প্রকৃতি ও মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন আজ বিপন্ন হয়ে উঠেছে৷ ঠিক সময়ে ক্ষয়ক্ষতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে তা চিরকালের জন্য হারিয়ে যেতে পারে৷ লেজার স্ক্যানার সেগুলির সুরক্ষায় বড় অবদান রাখছে৷
বিজ্ঞাপন
লেজার প্রত্নতত্ত্ববিদদের আরও একটি প্রকল্প হলো নর্ডিক আদলের ভালহালা মন্দির৷ গ্রিসের প্যান্থেয়ন মন্দিরের আদলে জার্মানিতে সেটি তৈরি হয়েছিল৷ মাত্র দু'শ বছর পুরানো হওয়া সত্ত্বেও এটিকে ঘিরে বিজ্ঞানীদের আগ্রহ কম নয়৷ ভিতরে-বাইরে তাঁরা পরিমাপের কাজ সম্পূর্ণ করেছেন৷ এবার কাঠামোর ভিত সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে৷ প্রত্নতাত্ত্বিক মার্টিন শাইখ বলেন, ‘‘এই মন্দিরের ওজন ধরে রাখতে বড় আকারের মজবুত ভিত তৈরি করতে হয়েছে৷ কিন্তু এত বছরের আর্দ্রতার ফলে অনেক জায়গা ড্রপস্টোন-এর মতো হয়ে গেছে৷ ফলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক রূপ ও পুনর্ণির্মানের পদক্ষেপ জানা প্রয়োজন৷''
ভিজে মাটি পরীক্ষা করতে বিজ্ঞানীরা আরও নিখুঁত স্টেশানারি লেজার স্ক্যানার প্রয়োগ করছেন৷ অত্যন্ত দ্রুত ও নিপূণভাবে গোটা ভিত সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷
ইউনেস্কোর নতুন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটস
প্রকৃতি ও মানবসংস্কৃতি থেকে শুরু করে হাজার বছরের পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সব কিছু আছে ইউনেস্কোর নতুন তালিকায়৷
ছবি: ICCHTO
হামবুর্গ বন্দরের মালগুদাম ও নৌ-বাণিজ্য কেন্দ্র
‘স্পাইশারস্টাট’ হলো হামবুর্গের প্রথম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট৷ এলবে নদীর তীরের এই ১৫টি মালগুদাম এই শহরের সমুদ্রযাত্রার ইতিহাস ও তার শিল্পকারখানা সংক্রান্ত স্থাপত্যের পরিচয় বহণ করছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
প্যালারমো; সেফালু ও মনরেয়ালে-র গির্জা
ইটালিতে এর আগেই ৫০টি বিশ্ব উত্তরাধিকার স্থান ছিল, এবার আরো একটি যোগ হলো: আরব-নর্মান স্থাপত্যের প্যালারমো শহর (ছবি) এবং তার কাছের সেফালু ও মনরেয়ালের ক্যাথিড্রাল৷ এ সব হলো সিসিলি-তে দ্বাদশ শতাব্দীর নর্মান রাজত্বের প্রতীক৷ সে আমলের শাসকরা প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের ধারার মধ্যে সংমিশ্রণ এনেছিলেন৷
ছবি: CRICD
ফরাসি আঙুরখেত ও ওয়াইন সেলার
ফ্রান্সের দু’টি বিখ্যাত ওয়াইন তৈরির এলাকাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ বার্গান্ডি-তে আঙুরচাষের ঐতিহ্য মধ্যযুগ যাবৎ৷ দ্বিতীয় যে আঙুরচাষের এলাকাটি নির্বাচিত হয়েছে, সেটি হলো শ্যাম্পেইন – কেন, নাম শুনেই বুঝতে পারছেন৷
নরওয়ের রিউকান ও নোটোডেন শিল্পনগরীগুলির সঙ্গে ব্রিটেনের ফোর্থ সেতুকেও বিশ্ব উত্তরাধিকার স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে৷ ব্রিজটি স্কটল্যান্ডের ফোর্থ নদীর মোহানায় অবস্থিত৷
ছবি: picture alliance/empics/A. Milligan
দিয়ারবাকির দুর্গ, সুপ্রাচীন শহর এফেসাস
তুরস্কের দু’টি নতুন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট৷ এফেসাস-এ গ্রিক দেবতা আর্টেমিস-এর সুবিখ্যাত মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যাবে (ছবি)৷ এই মন্দির হলো বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যগুলির একটি৷ তুরস্কের অন্য হেরিটেজ সাইটটি হলো দিয়ারবাকির দুর্গ ও হেফসেল উদ্যান৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ozturk
সিঙ্গাপুর বোট্যানিক গার্ডেনস
সিঙ্গাপুরও তার প্রথম বিশ্ব উত্তরাধিকারের স্থান পেয়েছে৷ এখানকার বোট্যানিক গার্ডেনে তিন হাজারের বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ, একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অরণ্য ও একটি অর্কিডের বাগান আছে৷ বোট্যানিক গার্ডেনের ইতিহাস প্রায় দেড়শো বছরের৷ প্রতি বছর ৪০ লক্ষের বেশি দর্শক এখানে ভিড় করেন৷
ছবি: picture-alliance/ANN/The Straits Times
