সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার পেছনে স্পষ্টতই ইরানের হাত আছে বলে মনে করেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল, এমানুয়েল মাক্রোঁ এবং বরিস জনসন৷ তবে কূটনৈতিকভাবেই এই সংকট সমাধানের পক্ষে তাঁরা৷
বিজ্ঞাপন
সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার পেছনে ইরানের হাত আছে বলে জানিয়েছে জার্মানি, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স৷ তেহরানকে আর কোনো ‘উস্কানিমূলক' কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকারও আহবান জানিয়েছে তারা৷
‘‘আমাদের কাছে এটা স্পষ্ট যে ইরানই এই হামলার জন্য দায়ী৷ এর বাইরে আর কোনো ব্যাখ্যা নেই,’’ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইন বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে এই কথা বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷
২০১৫ সালে পরমানু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয় এই দেশগুলোর প্রধানরা অবশ্য মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যের সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে কূটনীতিই একমাত্র সমাধান৷
‘‘ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুসহ পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমঝোতার ফ্রেমওয়ার্ক মেনে নিতে ইরানের জন্য এখনই সময়,'' বিবৃতিতেত তাঁরা আরো বলেন, ‘‘আমরা ইরানকে এমন আলোচনার প্রতিশ্রুতি দেয়ার এবং নতুন কোনো উস্কানি থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছি৷’’
সৌদি আরব, ইরান, ইসরায়েল কার শক্তি কেমন?
সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে হামলার পর অস্থির হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি৷ হুতি বিদ্রোহীরা এর দায় নিলেও ইরানকে দায়ী মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব৷ এ নিয়ে চলছে হুমকি-পাল্টা হুমকি৷ কিন্তু সামরিক শক্তিমত্তা কার বেশি?
ছবি: picture-alliance/EPA/TSGT
আকাশে সৌদি আরব
সামরিক খাতে সৌদি আরব ২০১৮ সালে ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ডলার খরচ করেছে৷ ব্যয়ের দিক থেকে তাদের অবস্থান গোটা বিশ্বে তৃতীয় আর উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে৷ বিশ্বের সামরিক যন্ত্রপাতির সবচেয়ে বড় ক্রেতাও তারা৷ বর্তমানে সৌদির মোট সামরিক সদস্য ২ লাখ ৩০ হাজার৷ আছে ৮৪৮ টি যুদ্ধবিমান, ২৫৪ টি হেলিকপ্টার, ১০৬২ টি ট্যাংক ও ৫৫ টি যুদ্ধ জাহাজ৷ তবে নেই কোনো সাবমেরিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সমুদ্র আর সৈন্যে ইরান
সামরিক খাতে গত বছর ইরানের ব্যয় ছিল ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার, যা ২০১৭ সালের তুলনায় সাড়ে নয় ভাগ কম৷ অবরোধ আর অর্থনৈতিক মন্দায় গত এক দশকে দেশটির অস্ত্র আমদানির পরিমাণও কমেছে৷ ২০০৯-১৮ সালের মধ্যে তা্দের আমদানিকৃত অস্ত্রের পরিমাণ সৌদি আরবের মাত্র সাড়ে তিনভাগ৷ বর্তমানে দেশটির সামরিক সদস্য আট লাখ ৭৩ হাজার৷ ৫০৯ টি যুদ্ধ বিমান, ১৫৬ টি হেলিকপ্টার, ১৬৩৪ টি ট্যাংক, ৩৯৮ টি নৌযান, ৩৪ টি সাবমেরিনের মালিক তারা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Noroozi
ইসরায়েল নিজেই অস্ত্র তৈরি করে
২০১৮ সালে সামরিক খাতে এক হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার ব্যয় করেছে ইসরায়েল৷ দেশটি নিজেই সামরিক অস্ত্র তৈরি করে, তাই তেমন একটা আমদানি করতে হয় না৷ গত বছর সর্বসাকুল্যে ১০৩ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানির কাছ থেকে৷ দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৬ লাখ ১৫ হাজার৷ তাদের বহরে আছে ৫৯৫ টি যুদ্ধবিমান, ১৪৬ টি হেলিকপ্টার, ২৭৬০ টি ট্যাংক, ৬ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters
প্রতাপশালী তুরস্ক
২০১৮ সালে তুরস্কের সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৯৭ কোটি ডলার৷ এর মধ্যে ১১১ কোটি ডলার খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেন, ইতালিসহ ৬টি দেশের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তুরস্কের সামরিক বাহিনীর সদস্য ৭ লাখ ৩৫ হাজার৷ যুদ্ধবিমান আছে ১০৬৭ টি৷ আছে ৪৯২ টি হেলিকপ্টার, ৩২০০ ট্যাংক, ১৯৪ টি যুদ্ধজাহাজ, ১২ টি সাবমেরিন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Kilic
উপসাগরের ছোট শক্তি কাতার
কাতারের সবশেষ সামরিক ব্যয়ের হিসাবটি ২০১০ সালের৷ সে বছর তাদের বাজেট ছিল ২১৭ কোটি ডলারের৷ দেশটির সামরিক সদস্য সংখ্যা ১২ হাজার৷ আছে ১০০ টি এয়ারক্রাফট, ৪২ টি হেলিকপ্টার, ৯৫ টি ট্যাংক, ৮০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
পড়ন্ত শক্তির ইরাক
গেল বছর সামরিক বাহিনীর পেছনে প্রায় ৬৩২ কোটি ডলার খরচ করেছে ইরাক৷ এর মধ্যে ১৫৬ কোটি ডলার ব্যয় করেছে অস্ত্র ক্রয়ে৷ তাদের আছে ১ লাখ ৬৫ হাজার সৈন্য, ৩২৭ টি যুদ্ধবিমান, ১৭৯ টি হেলিকপ্টার, ৩০৯ টি ট্যাংক, ৬০ টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Abdul Hassan
এবং যুক্তরাষ্ট্র
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট ছিল ৬৪ হাজার ৮৮০ কোটি ডলারের৷ প্রায় সাড়ে ২১ লাখ সামরিক সদস্যের বিশাল বাহিনী তাদের৷ ১৩,৩৯৮ টি যুদ্ধবিমান, ৫৭৬০টি হেলিকপ্টার, ৬২৮৭টি ট্যাংক, ৪১৫টি যুদ্ধজাহাজ, ৬৮টি সাবমেরিন আছে এই পরাশক্তির বহরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Pizzoli
7 ছবি1 | 7
এদিকে ইরানের সাথে অধিকতর উন্নত একটি পরমাণু চুক্তির বিষয়ে ট্রাম্প আলোচনায় বসতে পারেন বলে জানিয়েছেন বরিস জনসন৷ এনবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি এক্ষেত্রে একজনই ভালো একটি চুক্তিতে পৌছাতে পারেন...আর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট৷ আমি একটি ট্রাম্প চুক্তির আশা করছি৷''
যদিও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ নতুন কোনো পরমাণু চুক্তির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন৷ এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ২০১৫ সালের চুক্তি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্রের পথে হাঁটলো ইউরোপ
গত ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের দুটি তেলক্ষেত্রে ভয়াবহ ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে৷ এর ফলে দেশটির তেলের সরবরাহ নেমে আসে অর্ধেকে৷ ঘটনার পরপরই দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা৷ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আর সৌদি আরব এই ঘটনার জন্য ইরানকে দায়ী করে আসছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, হামলা চালানো হয়েছে ইরান অথবা ইরাক থেকে৷ তবে এর পেছনে নিজেদের হাত থাকার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে ইরান৷ তারা বলছে, ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন বোমা হামলার কারণে হুতি বিদ্রোহীদের এমন প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে৷
এবার ইউরোপও ইরানকে দায়ী করায় উপসাগরীয় দেশটির উপর আরো চাপ তৈরি হলো৷
পম্পেওর কৃতজ্ঞতা
যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যকে সমর্থন করায় জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্টমন্ত্রী মাইক পম্পেও৷ ‘‘সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ইরানের যুদ্ধগত আচরণ এবং এই অঞ্চল ও সারা বিশ্বে এই ঘটনার প্রভাব নিয়ে স্পষ্ট করে বলায় যুক্তরাষ্ট্র তার ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে,’’ এক টুইট বার্তায় এভাবেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘এটি কূটনীতি এবং শান্তির পরিবেশ আরো জোরদার করবে৷ আমরা প্রতিটি দেশকেই ইরানের কর্মকাণ্ডের প্রতি এই নিন্দা জ্ঞাপনের আহবান জানাচ্ছি৷''
এফএস/এসিবি (এএফপি, এপি, ডিপিএ, রয়টার্স)
ইরানের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান
হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস ও সংস্কৃতি, আকর্ষণীয় ভবন আর অসাধারণ প্রকৃতির দেখা পেতে চাইলে চলে যান ইরানে৷ সঙ্গে পাবেন মনে রাখার মতো আতিথেয়তা৷
ছবি: picture alliance/Prisma
কাশান
শহরের কেন্দ্রে আছে ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়ি, মসজিদ আর বাজার৷ আর শহরের বাইরে গেলে দেখা যাবে লবণাক্ত পানির হ্রদ৷ এছাড়া মেরেনযব মরুভূমিতে বেড়াতে গিয়ে সূর্যোদয় দেখার বিষয়টিও অনেকদিন মনে রাখার মতো একটি বিষয়৷
ছবি: DW/F. Schlagwein
ইসফাহান
ইরানের প্রায় সব জায়গাতেই আর্টের দেখা পাওয়া যায়৷ যেমন ছবিতে ইসফাহান শহরে অবস্থিত শেখ লুৎফুল্লাহ মসজিদের গম্বুজের ভেতরের কারুকাজ দেখতে পাচ্ছেন৷ এছাড়া স্ট্রিট আর্ট, রংবেরংয়ের বাড়িঘর ইত্যাদিরও দেখা পাওয়া যাবে ইসফাহানে৷
ছবি: DW/F. Schlagwein
আবিয়ানেহ
কাশান আর ইসফাহানের মাঝে ছোট্ট একটি গ্রাম আবিয়ানেহ৷ মাত্র ৩০০ লোক বাস করেন সেখানে৷ কিন্তু ইরানের অনেকেই এই গ্রামকে চেনেন৷ কারণ প্রায় ২০০০ বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এখনও ধরে রেখেছেন গ্রামবাসীরা৷ সেখানকার ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে লাল-বাদামি রংয়ের মাটি দিয়ে৷ ২০০৭ সালে এই গ্রামের নাম ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ঠাঁই পায়৷
ছবি: DW/F. Schlagwein
লুট মরুভূমি
মঙ্গলগ্রহ দেখতে কেমন হতে পারে তা বোঝার জন্য অনেকে লুট মরুভূমির ছবি দেখে থাকেন৷ দাশত-ই-লুট, যা কালুট নামেও পরিচিত, মরুভূমিতে প্রাণের চিহ্ন নেই৷ থাকবেই বা কীভাবে? ২০০৫ সালে নাসা সেখানে ৭০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মেপেছিল৷
ছবি: DW/F. Schlagwein
ইয়াজদ
ইরানের সবচেয়ে বড় দুই মরুভূমির মাঝে অবস্থিত শহর এটি৷ দেশটির অন্যতম সুন্দর এই শহরে গেলে প্রাচীনকালের ঘরবাড়ির দেখা পাওয়া যাবে৷ আর সন্ধ্যাবেলার চায়ের দোকানের ছাদে উঠে আলোকিত শহর দেখাও এক দারুণ অভিজ্ঞতা৷
ছবি: picture alliance/Prisma
গোলেস্তান প্রদেশ
কেমন লাগছে ছবিটি? দারুণ না! ছোট্ট যে ঘরটি দেখছেন সেটি আসলে নবি খালেদ ইবনে সেনান (আঃ)-এর মাজার৷ সেখান থেকে সারি সারি পাহাড়ের দৃশ্য সত্যিই অপূর্ব৷ এলাকাটি উত্তরপূর্ব ইরানে অবস্থিত৷
ছবি: DW/F. Schlagwein
সিরাজ
বেশিরভাগ ইরানির ভালোলাগার শহর সিরাজ৷ সেখানে দেখার অনেক কিছু থাকলেও সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে মহাকবি হাফিজের কবর৷ এছাড়া নাসির-উল-মুল্ক মসজিদও দেখে আসতে পারেন৷
ছবি: DW/F. Schlagwein
পেরজেপোলিস
আকেমেনুদ সাম্রাজ্যের, যা প্রথম পারস্য সাম্রাজ্য নামেও পরিচিত, রাজধানী ছিল পেরজেপোলিস৷ এখনও শহরটিতে সেই সময়কার কিছু স্থাপত্যের দেখা পাওয়া যায়৷ ফলে ইউনেস্কোর তালিকায় এই শহরের নামও রয়েছে৷