রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে পাতাল রেলে বোমা বিস্ফোরণকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে গণ্য করছে রুশ কর্তৃপক্ষ৷ এই হামলায় দুই ব্যক্তি জড়িত ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটের পর সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে দুই স্টেশনের মাঝে মেট্রো রেলে এক বিস্ফোরণ ঘটে৷ এখনো পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১১, আহতদের সংখ্যা প্রায় ৫১৷ এখনো পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার না করলেও সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপের প্রেক্ষাপটে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট রাশিয়ায় হামলা চালানোর ডাক দিয়েছিল৷
রুশ কর্তৃপক্ষের ধারণা, একজন হামলাকারী সেই ট্রেনের আসনের নীচে বোমাটি রেখেছিল৷ দ্বিতীয় ব্যক্তি আরেকটি বোমা প্রস্তুত রাখলেও সৌভাগ্যবশত সেটি বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেনি৷ কাছের একটি স্টেশনে সেটি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়৷ সংবাদ সংস্থা ‘টাস' জানিয়েছে, মধ্য এশিয়ার ২৩ বছর বয়স্ক এক পুরুষ ও এক যুবতী এই হামলার জন্য দায়ী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ সেই পুরুষ সম্ভবত উগ্র ইসলামপন্থি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ৷ একটি সূত্র অনুযায়ী কিরগিজিস্তানে জন্ম হলেও সেই ব্যক্তি রুশ নাগরিক৷
এক স্টেশনের ক্যামেরায় তার ছবি ধরা পড়েছে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, লম্বা দাড়িসহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি কালো পোশাক পরে আছে৷ এটি আত্মঘাতী হামলা ছিল কিনা, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে তদন্ত চলছে৷
সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন ঘটনাচক্রে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরেই ছিলেন৷ তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সহ একাধিক বিশ্বনেতা এই হামলার কড়া নিন্দা করেছেন৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে মার্কিন প্রশাসনের সব রকম সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন৷
উল্লেখ্য, রাশিয়ায় এর আগেও ট্রেনের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১০ সালে এক দম্পতি মস্কোর মেট্রো রেলে আত্মঘাতী হামলা চালালে কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়৷ ককেশাস আমিরাত নামের এক ইসলামপন্থি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সেই হামলার দায় স্বীকার করে৷ তার ঠিক এক বছর আগে মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ-এর পথে এক দ্রুতগামী ট্রেনের উপর হামলার দায়ও স্বীকার করে সেই গোষ্ঠী৷
মস্কোর মেট্রো স্টেশনগুলো যেরকম
ইউরোপের সবচেয়ে বড় শহর রাশিয়ার রাজধানী মস্কো৷ প্রায় সোয়া কোটি লোকের বাস সেখানে৷ প্রতিদিন প্রায় ৮০ লক্ষ যাত্রী মস্কোর মেট্রো ব্যবহার করেন৷
ছবি: P. Anft
দুই’শ মেট্রো স্টেশন
মস্কোর প্রায় সোয়া কোটি বাসিন্দার পরিবহণ চাহিদা মেটাচ্ছে এই স্টেশনগুলো৷ প্রতিদিন প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ মেট্রো ব্যবহার করেন৷ ছবির লাল রংয়ের ‘এম’ চিহ্ন সবাইকে জানিয়ে দেয় যে, এটি একটি মেট্রো স্টেশন৷
ছবি: P. Anft
নতুন দু’টি স্টেশন
সম্প্রতি মস্কোতে দু’টি নতুন মেট্রো স্টেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ এর মধ্যে একটি রুমিয়ানৎসেভো (ছবিতে যেটা দেখছেন)৷ স্টেশনটির নকশা করা হয়েছে ‘নিও-প্লাস্টিসিজম’ ধারার আদলে৷ অনুভূমিক ও খাড়া লাইনগুলো সেই নকশার একটি অংশ৷
ছবি: P. Anft
যেন গাছ!
ছবি দেখে কি তা-ই মনে হচ্ছে না! অসাধারণ এই নকশার কারণে ২০১৪ সালে নির্মিত ট্রোপারিয়োভো স্টেশনটি অনেক যাত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ নতুন তৈরি বলে প্রতিবন্ধীরা যেন এই স্টেশন ব্যবহার করতে পারেন সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ অনেক আগে তৈরি স্টেশনগুলোতে সেই ব্যবস্থা নেই৷
ছবি: P. Anft
সাধারণ নকশা
গত শতকের সত্তরের দশকে রাজনৈতিক উত্তেজনার সময়ও মেট্রো স্টেশন তৈরি হয়েছিল৷ তবে সেগুলোর নকশা ছিল সাধারণ৷ যেমন কুৎসনেটস্কি স্টেশন৷ এটি তৈরি হয়েছিল ১৯৭৫ সালে৷
ছবি: P. Anft
সমাজতন্ত্রের সময়
সবচেয়ে জাকজমকপূর্ণ স্টেশনগুলো তৈরি হয়েছিল স্ট্যালিনের সময়৷ নানা ধরণের পেইন্টিং আর শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হতো স্টেশনের বিভিন্ন অংশ৷ সমাজতন্ত্রের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন চরিত্র, যেমন সৈন্য, শ্রমিক, কৃষকরা প্রাধান্য পেত এসব শিল্পকর্মে৷ যেমন কিয়েভস্কায়া স্টেশনে ইউক্রেনের পল্লিজীবনের ছবি ফুটে উঠেছে৷
ছবি: P. Anft
ভুলে যাওয়া বন্ধুত্ব
কিয়েভস্কায়া স্টেশনেরই আরেকটি অংশ এটি৷ গত শতকের পঞ্চাশের দশকে নির্মিত এই স্টেশনের কয়েকটি শিল্পকর্মে রাশিয়া ও ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও দুই দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে তুলে ধরা হয়েছে৷ তখন কি কেউ দুই দেশের মধ্যকার বর্তমান সম্পর্কের কথা ভাবতে পেরেছিলেন!
ছবি: P. Anft
যেন গির্জার জানালা
এটি মস্কোবাসীর অন্যতম প্রিয় নোভোস্লোবোডস্কায়া মেট্রো স্টেশন৷ অনেক গির্জায় যেমন উজ্জ্বল রঙয়ের জানালার দেখা পাওয়া যায় সেরকমই কিছুর দেখা পাওয়া যায় ঐ স্টেশনে গেলে৷ এই স্টেশনে গেলে যাত্রীরা কেমন যেন সাগরের নীচের পরিবেশের অভিজ্ঞতা লাভ করেন৷
ছবি: P. Anft
অন্যতম পুরনো
এটি মায়াকোভোস্কায়া মেট্রো স্টেশন৷ ১৯৩৮ সালে চালু হয়েছিল এই স্টেশন৷
ছবি: P. Anft
সৌভাগ্যের প্রতীক!
প্লোশচাড রেভুলিয়ুটসি মেট্রো স্টেশনে সমাজতন্ত্রের শীর্ষ নেতাদের ব্রোঞ্জের মূর্তি রয়েছে৷ সঙ্গে তাদের কুকুর ও মুরগিও রয়েছে৷ যাত্রীরা এ সব মূর্তির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কুকুর বা মুরগির গায়ে হাত ছুঁয়ে যান৷ কারণ তাঁরা মনে করেন, এর ফলে সৌভাগ্য তাদের সঙ্গী হতে পারে৷