1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হারিয়ে যাচ্ছে ঢালচর

১৫ জুন ২০২২

বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে উপকূলীয় দ্বীপ ঢালচর৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেঘনা নদীর ভাঙনের হার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়ায় দ্রুত শরণার্থী হবার শঙ্কায় হাজারো মানুষ৷

Bangladesch Dhalchar Island
ছবি: Zobaer Ahmed/DW

বাংলাদেশের দক্ষিণে যেখানে মেঘনা মিশেছে বঙ্গোপসাগরে সেখানে অবস্থান এই ছোট্ট দ্বীপ ঢালচরের৷ দ্বীপটি আজ ক্ষয়ে যাচ্ছে৷ এখন চুলা বানাচ্ছেন দ্বীপের বাসিন্দা হালিমা বিবি৷ বাকি সব গোছগাছ শেষ আগেই৷ গেল দেড় দশক যে বাড়িটিকে নিজের ভিটে ভাবতেন, আর ক'দিনেই ছেড়ে যেতে হবে তাকে৷ হালিমা বলেন, ‘‘ঐ যে নদী চলে এসেছে ঘরের কাছে৷ আর এখানে থাকা যাবে না৷ রাতে ঢেউয়ের আওয়াজে ঘুমোতে পারি না৷ ওপাশে সব বাড়ি ভেঙে নিয়ে গেছে৷ শুধু দু'তিনটি বাকি৷'' 

এই দ্বীপে মানুষের বাস পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে৷ হালিমা একেবারে শুরুর দিকের বাসিন্দা৷ ভিটাছাড়া হয়েছেন এর আগেও৷ হালিমার মতো ভিটের খোঁজ জিজ্ঞেস করলে এখানকার বেশিরভাগই নদীর দিকে আঙ্গুল তুলে দেখান৷ যেমন আলাউদ্দিন৷ তিনি এখানে এসেছেন ৪৭ বছর আগে৷ বছর তিন আগে নদী গিলে খেয়েছে তার তিন একর জমি৷

‘‘ঐ যে নৌকা দেখতে পাচ্ছেন৷ ওখানে ছিল৷ নদী যখন আমার ভিটে ভাঙতে শুরু করে তখন আমি পরিবার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই৷ পরদিন ফিরে এসে দেখি সব তলিয়ে গেছে,'' বলেন আলাউদ্দিন৷

 এখন আলাউদ্দিন থাকেন চরের আরেক প্রান্তে৷ তবে সেখানেও কতদিন থাকতে পারবেন জানেন না৷

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় বন্যা, ভাঙন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার বেড়েছে৷ তাই ঝুঁকিও বেড়েছে বাংলাদেশের পুরো উপকূলের৷ উপকূল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগ রয়েছে৷ তবে পরিষ্কার কোন উদ্যোগ নেই ঢালচরের মতো দ্বীপগুলোকে বাঁচানোর৷

মেঘনার ভাঙনে বিপন্ন যাদের জীবন

04:39

This browser does not support the video element.

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ফজলুর রশিদ বলেন, ‘‘আমরা সুরক্ষার ব্যবস্থা করব, যেন আর ক্ষয় না হয়৷ আর পেছনের দিকে ও সীমানাগুলোতে আমরা যদি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে হিসেব নিকেষ করে আমরা বাঁধ করে ফেলতে পারি, তাহলে ভাঙন রোধ করে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে যেন না হারায় সে ব্যবস্থা করতে পারি৷''

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ সালিমুল হক বলেন, ‘‘আমাদের মেনে নিতে হবে যে, কিছু কিছু অঞ্চলে আমরা ঠেকা দিতে পারব না৷ সমুদ্রের নোনা পানি ঢুকে আসবে, ওখানকার লোকদের সেখানে বাস করার পরিস্থিতি থাকবে না৷ তাদের চলে যেতেই হবে৷ ওরা কোথায় যাবে, এখন আমাদের তা চিন্তা করতে হবে৷'' 

সময় গড়িয়ে যাচ্ছে৷ দ্বীপটির যে অংশে জঙ্গল সেটিই মূলত টিকে আছে৷ অনেকের ভয়, যদি জঙ্গল কেটে ঘর তৈরি করা হয়, তাহলে হয়তো সে অংশও ভাঙতে থাকবে৷ চরের যেসব বাসিন্দার সামর্থ্য আছে, তারা অন্য কোথাও জমি কিনে চলে গেছেন৷ কিন্তু হালিমা বা আলাউদ্দিনের মতো গরিবরা পড়ে আছেন এখানেই৷ 

হালিমা বলেন, ‘‘এখন তাড়ুয়া (দ্বীপের আরেকটি অংশ) গিয়ে থাকব দু'চার বছর৷ এরপর আল্লাহ কোথায় নেন জানি না৷ কোন দেশের বাড়ি বা কোন জায়গা জমি নেই৷ নদীর মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছি৷''

‘‘এরপর মনে করেন অন্য কোথাও গিয়ে থাকব৷ আল্লাহ যেখানে নেন৷ আর কী করব?'' বলেন আলাউদ্দিন৷

বিলীন হতে থাকা এই চরের মানুষগুলোর মনে এখন একটাই প্রশ্ন, কোনভাবে কি বাঁচানো যায় না এই চরকে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