ভব৷
ছবি: Washed Ashore
7 ছবি1 | 7
১৫ বছর ধরে টোলেমি এলরিংটন তাঁর এই আজব শিল্পকর্ম করে আসছেন৷ কোনো কোনো মূর্তি একদিনেই শেষ হয়ে যায়, কোনো কোনোটাতে বেশ কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যায়৷ ব্রিটিশ এই শিল্পী জানান, ‘‘সৃজনীমূলক কাজের সবচেয়ে বড় কথা হলো, তা ছবিই আঁকুন আর মূর্তিই গড়ুন, ঠিকমত দেখতে পারা৷ চোখ আর মাথাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যা-তে মাথায় যে সব আকৃতি রয়েছে, সেগুলো বাস্তব আকার নিতে পারে৷''
এ পর্যন্ত বেশ কয়েক'শ জীবজন্তু গড়েছেন এলরিংটন৷ গড়ে হাজার ইউরো মূল্য দিয়ে এই সব শিল্পকর্ম কেনেন সৌখিন খদ্দেররা৷ আবার যে সব মূর্তিতে কাজ বেশি, সেগুলোর দাম চল্লিশ হাজার ইউরো অবধি হতে পারে৷ এলরিংটন বলেন, ‘‘আমার মাথায় আইডিয়াটা আসে কারণ আমরা একটা রাস্তার বাঁকের কাছে থাকতাম৷ রাস্তার ধারে গাড়ি থেকে ছটকে যাওয়া হাবক্যাপগুলো পড়ে থাকত৷ সেগুলোকে কেউ তুলে ময়লা ফেলার ধাপাতেও নিয়ে যেত না৷ কাজেই আমি সেগুলো কুড়িয়ে আনতে শুরু করি৷ পরে দেখেছি, হাবক্যাপগুলোর মধ্যে কয়েকটার ডিজাইন সত্যিই বেশ সুন্দর৷''
আজ ৫০ বছর বয়সেও এলরিংটন তাঁর শিল্পের মালমশলা রাস্তাতেই খুঁজে পান...৷
সহজ জীবনযাপনের শিল্প
প্রতি বছরের মতো এবারও জার্মানির কোলন শহরে বসেছে ইন্টারনাৎসোনালে ম্যোবেল মেসে (আইএমএম) বা আন্তর্জাতিক ফার্নিচার মেলা৷ ছবিঘরে দেখে নিন এই মেলায় প্রদর্শিত কিছু অভিনব ডিজাইন৷
ছবি: DW/B. Görtz
গল্প বলা তাঁবু
দূরের কোনো দেশের কথা মনে করিয়ে দেয়া, কোনো ইচ্ছে পূরণের প্রতীক, কোনো স্বপ্ন, কোনো সংস্কৃতিকে তুলে ধরে – এমন তাঁবুতে বাস করা মন্দ কী! আলেকসান্ডার সাইফ্রাইড অসম্ভব সুন্দর এই ‘কারগাহ তাঁবু’ তৈরি করেছেন উত্তর আফগানিস্তানের এক ধরণের ঘরের আদলে৷ জার্মান কোম্পানি রিচার্ড লাম্প্যার্টের জন্য নির্মাণ করা এই অভিনব ঘরটির পেছনের ভাবনাটা হলো, যেখানে তাঁবু ফেলা যায়, সেখানেই বাস করতে পারেন আপনি৷
ছবি: DW/B. Görtz
যেন স্বপ্ন দেখছি...
জেন ভরথিংটন ডাচ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান লেওলুক্সের জন্য তৈরি করেছেন সোফার মতো এই দোলনাটি৷ তাঁর এই ডিজাইন কোলনের আন্তর্জাতিক ফার্নিচার মেলায় ‘ইন্টেরিয়র ইনোভেশন’ অ্যাওয়ার্ড জিতেছে৷ মেলায় পুরো জানুয়ারি মাস জেনের এই স্বপ্নের ঘোর লাগানো সোফা প্রদর্শিত হবে৷
ছবি: DW/B. Görtz
সময় পেরিয়ে...
