হামাসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
৭ ডিসেম্বর ২০১৮
ফিলিস্তিনের হামাসকে ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনা এক নিন্দা প্রস্তাবে ‘না' করে দিয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ৷
বিজ্ঞাপন
সাধারণভাবে অর্ধেকের বেশি ভোটে প্রস্তাব পাস হলেও, এই প্রস্তাবের ক্ষেত্রে শর্ত দেয়া হয় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের৷ খসড়া এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ৮৭টি, বিপক্ষে ৫৮টি৷ ৩২টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে, আর অনুপস্থিত ছিল ১৬টি দেশ৷ খসড়া গ্রহণের পক্ষে ভোট দিয়েছে জার্মানি৷
তবে খসড়া প্রস্তাবে ভোটের আগে আরেকটি ভোট অনুষ্ঠিত হয়৷ আরব দেশগুলির দাবি অনুযায়ী, এই ভোটে অর্ধেকের বেশি নয়, শর্ত দেয়া হয় দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পাওয়ার৷ অল্প ভোটের ব্যবধানে এই প্রস্তাবটি পাস করে জাতিসংঘ৷ যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য দাবি জানিয়েছিল অন্যান্য প্রস্তাবের মতোই এই প্রস্তাবটিও সংখ্যালঘুর মতের ভিত্তিতেই নির্ধারণ হোক৷
‘দুই-তৃতীয়াংশ' শর্তের এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ৭৫টি, বিপক্ষে ৭২টি৷ ২৬টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল৷ তবে বেশ কয়েকটি দেশ শেষ মুহূর্তে তাঁদের অবস্থান পরিবর্তন করে পক্ষে ভোট দেয়৷
গাজা উপত্যকায় কেন সংঘাত?
এই সংঘাত কয়েক শতাব্দী প্রাচীন৷ কিন্তু এ বছর কিছু ঘটনা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সংঘাতকে আরো উস্কে দিয়েছে, যার ফলে গাজা উপত্যকায় উত্তাপ বিরাজ করছে৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
ঝরলো প্রাণ আরো তিন ফিলিস্তিনির
গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আরো তিন জন ফিলিস্তিন নিহত হয়েছেন৷ ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এটিই সংঘাতের সর্বশেষ ঘটনা৷ গত মার্চ থেকেই ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের ওপর বার বার গুলি চালিয়েছে, যার কঠোর সমালোচনা করে আসছে জাতিসংঘ৷
ছবি: Imago/Zuma/A. Amra
ফেব্রুয়ারি ২০১৮: সীমান্তে বোমা
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সীমান্তে বোমা বিস্ফোরণে চার ইসরায়েলি সেনা আহত হন৷ইসরায়েল ফিলিস্তিনের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হামাসকে এর জন্য দায়ী করে গাজায় হামাসকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
জাতিসংঘের ত্রাণকার্য
জাতিসংঘ গাজা উপত্যকার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহ করে৷ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা সতর্ক করে যে, গাজায় দুর্ভিক্ষ হানা দিতে পারে৷ যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থায় তাদের প্রদেয় সংস্থান বন্ধ করে দেয়, যেন সমস্যা সমাধানে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করে৷ পরে ত্রাণ সংস্থাটি বলে, জুলাই পর্যন্ত রসদ আছে তাদের কাছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma/S. Jarar'Ah
ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফর
পশ্চিমতীর ভিত্তিক ফাতাহ গ্রুপের ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী রামি হামদাল্লাহ’র নেতৃত্বে একটি দল গত ১৩ মার্চ গাজা সফর করেন৷ গাজায় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য হামাসকে দুষছে ফিলিস্তিনি সরকার৷ জবাবে হামাস বলেছে, এ ধরনের মন্তব্য গাজা ও পশ্চিমতীরের মধ্যে একতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
ইসরায়েলে আবারো বিমান হামলা
