বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয় প্রকাশ পাচ্ছে৷ নতুন করে হামলার জন্য নানা উসকানিমূলক তৎপরতাও চালানো হচ্ছে৷ এ জন্য চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের যথেচ্ছ ব্যবহার৷
বিজ্ঞাপন
নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর ব্যাপক হামলার পর বাংলাদেশের আরো কয়েকটি জায়গাতেও মন্দির ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে৷ এর পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের ওপর নতুন করে হামলার জন্য উসকানিমূলক তৎপরতারও প্রমাণ পাওয়া গেছে৷
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ফেসবুকে উসকানিমূলক ছবি পোস্ট করার দায়ে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে এক যুবককে আটক করেছে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ৷ তার নাম সাগর হাসেন৷ সে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্র দলের সঙ্গে জড়িত৷ সে মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেনের বড় ছেলে৷ বুধবার রাতে তাকে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের মুসলিমপাড়া নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়৷ মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাহাদাত হোসেন জানান, ‘‘সাগর তার ফেসবুকে ফটেশপের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন একটি ছবি তৈরি করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি কুনেন্টু চাকমার নামে চালিয়ে দেয়৷'' আটকের পর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে৷ এ ঘটনায় সাগর হোসেনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়েছে৷
নূর খান
এদিকে বুধবার যশোরের কদমতলা এবং বৃহস্পতিবার ভোরে বরিশালের বানারীপাড়ার হিন্দু মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে৷ সেখানে দুবৃত্তরা মুখে গামছা বেধে মন্দিরে হামলা চালায়৷
চার বছর আগে রামুতে বৌদ্ধমন্দির ও পল্লীতে হামলার ঘটনায়ও ফেসবুকক ব্যবহার করা হয়েছিল৷ এক বৌদ্ধ যুবকের পেজে একটি ছবি ট্যাগ করে সে-ই এটা করেছে বলে গুজব ছড়িয়ে তখন হামলা চলানো হয়৷
নাসির নগরে হিন্দু পল্লীতে হামলার ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধেও উসকানির অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার দিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. সুরুজ আলী লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল করে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন৷ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ও তৌহিদি জনতার পৃথক দু’টি সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান৷
সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ আলী অবশ্য বলেন, ‘‘আমি শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে রসরাজের (যার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বিতর্কিত ছবি আপলোডের অভিযোগ রয়েছে) ফাঁসি দাবি করেছি৷ হামলার উসকানি দেইনি৷''
আর নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এটি এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘‘ঐ দিন সমাবেশে অংশ নিলেও আমি প্রতিবাদকারীদের থামানোর চেষ্টা করেছি৷ উসকানিমূলক কিছু বলিনি৷''
রানা দাশগুপ্ত
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার এই উসকানির অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘উসকানি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, কারণ, ঘটনার উৎপত্তিস্থল নাসিরনগরের হরিপুর৷ যে রসরাজ দাসের ফেসবুক থেকে অবমাননার কথা বলা হচ্ছে, সে পেশায় একজন জেলে এবং হরিপুর মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক৷ ওই সংগঠনের সভাপতি হলেন ১৯৭১ সালের রাজাকার তাইজুদ্দিনের ছেলে ফারুক মিয়া৷ ফারুক আবার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি৷ ফেসবুকে ঘটনার পর রসরাজকে ফারুক বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে৷''
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু পল্লীতে হামলার দিনই হবিগঞ্জের মাধবপুরেও কয়েকটি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে৷ ঐদিন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধর্ম অবমাননার কথিত ফেসবুক পোস্টের প্রতিবাদে মাধবপুর বাজারে ও স্থানীয় বুল্লা এলাকার দুটি মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা৷ তারা হিন্দুদের বাড়িঘরেও হামলা চালায়৷ মাধবপুরের ঘটনায় সোমবার মাধবপুর থানার এসআই গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত দু’শ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন৷
জানা গেছে, বিকেলে মাধপুর উপজেলা চত্বরে হেফাজত ও আহলে সুন্নাত ওই প্রতিবাদের আয়োজন করে৷ আর প্রতিবাদ সমাবেশ চলার সময়ই মাধবপুর বাজারের প্রবেশ পথে ঝুলন এবং কালি মন্দিরসহ তিনটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়৷ মন্দিরের আসবাব-পত্র ভাঙে তারা৷ কালিপুজার জন্য করা ১২টি স্টলও গুড়িয়ে দেয়া হয়৷ এরপর আশপাশের কয়েকটি হিন্দু বাড়িতেও ইটপাটকেল ছোড়ে দুর্বত্তরা৷এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে এই হামলা চলে৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, ওহিদ হোসেন মাস্টার, মো. ওসমান, আজব খান ও মাহবুবের নেতৃত্বে ওই হামলা পরিচালিত হয়৷ তারা স্থানীয় জামায়াত নেতা৷ এবং তারাই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদের নামে হামলার জন্য সংগঠিত করেন৷
ধর্মের নামে মন্দির, মসজিদ ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় হামলা
প্রাচীন স্থাপনা ও অমুসলিমদের ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংস করে চলেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ মসজিদের ওপরও হামলা হয়েছে৷ উপমহাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ইতিহাসও দীর্ঘ৷ ধর্মের নামে এমন ধ্বংসের ‘খেলা’ থামবে কবে?
