২০১৪ সালের পর এই প্রথম মুখোমুখি হামাস ও ইসরায়েল৷ হামলা পাল্টা হামলায় গাজা উপত্যকায় আবারও রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ফিলিস্তিন অধ্যুষিত গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল৷ মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু করে বুধবার সকাল পর্যন্ত চালানো এই বোমা হামলার মূল লক্ষ্য হামাস ও ইসলামিক জিহাদের স্থাপনা ছিল বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ৷ ২০১৪ সালে ৭ সপ্তাহব্যাপী লড়াইয়ের পর এটিই ছিল দুই পক্ষের মধ্যে সবচেয়ে বড় হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা৷
ইসরায়েলের সেনাবিহিনীর দাবি, মঙ্গলবার রাতে ৭০ টির মতো রকেট এবং বোমা ফিলিস্তিন সীমানা থেকে তাদের দক্ষিণাঞ্চলে ছোঁড়া হয়৷ ওসব বোমার ১টি বাচ্চাদের একটি স্কুলের সামনে গিয়ে পড়ে৷
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের অভিনব যুদ্ধ
যুদ্ধ চলছে আকাশে৷ ঘুড়ি আর ড্রোন বিমানের যুদ্ধ৷ ড্রোনকে ফাঁকি দিয়ে ঘুড়ি ওপারে যেতে পারলেই ইসরায়েলের সর্বনাশ৷ ইসরায়েলের সেনাবাহিনী তাই মহাআতঙ্কে! দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/I.A. Mustafa
ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশেষ ড্রোন
ছবিতে একটি ড্রোন ধরে আছেন ইসরায়েলের এক সৈন্য৷ জেরুসালেমে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস উদ্বোধনের দিন যত ঘনিয়ে আসছিল বিক্ষোভের তীব্রতা ততই বাড়ছিল গাজায়৷ অথচ সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সামনে ফিলিস্তিনিরা তো অসহায়৷ তাই প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে দেয়ার জন্য অভিনব এক উপায় বের করলো ফিলিস্তিনিরা৷ সেই আগুন থেকে বাঁচতেই এই ড্রোন বানিয়েছে ইসরায়েল৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
ঘুড়ি যখন ভয়ানক হাতিয়ার
ছবিতে একটি ঘুড়িতে আগুন জ্বালাচ্ছেন এক ফিলিস্তিনি৷ রামায়ণে হনুমানের আগুন পুড়ে ছাড়খার করেছিল রাবণরাজ্য৷ ফিলিস্তিনিরাও চায় ইসরায়েলে আগুন লাগাতে৷ তাই আকাশে ওড়ার আগে আগুনে পুড়ছে ঘুড়ি৷
ছবি: Reuters/I.A. Mustafa
আকাশে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল লড়াই
ফিলিস্তিনিদের উড়িয়ে দেয়া জ্বলন্ত ঘুড়ি উড়ে চলেছে ইসরায়েলের দিকে৷ কিন্তু ইসরায়েলে ঢোকা কি এত সহজ? ঘুড়ি-প্রতিরোধী ড্রোন বানিয়ে ইসরায়েলও ইতিমধ্যে তৈরি৷ দূর থেকে ফিলিস্তিনিদের ঘুড়ি উড়তে দেখেই তাই ড্রোন পাঠিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী৷ উড়ে এসে ঘুড়ি প্রতিরোধে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ড্রোন৷
ছবি: Reuters/M. Salem
জ্বলছে ঘুড়ি
এই ঘুড়িটি গাজা থেকেই এসেছে৷ কিন্তু বড় কোনো ক্ষতি হওয়ার আগেই আগুন নেভাচ্ছেন এক ইসরায়েলি সৈন্য৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
ফিলিস্তিনিদের একটি সাফল্য
ঘুড়ির আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে মাঠ৷ মাঠটি ইসরায়েলে৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
ধেয়ে আসছে আতঙ্ক
রাতের আঁধারে ইসরায়েলের আকাশে ঢুকে পড়েছে আরেকটি ঘুড়ি৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
ড্রোন থেকে কাঁদানে গ্যাস
ফিলিস্তিনিদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসবাহী ড্রোন পাঠিয়েছে ইসরায়েল৷ সেই ড্রোন গাজার আকাশে এসেই ছাড়তে শুরু করেছে কাঁদানে গ্যাস৷
ছবি: Reuters/I.A. Mustafa
যা ঘুড়ি উড়ে যা...
‘‘ক্ষোভ আর প্রতিশোধের আগুন নিয়ে উড়ে যা ঘুড়ি’’ – ঘুড়িতে আগুন লাগিয়ে যেন এ কথাই বলছেন ফিলিস্তিনিরা৷
ছবি: Reuters/I.A. Mustafa
উড়ছে ঘুড়ি, উড়ছে পতাকা
ফিলিস্তিনি পতাকার পাশ দিয়েই উড়ে যাচ্ছে ঘুড়ি৷
ছবি: Reuters/I.A. Mustafa
ঘুড়িসৈনিক
গাজা সীমান্তে ঘুড়ি নিয়ে ফিলিস্তিনিরা তৈরি৷
ছবি: Reuters/I.A. Mustafa
ধরা পড়েছে ‘আসামী’
গাজা থেকে উড়ে আসা ঘুড়ি ধরতে পেরে আনন্দিত ইসরায়েলি সেনা৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
ইসরায়েলের পালটা ব্যবস্থা
ফিলিস্তিনিরা আগুন জ্বালিয়ে ঘুড়ি পাঠায় বলে পালটা ব্যবস্থা হিসেবে কখনো কখনো গাজায় আগুন লাগানোর জন্যও ড্রোন পাঠায় ইসরায়েল৷ এমনই এক ডোন থেকে ফেলা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন এক ফিলিস্তিনি৷
ছবি: Reuters/I.A. Mustafa
12 ছবি1 | 12
এরই জবাবে গাজায় থাকা হামাস ও ইসলামিক জিহাদের ৩৫টি স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েল৷ তবে ইসরায়েলের বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি৷
জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের প্রতিবাদে কয়েক সপ্তাহ আগে গাজা-ইসরায়েল সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷
সেই সহিংসতায় শতাধিক ফিলিস্তিনির প্রাণহানির পর দুপক্ষের ফের এ লড়াই শুরু হলো৷ ওদিকে গাজায় সীমান্ত বিক্ষোভে ৩০ মার্চ থেকে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি হত্যাযজ্ঞের জবাবেই ইসরায়েলে রকেট ছোঁড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস ও ইসলামিক জিহাদ৷
এক বিবৃতিতে গাজার কাছে ইসরায়েলি বিভিন্ন স্থাপনা এবং বসতিতে মর্টার বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে ফিলিস্তিনের কাশেম এবং জেরুসালেম ব্রিগেড৷
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘‘ইসরায়েল এরকম হামলার সমুচিত জবাব দেবে এবং যারা ইসরায়েলের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে, তাদেরকে ভারি মাশুল গুণতে হবে৷ আমরা লক্ষ্য করছি, আমাদের বিরুদ্ধে এরকম হামলার পেছনে হামাস রয়েছে৷’’
ইসরায়েলের ইন্টেলিজেন্স মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ‘‘২০১৪ সালের পর এই প্রথম হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে৷ অপরপক্ষ থেকে যদি গোলাগুলি বন্ধ না হয়, আমাদের পাল্টা হামলার তীব্রতা বাড়বে এবং এটি পরিস্খিতির অবনতি ঘটাবে৷’’
ফিলিস্তিনের পাথর ছোঁড়া তরুণেরা
জেরুসালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইসরায়েলি সেনাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে প্রতিবাদ জানায় ফিলিস্তিনি তরুণরা৷ নাম প্রকাশ না করে তাঁরা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেছেন৷
ছবি: REUTERS
সম্বল গুলতি
গাজা শহরের পূর্বে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে গুলতি হাতে এক ফিলিস্তিনিকে দেখা যাচ্ছে৷ তিনি বলছেন, ‘‘জেরুসালেম নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন রুখতে আমি যা করতে পারি তা হচ্ছে এই গুলতি দিয়ে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ইসরায়েলি সেনাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারতে৷ আমি স্বপ্ন দেখি যে, আমাদের পবিত্র ভূমি ফিরে পাওয়ার যুদ্ধে সব আরব ও মুসলিম এক হয়েছে৷’’
ছবি: REUTERS
জেরুসালেম যেন শরীরেরই অংশ
এই বিক্ষোভকারী তরুণের বক্তব্য, ‘‘আমরা ট্রাম্পকে বলতে চাই যে, জেরুসালেম আমাদের শরীরের অংশ, যা ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না৷ আমরা জেরুসালেমকে ভালোবাসি এবং একে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে রক্ষার জন্য সবকিছু, এমনকি আমাদের প্রাণও উৎসর্গ করে পারি৷ বিশ্ব যদি সদয় হয়ে থাকে, তাহলে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কারণে আমাদের জন্য যে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা শেষ করার উদ্যোগ নেয়া উচিত৷’’
ছবি: REUTERS
‘‘গুলতি হাতে মানুষ’’
