ফের বাইডেন-নেতানিয়াহু কথা। আপাতত গাজায় আক্রমণ থামবে না, জানিয়ে দিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
ফিলিস্তিনের মা-ভাই-বোন হারানো সেই শিশুটি
পরিবারের কেউ বেঁচে নেই ভেবে তার বাবাও মরতে চেয়েছিলেন৷ ভেবেছিলেন, ‘‘নিষ্ঠুর এ পৃথিবীতে থেকে কী লাভ!’’ ছয় বছরের সুজি সাতঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসায় তিনিও ফিরে পেয়েছেন বাঁচার আনন্দ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
সুজি ছিল ‘নিরাপদ’ ঘরে
গত রোববার গাজার সেই এলাকাটি তখন ইসরায়েল থেকে উড়ে আসা রকেটের আঘাতে বারবার সশব্দে কাঁপছে৷ রিয়াদ এশকুন্তানা আর তার স্ত্রী নিজেদের সন্তানদের একটা ঘরে রেখে এলেন৷ তাদের মনে হয়েছিল সেই ঘরটিই সবচেয়ে নিরাপদ, রকেটের আওতার সবচেয়ে বাইরে৷ অন্য ভাই-বোনদের সঙ্গে সুজিও ছিল সেখানে৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
হঠাৎ ধসে পড়ে সব
কিন্তু এত করেও সন্তানদের নিরাপত্তা দিতে পারেননি রিয়াদ এশকুন্তানা৷ রকেটের আঘাতে প্রথমে দুটি দেয়াল, তারপর ছাদও ধসে পড়ে৷ ও ঘর থেকে স্পষ্ট শোনা যায় ছেলে জাইন-এর চিৎকার, ‘‘আব্বা! আব্বা!’’সুজিও ডাকে৷ কিন্তু মাঝে দেয়াল ভেঙে পড়ে ধংসস্তূপের দেয়াল গড়ে দেয়ায় সন্তানদের উদ্ধার করতে যেতে পারেননি রিয়াদ৷ ওপরে উদ্ধারকাজ চলার সময়ের ছবি৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
রিয়াদের বেঁচে যাওয়া
ভবনটি ধসে পড়ার পর প্রতিবেশীরা এসে ইট-সুরকির নীচ থেকে চেনা মানুষগুলোকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন৷ রিয়াদ খুব চেষ্টা করেও নিজের বেঁচে থাকার খবরটা তাদের জানাতে পারেননি৷ প্রায় ত্রিশ মিনিট পর প্রতিবেশীদের উদ্যোগেই পুলিশ আসে, উদ্ধারকর্মীরা আসে৷ ততক্ষণে কিছুটা শক্তি ফিরে পেয়েছেন রিয়াদ৷ ফলে তার কাতর আর্তনাদ শুনতে পান উদ্ধারকর্মীরা৷ বেঁচে যান রিয়াদ৷
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
রিয়াদের জীবনের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলো
উদ্ধার করে শিফা হাসপাতালে নেয়া হলো রিয়াদকে৷ সেখানে তখন স্বজনদের ভীড়৷ এক শিশুকে আনতে দেখে নারীরা সেদিকে ছুটে যান, ‘‘ইয়াহিয়া নাকি? ইয়াহিয়া!’’ চার বছরের ইয়াহিয়া তখন আর বেঁচে নেই৷ শুনে দুজন নারী সেখানেই অজ্ঞান৷ তারপর জাইনের খবর, মেয়ে ডানার খবর, স্ত্রীর খবরও জেনে রিয়াদের মনে হলো আর কেউ বেঁচে নেই৷ মনে হলো, সবাইকে হারিয়ে একা একা বেঁচে থাকার কী দরকার! ওপরে গাজার ধসে পড়া ভবনের সামনে এক নারীর কান্না৷
ছবি: Adel Hana/AP Photo/picture alliance
সাত ঘণ্টা পর প্রাণের সাড়া!
বাড়ির সবাইকে চিনতেন বলে প্রতিবেশীরা জানতেন এখনো সুজি আছে ইট-সুরকির নীচে৷ তাই ভবন ধসে পড়ার সাত ঘণ্টা পরও চলছিল তাকে উদ্ধারের চেষ্টা৷ উদ্ধারকর্মীরা ধংসস্তূপের ফাঁকফোকরে মুখ রেখে ‘‘আল্লাহু আকবর’’ বলে করছেন৷ এখানে ওখানে খুঁজে খুঁজে হঠাৎ এক জায়গা থেকে শোনা গেল শিশুর দুর্বল কণ্ঠের মৃদু চিৎকার, ‘‘আল্লাহু আকবর!’’
ছবি: Mohammed Salem/REUTERS
‘আমাকে ক্ষমা করো’
উদ্ধার করে সুজিকেও নেয়া হয় শিফা হাসপাতালে৷ রিয়াদের পাশের বেডেই রাখা হয় তাকে৷ ছয় বছরের মেয়েটিকে দেখে রিয়াদ আবার ফিরে পেয়েছেন জীবনের মানে৷ একটু হলে সুজিকেও হারাতে হতো- এই ভেবে বুক কাঁপে তার৷ সুজির হাত ধরে বলেন, ‘‘আমার মেয়ে, আমাকে তুমি ক্ষমা করো! তুমি তখন ডেকে তোমার কাছে যেতে বলেছিলে৷ অনেক চেষ্টা করেও আমি তোমার কাছে যেতে পারিনি৷’’
উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পর্যন্ত গাজা স্ট্রিপে হামলা থামাবে না ইসরায়েল। বুধবার ফের একবার স্পষ্ট করে দিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এ দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয় তার। তারপরেই বিবৃতি প্রকাশ করে এ কথা জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সংঘর্ষ নিয়ে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে অ্যামেরিকা। একদিকে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কথা বলছে, অন্যদিকে জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ হতে দিচ্ছে না। অ্যামেরিকার প্রশাসন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, বুধবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা হয় জো বাইডেনের। সেখানে ডি এসকালেশন বা ধীরে ধীরে উত্তেজনা কমানোর পরামর্শ দেন বাইডেন। এর কিছুক্ষণ পরেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দফতর বিবৃতি জারি করে। সেখানে বাইডেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়, উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল হামলা থামাবে না।
এর আগেও ফোনে নেতানিয়াহুকে ধীরে ধীরে উত্তেজনা কমানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন বাইডেন। কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টো ঘটনাই ঘটেছে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় উত্তেজনা প্রশমনের কথা বললেও এ বিষয়ে বিবৃতি প্রকাশ করতে চাইছে না অ্যামেরিকা। জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ দেশ যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত বিবৃতি প্রকাশ করতে চাইলেও অ্যামেরিকা তাতে ভেটো দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে অ্যামেরিকার সব চেয়ে বড় বন্ধু ইসরায়েল। কোনোভাবেই তার থেকে দূরত্ব তৈরি করতে চাইছে না বাইডেন প্রশাসন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত: বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ
এক সপ্তাহ ধরে জেরুসালেমে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের লড়াই চলছে৷ ইসরায়েলের হামলায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, দাবি ফিলিস্তিনের৷ এই দ্বন্দ্ব অবসানে বিশ্বজুড়ে চলছে বিক্ষোভ প্রতিবাদ৷
ছবি: David 'Dee' Delgado/REUTERS
নিউ ইয়র্কে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইহুদিদের বিক্ষোভ
নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে ইসরায়েল সমর্থকদের সমাবেশের সময় ফিলিস্তিনের সমর্থনে পতাকা ও প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় এক অর্থোডক্স ইহুদিকে৷ প্ল্যাকার্ডে ইহুদি সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের হিংস্রতার নিন্দা জানানো হয়েছে৷
ছবি: David 'Dee' Delgado/REUTERS
ইসরায়েলের সমর্থনে মিছিল
টাইমস স্কয়ারে ইসরায়েলের সমর্থকরা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে৷ প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘ইসরায়েল ইজ আন্ডার অ্যাটাক’৷
ছবি: David 'Dee' Delgado/REUTERS
দুই পক্ষের তর্ক
ইসরায়েলের সমর্থনে টাইমস স্কয়ারে সমাবেশ হচ্ছে৷ এ সময় এক ফিলিস্তিন সমর্থক অর্থোডক্স ইহুদির সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন ইসরায়েল সমর্থক এক নারী৷
ছবি: David 'Dee' Delgado/REUTERS
ম্যানহাটনে ইসরায়েল বনাম ফিলিস্তিন
ম্যানহাটনে ইসরায়েল কনস্যুলেটের সামনে ইসরায়েলি সমর্থকদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন এক ফিলিস্তিন সমর্থক নারী৷
ছবি: Eduardo Munoz/REUTERS
ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ
ইসরায়েলি কনস্যুলেটের সামনে প্রতিবাদের পর ফিলিস্তিন সমর্থকরা নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান৷
ছবি: Eduardo Munoz/REUTERS
‘ইসরায়েল একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’
ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ হয়েছে মিউনিখে৷ প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘ইসরায়েল একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’৷
ছবি: Sachelle Babbar/ZUMA Wire/picture alliance
ইরানে বিক্ষোভ সমাবেশ
ইরানের রাজধানী তেহরানে ফিলিস্তিনের সমর্থনে সমাবেশে যোগ দেন হাজারো মানুষ৷
ছবি: Majid Asgaripour/WANA/REUTERS
কেপ টাউন, সাউথ আফ্রিকা
সাউথ আফ্রিকার কেপ টাউনে পার্লামেন্টের বাইরে ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করছেন কয়েকশ’ মানুষ৷
ছবি: Mike Hutchings/REUTERS
স্যান্ডটন, সাউথ আফ্রিকা
স্যান্ডটনে ইসরায়েল ট্রেড অফিসের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত বন্ধের আহ্বান এই বিক্ষোভকারীদের৷
ছবি: Siphiwe Sibeko/REUTERS
লন্ডনে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ
ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ সমাবেশে পতাকা আর প্ল্যাকার্ড হাতে হাজির হন হাজারো সমর্থক৷
ছবি: Toby Melville/REUTERS
বিক্ষোভের ঢেউ কেনিয়ায়
ফিলিস্তিনের সমর্থনে প্রতিবাদ সমাবেশের সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে৷
ছবি: Monicah Mwangi/REUTERS
ইস্তাম্বুলে ইসরায়েল কনস্যুলেটের সামনে...
তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে ইসরায়েল কনস্যুলেটের সামনে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে বিক্ষোভ৷
ছবি: Dilara Senkaya/REUTERS
12 ছবি1 | 12
হাইকো মাসের সফর
জার্মানি অবশ্য গোড়া থেকেই যুদ্ধবরিতির পক্ষে সওয়াল করছে। বিতর্কটির রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে সওয়াল করেছে। বৃহস্পতিবার জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাসের ইসরায়েল যাওয়ার কথা। প্রথমে ইসরায়েলের প্রশাসকদের সঙ্গে কথা বলে তার ফিলিস্তিন যাওয়ার কথা। সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার কথা মাসের। কী ভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়, সে বিষয়েই আলোচনা করবেন তিনি।
পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে চীনও। চীনের সরকার ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, চীন যুদ্ধ চায় না। উপদ্রুত এলাকায় আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফিরে আসুক, এটাই চীনের দাবি। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে মধ্যস্থতাকারীর সাহায্য নেওয়া হোক, এ দাবিও চীন করেছে। চীনের বক্তব্য, জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ করানোর জন্য সচেষ্ট হয়েছে চীন। কিন্তু অ্যামেরিকার আপত্তিতে তা করা যাচ্ছে না।
চীনের সঙ্গে ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখে চীন। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, চীন কোনোভাবেই সেই অর্থনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না। দুই দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ রক্ষা করতে চায়।