জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অফ ল’ ডিগ্রি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়৷ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দেয়া ম্যার্কেলের ট্রাম্পবিরোধী বক্তব্য প্রশংসা কুড়িয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান চ্যান্সেলর অবশ্য তাঁর বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ করেননি৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রটেকশনিজম বা সংরক্ষণনীতি আমাদের সমৃদ্ধির ভিত্তির জন্য হুমকিস্বরূপ৷’’ এর পরিবর্তে নতুন পথ অনুসরণ করার আহ্বান জানান তিনি৷ ‘‘একপাক্ষিক ব্যবস্থার পরিবর্তে বহুপাক্ষিক, জাতীয়র পরিবর্তে আন্তর্জাতিক, স্বাতন্ত্র্যবাদীর পরিবর্তে বহির্মুখী– অর্থাৎ সংক্ষেপে আমাদের একার পরিবর্তে একসঙ্গে কাজ করতে হবে,’’ হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীদের বলেন জার্মান চ্যান্সেলর৷
তবে বক্তব্যের সময় ম্যার্কেল সবচেয়ে বেশি প্রশংসা পান তখন, যখন তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অবশ্যই অন্যের এবং নিজেদের সঙ্গে সৎ থাকতে হবে, যার অর্থ হচ্ছে, মিথ্যাকে সত্য না বলা এবং সত্যকে মিথ্যা না বলা৷’’ ম্যার্কেলের এই কথার পর উপস্থিত শ্রোতারা দাঁড়িয়ে হাততালি দেন৷
বিশ্বখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬৮তম সমাবর্তন বক্তব্য ইংরেজিতে শুরু করেন ম্যার্কেল৷ তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন অনুবাদকের সহায়তা নিয়ে তিনি জার্মান ভাষায় বক্তব্য চালিয়ে যান৷
বক্তব্যের শুরুতে ম্যার্কেল পূর্ব জার্মানিতে তাঁর বেড়ে ওঠা ও বার্লিন প্রাচীর নিয়ে কথা বলেন৷ বক্তব্যের অবশিষ্ট অংশে তিনি বিভিন্ন সময় ‘মানুষের মনের প্রাচীর, অজ্ঞতা ও সঙ্কীর্ণ মানসিকতার প্রাচীর’ নিয়ে কথা বলেন৷ এই ধরনের প্রাচীর ভেঙে ফেলতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেন ম্যার্কেল৷
নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবের কারণে যে সম্ভাবনা ও হুমকি তৈরি হয়েছে সে সম্পর্কেও শিক্ষার্থীদের সজাগ থাকতে বলেন জার্মান চ্যান্সেলর৷
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে ব্যক্তিগতভাবে যা করা সম্ভব তাই করার আহ্বান জানান ম্যার্কেল৷ এক্ষেত্রে তাঁর নিজেরও যা করা সম্ভব তাই করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন তিনি৷
জেডএইচ/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীর ব্যক্তিগত জীবন
তিনি সুপার মার্কেটে বাজার করেন, নাপিতের দোকানে অন্যদের পাশে বসে অপেক্ষা করেন, এমনকি সরকারি ভবন নয়, নিজের বাড়িতে থাকাই তাঁর পছন্দ৷ তিনি আর কেউ নন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
ম্যার্কেলের নাপিত উডো ভালৎস
২০১৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ উডো ভালৎস (ছবিতে মাঝখানে) গত দশ বছর ধরে ম্যার্কেলের চুল কাটেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘চ্যান্সেলার হওয়ার আগেও তিনি যেমন সেলুনে অন্যদের সাথে বসতেন, এখনও তাই করেন৷ তাঁকে কোনো বিশেষ ছাড় দেওয়া হয় না৷ অর্থাৎ তিনিও অন্যদের মতো ৬৫ ইউরো দেন৷ একদম আগের মতো আছেন তিনি৷’’
ছবি: picture-alliance/schroewig
নিজেদের বাড়িতেই থাকেন
বার্লিনের ‘মিউজিয়াম আইল্যান্ড’-এর একটি জাদুঘরের কাছে নিজস্ব, কিন্তু পুরানো একটা ফ্ল্যাটে থাকেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও তাঁর স্বামী ইওয়াখিম সাউয়ার৷ শুধু নিরাপত্তার জন্য দু’জন পুলিশ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে৷ এছাড়া কিন্তু সব কিছু আগের মতো আছে৷ এই যেমন, ছুটি পেলে আজও কাছের উকারমার্ক নামের ছোট্ট শহরে চলে যান দু’জনে৷ সেখানেই তিনি বড় হয়েছেন!