এই নামেই পরিচিত ছবির এই তরুণ৷ তাঁর কথা, ‘‘আমি কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত নই৷ আমার সংশ্লিষ্টতা জেরুসালেমের সঙ্গে৷ আমি একটা বিষয় জানি, যারা আমাকে গাজায় অবরুদ্ধ করে রেখেছে, যারা আমাকে গাজার বাইরে গিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণের পথে দাঁড়িয়ে আছে, তারা ঐ বেড়ার পেছনে রয়েছে, তারা হচ্ছে ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী৷’’
ছবি: REUTERS
ইহুদিদের বিরুদ্ধ লড়াই
মুখে মাস্ক পরা এই ফিলিস্তিনি তরুণ বলছেন, ‘‘বিশ্বের অবশ্যই বোঝা উচিত যে, বেকারত্ব আমাদের যোদ্ধা হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ আমরা হামাস কিংবা ফাতাহর বিরুদ্ধে লড়বো না, আমরা শুধু ইহুদিদের বিরুদ্ধে লড়বো৷ হামাস আর ফাতাহর মধ্যে বিভাজনের সমাপ্তি ও আরও বিদ্যুতের দাবিতে ডাকা সমাবেশে আমরা অংশ নিয়েছি৷ কিন্তু আমরা হামাস কিংবা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দিকে পাথর ছুড়তে রাস্তায় নামবো না৷’’
ছবি: REUTERS
বঞ্চনার শিকার
‘‘একজন তরুণ হিসেবে আমি একটি সম্মানজনক জীবন থেকে বঞ্চিত হচ্ছি৷ আমার এই অবস্থার জন্য যেটা দায়ী সেই ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমি বিদ্রোহ করতে পারি৷ অ্যামেরিকার সহায়তা নিয়ে দখলদাররা আমাদের মাতৃভূমিকে অবরোধ করে রেখেছে৷’’
ছবি: REUTERS
স্বপ্নের কথা
‘‘আমি আশা করছি, আমি আমার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচবো৷ আমি সবসময় চাকরি আর চলাফেরার স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছি৷’’
ছবি: REUTERS
দুর্ভোগের প্রতিবাদ
আহত বন্ধুর শরীরের রক্ত আবু জাবেরের হাতে লেগে রয়েছে৷ সে বলছে, ‘‘জেরুসালেম নিয়ে ট্রাম্প যে উন্মাদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার প্রতিবাদ জানাই আমরা৷ ইসরায়েলের অবরোধের কারণে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি৷ আমার হাতে যে রক্ত দেখছেন তা আরব ও মুসলিম বিশ্বকে ইসরায়েল ও অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উৎসাহ দেবে বলে আমি আশা করি৷’’
ছবি: REUTERS
অন্য উপায় নেই
‘‘আমরা ক্ষুধার্ত৷ ঘরে আমাদের বিদ্যুৎ নেই, আমাদের বাবাদের চাকরি নেই৷ এই পরিস্থিতি প্রতিবাদ ছাড়া আর কিছু আনতে পারে না৷’’
ছবি: REUTERS
অবরোধের প্রতিবাদ
‘‘গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছি আমরা৷ অবরোধের কারণে আমাদের আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে৷ আশা করছি, শিগগিরই অবরোধ তুলে নেয়া হবে৷’’
ছবি: REUTERS
শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ
‘‘ইসরায়েল ও আমাদের মধ্যে অনেকদিন ধরে যুদ্ধ চলছে৷ আমাদের ভূমিতে একজন ইসরায়েলি দখলদারি থাকা পর্যন্ত আমরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাব৷ ট্রাম্প বা অন্য কেউ আমাদের ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না৷’’
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
হামাস ও ইসলামিক জিহাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দল ফাতাহ৷ পশ্চিম তীরে সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দলটির নেতা মাহমুদ আব্বাসও ইসরায়েলের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷
তিনি বলেছেন, ‘‘ইসরায়েল গাজায় সহিংস আগ্রাসন চালাচ্ছে এবং এ অঞ্চলে শান্তি স্থাপনে তারা আগ্রহী নয়৷’’
ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের সংঘাতের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘে অ্যামেরিকার রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালে বুধবার দ্রুত নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন৷
ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র অ্যামেরিকার এই দূত বলেন, ‘‘নিরাপত্তা পরিষদের এখনই ইসরায়েলের সাধারণ জনগণের উপর হামলার ব্যাপারে (হামাসকে) তিরষ্কার করা উচিত এবং এ ঘটনার প্রতিবাদ করা উচিত৷’’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ফেদেরিকা মগেরিনিও হামাসকে হামলা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘‘কোনও অবস্থাতেই সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলা গ্রহণযোগ্য নয়৷’’