যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে হামলার শিকার ব্রিটিশ-ভারতীয় ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদি বর্তমানে ভেন্টিলেটরে আছেন এবং কথা বলতে পারছেন না৷ তার এক চোখের দৃষ্টি হারানোর আশঙ্কা আছে৷
বিজ্ঞাপন
'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' উপন্যাসটি লেখার জন্য বহু বছর ধরে প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছিলেন রুশদি৷ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে একটি মঞ্চে হামলার শিকার হন তিনি৷
চৌতাকুয়া ইনস্টিটিউশনের মঞ্চে বক্তৃতা করার সময় একজন দৌড়ে এসে সালমান রুশদিকে ঘুষি ও ছুরিকাঘাত করতে থাকে৷ রুশদি মেঝেতে পড়ে যান৷ ইনস্টিটিউশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ''আমরা আজ যে সহিংস ঘটনা দেখলাম তা ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ৷"
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ১৯৮৮ সাল থেকে ইরানে সালমান রুশদির উপন্যাস 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' নিষিদ্ধ করা হয়৷ এ ঘটনার এক বছর পর ইরানের প্রয়াত নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের হুকুম দিয়ে ফতোয়া জারি করেন৷ রুশদিকে হত্যা করতে পারলে ৩০ লাখ ডলারের বেশি পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়৷ ইরানের হত্যা ফতোয়ার পর বহুবছর আত্মগোপনে ছিলেন রুশদি৷
সালমান রুশদিনামা
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ব্রিটিশ ভারতীয় এই লেখকের বিখ্যাত রচনাগুলো৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/F. Hanson/PA Wire
কুইক্সোট (২০১৯)
সালমান রুশদির কুইক্সোট আধুনিক যুগের ‘ডন কুইকসোট’ এর পুনর্নির্মাণ৷ এটি এবারের বুকার পুরষ্কারের জন্য দীর্ঘদিন তালিকাভুক্তও ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মিডনাইট চিলড্রেন (১৯৮১)
মিডনাইট চিলড্রেন লিখে সাহিত্য অঙ্গনে রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি৷ এটি আসলে ভারতের স্বাধীনতার প্রতিলিপি৷ বইটি ১৯৮১ সালে বুকার পুরষ্কার জিতে, এটি বুকারের সেরা হিসেবেও বিবেচিত হয়৷
ছবি: Picture-alliance/dpa/F. Hanson/PA Wire
দ্য স্যাটানিক ভার্সেস (১৯৮৮)
রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশের পর বিশ্বেজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়৷ উপন্যাসে মুসলমানদের বিশ্বাসকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে৷ এজন্য ইরানের নেতা আয়াতোল্লাহ খোমেনি রুশদিকে হত্যার ফতোয়াও জারি করেন৷ এরপর আত্মগোপনে চলে যান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Shamsudin
দ্য গ্রাউন্ড বেনেথ হার ফেট (১৯৯৯)
‘দ্য গ্রাউন্ড বিনেথ হার ফেট’ এ গীতিকথা যোগ থাকায় এটি বেশ আলোচনার জন্ম দেয়৷ রুশদির এই রচনাকে আধুনিক রক সংগীতের বিকল্প ইতিহাস বলেও মনে করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
লুকা অ্যান্ড দ্য ফায়ার অব লাইফ (২০১০)
রুশদি বাচ্চাদের জন্যও বই লিখেছেন৷ নিজের ১৩ বছর বয়সের ছেলের কথা মাথায় রেখে ‘লুকা অ্যান্ড দ্য ফায়ার অব লাইফ’ নামের সিক্যুয়েলটি লিখেন তিনি৷
ছবি: Random House
জোসেফ আন্তন: এ মেমোয়ার (২০১২)
লেখক জোসেফ কনরাড এবং আন্তন চেখভকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জোসেফ আন্তন ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিলেন রুশদি৷ ফতোয়ার কারণে রুশদির নয় বছর আত্মগোপনে থাকার ঘটনাগুলো এখানে তুলে ধরা হয়েছে৷ ওই সময় তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটিয়ে আরও দুটি বিয়ে করেন৷
ছবি: DW/H. Kiesel
টু ইয়ার্স, এইট মানথ অ্যান্ড টুয়িন্ট এইট নাইটস (২০১৫)
এই বইটি প্রকাশের পর রুশদিকে ফ্র্যাঙ্কফুর্ট বই মেলায় মূল বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ এর প্রতিবাদে ইরান ওই বই মেলা বর্জন করেছিল৷ কারণ রুশদির ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসে মুসলমানদের বিশ্বাসকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে অভিযোগ তোলে আয়াতোল্লাহ খোমেনি রুশদিকে হত্যার ফতোয়া জারি করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
হোম (২০১৭)
নন-ফিকশনও লিখেছিলেন রুশদি৷ যেমন- ইমাজিনারি হোমল্যান্ডস: অ্যাসেজ অ্যান্ড ক্রিটিসিজন, ১৮৮১-১৯৯১ (১৯৯২)৷ উপরের ছবিতে তিনি ২০১৭ সালের বই ভিনটেজ মিনস সিরিজের ‘হোম’ প্রদর্শন করছেন৷
কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, রুশদি একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন৷ সালমান রুশদির লেখা বই ‘দ্য স্যানাটিক ভার্সেস' প্রকাশের পরপরই অনেক মুসলিমদের ক্ষোভের মুখে পড়ে৷ ওই উপন্যাসে ইসলাম এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদের (রা.) অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন তারা৷ সত্তরোর্ধ্ব রুশদির জন্য পুলিশি সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছিল ব্রিটিশ সরকার৷
সালমান রুশদির এজেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াইলি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘‘সালমান রুশদির অবস্থা তেমন একটা ভালো না, তিনি এক চোখের দৃষ্টি হারাতে পারেন৷ তার বেশ কয়েকটি স্নায়ু কেটে ফেলা হয়েছে৷ ছুরিকাঘাতে তার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তিনি এখনো কথা বলতে পারছেন না৷''
হামলাকারী আটক
অ্যামেরিকান ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক কার্ল লেভান ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷ তিনি জানান, রুশদি বসেছিলেন এবং হামলাকারী উপর্যুপরি তার উপর ছুরি চালায়৷ পরে ওই ব্যক্তি আটক করে পুলিশ৷
সন্দেহভাজন হামলাকারীর নাম হাদি মাতার বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ৷ ২৪ বছর বয়সি এই ব্যক্তির বাড়ি নিউ জার্সির ফেয়ারফিল্ডে৷ তিনি রুশদির ঘাড় এবং তলপেটে ছুরি চালান৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ওই ব্যক্তি হত্যার উদ্দেশ্যেই ছুরি চালাচ্ছিল৷
তবে হামলাকারী কি উদ্দেশে এই হামলা চালিয়েছে তা পরিষ্কার না৷ উপস্থাপক রালফ হেনরি রেজির মুখে আঘাত করা হয়৷ তবে তার আঘাত গুরুতর না হওয়ায় তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন' বইটির জন্য বুকার পুরস্কার পান রুশদি৷
বিশ্বজুড়ে নিন্দা
বিশ্বনেতারা রুশদির উপর এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন৷ ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ রুশদির লড়াইকে বিশ্বের লড়াই বলে অভিহিত করেছেন৷ নিন্দা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন , বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে৷
লেখিকা জেকে রাউলিং এবং স্টিফেন কিং এই ঘটনায় আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন৷ পেন অ্যামেরিকা বলেছে, ‘‘নৃশংস এই হামলায় আমরা স্তব্ধ এবং আতঙ্কিত৷''
১৯৪৭ সালে ভারতের মুম্বইতে জন্ম সালমান রুশদির৷
কার মাথার কত দাম
কারো কোনো কাজে ক্ষুব্ধ হয়ে মাথার দাম ঘোষণা করে তাকে হত্যায় উৎসাহিত করার বেশ কিছু নমুনা দেখা গেছে গত কয়েক দশকে৷ এই তালিকায় সবশেষ নাম ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এ তালিকার উল্লেখযোগ্য কয়েকজনকে নিয়েই এই ছবিঘর...
ছবি: Reuters/K. Lamarque
ডনাল্ড ট্রাম্প, ৮০ মিলিয়ন ডলার
ইরানের কুর্দ বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসিম সোলেইমানি যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় নিহত হওয়ার পরই প্রতিশোধের হুমকি দেন সে দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি৷ ডনাল্ড ট্রাম্পের মাথার দামও ঘোষণা করা হয়েছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্টের মাথার জন্য ৮০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে এই তহবিল সংগ্রহে ইরানের প্রত্যেক নাগরিককে এক ডলার করে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Vucci
সালমান রুশদি, ৩৪ লাখ ডলার
বুকার পুরস্কারজয়ী ব্রিটিশ ভারতীয় লেখক সালমান রুশদির চতুর্থ উপন্যাস ‘স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জন্য মুসলিম বিশ্বে বিক্ষোভের ঝড় ওঠে ১৯৮৯ সালে৷ ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন ইরানের তখনকার সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি৷ রুশদির মাথার জন্য ২৮ লাখ ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়৷ পুরস্কারের অঙ্ক বাড়িয়ে ২০১৬ সালে ৩৪ লাখ ডলার করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Maxppp Awaad
হামজা বিন লাদেন, ১০ লাখ ডলার
২০১৮ সালের মার্চে জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেনের ছেলে হামজা বিন লাদেনের মাথার দাম ১০ লাখ ডলার স্থির করে যুক্তরাষ্ট্র৷ পরের বছরই তার মৃত্যুর খবর আসে৷ তবে কবে, কোথায়, কিভাবে তিনি মারা গেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/CIA
আয়মান আল-জাওয়াহিরি, ২৫ লাখ ডলার
আল কায়েদার প্রধান নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে জীবিত বা মৃত ধরিয়ে দেয়া বা তার অবস্থান জানানোর জন্য ২৫ লাখ ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: Reuters/SITE
আবু বকর আল-বাগদাদি, ২৫ লাখ ডলার
জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির মাথার জন্যও ২৫ লাখ ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর এক বিবৃতিতে ডনাল্ড ট্রাম্প জানান, উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় এক অভিযানের সময় নিজের শরীরের সঙ্গে বাঁধা বোমা ফাটিয়ে বাগদাদি মৃত্যু বরণ করেছেন৷
ছবি: US Department of Defense
মানুয়েল নরিয়েগা, ১০ লাখ ডলার
পানামার সাবেক সামরিক শাসক মানুয়েল নরিয়েগার মাথার দাম ১০ লাখ ডলার নির্ধারণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ ১৯৮৯ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে তাকে ধরা হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মাদক পরিবহন, চাঁদা আদায় এবং অর্থ পাচারের মামলায় কারাদণ্ড হয় তার৷ সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর নরিয়েড়ার আবার কারাদণ্ড হয় ফ্রান্সে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Arangua
লার্স ভিকস, এক লক্ষ ডলার
২০০৭ সালে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বিকৃত ছবি আঁকায় সুইডিশ কার্টুনিস্ট লার্স ভিকসের মাথার দাম এক লাখ ডলার ধরে তাকে হত্যার আহ্বান জানায় জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা৷