হামবুর্গে জি-টোয়েন্টি শীর্যবৈঠক চলাকালীন নিজের সমর্থকদের সমাবেশ আয়োজনের অনুমতির আবেদন করেছিলেন রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ তুরস্কের প্রেসিডেন্টের এ অনুরোধ নাকচ করেছে জার্মানি৷
বিজ্ঞাপন
‘‘আমরা তুরস্ককে বলছি যে, জার্মানিতে এ ধরনের সভা করা যে সম্ভব নয়, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত,’’ বলেছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল৷ তিনি এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে জার্মান সংবিধানের সূত্রের উল্লেখ করেন৷
‘‘আমাদের দেশ একটি মুক্ত দেশ, কিন্তু আমরা অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিরোধকে আমাদের জনগণের মধ্যে আমদানি করার অনুমতি দেওয়ার অভিপ্রায় রাখি না,’’ বলেন গাব্রিয়েল৷ বার্লিনের জোট সরকারের ভাইস চ্যান্সেলর ইতিপূর্বে মন্তব্য করেছেন যে, জার্মানি ও তুরস্কের মধ্যে বর্তমান ‘রাজনৈতিক আবহাওয়ায়’ তিনি এর্দোয়ানের জনসভা করার পরিকল্পনাকে ভালো প্রস্তাব বলে মনে করেন না৷ ‘‘এ বিষয়ে ফেডারাল সরকারের মনোভাব এক,’’ বলেন গাব্রিয়েল, যার অর্থ, তাঁর অবস্থানের প্রতি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সমর্থন আছে৷
কয়েকজন বিশ্বনেতা যাঁদের নিয়ে ব্যঙ্গ করা হয়েছে
ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন হোক আর টেলিভিশন শো৷ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অনেক সময় বিশ্বনেতাদের নিয়েও স্যাটায়ার করা হয়৷
গ্রিসের ঋণ সংকটের সময় প্রায়ই সে দেশের ম্যাগাজিনগুলোতে নাৎসি আমলের পোশাক পরিহিত অবস্থায় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ছবি প্রকাশিত হতো৷ উপরের ছবিটি ২০১২ সালের৷ একটি স্যাটায়ারিক্যাল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ম্যার্কেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার সেনাবাহিনীর পোশাক পরে আছেন, আর তাঁর ঘাড়ে শকুন৷
ছবি: picture-alliance/Rolf Haid
ডোনাল্ড ট্রাম্প
রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পকে নিয়ে প্রায়ই কার্টুন আর ব্যঙ্গ করা হয়৷ যেমন ‘দ্য বোস্টন গ্লোব’ সম্প্রতি তাদের প্রথম পাতায় একটি প্যারোডি প্রকাশ করেছে৷ এতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে বিশ্বের পরিস্থিতি কেমন হতে পারে তার বর্ণনা রয়েছে৷ ট্রাম্প ঐ প্রতিবেদনকে ‘নির্বোধ’ আর ‘অর্থহীন’ বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/The Boston Globe
ভ্লাদিমির পুটিন
ছুটিতে গিয়ে খালি গায়ের পুটিন ঘোড়া চালাচ্ছেন এমন ছবি প্রকাশিত হয়েছে অতীতে৷ উপরের ছবিটি গত বছর অনুষ্ঠিত জার্মানির একটি কার্নিভাল প্যারেডের৷ সেখানে পুটিনের হৃষ্টপুষ্ট ডান হাতে লেখা আছে ‘মিলিটারি’ আর রুগ্ন বাম হাতে লেখা ‘অর্থনীতি’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
কিম জং-উন
২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া কমেডি মুভি ‘দ্য ইন্টারভিউ’ মুভিতে দেখা যায়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ দু’জন সাংবাদিককে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য পাঠিয়ে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করে৷ এর প্রেক্ষিতে সনি পিকচার্স সাইবার হামলার শিকার হয়৷ এফবিআই এর ধারণা, এর হামলার পেছনে ছিল উত্তর কোরিয়ার সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Columbia Pictures/Sony
জর্জ ডাব্লিউ বুশ
তাঁর বুদ্ধিমত্তার অভাব নিয়ে মার্কিন টিভি চ্যানেলের লেট নাইট কমেডি শোগুলোতে অনেকবার ব্যঙ্গ করা হয়েছে৷ ক’দিন আগে তিনি যখন পেইন্টিং এর দিকে ঝোঁকার কথা জানান, তখন উপরের ছবিটির আবির্ভাব হয়৷
ছবি: Getty Images/M. Tama
