হামাসের কার্যকলাপ মানে না ফিলিস্তিন, জানালেন সেখানকার প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
বিজ্ঞাপন
হামাসের থেকে দূরত্ব তৈরি করলেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি বলেছেন, ''হামাস যা করে তা ফিলিস্তিনের মানুষের মানসিকতা নয়।'' ফিলিস্তিনের সংবাদসংস্থা একথা রোববার প্রকাশ করেছে।
এখানেই শেষ নয়, তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের মানুষ ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলও-কে মর্যাদা দেয়। তারাই ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতিনিধি। হামসা নয়। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে ফোনে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সময় এই মন্তব্য করেছোন তিনি।
গাজা স্ট্রিপে ক্ষমতার কেন্দ্রে হামাস। কিন্তু পিএলও-র সঙ্গে হামাসের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। তবে গাজায় ইজরায়েলের আক্রমণ শুরু হওয়ার পরেও পিএলও এই অবস্থান নেবে, তা অনেকেই ভাবেননি।
আকস্মিক সংঘাতে অসহায় ফিলিস্তিন
হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের পাল্টা আঘাতে পরিস্থিতি এমন যে গাজা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মরিয়া কয়েক লাখ মানুষ৷ কিন্তু যে কোনো মুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি সত্ত্বেও মিশর সীমান্ত বন্ধ থাকায় তারা এখন মহাবিপদে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/REUTERS
তিন লাখ মানুষ ঘরছাড়া
২৩ লাখ মানুষের ভূখণ্ড গাজা এখন আতঙ্কের নগরী৷ জাতিসংঘের মানবিক বিষয়াদি সম্পর্কিত সংস্থা অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ বা ওচা) জানিয়েছে, গাজায় মৃত্যুভয়ে ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে৷ সংঘাতের ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত গাজা-র অন্তত তিন লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়েছে বলে জানিয়েছে তারা৷
ছবি: Majdi Fathi/NurPhoto/picture alliance
স্কুলঘরে আশ্রয়
অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ বা ওচা) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া তিন লাখ গাজাবাসীর দুই তৃতীয়াংশই এখন জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ ওপরের ছবিতে এক স্কুলে আশ্রয় নেয়া একটি পরিবার৷
ছবি: Rola Farhat/DW
ধ্বংসস্তূপ ডিঙিয়ে শান্তির সন্ধানে
ইসরায়েল থেকে উড়ে আসা মিসাইলের আঘাতে ধসে পড়েছে ঘর-বাড়ি৷ চারপাশে শুধুই ধ্বংসের চিহ্ন৷ তার মাঝেই কয়েকজনের বাঁচার পথ খোঁজার চেষ্টা৷
ছবি: Abed Rahim Khatib/dpa/picture alliance
রাফা সীমান্তে বাধা
জাতিসংঘ জানাচ্ছে, সোমবার গাজা থেকে রাফা সীমান্ত হয়ে মিশরে প্রবেশ করে অন্তত ৮০০ মানুষ৷ কিন্তু সেদিন সীমান্তে কড়াকড়ি শুরু হওয়ায় অন্তত ৫০০ জন মিশরে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়৷
ছবি: Abed Rahim Khatib/dpa/picture alliance
সীমান্তে কড়াকড়ি
গাজার এক পাশে মিশর অন্য তিন পাশে সাগর অথবা ইসরায়েল৷ মিশর সরকার চায় না সেই দেশে গাজাবাসীর ঢল নামুক৷ তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত শান্তি ফেরানোর আহ্বান জানিয়ে সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছেন৷
ছবি: Abed Rahim Khatib/dpa/picture alliance
তবুও মরিয়া আতঙ্কিত মানুষ...
