ইসরায়েলের সেনা জানিয়েছে, নাসের হাসপাতালে হামাস ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছে ভেবেই তারা আক্রমণ চালিয়েছে। যাতে সাংবাদিকদের মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েলে বিক্ষোভ সমাবেশে সাধারণ মানুষছবি: Jack Guez/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
আল জাজিরার সাংবাদিকরা নিহত হওয়ার পর আবার ইসরায়েলের আক্রমণে গাজায় সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের মৃত্যু হেয়েছে। যা নিয়ে দুনিয়াজুড়ে নিন্দা করা হচ্ছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, ঘটনাটির জন্য তারা 'দুঃখিত'। একই সঙ্গে তাদের দাবি, হামাস নাসের হাসপাতালে একটি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছিল বলে তাদের ধারণা। যা দিয়ে তারা ইসরায়েলের সেনার গতিবিধি লক্ষ্য করছিল বলে তাদের মনে হয়েছে। সেই কারণেই হাসপাতালে একবার নয়, দুইবার তারা আঘাত হেনেছে বলে দাবি। হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলসহ কয়েকটি দেশ।
বস্তুত, প্রথমবার হাসপাতাল চত্বরে বিস্ফোরণ হওয়ার পরেই সাংবাদিকেরা সেখানে পৌঁছেছিল। তারপর সাংবাদিকদের উপস্থিতির মধ্যেই ইসরায়েল সেখানে দ্বিতীয়বার আক্রমণ চালায়।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী হাসপাতালে হামলা চালানো গর্হিত অপরাধ। ইসরায়েল আগে অবশ্য এর আগেও গাজার হাসপাতালে একবার নয়, বারবার আক্রমণ চালিয়েছে।
যুদ্ধকে লজ্জা দিতে যেখানে বেজে ওঠে সংগীতের সুর
বিধ্বস্ত গাজার বাতাসে ভেসে বেড়ায় মানুষের কান্না, যন্ত্রণার খতিয়ান৷ তার মধ্যেও বেঁচে থাকার রসদ খোঁজেন তরুণ সংগীতশিল্পীরা৷ শান্তি খোঁজেন সুর ও গানের মধ্যে দিয়ে৷ খোঁজেন আশার আলোও৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
ভয়ের বিরুদ্ধে আশার লড়াই
গাজা সিটি দখল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল৷ যুদ্ধে ভেঙেছে গাজা কলেজের ঘর৷ গুলিবিদ্ধ দেওয়াল, ভাঙা জানলা৷ মোহাম্মদ আবু মেহেদির কাছে এ আর নতুন কিছু নয়৷ তাই এমন পরিস্থিতিতেও তিন ছাত্রী ও এক ছাত্রকে তিনি শেখাতে পারেন গিটার৷ মেহেদি মনে করেন, এই দুর্বিষহ সময়ে সংগীত মানুষকে একটু হলেও মানসিক শান্তি দিতে পারে৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
হার না মানা এক শিক্ষক
২০২৪ সালের শুরুতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ গাজায় সংগীতের ক্লাস নিতে শুরু করেন আহমদ আবু আমশা৷ এডওয়ার্ড সাইদ ন্যাশনাল কনজার্ভেটরি অব মিউসিক-এর অন্যতম শিক্ষক তিনি৷ দক্ষিণ গাজার যুদ্ধের আতঙ্কগ্রস্ত ভীত কিশোর-কিশোরীদের গান ও বাজনা শেখাতে শুরু করেন আহমদ৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
‘সংগীত আমাকে আশা জোগায়’
‘‘গান-বাজনা আমাকে আশা জোগায় ও সব উৎকণ্ঠা দূর করে৷’’ জানিয়েছে ১৫ বছরের রিফান আল কাসাস৷ ন‘বছর বয়স থেকে সে আরবি বাদ্যযন্ত্র ‘উদ’ বাজাতে শিখেছে৷ তার আশা, একদিন সে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাজাবে৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
পরিস্থিতি ভয়াবহ
সংগীত শিক্ষকের তাঁবু থেকে বেরোলেই চোখের সামনে বিধ্বস্ত গাজা শহরের চিত্র৷ আপৎকালীন আশ্রয়শিবিরে শত শত মানুষ৷ একটু খাবার, ওষুধ, একফোঁটা জলের জন্য হাহাকার৷ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত৷ কেউ কেউ ক্লাসে আসতেও পারেন না৷ দৃশ্যটি ১২ আগস্টের৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
