হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থ বন্ধ করে ট্রাম্পের শাস্তি
১৫ এপ্রিল ২০২৫
ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তারা ফেডারেল ফান্ড থেকে হার্ভার্ড বিশ্বববিদ্যালয়কে দেয়ার জন্য রাখা ২২০ কোটি ডলার ফ্রিজ করেছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্য়ালয় শর্ত না মানায় ফেডারেল ফান্ড থেকে দেয় অর্থ ফ্রিজ করলো ট্রাম্প প্রশাসন। ছবি: Nicholas Pfosi/REUTERS
বিজ্ঞাপন
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হোয়াইট হাউসের একগুচ্ছ দাবির তালিকা মানতে চায়নি। তারপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ছয় কোটি ডলারের একটি চুক্তিও স্থগিত রাখা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধের আবহে অ্যামেরিকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ হয়েছে। সে সব জায়গায় ইহুদি-বিদ্বেষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঠিকভাবে কাজ করছে না বলে তাদের অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে ইহুদি-বিদ্বেষ বন্ধ করতে কী কী করতে হবে, তার একটা তালিকা প্রশাসনের তরফে পাঠানো হয়। সেখানে বেশ কিছু শর্তের কথা বলা হয়েছিল। না মানলে আর্থিক সাহায্য বন্ধের হুমকিও দেয়া হয়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্পপ্রশাসনের এই সিদ্ধন্ত মানতে চায়নি। শিক্ষা দপ্তরের পাঠানো শর্ত-সহ তালিকায় বলা হয়েছিল, ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রশাসনে, নিয়োগের ক্ষেত্রে এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় বদল আনতে হবে। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সন্ধ্যায় ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
হার্ভার্ড জানিয়ে দেয়, হোয়াইট হাউস তাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।
ট্রাম্পের শুল্কের চাপ বিশ্বব্যাপী যেমন প্রভাব ফেলতে পারে
ঘোষণার এক সপ্তাহ পর ৯০ দিনের জন্য পারস্পরিক শুল্ক স্থগিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ ছবিঘরে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কোথায় কী প্রভাব ফেলতে পারে তার বিস্তারিত...
ছবি: Mark Schiefelbein/AP Photo/picture alliance
শুল্কের ঘোষণা
২ এপ্রিল বিশ্বের সব দেশের পণ্য আমদানির উপর নানা হারে বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ ঘোষণার এক সপ্তাহ পর অবশ্য চীন, ক্যানাডা ও মেক্সিকো ছাড়া বাকি রাষ্ট্রগুলোর উপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প৷ ৯০ দিন পর যদি এই শুল্ক তিনি আবার আরোপ করেন, তাহলে ভোক্তা পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতি- সব জায়গাতেই এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের৷
ছবি: Jim Lo Scalzo/UPI Photo/Newscom/picture alliance
মার্কিন শুল্কের ইতিহিস
অ্যামেরিকার বাণিজ্যের শুরুর দিক থেকেই শুল্ক আরোপের ইতিহাস রয়েছে৷ দেশটি ১৮২০ সালে বিদেশি পণ্যের উপর ৩০ ভাগের মতো শুল্ক আরোপ করেছিল৷ ১৯৩০ সালে ফেডারেল ইনকাম ট্যাক্স দপ্তর গঠনের পর থেকে শুল্ক কমাতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র৷ ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে শুল্ক নিয়ে চীনের সাথে বাদানুবাদ শুরু হয়৷ ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে, অর্থাৎ, ১৮২০ সালের দুইশ বছর পর মার্কিন শুল্কের হার আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে৷
ছবি: Liu Jie/Xinhua/IMAGO
শুরু হয় ‘শুল্ক-যুদ্ধ’
ডনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ করে, যা আগে ছিল ৩৪ শতাংশ৷ পাল্টা জবাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ চীনা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ ট্রাম্পের প্রাথমিক ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের উপর শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নও৷ যদিও ট্রাম্পের স্থগিতাদেশের ঘোষণায় পিছু হটে ইইউ৷
ছবি: Mark Schiefelbein/AP Photo/picture alliance
তেলের দাম, শেযার বাজার
ট্রাম্পের ঘোষণার সাথে সাথেই অস্থিরতা দেখা যায় তেল ও শেয়ারের বাজারে৷ তেলের দাম কমেছে প্রতি ব্যারেলে ৫০ ডলার পর্যন্ত৷ ভয়াবহ পরিস্থিত তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজারে৷ মন্দার আশঙ্কায় ট্রাম্পের ঘোষাণার প্রথম দুই দিনে শুধুমাত্র মার্কিন শেয়ারবাজার ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার হারিয়েছে৷
ছবি: Mark Ralston/AFP
অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা
পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করা হলে চলতি বছরের শেষের দিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান জে পি মর্গ্যান জানায়, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর চলতি বছরের শেষ নাগাদ মন্দার শঙ্কা ৬০ ভাগে দাঁড়িয়েছে৷ অর্থনৈতিক মন্দা চরম পর্যায়ে গেলে ভূগতে হবে বিশ্বের প্রায় সব মানুষকেই৷
