চীন যদি তাইওয়ান আত্রমণ করে, তাহলে মার্কিন সেনা তাদের রক্ষা করবে বলে জানিয়ে দিলেন জো বাইডেন। এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছেন, তাইওয়ানের প্রতি মার্কিন নীতি বদলায়নি।
বিজ্ঞাপন
সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছেন, অ্যামেরিকা এক চীন নীতি সমর্থন করে এবং তাইওয়ানেরস্বাধীনতা মানে না। কিন্তু যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়, চীন যদি তাইওয়ান আক্রমণ করে তখন কি মার্কিন বাহিনী সেখানে যাবে? বাইডেনের জবাব, ''অবশ্যই যাবে।''
পরে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জনিয়েছেন, তাইওয়ান নিয়ে মার্কিন নীতির কোনো বদল হয়নি। অ্যামেরিকার দীর্ঘদিনের নীতিই হলো, তাইওয়ান আক্রান্ত হলে তারা তাদের সাহায্য করবে। প্রসিডেন্ট একথা আগেও বলেছেন। তিনি টোকিওতে গিয়ে বলেছেন। তাইওয়ান নিয়ে নীতির বদল হয়েছে, একথা বলা যাবে না।
ভয়াবহ যুদ্ধমহড়ায় চীন
তাইওয়ানের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে চলছে মহড়া। মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে জাপানের সমুদ্রেও।
ছবি: Huizhong Wu/AP/dpa/picture alliance
পেলোসির সফরের জবাব
মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে এলে তার ফল ভালো হবে না বলে আগেই সতর্ক করেছিল চীন। এবার কার্যত তাইওয়ান ঘিরে ধরে তারা সামরিক মহড়া শুরু করেছে। চীনের দাবি, রুটিন সামরিক মহড়া চলছে। কিন্তু যেভাবে তারা এই মহড়া শুরু করেছে, তাতে চিন্তিত তাইপেই।
ছবি: Issei Kato/REUTERS
চীনের মহড়া
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বেলা ১২টা থেকে চীন এই মহড়া শুরু করেছে। জল, স্থল এবং আকাশে মহড়া চলছে। একের পর এক যুদ্ধবিমান তাইওয়ান প্রণালীর উপর দিয়ে তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে উড়ে গেছে। যুদ্ধ জাহাজ কার্যত ঘিরে রেখেছে তাইওয়ানকে। তাইওয়ানের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে যুদ্ধজাহাজ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ।
ছবি: Hong Wei /Xinhua/IMAGO
লাগাতার গোলাবারুদ
নৌ এবং স্থলসেনা লাগাতার গোলাবারুদ ছুঁড়ছে বলে অভিযোগ। একের পর এক ব্যালেস্টিক মিসাইলও তাইওয়ান প্রণালীতে সমুদ্রের জলে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। সামান্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেই তা তাইওয়ানের মূলভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে। তাইওয়ান প্রমালী চীনের মূল ভূখণ্ড এবং তাইওয়ানকে আলাদা করেছে।
ছবি: Huizhong Wu/AP/dpa/picture alliance
স্থলসেনার মহড়া
মহড়ায় নেমেছে চীনের স্থলসেনাও। চীন লিবারেশন আর্মি অবশ্য জানিয়েছে, এটি তাদের রুটিন মহড়া। মূল ভূখণ্ড থেকে সমুদ্র লক্ষ্য করে মিসাইল ছোঁড়া হচ্ছে।
ছবি: CCTV/AP/picture alliance
জাপানের সমুদ্রে মিসাইল
অন্যদিকে জাপানের অভিযোগ, সমুদ্রে অবস্থিত জাপানের এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোনে প্রপেলড মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। বস্তুত, তাইওয়ান থেকে জাপানে গেছেন ন্যান্সি পেলোসি। তার যাত্রার অব্যবহিত পরেই ওই মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। বুঝিয়ে দিয়েছে, পেলোসির তাইওয়ান সফরের জবাবেই তারা একাজ করছে।
ছবি: Hector Retamal/AFP
তাইপেইয়ের অভিযোগ
তাইপেই জানিয়েছে, তাইওয়ানের উপর দিয়েও মিসাইল ছুঁড়েছে চীন। তাইওয়ান পার করে যা জলে গিয়ে পড়েছে। গোটা তাইওয়ানে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
ছবি: Hector Retamal/AFP
তাইওয়ান সংকট
সম্প্রতি তাইওয়ান সফরে গেছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার পেলোসি। গত ২৫ বছরে এই পদমর্যাদার কোনো মার্কিন রাজনীতিক তাইওয়ানে যাননি। বস্তুত, তাইওয়ানের সঙ্গে অ্যামেরিকার সুসম্পর্ক থাকলেও দুই দেশের মধ্যে সরকারিভাবে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তাইওয়ান স্বশাসিত একটি অঞ্চল। চীনের একাধিপত্য তারা মেনে নেয় না। গত কয়েক বছরে চীন তাইওয়ান এবং হংকংয়ের উপর চাপ বাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পেলোসির তাইওয়ান সফর।
ছবি: Kyodo/dpa/picture alliance
চীনের হুমকি
চীন আগেই জানিয়ে রেখেছিল, পেলোসি এলে তার ফল ভালো হবে না। চীনের সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে পেলোসি তাইওয়ান যান। তারপরেই ভয়াবহ সেনা মহড়া শুরু করেছে চীন। তাইওয়ানের কার্যত নাকের ডগায় একাজ করা হচ্ছে।
ছবি: EASTERN THEATRE COMMAND/REUTERS
8 ছবি1 | 8
গত মে মাসে বাইডেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়, চীন যদি তাইওয়ান আক্রমণ করে, তাহলে অ্যামেরিকার সেনা কি সেখানে যাবে? সামরিক দিক দিয়ে সেই সংঘাতে জড়াবে অ্যামেরিকা? বাইডেন তখন বলেছিলেন, ''হ্যাঁ, আমরা সেই প্রতিশ্রুতি তাইওয়ানকে দিয়েছি।'' তখনো হোয়াইট হাউস বলেছিল, তাইওয়ান নিয়ে মার্কিন নীতির বদল হয়নি, সেটাই বাইডেন বঝাতে চেয়েছেন।
তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে
মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি গত মাসে তাইওয়ান সফরে যান। তার সফর প্রসঙ্গে চীন বলেছিল, অ্যামেরিকা আগুন নিয়ে খেলছে। পেলোসির সফরের পরেই তারা তাইওয়ানকে ঘিরে সামরিক কুচকাওাজ শুরু করে দেয়। চীনের দাবি, তাইওয়ান তাদেরই এলাকা।
চীন, অ্যামেরিকা, তাইওয়ানের দীর্ঘ জটিল সম্পর্ক
পেলোসির সফর ঘিরে চীন, তাইওয়ান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এখন উত্তেজনা তুঙ্গে। এই তিন দেশের দীর্ঘ সম্পর্কের ইতিহাস যথেষ্ট জটিল।
ছবি: Rod Lamkey/CNP/picture alliance--Shen Hong/picture alliance/Xinhua
দুই দেশের জন্ম
১৯৪৯ সালে চীনের সিভিল ওয়ারের পর দুইটি স্বঘোষিত চীনা রাষ্ট্রের জন্ম হলো। পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না(পিআরসি) বা গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং তাইওয়ান ভিত্তিক রিপাবলিক অফ চায়না(আরওসি)। পিআরসি-র ঘোষণা হলো বেজিংয়ে, করলেন মাও জেদং। উপরের ছবিটি মাওয়ের।
ছবি: AP
দীর্ঘদিনের স্থিতাবস্থা
পিআরসি-র নিয়ন্ত্রক হলো চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু তাইওয়ানের ক্ষেত্রে তাদের কোনো নির্দেশ চলে না। তাইওয়ানের শাসকরা ১৯৯০ থেকে গণতান্ত্রিক পথে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। তাদেরও পিআরসি-র উপর কোনো প্রভাব নেই। বহুদিন ধরে এই স্থিতাবস্থা চলেছিল। উপরের ছবিটি তাইওয়ান খাঁড়িতে তাদের নৌবহরের।
ছবি: AP
অবস্থার পরিবর্তন
২০০৫ সালে অবস্থার পরিবর্তন হলো। চীন বিচ্ছিন্নতা-বিরোধী আইন পাস করলো। সেখানে বলা হলো, তাইওয়ান যদি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তাহলে চীনের সেনার সেখানে গিয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার আছে। এরপর চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়লো।
ছবি: Roman Pilipey/AP/picture alliance
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
১৯৭০-এর প্রথমভাগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্তরে তাইওয়ানের পরিচিতি ছিল রিপাবলিক অফ চায়না হিসাবে। কিন্তু ১৯৭১ সালে জাতিসংঘে ভোটাভুটি হলো এই নিয়ে যে, পিআরসি বা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনই একমাত্র সেখানে থাকবে। এরপর ভ্যাটিকান-সহ মাত্র ১৪টি দেশ তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেয়। উপরের ছবিটি তাইওয়ানের পার্লামেন্টের।
ছবি: Daniel Ceng Shou-Yi/ZUMA Wire/picture alliance
অ্যামেরিকার সিদ্ধান্ত
১৯৭৯ সালে অ্যামেরিকা জানায়, তারা একমাত্র গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকেই স্বীকৃতি দিচ্ছে। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসে তাইওয়ান রিলেশনস আইন পাস হয়। সেখানে বলা হয়েছে, তাইওয়ানকে অস্ত্র বিক্রি করে যাবে অ্যামেরিকা। ওই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে অ্যামেরিকা দায়বদ্ধ থাকবে। উপরের ছবিটি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর।
ছবি: TAIWAN PRESIDENTIAL OFFICE/REUTERS
মার্কিন পার্লামেন্ট সদস্যদের মত
দলমত নির্বিশেষে মার্কিন পার্লামেন্ট সদস্যরা মনে করেন, তাইওয়ান যেন বেজিংয়ের কাছে আত্মসমর্পন না করে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়, অ্যামেরিকা ও তাইওয়ান হাত মিলিয়ে কমিউনিস্ট চীনের বিরোধিতা করেছে। চীনের যত উত্থান হয়েছে, অ্যামেরিকা ততই তাইওয়ানের পাশে থেকেছে।
ছবি: Artur Gabdrahmanov/Sputnik/dpa/picture alliance
পেলোসির সফর
মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে গিয়ে বলেছেন, ''আমাদের প্রতিনিধিদল তাইওয়ান এসে একটা কথা স্পষ্ট করে দিতে চায়, তা হলো, আমরা কখনোই তাইওয়ানকে পরিত্যাগ করব না। আমাদের দীর্ঘ সম্পর্ক নিয়ে আমরা গর্বিত।''
ছবি: Ann Wang/REUTERS
চীনের দাবি
চীন দাবি করে, তাইওয়ান তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তারা বারবার 'ওয়ান চায়না' বা 'এক চীন' নীতির কথা বলে। যেভাবে হংকং এখন চীনের অংশ, সেইভাবেই তাইওয়ানকেও নিজেদের অংশ করতে চায় চীন। কিন্তু তাইওয়ানের বক্তব্য, হংকংয়ের ক্ষেত্রে দুই তরফই তাতে রাজি ছিল। কিন্তু তাইওয়ান কখনোই চীনের সঙ্গে মিশে যেতে রাজি নয়। তারা আলাদা অস্তিত্ব বজায় রাখতে চায়। উপরের ছবিটি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের।
ছবি: Selim Chtayti/REUTERS
জনগণ বিভক্ত
চীনের সঙ্গে মিশে যাওয়া নাকি স্বাধীনতা ঘোষণা, কোনটা করা উচিত, তানিয়ে তাইওয়ানের সাধারণ মানুষ বিভক্ত।
ছবি: Ann Wang/REUTERS
অনড় চীন
তাইওয়ান সরকার এখন নিজেদের আইল্যান্ড অফ তাইওয়ান বলে। এতে চীনের প্রবল আপত্তি। তাদের দাবি, আগের মতো রিপাবলিক অফ চীন বলা উচিত। বেজিং তাইওয়ানের আলাদা জাতীয় সংগীত ও পতাকাও মানে না। উপরের ছবিতে তাইওয়ানের পতাকা।
ছবি: Chiang Ying-ying/AP Photo/picture alliance
10 ছবি1 | 10
পরে উচ্চ পর্যায়ের ফরাসি প্রতিনিধিদলও তাইওয়ান যায়।
এই মাসের গোড়ায় তাইওয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ উ বলেন, চীন ভবিষ্যতে তাইওয়ান আক্রমণ করতে পারে। তারই কৌশল তৈরি করছে তারা।
গত ২ সেপ্টেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাইওয়ানের সঙ্গে ১১০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি করেছে। এই অর্থ দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডার কেনা হবে।
মার্কিন কংগ্রেসে অনুমোদিত আইন অনুসারে, তাইওয়ানকে সামরিক সাহায্য করতে অ্যামেরিকা দায়বদ্ধ।