রাফা সীমান্ত বন্ধ করেও গাজার অসহায় মানুষদের মিশরে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না৷ এমনকি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে অক্ষম মানুষরাও প্রাণ বাঁচাতে পৌঁছে যাচ্ছেন রাফা সীমান্তে৷ ওপরের ছবিতে হুইল চেয়ারে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়া এক গাজাবাসী৷
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/REUTERS
6 ছবি1 | 6
এদিকে গত শুক্রবারই গাজা সীমন্তে বিপুল সেনা জড়ো করেছিল ইসরায়েল। তারা জানিয়েছিল, কয়েকঘণ্টার মধ্যে উত্তর গাজা খালি করে দিতে হবে সমস্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীদের। যদিও শুক্রবার শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ, উত্তর গাজা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় একটি উদ্বাস্তু কনভয়ের উপর রকেট হামলা হয়েছে। তাতে বেশ কিছু মানুষের মৃত্যু হয়।
ইসরায়েল অবশ্য জানিয়েছে, রোববার পর্যন্ত পুরোদস্তুর স্থল অভিযান তারা শুরু করেনি।
জাতিসংঘের সংস্থা জানিয়েছে, গাজা থেকে ১০ লাখ মানুষকে নিজের বাসভূমি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যেতে হয়েছে।
হামাসের উত্থান ও কার্যক্রম
২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে হামাস৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বেশিরভাগ দেশের কাছে তারা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচিত৷ তবে হামাসের কিছু মিত্র দেশও রয়েছে৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
উত্থানপর্ব
১৯৮০-এর দশকে ইয়াসির আরাফাতের প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-র বিরোধিতায় হামাসের জন্ম৷ পিএলও-র বিরোধী শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে শুরুর দিকে ইসরায়েল সরকার হামাসকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিল বলে অনেকক্ষেত্রে দাবি করা হয়৷ তবে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠায় কোনো ধরনের ভূমিকার কথা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: Reuters/S. Salem
ইসরায়েলকে অস্বীকার
পিএলও-র মতো হামাস ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারে বিশ্বাস করে না৷ তাদের প্রতীকে রয়েছে জেরুসালেমের ‘ডোম অব দ্য রক’৷ ইসরায়েল, গাজা ও পশ্চিম তীরকে একক ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে তারা বিবেচনা করে৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যান
১৯৯৩ সালে ইয়াসির আরাফাত অসলো চুক্তির অধীনে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেন, যার মধ্য দিয়ে ১৯৮৭ সালে শুরু হওয়া প্রথম ইন্তিফাদার অবসান হয়৷ হামাস এই শান্তি প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলে হামলা অব্যাহত রাখে৷
ছবি: J. David Ake/AFP/Getty Images
নির্বাচনে জয়
২০০৬ সালের গাজার সাধারণ নির্বাচনে হামাস পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে৷ এরপর থেকে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে ফাতাহ-এর অধীনে রয়েছে পশ্চিম তীর আর গাজার নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতে৷ ২০০৮-০৯, ২০১২ ও ২০১৪ সালে ইসরায়েলি সেনার সঙ্গে হামাসের তুমুল লড়াই চলে৷
ছবি: AP
সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত
১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করে৷ ২০০৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদেরকে সন্ত্রাসী তালিকায় রাখে৷ হামাস এই বিষয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ করে৷ তবে আদালত তাদের আবেদন বাতিল করে৷ যুক্তরাজ্য ক্যানাডা, জাপান, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াও হামাসকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khatib
হামাসের সহযোগী
হামাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগী কাতার৷ দেশটির আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আল-থানি প্রথম রাষ্ট্রনেতা, যিনি ২০১২ সালে হামাস সরকারের সঙ্গে দেখা করেন৷ এখন পর্যন্ত দেশটি হামাসকে ১৮০ কোটি ডলার দিয়েছে৷ হামাসের প্রতি তুরস্কেরও সমর্থন রয়েছে৷ সংগঠনটির নেতা ইসমাইল হানিয়ের পক্ষে রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে রেচেপ তাইয়েপ-এর্দোয়ানের৷ এছাড়াও বিভিন্ন উদ্যোগ ও ফাউন্ডেশনের সহযোগিতাও পায় তারা৷
ছবি: AP
হামাসের রকেট উৎস
সবশেষ সংঘাতেও ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন শতাধিক রকেট ছুঁড়েছে হামাস৷ দীর্ঘদিন হামাস রকেটের জন্য ইরানের উপর নির্ভরশীল ছিল৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুদান ও মিশর হয়ে সেখান থেকে অস্ত্র চোরাচালান হতো৷ তবে বর্তমানে গাজাতেই হামাস রকেট বানাচ্ছে বলেও ধারণা করা হয়৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফের একবার ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা জানিয়েছে, এক সপ্তাহ আগে হামাস যে আক্রমণ চালিয়েছিল, হামাস তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। হামাসের হাতে আটক সমস্ত পণবন্দির নিঃশর্ত মুক্তির আবেদন জানিয়েছে। যদিও অসরাকারি সূত্রের দাবি, হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েলের হামলায় পণবন্দিদের মৃত্যু হয়েছে। ফলে তাদের এখন আর মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়।
ইসরায়েল আগেও এই একই কথা জানিয়েছে।
অ্যামেরিকায় হেট ক্রাইম
অ্যামেরিকায় একজন ৭১ বছর বয়সি বৃদ্ধ একটি বাচ্চা ও তার মাকে ছুরি মারে। বাচ্চাটি মারা গেছে। তার মায়ের অবস্থা সংকটজনক। পুলিশ জানিয়েছে, ইসরায়েল ও হামাসের সংঘাতের পর এই হেট ক্রাইম হয়েছে। বাচ্চাটিকে ২৬ বার ছুরি মেরেছিল ওই বৃদ্ধ।