ইয়ারোস্লাভ কাচিনস্কি
এটিও জার্মানির একটি কার্নিভাল প্যারেডের ছবি৷ এতে দেখা যাচ্ছে, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী কাচিনস্কির বুটের নীচে এক নারী৷ তার গায়ে লেখা পোল্যান্ড৷ কাচিনস্কির শাসনামলে দেশটির নারীদের অবস্থা এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷ পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এর মাধ্যমে পোলিশ জনগণকে অসম্মান করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gambarini
আয়াতুল্লাহ খোমেনি
ছবিতে হল্যান্ডে জন্ম নেয়া, জার্মানিতে বসবাসকারী এন্টারটেনার রুডি ক্যারেলকে দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৮৭ সালে তিনি একটি আলোকচিত্র বিন্যাস (ফটো মন্তাজ) তৈরি করেছিলেন যেখানে দেখানো হয়েছিল, ইরানের বিপ্লবের নেতা খোমেনির সরকারি সফরের সময় তার দিকে অন্তর্বাস ছুড়ে মারা হচ্ছে৷ এর প্রতিবাদে তেহরান দু’জন জার্মান কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান
সম্প্রতি জার্মানির এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে একটি ছড়া পাঠ করেন কমেডিয়ান ইয়ান ব্যোমারমান (ছবিতে বামে)৷ লক্ষ্য ছিল, এর্দোয়ানের আমলে তুরস্কে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যেভাবে চাপের মুখে পড়েছে, তাকে ব্যঙ্গ করা৷ কিন্তু যে কারণেই হোক, ছড়ায় এর্দোয়ানের যৌন পছন্দ-অপছন্দকে পাশবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা সে ছাগলদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কেই হোক আর ভেড়াদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কেই হোক৷ এর তীব্র প্রতিবাদ জানান এর্দোয়ান৷
তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুসেয়িন মুফতুওগলু একবিবৃতিতে বলেছেন, জার্মানির কিছু রাজনীতিক ‘‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতির লাভালাভের’’ কথা ভেবে অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করছেন, সেটা দুঃখজনক৷
এর্দোয়ান আগামী সপ্তাহে জি-টোয়েন্টি শীর্ষবৈঠকে যোগদানের জন্য হামবুর্গে আসছেন৷ যে সাংবিধানিক গণভোট তাঁকে ব্যাপক ক্ষমতা এনে দেয়, তার প্রচারপর্বে এর্দোয়ান ও তাঁর মন্ত্রীবর্গ একাধিকবার জার্মানি ও অপরাপর ইউরোপীয় দেশের বিরুদ্ধে ‘নাৎসিসুলভ’ আচরণের অভিযোগ করেছেন৷ দ্বিতীয়ত, তুরস্কে মিডিয়া ও সরকারবিরোধীদের প্রতি এর্দোয়ান প্রশাসনের কঠোরতা বহু বিদেশি সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷ তৃতীয়ত, এর্দোয়ান যে হামবুর্গে তাঁর জনসভায় তুরস্কে পুনরায় মৃত্যুদণ্ড চালু করার পক্ষে বক্তব্য রাখবেন না, জার্মান রাজনীতিক মহলে তা নিয়ে পূর্বাপর অনিশ্চয়তা আছে৷
জার্মান কর্মকর্তারা আগেও বারংবার বলেছেন, তুরস্কের অভ্যন্তরীণ সংঘাত জার্মানিতে ছড়িয়ে পড়ুক, সেটা তারা চান না৷ জার্মানিতে তুর্কি বংশোদ্ভূত বাসিন্দা ত্রিশ লাখ অতিক্রম করেছে৷ এবারের জি-টোয়েন্টি শীর্ষবৈঠকেও এর্দোয়ান সমর্থক ও কুর্দ জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা৷
উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কে তিক্ততা এখন চরমে পৌঁছেছে, যার ফলশ্রুতি একাধিক ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে: যেমন তুরস্ক জার্মান সাংসদদের ইনচিরলিকে নিযুক্ত জার্মান সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়ার ফলে জার্মান সেনাবাহিনী জর্ডানের একটি বিমানঘাঁটি ব্যবহার করতে চলেছে৷ অপরদিকে ডেনিজ ইউচেল ও আরো একজন তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান সাংবাদিককে তুরস্কে ‘সন্ত্রাসবাদের’ অভিযোগে কারাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে৷