ইউরোপীয়ান কোর্ট অফ জাস্টিস (ইসিজে) প্যালেস্টাইনের জঙ্গি দল হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে এবং বিষয়টি ট্রাইব্যুনাল থেকে আবার নিম্ন আদালতে ফেরত পাঠিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
হামাসকে কেন সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে না, এই মর্মে এর আগে ২০১৪ সালে ইইউ-র দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আদালত একটি রুল জারি করে৷ বুধবার ট্রাইব্যুনাল সেই রুলিংটিকেই খারিজ করেছে৷
২০০১ সালে ইইউ হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে এবং ইউরোপে দলটির সম্পদ ও যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ ২০০৭ সালে হামাস প্যালেস্টাইনের গাজা দখল করে এবং এখন অবধি গাজা তাদের নিয়ন্ত্রণে৷
হামাসকে সন্ত্রাসীর তালিকায় রাখার যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই, এই যুক্তিতে তিন বছর আগে ইইউ-র জেনারেল কোর্ট হামাসকে কালো তালিকা থেকে সরিয়ে নিতে রুল জারি করেন৷
বিচারকদের মতে, হামাসের যেসব কার্যকলাপের জন্য তাদের বিরুদ্ধে আগের সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছিল তার সূত্র গণমাধ্যম ও ইন্টারনেট৷ কোনো দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি৷
আদালতের এই রুলটি স্বভাবতই তখন রুষ্ট হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল৷ ২৮ সদস্য রাষ্ট্রের ইউরোপীয় ইউনিয়ন তখন লুক্সেমবুর্গে অবস্থিত এই ব্লকের সর্বোচ্চ আদালত ইউরোপীয়ন কোর্ট অফ জাস্টিসে সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আপীল করে৷
Gaza power crisis deepens
03:23
সিদ্ধান্তটি খারিজ করে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরা ‘নিম্ন আদালতের এই নিষেধাজ্ঞা বাতিলের সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি' বলে মন্তব্য করেন৷ তাঁদের মতে, কোন সংগঠনকে কালোতালিকাভুক্ত করা হবে, সে সিদ্ধান্ত একটি দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে৷ কিন্তু তা খারিজের জন্য তেমন কোনো নিয়ম নেই৷
সর্বোচ্চ আদালত রায়টি নিম্ন আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছেন৷ একই দিনে, শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলাম (এলটিটিই)-কে ইইউ-র সন্ত্রাসী সংগঠনের কালো তালিকা থেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে আদালত৷
গাজাবাসীর ‘লাইফলাইন’ টানেল নেটওয়ার্ক
গাজায় ইসরায়েলের হামলার অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হচ্ছে টানেলের কথা, যেগুলো হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে প্রবেশের জন্য ব্যবহার করছে৷ এগুলো ধ্বংস করতে চায় ইসরায়েল৷ তবে এসব টানেল অন্য অনেক কাজেও ব্যবহার হচ্ছে৷
ছবি: picture alliance/landov
‘লাইফলাইন’ এবং চোরাচালানের পথ
ফিলিস্তিনিরা টানেল বা সুড়ঙ্গগুলোকে তাদের লাইফলাইন মনে করে, যদিও ইসরায়েল এগুলোকে বিবেচনা করে অস্ত্র চোরাচালান এবং চোরাগোপ্তা হামলার পথ হিসেবে৷ চারপাশ থেকে আবদ্ধ গাজার সঙ্গে বিশ্বের সংযোগের অন্যতম পথ এসব টানেল৷ এগুলো ব্যবহার করে এমনকি পশুও গাজায় নেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images
নিজেদের ভূমিতে কারাবন্দি
গাজায় প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষের বাস৷ প্রতিবেশী দেশ ইসরায়েল এবং মিশর থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে উঁচু দেয়াল দিয়ে৷ সীমান্ত চেকপোস্টগুলোতে রয়েছে কড়া পাহারা৷ একসময় মিশরের রাফা সীমান্ত ব্যবহার করে গাজার বাইরে যেতে পারতো ফিলিস্তিনিরা৷ কিন্তু ২০০৭ সালের জুনে হামাস গাজার ক্ষমতা নেয়ার পর বন্ধ হয়ে গেছে সেই সীমান্তও৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ঝুঁকিপূর্ণ নির্মাণকাজ