ছবি: Gregor Fischer/Getty Images
প্রবৃদ্ধি কমার আশঙ্কা
শুল্ক আরোপের প্রভাব পড়বে আমদানি-রপ্তানিতে৷ এর ফলে বিভিন্ন দেশের আশানুরূপ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব না-ও হতে পারে৷ ২ এপ্রিল ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর ইউরোপের দেশ ইটালি চলতি বছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এক দশমিক দুই থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ছয়-এ নামিয়ে এনেছিল৷ অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক আরোপের ফলে চলতি বছর জার্মানির জিডিপি প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক এক ভাগে নেমে আসতে পারে৷
ছবি: natatravel/Depositphotos/IMAGO
ক্রেতাদের ভোগান্তি
শুল্ক আরোপের প্রভাব পণ্যের দামের উপর পড়বেই৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য প্রবেশে অধিক শুল্কের মাশুল সংশ্লিষ্ট দেশের ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলবে৷ শুধু তাই নয়, পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন শুল্ক বাড়ানোয় তার প্রভাবও ক্রেতাদের উপর পড়বে৷
ছবি: Frank Hoermann/SVEN SIMON/IMAGO
ক্ষতিগ্রস্ত হবে উৎপাদন
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাণিজ্যে উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, এমনটাই মনে করেন সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনাভির্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জান-ইন চোং৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, এই শুল্ক বিশ্বব্যাপী পণ্যের চাহিদার উপর প্রভাব ফলেবে, যার প্রভার পড়বে উৎপাদনে৷
ছবি: CFOTO/NurPhoto/IMAGO Images
বাজারে অবস্থান হারাতে পারে অনেক দেশ
ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো, যাদের রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, সেই দেশগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বাজারে তাদের অবস্থান হারাতে পারে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের৷ এর প্রভাব এমন দেশগুলোর অর্থনীতিতে মারাত্মকভাবে পড়তে পারে৷
ছবি: Joy Saha/ZUMA Press Wire/picture alliance
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও বাণিজ্য জোটে প্রভাব
বাণিজ্য ক্ষত্রে অনিশ্চিয়তা ফলে অনেক দেশ নতুন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগী খুঁজে পাওয়ার দিকে ধাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা অনেক বিশেষজ্ঞের৷ এরই মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে চীনের সাথে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছে অনেক দেশ- এমনটাই দাবি সিঙ্গাপুরের গবেষণা সংস্থা আইএসইএএস-ইউসোফ ইশাক ইনস্টিটিউটের এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টিনা ফং৷
ছবি: Ute Grabowsky/photothek/picture alliance
অসমান্তরাল বাণিজ্য যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে যেমন ক্ষতির মুখে ফেলবে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ঠিক ততটাই ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ এক নিবন্ধে বিজনেস হার্ভার্ড রিভিউ ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে ৩৬০ ডিগ্রির বাণিজ্য যুদ্ধ বলে মন্তব্য করে৷
ছবি: Anna Moneymaker/Getty Images
11 ছবি1 | 11
হার্ভার্ডই প্রথম
ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ উপেক্ষা করে নীতি পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত হার্ভার্ডই প্রথম নিলো। তাদের দাবি, ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি মানা হলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে চলে যাবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের ক্যাম্পাসে ইহুদি পড়ুয়াদের রক্ষা করতে পারছে না।
সোমবার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন এম গার্বার বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন যে শর্ত দিয়েছে তা মানা হলে শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতার সঙ্গে আপস করা হবে। ওই শর্তগুলি সাংবিধানিক অধিকার ভাঙছে। তার স্পষ্ট মত হলো, "বিশ্ববিদ্যালয় নিজের স্বাধীনতা হারাতে চাইবে না বা নিজের সাংবিধানিক অধিকারও ছাড়বে না।”
তিনি বলেছেন, ইহুদি-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইকে কখনোই হালকাভাবে নেয়ার প্রশ্ন নেই।
প্রশাসনের বক্তব্য
গার্বারের এই সিদ্ধান্ত জানার পরই শিক্ষা দপ্তর হার্ভার্ডের জন্য ফেডারেল ফান্ডের অর্থ বন্ধ করে দেয়। চুক্তি স্থগিত রাখে।
এরপর এক বিবৃতি দিয়ে শিক্ষা দপ্তর বলে, শিক্ষা বাধাপ্রাপ্ত হবে, এমন কোনো অবস্থা মানা যায় না। ইহুদিদের বিরুদ্ধে হয়রানিও কোনোভাবে মানা যায় না। এখনো সময় আছে, যদি করদাতাদের অর্থ পেতে চায় তাহলে এই প্রমুখ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সমস্যাগুলিকে গুরুত্ব দিক এবং অর্থপূর্ণ পরিবর্তন করুক।