ছবি: Reuters
মালিতে ধ্বংসলীলা
এক সময় মালির টিমবাকটু শহরের অন্য নাম ছিল ‘মরুদ্যানের মুক্তা’৷ সেই শহরের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেই চলেছে সেখানকার ইসলামি জঙ্গি সংগঠন৷ ২০১২ সালে শহরটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলমানদের গড়া অনেক স্থাপত্য নিদর্শনও ধ্বংস করেছে তারা৷ সম্প্রতি শহরটিকে জঙ্গিদের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত করার দাবি করেছে মালির সেনাবাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP
সন্ত্রাসপ্রীতি এবং জ্ঞানভীতি
শুধু স্থাপনা বা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নিদর্শনই নয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপিও ধ্বংস করেছে জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/P. Breu
তথাকথিত আইএস-এর হামলা
সিরিয়ার পালমিরা শহরের প্রায় ২,০০০ বছরের পুরনো স্থাপনাগুলোও রেহাই পায়নি৷ সে দেশে চলছে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর ধ্বংসযজ্ঞ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পালমিরার মন্দির ধ্বংস
এক সময় সিরিয়ার হোমস নগরীর এই স্থাপনাটিকে নিয়ে গর্ব করত সিরিয়া৷ এটি এক সময় ছিল মন্দির৷ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রাচীন এই উপসনালয় দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হতেন৷ আইএস-এর হামলায় স্থাপনাটি এখন ক্ষতবিক্ষত৷
ছবি: Reuters/Stringer
ধ্বংস যখন প্রচারণার হাতিয়ার
ধর্মীয় সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক সহাবস্থানকে হুমকির মুখে দাঁড় করানোর চেষ্টায় আইএস অক্লান্ত৷ নৃশংসতা, বর্বরতা ক্রমেই আইএস-এর প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে উঠছে৷ এভাবে পেট্রল ঢেলে স্থাপনা পোড়ালে সংবাদমাধ্যম লুফে নেয় খবর, খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত জঙ্গিরাও পেয়ে যায় তাদের কাঙ্খিত প্রচার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
আয়ের উৎস
সিরিয়া ও ইরাকের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ শুধু ধ্বংসই করে না, অনেক সময় কদর বুঝে সেগুলো চোরাপথে চড়াদামে বিক্রিও করে আইএস৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ আছে আইএস-এর বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/IS/Internet
আফগানিস্তানে তালেবান বর্বরতা
আফগানিস্তানের এই বৌদ্ধ মন্দিরটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেস্কো৷ ২০০১ সালে হামলা চালিয়ে এটি প্রায় ধ্বংস করে দেয় তালেবান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Ahmed
আফ্রিকায় হামলার শিকার মসজিদ
মসজিদও অনেকক্ষেত্রে তথাকথিত ধর্মীয় উন্মত্ততার শিকার৷ ২০১৫ সালে মুসলমানদের উপাসনালয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলার খবর আসে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান থেকে৷ খ্রিষ্টান-মুসলিম দাঙ্গায় সেখানে অন্তত ৪১৭টি মসজিদ আংশিক অথবা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করা হয়৷
ছবি: ISSOUF SANOGO/AFP/Getty Images
গির্জায় হামলা
ইসলামি জঙ্গিরা আফ্রিকা অঞ্চলে গির্জাতেও প্রায়সময়ে হামলা চালায়৷ হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে৷ ওপরের ছবিটিতে কেনিয়ার এক গির্জায় হামলার পরের দৃশ্য৷
ছবি: dapd
ভারতের ইতিহাসের কালো অধ্যায়
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের ইতিহাসের ‘কালো দিন’৷ ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার বাবরি মসজিদে সেদিনই হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে হিন্দু মৌলবাদীরা৷ মুঘল সম্রাট বাবরের নামে গড়া সুপ্রাচীন এই মসজিদের ওপর হামলার ঘটনা ভারতের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
বাংলাদেশে প্রতিবছরই মন্দিরে হামলা
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মূলত একাত্তরের মুক্তযুদ্ধের সময় থেকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুরা হামলা, নির্যাতনের শিকার৷ তবে মন্দিরে মুর্তি ভাঙা, মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অসংখ্য ঘটনা ঘটে প্রতিবছর৷ বৌদ্ধ মন্দিরেও হামলা হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হামলার কারণ ধর্মীয় উগ্রতা৷ সারা বিশ্বে ধর্মের নামে ধর্মীয় উপাসনালয় বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর হামলা থামবে কবে?
