জার্মানির হামবুর্গ নগর রাজ্যের নির্বাচনে ম্যার্কেলের সিডিইউ ও চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি দল খারাপ ফল করেছে৷ সবুজ দলের বিপুল সাফল্যের জোরে সামাজিক গণতন্ত্রীরা বর্তমান জোট সরকার অক্ষত রেখেছে৷
বিজ্ঞাপন
জাতীয় রাজনীতির গতিপ্রকৃতি যে আঞ্চলিক নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে, তার পরিচয় আবার পাওয়া গেল জার্মানির হামবুর্গ নগর রাজ্যে৷ রবিবার সেই নির্বাচনে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের ভরাডুবি হয়েছে৷ গত পাঁচ বছর বিরোধী আসনে থাকা সত্ত্বেও দলটি ক্ষমতাসীন সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি ও সবুজ দলের জোটকে হারাতে পারেনি৷ ম্যার্কেলের উত্তরসূরি বাছাই নিয়ে সিডিইউ দলে যে সংকট চলছে, সেই প্রেক্ষাপটে ভোটাররা রক্ষণশীল এই দলের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে৷
সম্প্রতি জার্মানির হানাউ শহরে চরম দক্ষিণপন্থি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ আততায়ীর হামলাও সম্ভবত ভোটারদের মনে প্রভাব ফেলছে৷ প্রতিবাদী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও এএফডি বা ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ দল যে রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিদেশি-বিদ্বেষী, বর্ণবাদী সংবিধান-বিরোধী শক্তিতে পরিণত হয়েছে, অনেকের মনেই সেই উপলব্ধি হচ্ছে৷ হামবুর্গের নির্বাচনের আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্ভাব্য এএফডি-ভোটারদের উদ্দেশ্যে বার বার এক সতর্কবাণী শোনা যাচ্ছিল৷ হানাউ-এর ঘটনার পরেও বিবেকদংশন ছাড়া এই দলকে ভোট দেওয়া উচিত কিনা, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷ হামবুর্গের নির্বাচনে এএফডি দলের খারাপ ফলের পেছনে সেই প্রচার অভিযান যে কিছুটা হলেও প্রভাব রেখেছে, সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের আচরণে তার প্রতিফলন দেখা গেছে৷ দলের মধ্যেও আদর্শগত অবস্থান নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
অন্যদিকে হামবুর্গের নির্বাচনে সমর্থন প্রায় দ্বিগুণ করতে পেরেছে সবুজ দল৷ প্রান্তিক, পরিবেশবাদী দল থেকে মূল স্রোতের মধ্যপন্থি শক্তিতে পরিণত হচ্ছে এই দলটি৷ একের পর এক নির্বাচনে সবুজ দলের সাফল্য দুই বড় দলের ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে৷ সিডিইউ ও এসপিডি দলের বর্তমান সংকটের ফলে শূন্যতার অনেকটাই ভরাট করছে সবুজ দল৷
বহুকাল পরে জার্মানির কোনো নির্বাচনে সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল৷ গতবারের তুলনায় সমর্থন হারালেও শাসক মেয়র হিসেবে নিজের দলের জয় অক্ষত রাখতে পেরেছেন পেটার চেনচার৷
হামবুর্গের আঞ্চলিক নির্বাচনের প্রভাব জার্মানির বাকি রাজ্যের ভোটারদের উপর কতটা প্রভাব রাখবে, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ বিশেষ করে ‘প্রতিবাদী’ ভোটাররা আগের মতই এএফডি দলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে যাবেন কিনা, সে দিকে পর্যবেক্ষকদের নজর থাকবে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
জার্মানিতে নিরাপত্তা শঙ্কায় মুসলিমরা
জার্মানির হেসে রাজ্যের হানাও শহরে দক্ষিণপন্থি সন্ত্রাসীর গুলিতে নয় জন মারা গেছেন৷ দু’দিন আগেই নাশকতার পরিকল্পপনা করা কয়েকজন দক্ষিণপন্থিকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ মুসলিম সমাজ সরকারের কাছে নিরাপত্তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Probst