১৮ মার্চ গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে বোমা বিস্ফোরণে কেউ আহত না হলেও ইসরায়েল এই সুযোগে আরেক দফা বোমা হামলা চালায় গাজায়৷ হামাসের সুড়ঙ্গগুলোকে ধ্বংস করাই এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল৷ বোমা হামলার কারণে বাস্তুচ্যুত অনেক ফিলিস্তিনি ঘটনার পরের কয়েকদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত সীমানা দিয়ে ইসরায়েলে চলে যান৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
সীমান্তে বিক্ষোভের ঘোষণা
গাজা উপত্যকায় একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলের ঘোষণা দেন ফিলিস্তিনিরা৷ তাঁরা পালিয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে ফিরে আসার অধিকার দেয়ার দাবি জানান৷ ইসরায়েল সেই দাবি মেনে নেয়নি৷
ইসরায়েল দাবি মেনে না নেয়ায় গত ৩০ মার্চ ল্যান্ড ডে’কে সামনে রেখে সীমান্তের দিকে প্রায় ত্রিশ হাজার ফিলিস্তিনি এগোতে থাকেন৷ কেউ কেউ সীমান্ত বেড়ার দিকে এগিয়ে যান৷ ইসরায়েলের সীমান্তরক্ষীরা তাঁদের ওপর গুলিবর্ষণ করলে ১৬ জন নিহত হন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Hams
আবারো সীমান্তে প্রতিবাদ
৬ এপ্রিল পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এক সাংবাদিক নিহত হন৷ সেদিন মোট নয় ফিলিস্তিনি গুলিবিদ্ধ হন৷
ছবি: Reuters/I. A. Mustafa
আমরা আঘাত করবো: নেতানিয়াহু
গত ৯ এপ্রিল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘আমাদের পরিষ্কার কথা, কেউ আমাদের আক্রমণ করবে মনে হলে, আমরা তা মেনে নেবো না৷ আমরা তাদের আঘাত করবো৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/G. Tibbon
তৃতীয়বারের মতো প্রতিবাদ
১৩ এপ্রিল তৃতীয়বারের মতো প্রতিবাদে সীমান্তে জড়ো হন ফিলিস্তিনিরা৷ ৩০ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪৫ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
ইসরায়েলি সেনাদের গুলি
ফিলিস্তিনিদের ইট পাটকেলের জবাব টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ছাড়াও গুলিবর্ষণ করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা৷ এ নিয়ে জাতিসংঘ ব্যাপক সমালোচনা করলেও তা কানে তোলেনি তারা৷ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি তোলা হলেও কাজ হয়নি৷
ছবি: Reuters/I.A. Mustafa
11 ছবি1 | 11
খসড়া প্রস্তাবে ভোটের আগে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি সাধারণ পরিষদকে বলেন, এই প্রস্তাব পাস হলে তা ইতিহাস হবে, এবং হামাসের জন্য বড় একটি ধাক্কা হবে৷ হামাসকে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ‘উদ্ভট' জঙ্গি সংগঠন বলেও আখ্যা দেন৷
হ্যালি বলেন, ‘‘আজ জাতিসংঘ যে সিদ্ধান্ত নেয়, তাতেই পরিষ্কার হবে, ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিটি দেশ কতটা সোচ্চার৷'' তিনি বলেন, ‘‘ইহুদি রাষ্ট্র ও ইহুদি জনগণের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসকে সন্ত্রাস না বলার চেয়ে বড় ইহুদিবিদ্বেষ আর কিছু নেই৷''
হামাসকে আগেই ‘জঙ্গি সংগঠন' আখ্যা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ৷
হামাস কর্মকর্তা সামি আমু জুহরি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ‘‘খসড়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় একটি আঘাত৷ এর ফলে এটাই প্রমাণ হয়েছে, আমাদের প্রতিরোধের বৈধতা রয়েছে৷''
ফিলিস্তিনের ক্ষমতা নিয়ে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দল ফাতাহ'র সাথে হামাসের দ্বন্দ্ব থাকলেও আব্বাস জাতিসংঘে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের ঘটনাটিকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ফিলিস্তিনিদের জাতীয় সংগ্রামকে নিন্দা জানায়, এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে স্বাগত জানাবে না ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্সি৷''