ছবি: Reuters
11 ছবি1 | 11
মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার সময়ও দেখেছি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে ব্যবহার করেছে৷ নাসির নগরেও তাই৷ আবার খাগড়াছড়িতেও সেই অপচেষ্টা করা হয়েছিল৷''
তিনি বলেন, ‘‘আর প্রতিটি হামলায়ই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে৷ সুতরাং বিষয়টি সাধারণভাবে দেখা যাবেনা৷ সরকার এখনই কঠোর অবস্থানে না গেলে আরো খারাপ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে৷'' বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০০৮ সাল থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের নানা ধরণ ও পর্যায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ তবে এর উদ্দেশ্য হলো এদেশ থেকে সংখ্যালঘুদের তাড়িয়ে দেয়া৷ যারা বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে দেখতে চায় না, তারাই এই ষড়যন্ত্র করছে৷ আর রাজনৈতিক দলের, বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের একাংশ এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে জমিজমা দখলসহ নানা স্বার্থে৷''
তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি আরো খারাপ করতে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে৷ এটা আমরা আগেও দেখেছি৷''
এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? লিখুন নীচের ঘরে৷
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিবছর যেসব দেশে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে আছে তার তালিকা প্রকাশ করে৷ ছবিঘরে ২০১৫ সালের জুলাইতে প্রকাশিত সবশেষ প্রতিবেদনের তথ্য থাকছে৷
ছবি: DW
প্রথম: সিরিয়া
সুন্নিপ্রধান দেশ সিরিয়ায় শিয়া, বিশেষ করে আলাউইট সম্প্রদায়ের লোকজন সহ খ্রিষ্টান, কুর্দ, ফিলিস্তিনি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হুমকির মুখে রয়েছে৷ আইএস, হিজবুল্লাহ ছাড়াও সিরিয়ার শাসকপন্থি গ্রুপ সাবিহা এ সব হুমকির অন্যতম কারণ৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ হুমকি বলতে গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যা ও সহিংস দমননীতি বুঝিয়েছে৷
ছবি: Reuters/SANA
দ্বিতীয়: সোমালিয়া
সরকারের সঙ্গে আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সংঘাত এখনও চলছে৷ আর এর শিকার হচ্ছে বান্টু (বেশিরভাগ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী) ও বেনাদিরি (বেশিরভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী) গোষ্ঠীর মানুষজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Warsame
তৃতীয়: সুদান
দেশটির দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী নন-আরব মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর খার্তুম সরকারের নিপীড়নের অভিযোগে দু’টি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ২০০৩ সালে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেটি এখনও চলছে৷ ফলে দারফুরে বসবাসকারী ফুর, জাঘাওয়া, মাসালিট সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষদের জীবন সংকটে রয়েছে৷
ছবি: GetttyImages/AFP/C. Lomodon
চতুর্থ: আফগানিস্তান
বিদেশি সৈন্য চলে যাবার পর সেখানে আবারও তালেবানের শক্তি বেড়েছে৷ ফলে হাজারা, পশতুন, তাজিক, উজবেক, তুর্কমেন, বেলুচি সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষের উপর নির্যাতনের আশঙ্কা বাড়ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Aref Karimi
পঞ্চম: ইরাক
দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত৷ তারপরও সেখানে শিয়া গোষ্ঠীর লোকজনের জীবন বিপদমুক্ত নয়৷ সংকটে রয়েছে সুন্নি, কুর্দ, তুর্কমেন, খ্রিষ্টান, ইয়াজিদি, শাবাক, বাহাই, ফিলিস্তনি সহ অন্যান্যদের জীবনও৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
ষষ্ঠ: ডিআর কঙ্গো
স্থানীয় মায়ি-মায়ি মিলিশিয়া, উগান্ডা ও রুয়ান্ডার বিদ্রোহী এবং কাতাঙ্গান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কারণে মানুষের প্রাণ যাওয়া অব্যাহত আছে৷ ফলে সংকটে আছে হেমা, লেন্ডু, হুতু, লুবা, লুন্ডা, টুটসি, বাটওয়া সহ আরও কয়েকটি গোষ্ঠীর জনগণ৷
বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হামলায় সংকটে রয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন৷ এছাড়া কচিন, কারেনি, কারেন, মন, রাখাইন, শান, চিন এবং ওয়া জাতির জনগণও ভালো নেই সেখানে৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ, ভারতের অবস্থান
‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’-এর তালিকায় বাংলাদেশ ৪১তম আর ভারত ৫৪তম অবস্থানে আছে৷ বাংলাদেশে আহমদিয়া, হিন্দু সহ অন্য ধর্মাবলম্বীরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতির লোকেদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷ আর ভারতে আসামিজ, বোড়ো, নাগা, ত্রিপুরা সহ অন্যান্য উপজাতি এবং কাশ্মিরী, শিখ, মুসলিম ও দলিতরা হুমকির মুখে আছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