1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সব অপরাধই করছে রোহিঙ্গারা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩০ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের হামলায় আহত হয়েছে এক পুলিশ কর্মী, নিহত হয়েছে এক বাংলাদেশি৷ এক মাসে রোহিঙ্গাদের অন্তত ৩০টি অপরাধের ঘটনা রেকর্ড করেছে টেকনাফ ও উখিয়া থানা৷ হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছে অন্তত ৩০ জন রোহিঙ্গা৷

ছবি: bdnews24.com

সর্বশেষ সোমবার ভোর রাতে কক্সবাজারের উখিয়া এলাকায় রোহিঙ্গা ডাকাত দলের পাঁচ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)৷ তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে৷

র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর রুহুল আমিন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, বালুখালী রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বাগান এলাকায় ছয়-সাত জনের রোহিঙ্গা ডাকাত দল ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিলো৷ তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে আটক করা হয়৷ তাদের সবার বাড়ি রাখাইনের মংডুর আকিয়াব এলাকায়৷ তাদের কাছ থেকে ৫টি রামদা উদ্ধার করা হয়৷

মেজর রুহুল আমিন আরো জানান, ‘‘আটকরা সবাই কুতুপালং এবং বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা৷ তাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ডাকাতি এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের লোক জনকে জিম্মি করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে৷’’

এর আগে ২৮ অক্টোবর রামুতে এক বাংলাদেশিকে গলাকেটে হত্যা করে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী৷ নিহত ব্যক্তির নাম আবদুল জব্বার (২৩) ৷ তিনি খুনিয়াপালংয়ের কালুয়ারখলীর হেডম্যান বশির আহম্মদের ছেলে৷ বনের গাছ কাটা নিয়ে দ্বন্দ্বে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে পুলিশ জানায়৷ পুলিশ এই ঘটনায় হাফেজ মোস্তফা নামের এক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আটক করেছে৷

একই দিন রাতে উখিয়ার বালুখালী ১নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে স্থানীয়দের উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় রোহিঙ্গারা৷ রোহিঙ্গাদের হামলায় ৪ জন স্থানীয় ব্যক্তি গুরুতর আহত হন৷ পাঁচ জন বাংলাদেশি এখনো নিখোঁজ৷

পুলিশ জানায়, রোহিঙ্গা শিবিরে নলকূপ স্থাপন করা নিয়ে রোহিঙ্গাদের সাথে স্থানীয়দের বিরোধ সৃষ্টি হয়৷ রাতে রোহিঙ্গারা ‘ডাকাত পড়েছে’ বলে শিবিরের মাইকে ঘোষণা করে সংঘবদ্ধভাবে স্থানীয়দের উপর  হামলা করে৷

তারা আমাদের গলার কাঁটায় পরিণত হচ্ছে: গফুর উদ্দিন চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

এর আগে গত ২১ অক্টোবর টেকনাফে রোহিঙ্গা দম্পতির হামলায় কবির আহমেদ নামে পুলিশের এক এএসআই আহত হন৷ টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি ব্লকে রোহিঙ্গা নারী দিল বাহার ও তার স্বামী সৈয়দ আহমদ অবৈধভাবে একটি মুদির দোকান স্থাপনের চেষ্টা করে৷ এ সময় ক্যাম্প পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কবির আহমদ ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকান তৈরির কাজে বাধা দেন৷ এর ফলে প্রথমে তর্কাতর্কি ও পরে হাতাহাতি শুরু হয়৷ ওই রোহিঙ্গা দম্পতি হামলা চালালে এসআই কবির আহত হন৷

গত এক মাসে টেকনাফ ও উখিয়া থানা পুলিশ রোহিঙ্গাদের সংঘটিত অন্তত ৩০টির মতো অপরাধের ঘটনা রেকর্ড করেছে৷ আর হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে অন্তত ৩০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নে৷ ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি৷ কিন্তু এখন তারা আমাদের গলার কাঁটায় পরিণত হচ্ছে৷ রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে৷ তারা হত্যা, চুরি, ডাকাতি ও মাদক পাঁচারসহ হেন কোনো অপরাধ নাই যা তারা করছে না৷ তাদের কাছে আমরা কোণঠাসা৷ তারা গাছ কাটছে, হামলা করছে৷’’

তারা হত্যাকাণ্ডের মত অপরাধও করছে: ওসি আবুল খায়ের

This browser does not support the audio element.

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এখানে আসা রোহিঙ্গারা শিক্ষিত নয়, তাদের মধ্যে উগ্রতা বেশি৷ তাদের মধ্যে জঙ্গি বা বিদ্রোহীও থাকতে পারে৷ সেনাবাহিনী থাকায় তারা এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি৷ আমার দাবি, তাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা হোক৷’’

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভিতরে উগ্রতা বা রুক্ষতা থাকা স্বাভাবিক৷ কারণ, তারা নির্যাতিত হয়েছেন৷ নিজেদের সামনে স্বজনদের হত্যার শিকার হতে দেখেছেন৷ কিছু কিছু রোহিঙ্গা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে৷ তারা হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধও করছে৷ তাদের কাছে অস্ত্রসস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে৷ তবে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়৷ আমরা ফোর্স বাড়িয়েছি৷ সরকারের অন্যান্য সংস্থাও কাজ করছে৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সবাই শরণার্থী বেশে এসছে৷ তাদের মধ্যে আরসা, জঙ্গি বা বিদ্রোহী কেউ আছে কিনা তা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পরছি না৷ তবে আমরা নজর রাখছি৷’’

আমাদের মধ্যেই কিছু খারাপ লোক অপরাধে জড়িয়ে আমাদের ক্ষতি করছে: ইউনূস আরমান

This browser does not support the audio element.

এদিকে রোহিঙ্গাদের একাংশ অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীই বিব্রত৷ তারাও এটাকে স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না৷ কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের মুখপাত্র ইউনূস আরমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যেই কিছু খারাপ লোক অপরাধে জড়িয়ে আমাদের ক্ষতি করছে৷’’

তবে তিনি দাবি করেন, ‘‘২৫ অগাস্ট থেকে যারা এসেছেন, তাদের মধ্যেই ওই খারাপ লোকরাও এসেছেন৷ যারা আগে থেকেই রেজিষ্টার্ড ক্যাম্পে আছে, তারা এর সঙ্গে জড়িত নয়৷ আর অপরাধে জড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থানীয়রা কেউ কেউ জড়িত৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