মৃত্যু ও যন্ত্রণাকে হারাতে
ধ্বংস হয়ে যাওয়া স্কুলবাড়ির সামনে নিজের বাদ্যযন্ত্র উদ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ১৮ বছরের ইউসেফ সাদ৷ স্কুলের বাকি সব বাদ্যযন্ত্রই ধ্বংস হয়ে গেছে৷ ১৮ বছরের এই তরুণের স্বপ্ন, ‘‘একদিন আমি নিশ্চয়ই শিশুদের সংগীতের পাঠ দিতে পারবো, যাতে তারা ধ্বংসলীলা সত্ত্বেও সৌন্দর্যকে বেছে নেয়৷’’
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
মঞ্চ, শ্রোতা ও দর্শক
পরিস্থিতি ভয়াবহ, কিন্তু সংগীত তো সবসময়েই শ্রোতাকে খুঁজে নেয়৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে একটি তাঁবুর মধ্যেই অনুষ্ঠানের আয়োজন৷ সে অনুষ্ঠানের শেষে প্রশংসা ও হাততালিতে ফেটে পড়ে সেই তাঁবু৷ ২০ বছরের এক তরুণ শিক্ষার্থী জানান, ‘‘সংগীতের নতুন ধরন নিয়ে জানতে আমার ভালো লাগে৷ তার চেয়েও ভালো লাগে রক (সংগীতের এক বিশেষ ঘরানা)৷’’ দৃশ্যটি ৪ আগস্টের৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
এক মুহূর্তের আনন্দ
কোনোরকমে খাড়া করা মঞ্চে শিশুদের কচি গলার গান যেন হারিয়ে দেয় প্রতিদিনের বিস্ফোরণের শব্দকে৷ দৃশ্যটি ৪ আগস্টের৷
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
যন্ত্রণা বনাম সংগীত
ওসামা জাহৌজ ‘নেই’ নামক একটি বাঁশি বাজান৷ মূলত আরবি, ফারসি ও তুর্কী সংগীতে এই বাঁশি বাজানো হয়৷ তার কথায়, ‘‘ বোমা বিস্ফোরণ তীব্র হলে আমি শ্বাসের ব্যায়াম করি, বা খুব নিচু লয়ে বাঁশি বাজাই৷ বাজানোর সময় মনে হয় আমি আবার স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছি৷ নেই যেন আমার যন্ত্রণাকে ধীরে ধীরে মুছে দিচ্ছে৷’’
ছবি: Dawoud Abu Alkas/REUTERS
8 ছবি1 | 8
গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের দ্বিতীয়বার আক্রমণ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দা করা হয়েছে। ইসরায়েলের বন্ধু দেশগুলিও এর নিন্দা করেছে। এদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলি ইসরায়েলের এই আক্রমণের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তাদের বক্তব্য, ইসরায়েল শাক দিয়ে ভাত ঢাকার চেষ্টা করছে। গাজার হাসপাতালে তাদের আক্রমণের যুক্তি ধোপে টেকে না। বস্তুত, ইসরায়েলও এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলির প্রশ্ন, ক্ষমা চাওয়াই কি যথেষ্ট? এই মাসেই কিছু মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েল ৮৮ শতাংশ যুদ্ধাপরাধের কোনো সর্বজনবিদিত ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
২০৯ জন সাবেক ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিক একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে বলা হয়েছে, গাজা এবং পশ্চিম উপকূলে ইসরায়েল যা করছে, তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। ইসরায়েলের প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
এদিকে ইসরায়েলের রাস্তাতেও জনসাধারণের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাজধানীর রাস্তায় রীতিমতো টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ চলছে। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, দ্রুত গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হোক এবং এই যুদ্ধ বন্ধ করা হোক।
ইসরায়েলের পুলিশ রাস্তায় নেমে এই প্রতিবাদ বিক্ষোভগুলি দমন করেছে বলে জানা গেছে। যদিও তাতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।