হারিয়ে যেতে বসেছে মাওরি ভাষা
২১ অক্টোবর ২০১০বয়স্ক মাওরিরা যারা এই ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন তাঁরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছেন৷ অল্প বয়সিদের এই ভাষা শেখানোর মতো এখন আর তেমন কেউ নেই৷ ঐতিহাসিক ‘মাওরি অধিকার' নিয়ে সরকারের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে ওয়েটাংগি ট্রাইবুনাল৷ সম্প্রতি তাদের একটি প্রতিবেদনে এই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে৷
১৮৪০ সালে উপসাগরীয় দ্বীপটিতে ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার প্রতিনিধিরা বে অফ আইল্যান্ডস'এর ওয়েটাংগি'তে মাওরিপ্রধানদের সঙ্গে এক চুক্তি সই করেছিলেন৷ ঐ চুক্তিতে তারা লিখিতভাবে ভাষাসহ সকল মাউরি টায়োংগা বা সম্পদ রক্ষা কারার অঙ্গীকার করেছিলেন৷ এরপর কয়েক বছরে নতুন এই ব্রিটিশ উপনিবেশে অভিবাসীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ ১৮৫৮ সালেই প্রথম আদমশুমারিতে দেখা যায়, মাওরি জনসংখ্যা ছিল ৫৬ হাজার৷ মাওরি ভাষাকে পেছনে ফেলে দেয় ইংরেজি ভাষা এবং দিনদিন তা সংখ্যালঘুদের ভাষায় পরিণত হয়ে যায়৷
এর এক দশকেরও কম সময় পরে ‘নেটিভ স্কুলস অ্যাক্ট' নামে এক অধ্যাদেশ জারি করা হয় যেখানে বলা হয়, একমাত্র ইংরেজিই হবে মাওরি শিশুদের শিক্ষার মাধ্যম৷
১৯৮৭ সালে যদিও মাওরি'কে অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়, মাওরি আদিবাসীদের বেতার স্টেশন ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সম্প্রচার শুরু করতে পারেনি৷ এমনকি ২০০৪ সাল পর্যন্ত মাওরি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য সরকার কোনো অর্থবরাদ্দ দেয়নি৷
বিভিন্ন সাইন বোর্ড ও নোটিশে ইংরেজি ও মাওরি দু'টি ভাষা একসঙ্গে খুব কমই দেখা যায়৷ ওয়েটাংগি ট্রাইবুনাল বলেছে, আদিবাসী মানুষদের এই ভাষাকে বাঁচাতে হলে দেশটাকে দ্বিভাষিক করে তোলার ক্ষেত্রে সরকারকে আরও অনেক ব্যবস্থা নিতে হবে৷
মাওরি বিষয়ক মন্ত্রী পিটা শার্পল্স বলেছেন, সরকার অবশ্যই আরো অনেক কিছুই করতে পারে৷ তবে কিনা এই ভাষাকে পুনরুজ্জীবিত করা মাওরিদেরই দায়িত্ব৷ মাওরি শিক্ষাবিদ ও এনগাপুহি উপজাতির নেতা ডেভিড ব়্যাংকিন বলছেন, ‘‘পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের মধ্যেই মাওরি ভাষা হারিয়ে যাবে৷ একে আর বাঁচানো যাবেনা৷ এমনকি আমাদের সন্তান ও নাতিনাতনিদের মধ্যে অল্প কয়েকজন যারা এই ভাষা শিখছে তারা ইংরেজি আরও ভালো পারে৷ এটাই মাউরির ভবিষ্যত এবং আমাদেরকে অচিরেই তা দেখতে হবে৷''
প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক