যুক্তরাষ্ট্রের গুয়াম দ্বীপের উদ্দেশ্যে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল উত্তর কোরিয়া৷ এবার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার কথা জানালো দেশটি৷
বিজ্ঞাপন
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া আরও দেখতে চান উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন, জানিয়েছে দেশটির সরকারি গণমাধ্যম কেসিএনএ৷ এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, কিম জং উন সোমবার সেনা কর্মকর্তাদের গুয়াম হামলার পরিকল্পনা পরিদর্শন করেন৷ তিনি তাঁদের পরিকল্পনার প্রশংসা করেন৷ তবে এটি বাস্তবায়নের আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া আরও কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করতে চান বলে জানিয়েছেন কিম জং উন৷ ‘‘তিনি (উন) বলেছেন, ইয়াংকিরা যদি কোরীয় উপত্যকা ও তার নিকটবর্তী এলাকায় তাদের মারাত্মক বিপজ্জনক কার্যক্রম বলবৎ রেখে উত্তর কোরিয়ার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেয় তাহলে, অতীতে যে পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়েছে সে ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে'', লিখেছে কেসিএনএ৷
প্রতিবেদনের সঙ্গে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে কিম জং উন ব্যাটন দিয়ে একটি মানচিত্র দেখাচ্ছেন যেখানে একটি ফ্লাইটের পথ দেখানো হচ্ছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূল থেকে কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র জাপান পেরিয়ে গুয়ামের দিকে যাচ্ছে৷ এর আগেও উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে হামলার হুমকি দিয়ে এই ধরনের ছবি প্রকাশ করেছেন৷ কিন্তু কখনও তা বাস্তবায়ন করেনি৷
উত্তর কোরিয়ার হাত থেকে নিস্তার নেই
উত্তর কোরিয়াকে বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগার৷ সবশেষ খবর বলছে, দেশটির প্রশাসন তাদের জনগণকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বিশ্বের কাছ থেকে সবথেকে বেশি আলাদা করে রাখতে চাচ্ছে, পাশাপাশি এই সত্যটিকেও৷
কোন বন্ধু নেই
যদিও চীন ও উত্তর কোরিয়ার মাঝে বরাবরই খুব ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে, সম্প্রতি এই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে৷ এর প্রমাণ হয়, জিলিন প্রদেশের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তর কোরিয়ানদের ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীন৷ শুধু পাসপোর্টই নয়, পর্যটকদের সব ডিভাইস ও লাগেজ জমা রাখতে হয় কর্তৃপক্ষের কাছে৷
ছবি: Daily NK
বিতর্কিত জলাধারে সেতু
এত কড়াকড়ির পরও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর কোরিয়ার জন্য খুব দরকার৷ পরিত্যক্ত সিনো-কোরিয়ান ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজের বদলে দুই দেশকে আলাদা করা ইয়ালু নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মিত হচ্ছে৷ উত্তর কোরিয়া অংশে নির্মিতব্য সেতুর কাজ থেমে গেছে অর্থায়নের অভাবে৷
ছবি: Daily NK
সীমানায় বসে
গেল বছর উত্তর হ্যামগিয়ং প্রদেশের সীমান্তের কাটাতারের বেড়া, যেটি উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়া ও চীন থেকে আলাদা করত, তা বন্যায় ভেসে গেছে৷ এই বেড়া দেশটিতে চোরাচালান ও দেশত্যাগীদের নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে৷ অবশ্য প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে বেড়া তৈরি করে এবং পাহারা মোতায়েন করে৷
ছবি: Daily NK
হোম, সুইট হোম
তবে দিন দিন উত্তর কোরিয়ার দেশত্যাগীদের সংখ্যা কমছে, যদিও এটি শাসকগোষ্ঠীর কাছে এখনো একটি সংবেদনশীল বিষয়৷ উপরের ছবিতে একজন দক্ষিণ কোরীয় টেলিভিশন সেলিব্রেটিকে দেখা যাচ্ছে, যিনি উত্তর কোরিয়ায় ফিরে এসেছেন এবং স্থানীয় প্রপাগান্ডা টিভি চ্যানেলে ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘‘উত্তর কোরিয়ার নিকুচি করি৷’’
ছবি: Uriminzokkiri TV
পারলে কর পাকড়াও
পালিয়ে যাওয়া অনেক উত্তর কোরিয়ান ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন৷ কারণ তাদের পরিবারকে জিম্মি করা হয়েছিল৷ এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে যে, শাসকগোষ্ঠী চীন সীমান্তে এজেন্টদের মোতায়েন করে রেখেছে, যেন কেউ পালিয়ে যেতে নিলে তাকে ধরে আনা যায়৷ পাকড়াওকারীরা কাছাকাছি একটি হোটেলেই থাকেন সবসময়৷
ছবি: Wikipedia Commons
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
যদিও উত্তর কোরীয়দের জন্য বিষয়টি ভাবাই যায় না, তারপরও বিদেশিদের পর্যটকদের জন্য কিছু আকর্ষণীয় স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ এমনকি সরকারি পর্যটন ট্রাভেল এজেন্সি গেল আগস্টে তাদের আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট খুলেছে এবং আকর্ষণীয় সব ভ্রমণ প্যাকেজ ছেড়েছে৷
ছবি: Tourism DPRK
6 ছবি1 | 6
আশংকা কমছে না
আপাতত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে সরে আসলেও হামলার হুমকি থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ কারণ আগামী সপ্তাহেই কোরীয় উপত্যকায় যৌথ সামরিক অনুশীলন শুরু করতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র৷ এই বিষয়টি উত্তর কোরিয়াকে রাগান্বিত করে তুলবে বলে মনে করছেন তাঁরা৷ চীনের সরকারি দৈনিক গ্লোবাল টাইমসের একটি সম্পাদকীয় বলছে, এই যৌথ অনুশীলন অবশ্যই পিয়ংইয়ংকে আরও উত্তেজিত করে তুলবে৷ ফলে দেশটি আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে৷
এর আগে চীন উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়াকে যৌথ অনুশীলন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে৷ পাশাপাশি উত্তর কোরিয়াকে তাদের পরমাণু কার্যক্রম বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছে৷
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মাটিস সোমবার বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়া কোনো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তা জানতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র৷ ক্ষেপণাস্ত্রটি যদি গুয়ামের দিকে আঘাত হানতে পারে বলে মনে করা হয় তাহলে তা ‘নামিয়ে দেয়া' হবে৷
জেডএইচ/ডিজি (রয়টার্স, এপি)
উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি কতটা?