প্রাগৈতিহাসিক
ইরানের সুসা ছিল এককালে একটি সমৃদ্ধ শহর৷ খননকার্য চালিয়ে শহরের পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে৷ কেরমান প্রদেশের মইমান্ড গ্রামের একটি সুপ্রাচীন গুহাও বিশ্ব উত্তরাধিকারের সম্মান পেয়েছে – যেমন পেয়েছে সৌদি আরবের হা’ইল-এ গুহামানবের অঙ্কনশৈলীর নিদর্শন৷
ছবি: ICCHTO
7 ছবি1 | 7
কাঠামোর ক্ষতি করতে পারে, এমন অদৃশ্য ফাটল ও ত্রুটি আবিষ্কার করা হচ্ছে৷ কিন্তু স্ক্যানার আরও কিছু দেখতে পেয়েছে৷ প্রত্নতত্ত্ববিদ ইয়ানকে বলেন, ‘‘মন্দিরটি দেখতে অতি সাধারণ মনে হলেও সবার শেষে তার জটিল কাঠামো নজরে আসে৷ অনেকগুলি ঘরের অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছুই জানতাম না৷ লেজার স্ক্যানের মাধ্যমেই সেগুলি চোখে পড়লো৷''
লেজার রশ্মির মাধ্যমে অতীত যুগের আবিষ্কার সবে শুরু হয়েছে৷ দুর্গম কাঠামো সম্পর্কে আরও জানতে প্রত্নতাত্ত্বিকদের দল নতুন ও ছোট আকারের উড়ালের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন৷
গবেষকদের উড়াল শেষ৷ লক্ষ কোটি নতুন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে৷ সেই নিখুঁত তথ্য কাজে লাগিয়ে ইতিহাসের কিছু রহস্য উন্মোচন করার আশা করছেন তাঁরা৷
বাংলার গর্ব পোড়ামাটির সম্পদ
পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার ছোট শহর বিষ্ণুপুর বিখ্যাত তার অসাধারণ টেরাকোটা বা পোড়া মাটির ভাস্কর্যের জন্য, যা দেখা যায় মূলত নানা ধরনের পট আর পুতুলে এবং মন্দিরের গায়ের কারুকার্যে৷
ছবি: DW/S.Bandopadhyay
লাল মাটির সরানে
পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া – এই জেলাগুলো পরিচিত তার লাল মাটির জন্য৷ ল্যাটেরাইট গোত্রের এই লাল মাটি পুড়িয়েই হয় বিষ্ণুপুরের বিশ্ববিখ্যাত টেরাকোটার কাজ৷
ছবি: DW/S.Bandopadhyay
নিজস্ব স্থাপত্যরীতি
বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা মন্দিরের কিছু নিজস্বতা আছে৷ যেমন মূল মন্দিরের সামনে, মন্দিরের আদলেই একটি ছোট আকারের তুলসীমঞ্চ৷ বাংলার স্থাপত্যশেলীর নিদর্শন এগুলিও৷
ছবি: DW/S.Bandopadhyay
সময়ের আঁচড়
সব মন্দিরের গায়ের রিলিফের কাজই যে যথাযথভাবে সংরক্ষিত করা গেছে, তা নয়৷ কোনো কোনো মন্দির জীর্ণ হয়েছে সময়ের আঁচড়েও৷
ছবি: DW/S.Bandopadhyay
তবু অনন্য
তবু বাংলার নিজস্ব স্থাপত্যরীতির অনন্য নিদর্শন হয়ে আছে এইসব টেরাকোটা মন্দির৷ যেমন এই বাংলা চালা, যে নকশা উঠে এসেছে গ্রামবাংলার খড়ের চাল থেকেই৷
ছবি: DW/S.Bandopadhyay
ইসলামি প্রভাব
সুলতানি আমলে ইঁটের খিলান আর গম্বুজ তৈরির যে স্থাপত্যরীতি, তার প্রভাবও স্পষ্ট বিষ্ণুপুরের মন্দিরের খিলানের কাজে৷
ছবি: DW/S.Bandopadhyay
স্থাপত্য দক্ষতা
১৭ এবং ১৮ শতকে এইসব পোড়ামাটির মন্দির যাঁরা তৈরি করেছিলেন, সেই স্থপতিরা যে কী অসামান্য দক্ষতার অধিকারী ছিলেন, তা বোঝা যায় ক্ষয় ধরা ইটের পাঁজার দিকে তাকালেও৷
ছবি: DW/S.Bandopadhyay
পোড়ামাটির শিল্প
শুধু স্থাপত্যরীতিই নয়, বিষ্ণুপুরের মন্দির প্রসিদ্ধ তার গায়ের পোড়ামাটির টালির কারুকাজের জন্যেও৷ পুরাণের কাহিনি থেকে যুদ্ধবিগ্রহের ইতিহাস, শিকারের গল্প – সবই বলা হয়েছে তাতে৷
ছবি: DW/S.Bandopadhyay
জাতীয় সম্পদ
এমনই চমৎকারিত্ব পোড়ামাটির টালির এই রিলিফের কাজের, ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ বিভাগ সবকটি মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছে নিজেদের হাতে৷
ছবি: DW/S.Bandopadhyay
কৃষ্ণের জীবন
বিষ্ণুপুরের এসব মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন মল্ল রাজারা৷ তাঁরা ছিলেন বৈষ্ণব৷ তাই মন্দিরের কারুকাজে কৃষ্ণজীবনের প্রাধান্য৷
ছবি: DW/S.Bandopadhyay
আন্তর্জাতিক পরিচিতি
টেরাকোটার মন্দির আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দিয়েছে বিষ্ণুপুরকে, বাংলার শিল্পকে৷ বিশ্বের দরবারে বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতির অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠেছে এই টেরাকোটা শিল্প৷