বারে গুলি
১৯ ফেব্রুয়ারি জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে হানাও শহরের একাধিক স্থানে হামলায় নয়জন প্রাণ হারান৷ পরে হামলাকারী ও তার মা-কে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ৷
ছবি: Reuters/R. Orlowski
নিরাপত্তা শঙ্কায় মুসলিমরা
ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জার্মানিতে মুসলিমদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মহাসচিব আবদাসসামাদ এল ইয়াজিদি বলেন, মুসলিমরা ‘খুবই অনিরাপদ’ বোধ করছেন৷ তিনি বলেন, দক্ষিণপন্থার এমন উত্থান আগে কখনো দেখা যায়নি৷
ছবি: imago images/IPON
দেশজুড়ে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা
এই ঘটনার দু’দিন আগে জার্মান পুলিশ দেশটির ছয় রাজ্যে ১৩টি স্থানে অভিযান চালিয়ে এক ডজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে৷ অভিযোগ রয়েছে, এরা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, আশ্রয়প্রার্থী ও মুসলিমদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন৷ তারা চেয়েছিলেন জার্মানিতে একটি গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stein
নাশকতা পরিকল্পনার মূল হোতা পাঁচ উগ্র ডানপন্থি
জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ ঘটনার তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই পরিকল্পনার মূল হোতা ছিলেন পাঁচ জন উগ্র ডানপন্থি সন্ত্রাসী৷ বাকিরা এদের অর্থ জোগাচ্ছিলেন৷ এদের সবাই জার্মান ও পুরুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Deck
অস্ত্রের খোঁজে
যে ছয় রাজ্যে অভিযান চালানো হয় তা হলো: বাডেন-ভ্যুটেমব্যার্গ, বাভেরিয়া, লোয়ার স্যাক্সনি, নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়া, রাইনল্যান্ড-পালাটিনাটে এবং স্যাক্সনি-আনহাল্ট৷ দলটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ পুলিশ সম্ভাব্য হামলায় ব্যবহার করার অস্ত্রেরও খোঁজ করছে৷ জার্মান গণমাধ্যম জানিয়েছে, তারা হাতে তৈরি অস্ত্র ও হামলার আইডিয়া সম্বলিত ছবি পরস্পরের সঙ্গে শেয়ার করেছেন৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
মসজিদে নিরাপত্তা চান মুসলিমরা
ডানপন্থি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের পর মুসলিমরা মসজিদগুলোকে সুরক্ষিত করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ জার্মান মুসলিমদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে আইজিএমজি-র চেয়ার আইমান মাজিয়েক পত্রিকা ড্যের স্পিগেলকে বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রের ভাবা উচিত৷’’ যেসব জায়গায় আগেও হামলা হয়েছে সেগুলোতে, বিশেষ করে পুলিশের উপস্থিতি জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি৷
ছবি: Imago Images/M. Schüler
বছরে একশ’ হামলা
জার্মানির বিভিন্ন মসজিদে বছরে প্রায় একশ’ হামলার ঘটনা নিবন্ধিত হয় বলে জানিয়েছে দেশটির মসজিদগুলোর সবচেয়ে বড় অ্যাসোসিয়েশন ডিটিব৷ গত কয়েক সপ্তাহে উনা, হাগেন, এসেন ও বিয়েলফেল্ডের মসজিদগুলোতে বোমা হামলার হুমকি দেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
উগ্র ডানপন্থার উত্থান
গত জুনে ভাল্টার ল্যুবকে নামের এক রাজনীতিককে হত্যা এবং হালেতে একটি সিনাগগে হামলার ঘটনায় জার্মানিতে উগ্র ডানপন্থা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে সবার টনক নড়েছে৷ সম্প্রতি সামাজিক গণমাধ্যমে বেশ কিছু পোস্টও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে৷