উত্তর কোরিয়া যে কোনো ধরনের সামরিক প্ররোচনার আঁচ পেলেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিয়েছে৷ ওদিকে একটি মার্কিন নৌ-বহর কোরীয় উপদ্বীপের কাছে৷ কিন্তু কী ধরনের আঘাত হানতে পারে উত্তর কোরিয়া?
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে একটি
সাত লাখ সক্রিয় সেনা ও আরো ৪৫ লাখ রিজার্ভ সৈন্য থাকার অর্থ, উত্তর কোরিয়া যে কোনো সময়ে তার মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশকে সামরিক সেবার ডাক দিতে পারে৷ দেশের প্রত্যেকটি পুরুষকে কোনো না কোনো ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয় এবং তাদের যে কোনো সময় সামরিক সেবায় নিযুক্ত করা চলে৷ সৈন্যসংখ্যায় উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিগুণ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
বিপুল অস্ত্রসম্ভার
২০১৬ সালের গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইন্ডেক্স অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার সমরসজ্জা চমকে দেওয়ার মতো: ৭০টি ডুবোজাহাজ, ৪,২০০ ট্যাংক, ৪৫৮টি জঙ্গিজেট, ৫৭২টি ফিক্স্ড উইং অ্যাটাক এয়ারক্রাফ্ট ও আরো অনেক কিছু৷ ২০১৩ সালের ছবিটিতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে দেখা যাচ্ছে, তিনি কিভাবে রণকৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে বিভিন্ন মার্কিন ও দক্ষিণ কোরীয় লক্ষ্যের উপর আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামরিক কুচকাওয়াজ
প্রতিবছর হাজার হাজার সৈন্য ও সাধারণ নাগরিকদের রাজধানী পিয়ংইয়াং-এর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে অংশ নিতে দেখা যায়৷ এ ধরনের কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি চলে বেশ কয়েক মাস ধরে এবং সাধারণত তার উপলক্ষ্য হয় কমিউনিস্ট পার্টি অথবা কিম পরিবারের কোনো সদস্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিকী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ
আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও পিয়ংইয়াং তার আণবিক বোমা ও রকেট তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ রকেট পরীক্ষা তো নিয়মিত ব্যাপার, এছাড়া পাঁচবার পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে উত্তর কোরিয়া, তার মধ্যে এক ২০১৬ সালেই দু’বার৷ দৃশ্যত শেষবারের বিস্ফোরণে যে বোমাটি ব্যবহার করা হয়, তা একটি রকেটে লাগানোর উপযোগী – অন্তত পিয়ংইয়াং-এর তাই দাবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
শত্রু চতুর্দিকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও, পিয়ংইয়াং প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে তার মুখ্য বৈরি বলে মনে করে৷ এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক মহড়াকে উত্তর কোরিয়ার উপর অভিযান চালানোর প্রস্তুতি বলে গণ্য করে পিয়ংইয়াং৷
ছবি: Reuters/K. Hong-Ji
মার্কিন ‘রণকৌশলগত ধৈর্য্যের’ অন্ত?
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে ‘কার্ল ভিনসন’ বিমানবাহী পোতটিকে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে পাঠায় ওয়াশিংটন৷ সঙ্গে সঙ্গে পিংয়ংইয়াং ‘যে কোনো ধরনের যুদ্ধের জন্য’ প্রস্তুতি ঘোষণা করে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবধি পৌঁছাতে সক্ষম, এমন রকেট বানানোর জন্য উত্তর কোরিয়ার আরো বছর দু’য়েক সময় লাগবে, বলে গুপ্তচরবিভাগগুলির ধারণা৷ তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ততদিন অপেক্ষা করবেন কিনা, সেটা আরেক প্রশ্ন৷