ছবি: picture-alliance/dpa
নিজেই বাজার করেন
চ্যান্সেলার ম্যার্কেল সাধারণ সুপার মার্কেটেই বাজার করতে যান, বিশেষ করে যেগুলো একটু বেশি সময় খোলা থাকে৷ বাজার করা সম্পর্কে আঙ্গেলা ম্যার্কেল একবার এক দোকানিকে বলেছিলেন, ‘‘আমার এই অল্প অবসর সময়ে বাজার করার মতো সব কাজই করার চেষ্টা করি, যেমনটা আগে করতাম৷ অবশ্য যখন নিজে পারি না, তখন বাজারের লিস্ট তৈরি করে স্বামীর হাতে তুলে দেই৷’’
ছবি: picture-alliance/Markus C. Hurek
তিনিই ‘চ্যান্সেলার’
দোকানের একজন নারী কর্মী জানান, ‘‘চ্যান্সেলার ম্যার্কেল অন্যান্য ক্রেতার মতোই কিছু খুঁজে না পেলে কোথায় কী রাখা আছে, তা সাধারণ গৃহিনীদের মতোই জানতে চান৷ তাঁর নিরাপত্তার জন্য দেহরক্ষী সাথে না থাকলে কেউ হয়ত বুঝবেই না যে তিনিই আমাদের ‘অ্যাঞ্জি’৷’’ কর্মীটি আরো জানান, ‘‘শত ব্যস্ততার মধ্যেও কিন্তু চ্যান্সেলারের মুখে হাসিটুকু লেগে থাকে, যা ভীষণ ভালো লাগে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eisele
চ্যান্সেলারের পছন্দ ফ্রেঞ্চ চিজ
জার্মান চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ভীষণ পছন্দ ফ্রেঞ্চ চিজ বা পনির, যা তিনি নিজেই কিনতে ভালোবাসেন৷ আর সে’কথাই গর্ব করে জানান ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের একজন কর্মী৷
হাতে দামি ব্যাগ নেওয়ার চেয়ে ভালো খাওয়া-দাওয়া ম্যার্কেলের কাছে বেশি গুরত্বপূর্ণ৷ যখন তিনি রান্না করার সময় পান না, তখন স্বামী ইওয়াখিম সাউয়ারকে নিয়ে বার্লিনের ‘কাসামবালিস’ নামের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যান৷ দামি খাবারের চেয়ে অবশ্য ‘গ্রিক মিটবল’-এর মতো সাধারণ খাবারই বেশি পছন্দ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই নারীর৷
ছবি: picture alliance/Markus C. Hurek
বিলাসিতা পছন্দ নয়
অন্যান্য রাজনীতিকদের মতো বিলাসিতা আঙ্গেলা ম্যার্কেলের তেমন পছন্দ নয়৷ বরং সাধারণ জীবনযাপনই তাঁর বেশি ভালো লাগে৷ তাই তিনি যতটা সম্ভব সেভাবেই চলার চেষ্টা করেন স্বামীকে নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Fusco
চাই মুক্ত হাওয়া আর হাঁটা-চলা
আঙ্গেলা ম্যার্কেল সময় সুযোগ পেলে স্বামীকে সাথে নিয়ে হাঁটতে বের হন৷ শারীরিক এবং মানসিকভাবে ‘ফিট’ থাকতে মুক্ত বাতাসে হাঁটা-চলা যে ভীষণ জরুরি – সেটা তিনি যেন সকলে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন৷ এই না হলে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/AP Photo/C. De Luca