আর তখন থেকে গাজাবাসী বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে একমাত্র টানেল বা সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে৷ এগুলো অধিকাংশক্ষেত্রে তৈরি করা হয় অনিরাপদ এবং সাধাসিধে উপায়ে৷ নির্মাণকাজে ব্যবহার হয় বেলচা এবং কাঠ৷ তরুণ ফিলিস্তিনিদের জন্য অর্থ উপায়ের অল্প কিছু মাধ্যমের একটি এই সুড়ঙ্গ খনন৷ তবে এই কাজে মৃত্যু ঝুঁকিও আছে৷
ছবি: Getty Images
গোপন প্রবেশপথ
টানেলে প্রবেশের পথ অধিকাংশক্ষেত্রে সাধারণ বাসাবাড়ির মধ্যে থাকে৷ মূলত বাইরে থেকে যাতে বোঝা না যায়, সেজন্য এই ব্যবস্থা৷ যারা এসব টানেল ব্যবহার করতে চান, তাদের এজন্য টাকা খরচ করতে হয়৷ ইসরায়েল মনে করে, গাজাবাসী টানেল ব্যবহারের জন্য যে টাকা খরচ করেন, তা অন্যান্য চাহিদা মেটাতে আরো ভালো কাজেও ব্যবহার করা যেতে পারে৷
ছবি: Getty Images
নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র আনার পথ
ফিলিস্তিনিরা এসব টানেল ব্যবহার করে নির্মাণকাজের জন্য সিমেন্ট এবং অন্যান্য উপাদান গাজায় আনেন৷ ঘরবাড়ি তৈরি কিংবা সংস্কারে এগুলো দরকার হয়৷ এছাড়া ভোগ্যপণ্য, কাপড় এমনকি রকেট এবং বিস্ফোরকও টানেল দিয়েই গাজায় আসে৷
ছবি: DW/T. Krämer
সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে
গত ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় টানেল রয়েছে৷ ১৯৭৯ সালে ইসরায়েল এবং মিশরের মধ্যে শান্তি চুক্তির পর রাফা শহরটি বিভক্ত হয়ে যায়৷ এর অর্ধেক চলে যায় মিশরের দখলে বাকিটা গাজার৷ তখন থেকেই শহরটির দুই অংশের মধ্যে যোগাযোগ এবং মালামাল পরিবহণের উপায় হয়ে ওঠে সুড়ঙ্গ পথ৷
ছবি: Getty Images
মিসাইল থেকে বাঁচার উপায়
এখন অনেক সাধারণ টানেলেও যোগাযোগের আধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে৷ বিশেষ করে বিদ্যুৎ এবং টেলিফোনের কথা বলা যায়৷ সুড়ঙ্গ খননের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা মাটির উপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন টেলিফোনের মাধ্যমে৷ আর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী যখন আক্রমণ করে, তখন অনেক ফিলিস্তিনি জীবন বাঁচাতে বা লুকিয়ে থাকতে টানেলে আশ্রয় নেন৷
ছবি: Getty Images
মিশরও ধ্বংস করছে সুড়ঙ্গ
শুধুমাত্র ইসরায়েলই গাজার সুরক্ষা নেটওয়ার্ক ধ্বংসের চেষ্টা করছে না৷ মিশরও এগুলোর বিরোধী৷ সেদেশের সিনাই উপত্যকায়ও হামাসের হামলার অভিযোগ রয়েছে৷ তাই মিশরের সেনারাও বছরের পর বছর তাদের ভূখণ্ডের নীচে থাকা টানেল ধ্বংসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: DW/S.Al Farra
মাটির নীচে বিপদ
শুধুমাত্র ইসরায়েলি সেনাদের হত্যার উদ্দেশ্যেও অনেক সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে৷ ২০০৪ সালে হামাসের প্রকাশিত এই ছবিতে কিছু বিস্ফোরক দেখানো হয়েছে যা ব্যবহার করে সেবছরের ডিসেম্বরে ইসরায়েলের একটি সেনা ঘাঁটির নীচে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল৷ এতে পাঁচ ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং দশজন আহত হন৷
ছবি: Getty Images
সুড়ঙ্গে মন্ত্রী
গাজা থেকে ইসরায়েলে প্রবেশের জন্য তৈরি এই সুড়ঙ্গটি ২০১৩ সালে প্রদর্শন করেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোসা ইয়ালন৷ ইসরায়েলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, হামেস এই টানেল দিয়ে ইসরায়েলে হামলা এবং ইসরায়েলিদের অপহরণ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আক্রমণ চলছেই
ইসরায়েল দাবি করেছে, গাজায় কয়েক ডজন টানেল ধ্বংসে সক্ষম হয়েছে তাদের সেনাবাহিনী৷ গত আট জুলাই থেকে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল৷ এতে বুধবার (৩০.০৭.১৪) পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে বারোশ’র বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই নিরীহ ফিলিস্তিনি৷