এমন চেয়ারের আদি ডিজাইনার চার্লস এমেস এবং তাঁর স্ত্রী রে৷ ডিজাইন কবে করা হয়েছিল ৬০ বছরেরও বেশি আগে! পরবর্তীতে অন্য ডিজাইনাররা নিজেদের কল্পনার তুলির আঁচড়ে চার্লস আর রে দম্পতির সৃষ্টিকে নতুন জীবন দিয়েছেন বহুবার৷ তার দিয়ে তৈরি ছবির এই চেয়ারগুলোও চার্লস-রে দম্পতির কাজ থেকে প্রেরণা নিয়েই করা৷ ফার্নিচার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ভিত্রা-র জন্য দেখতে সহজ অথচ চমৎকার ডিজাইনটি করেছেন ডিটার থীল৷
ছবি: DW/B. Görtz
ডেনিশ আকর্ষণ
মেলার গত আসরে তাঁরা ছিলেন না৷ সবাই খুব মিস করেছেন তাঁদের৷ তবে এবার স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ডিজাইন নিয়ে পূর্ণ মহিমায় ফিরে এসেছেন গুবি, মুটো, নরমান কোপেনহাগেনের মতো অনেকে৷ ওসব দেশের ফার্নিচারের বিশেষ একটা বিশেষত্ত হলো, সাধারণভাবে খুব সুন্দর আসবাবগুলো ছোট কোনো ঘরেও ব্যবহার করা যায়৷ এই সোফাগুলোই দেখুন, কাঠ আর অন্য কিছু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা সোফাগুলোকে আকারে একেবারেই বড় বলা যাবে না৷
ছবি: DW/B. Görtz
আলোর মজা
ঘটনাক্রমে এই আসবাবপত্রের ডিজাইনারও ডেনিশ এবং এটিও খুব পুরোনো৷ ডিজাইনারের নাম ভ্যার্নার পান্টন৷ গত প্রায় ৫০ বছর ধরে কোলন আন্তর্জাতিক ফার্নিচার মেলায় বেশ নাম করেছেন তিনি৷ তাঁর ডিজাইন করা ‘ফান’ বা ‘মজা’ নামের ল্যাম্পটি আজও ‘বেস্ট সেলার’৷
ছবি: DW/B. Görtz
সবুজ বাস
লতানো গাছের আদলে বাতি৷ সবুজ লতা-পাতার পাশে সাদা ফুল, ফল হয়ে জ্বলন্ত এই বাতি এবারের আন্তর্জাতিক ফার্নিচার মেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে৷ আলোর সঙ্গে ক্যানাডিয়ান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বোচির নামও ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র৷
ছবি: DW/B. Görtz
সবুজ নিদ্রা
ইটালিয়ান ডিজাইনার কাপো ডি’অপেরার ডিজাইন করা এই বিছানা দেখলে কি মনে হয়, প্রচুর টাকা খরচ করে চোখধাঁধানো কোনো শয্যা তৈরির কোনো মানে আছে? কাপো আসলে বুনো পরিবেশের ছিমছাম একটা শয্যাও যে মুগ্ধ করতে পারে, তা-ই দেখাতে চেয়েছেন৷ বিছানার চাদর এলোমেলো৷ দেখে মনে হয় এই বুঝি কেউ কয়েক মুহূর্তের জন্য বিছানা ছেড়ে গেলেন, এক্ষুনি আবার ফিরে আসবেন৷
ছবি: DW/B. Görtz
একই উৎস থেকে
সার্বিয়ার ডিজাইনাররা এলইডি প্রযুক্তিকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে এমন এক লাইট তৈরি করেছেন যার অভাব মেটাতে গেলে হয়ত একই ঘরে অনেকগুলো লাইট ব্যবহার করতে হবে৷ এই বাতির উৎস একটাই৷ এক জায়গা থেকেই বেরিয়েছে অনেকগুলো বাতি৷ দামও কিন্তু অনেক৷ ৫০ হাজার ইউরো!
ছবি: DW/B. Görtz
ভবিষ্যতে এমন হবে?
এবারও মেলায় এক তরুণ ডিজাইনারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ তাঁর কাজ ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ ঘরের ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে দেখানো৷ ডেনিশ-ইংলিশ ডিজাইনার লুইস ক্যাম্পবেল দারুণ কাজ দেখিয়েছেন৷ আইডিয়াটা চমৎকার৷ একটই বিশাল ঘর৷ এক ঘরেই শোবার ঘর, খাবার ঘর, রান্নাঘর – সব৷ একেক ঘরের ডিজাইন এমনভাবে করা যাতে একই ঘর অন্য ঘরের মতোও ব্যবহার করা যায়৷ এই রান্নাঘরটাই দেখুন৷ দেখে কেমন ওয়ার্কশপ ওয়ার্কশপ মনে হয় না!