1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌হারানো মেয়েদের খোঁজে

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১১ এপ্রিল ২০১৭

কলকাতা চিরকালই দেওয়াল লিখনের শহর৷ তার বুকেই ফুটে উঠল এক নতুন দেওয়ালচিত্র, যে শিল্প সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ৷

Indien - Wandbemalung in Kalkutta - Missing Women
ছবি: DW/S. Bandopadhyay, Graffiti: Leena Kejriwal

কলকাতা জুড়ে এখন চলছে ফ্লাইওভার আর মেট্রো রেলের নতুন যাত্রাপথ গড়ার কাজ৷ রাস্তার ধার ঘেঁষে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়াচ্ছে অতিকায় কংক্রিটের থাম, যার ওপর তৈরি হচ্ছে নতুন পথ৷ সেই থামের গায়ে বছরখানেক ধরেই দেখা যাচ্ছিল কালো স্টেনসিলে আঁকা ছবিগুলো৷ অবয়বে স্পষ্ট, সেগুলি কোনো মেয়ের ছবি৷ আর তার নীচে লেখা – ‘‌মিসিং গার্লস'‌৷ অনেকেই বোঝেননি, জিনিসটা ঠিক কী৷ যদিও যে ধারাবাহিকতায় শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ফুটে উঠছিল এই হারানো মেয়ের ছবি, তাতে একটা বিষয় বোঝা যাচ্ছিল যে, এটা নিছক কোনো খামখেয়ালি আঁকা নয়, এমনকি কোনো বিজ্ঞাপনী টিজারও নয়৷ এই দেওয়ালচিত্রের বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য আছে৷

গত সপ্তাহান্তে মূল বিষয়টি অবশেষে স্পষ্ট হলো, যখন কলকাতার জার্মান কনসুলেটের বিরাট দেওয়াল ভরে উঠল একইরকম মুখহীন, নামহীন মেয়েদের সাদা-কালো অবয়বে৷ দুই শিল্পী, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী লীনা কেজরিওয়াল এবং বেঙ্গালুরুর ডিজাইনার আমঘ লাক্স এক শিল্প কর্মসূচি নিয়েছিলেন প্রতি বছর ভারত থেকে হারিয়ে যাওয়া অজস্র মেয়েদের দিকে মানুষের নজর টানতে৷ এই হারানো মেয়েদের অনেকেই পাচার হয়ে যান দেশের বিভিন্ন যৌনপল্লীতে৷ তাদের বাকি জীবন কাটে যৌনকর্মীর পেশায়৷ শিল্পীরা বলছেন, এটা ‘‌আর্ট ফর আ কজ'‌৷

ছবি: DW/S. Bandopadhyay

জীবন এবং সমাজের প্রতি শিল্পীর দায়বদ্ধতার একটি প্রকাশ, যে কাজে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল কলকাতার জার্মান কনসুলেট৷ কারণ মহিলাদের সুরক্ষা এবং তাঁদের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি জার্মান সরকারেরও ঘোষিত নীতিগুলির অন্যতম৷ জীবনের নানা ক্ষেত্রে মেয়েদের স্বার্থ সুরক্ষা, তাঁদের মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিভিন্ন উদ্যোগকে এভাবেই মদত দেয় জার্মান সরকার৷ সেই কারণেই লীনা কেজরিওয়াল এবং আমঘ লাক্স, এই দুই শিল্পীর পাশে থাকা৷ এঁদের দু’জনের বছরভরের ওই উদ্দেশ্যমূলক শিল্প-প্রচেষ্টার পরিসমাপ্তি ঘটল বলা চলে, তবে হারানো মেয়েদের জন্যে উদ্বেগ অবশ্যই শেষ হলো না৷

দেওয়াল রং করতে হাত লাগিয়েছেন জার্মান কনসুলেটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও...ছবি: DW/S. Bandopadhyay

ভারতের জাতীয় অপরাধ তথ্য-পরিসংখ্যান দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ৩০ লক্ষ যৌনকর্মী আছেন, যাঁদের প্রায় ১২ লক্ষই কমবয়সি মেয়ে৷ অনেকক্ষেত্রেই এই অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জোর করে নিয়ে আসা হয় পৃথিবীর এই আদিমতম পেশায়, যা এখনও নীচু চোখে দেখে সমাজ৷ এই মেয়েরা হঠাৎই একদিন তাদের বাড়ি থেকে স্রেফ ‘‌হারিয়ে যায়'‌!‌ সমাজ, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যায় যৌনপল্লীতে৷ পরিসংখ্যান বলছে, এই হারিয়ে যাওয়ার হার সাম্প্রতিক কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে৷ ‘‌মিসিং গার্লস'‌ শীর্ষক শিল্পভাবনা সেই সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেই৷ ওই মেয়েদের দুঃখ-দুর্দশার দিকে লোকের নজর ফেরাতে৷ একই সঙ্গে শিল্পীরা ডাক দিয়েছেন সচেতন হতে৷ নারী পাচার রুখতে সক্রিয় হতে, ব্যবস্থা নিতে৷ ওঁরা জানিয়েছেন, ওঁদের এই ‘‌মিসিং গার্লস'‌ শিল্প কর্মসূচি আজকে এক আন্তর্জাতিক আন্দোলনের চেহারা নিয়েছে, যাতে সামিল কলকাতাও৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