যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন কেয়ার স্টারমার। রেকর্ড ভোট নিয়ে বিরাট জয়ের পথে লেবার পার্টি।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে হার স্বীকার করে নিলেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বলেছেন, ‘‘দলের এই হারের দায় আমার। আমি দুঃখিত। কেয়ার স্টারমারকে অভিনন্দন।’’ বস্তুত, ম্য়াজিক ফিগার পার করে বিপুল জয়ের পথে লেবার পার্টি। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন কেয়ার স্টারমার। তিনি লেবার পার্টির বর্তমান প্রধান।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমনস। ৬৫০ সিটের হাউস অফ কমনসে ৪১০টি আসনে এগিয়ে আছে লেবার পার্টি। প্রতিদ্বন্দ্বী দলের চেয়ে ২৯১ টি আসনে এগিয়ে আছে তারা। বুথ ফেরত সমীক্ষায় এমনই ফলাফলের ইঙ্গিত পাওয়া গেছিল। বস্তুত, ইতিমধ্যেই ফলাফল ঘোষণাও শুরু হয়ে গেছে। লেবার পার্টি ৪১০ টি আসনে এগিয়ে। কনসারভেটিভরা এগিয়ে ১১৯টি আসনে। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার কেয়ার স্টারমার তার লন্ডন আসনে বিপুল ভোটে জয়ী ঘোষিত হয়েছেন। তিনি এখন লেবার পার্টির প্রধান। সব ঠিক থাকলে তিনিই হবেন যুক্তরাজ্য়ের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাজ্যে হঠাৎ ভোট, প্রচারণা শুরু
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তার নিজ দলের সাংসদসহ অনেককে অবাক করে ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছেন৷ ৪ জুলাইয়ের ভোট সামনে রেখে এখন পুরো দেশ চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন দলের নেতারা৷
ছবি: Kin Cheung/AP Photo/picture alliance
ভোটের তারিখ ঘোষণা
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ব্রিটেনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা৷ তবে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক প্রায় ছয় মাসে আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন৷ ৪ জুলাই ভোটগ্রহণ হবে বলে বুধবার ঘোষণা দেন তিনি৷ বিষয়টি তার দলের অনেক সাংসদকেই অবাক করেছে৷
ছবি: Hollie Adams/REUTERS
নির্বাচনি প্রচারণা শুরু
বুধবার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার থেকেই প্রচারণা শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো৷ শুক্রবার সংসদ মুলতবি করা হবে৷
ছবি: Henry Nicholls/AP Photo/picture alliance
এত আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য কারণ
বিশ্লেষকেরা নানা কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন৷ একদল বলছেন, সুনাক যেদিন ভোটের ঘোষণা দেন সেদিন ব্রিটেনে মূল্যস্ফীতির হারের সবশেষ তথ্য বের হয়েছে৷ এতে দেখা যাচ্ছে, এই হার এখন ২.৩ শতাংশ৷ ২০২২ সালের অক্টোবরে সুনাক যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখন সেটি ছিল প্রায় ১১ শতাংশ৷ তবে বিরোধীরা বলছেন, সাগর পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে পৌঁছা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর বিষয়টি ব্যর্থ হওয়ার আগেই নির্বাচন করতে চান সুনাক৷
ছবি: Kin Cheung/AP Photo/picture alliance
সুনাক কী বলছেন?
এত আগে ভোটের তারিখে ঘোষণার মাধ্যমে তিনি সাহস দেখিয়েছেন বলে জানান ঋষি সুনাক৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত৷ অনিশ্চিত সময়ে নিরাপত্তার জন্য সাহসী সিদ্ধান্তের দরকার হয়, যেটা আমার আছে৷’’ তবে অন্যরা এই সিদ্ধান্তকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘বোকামি’ বলছেন৷
ছবি: Henry Nicholls/AP Photo/picture alliance
জরিপের ফল
ভোটের তারিখে ঘোষণার পর করা প্রথম জরিপ বলছে, বিরোধী লেবার পার্টির প্রতি ৪৪ শতাংশ ভোটারের সমর্থন আছে৷ সুনাকের কনজারভেটিভ দলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ২৭ শতাংশ ভোটার৷ এরপর আছে ডানপন্থি দল রিফর্ম ইউকে পার্টি (১০%), লিবারেল ডেমোক্রেটস (৯%) ও গ্রিন পার্টি (৫%)৷ অর্থাৎ প্রায় ১৪ বছর পর লেবার দলের সরকারে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Jacob King/PA Wire/dpa/picture alliance
‘বিশৃঙ্খলা থামাবো’
লেবার পার্টি বলছে, টোরি শাসনামলে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি হয়েছে তাতে পরিবর্তন আনবে তারা৷ নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করে লেবার পার্টির প্রধান কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘‘আমরা বিশৃঙ্খলা বন্ধ করবো৷’’ কনজারভেটিভরা যদি আবারও ক্ষমতায় যায় তাহলে কোনোকিছুতে পরিবর্তন আসবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি৷
ছবি: Gareth Fuller/AP Photo/picture alliance
কনজারভেটিভদের হুমকি হতে পারে রিফর্ম ইউকে
জরিপে তিন নম্বরে থাকা দল ডানপন্থি পপুলিস্ট ঘরানার রিফর্ম ইউকে পার্টি ইংল্যান্ডের সাবেক শিল্পাঞ্চল এলাকায় কনজারভেটিভ পার্টির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে৷ নাইজেল ফ্যারাজের সাবেক ব্রেক্সিট পার্টি হচ্ছে রিফর্ম ইউকে পার্টি৷ এর বর্তমান প্রধান রিচার্ড টাইস৷ তিনিও নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন৷
ছবি: Kin Cheung/AP Photo/picture alliance
7 ছবি1 | 7
জয়ী ঘোষণা হওয়ার পর স্টারমার বলেছেন, ‘‘আপনারা ভোট দিয়ে আমাদের জিতিয়েছেন। এবার আমাদের আপনাদের জন্য় কাজ করতে হবে।’’ ১৯৯৭ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাজ্যের ভোটে এত ভালো ফলাফল করতে চলেছে লেবার পার্টি।
অন্য়দিকে, ভয়াবহ ফলাফলের মুখে ঋষি সুনকের কনসারভেটিভ পার্টির। সব মিলিয়ে তারা জিততে পারে ১৩১ টি আসন। লিবারাল ডেমোক্র্য়াট এবং রিফর্ম পার্টিও আগের চেয়ে আসন সংখ্যা বাড়াতে পারে। ব্রেক্সিটের ফসল নাইজেল ফারেজের রিফর্ম ইউকে দল সব মিলিয়ে ১৩টি আসনে জয়লভা করতে পারে।
অ্যাশফিল্ড আসনে লড়াই করেছেন রিফর্ম পার্টির লি অ্যান্ডারসন। এর আগে ২০১৯ সালে তিনি কনসারভেটিভ পার্টির সদস্য় ছিলেন এবং এই আসন থেকেই জিতেছিলেন। এবারেও ওই আসন থেকে রিফর্ম পার্টির হয়ে জয়লাভ করেছেন তিনি।
ফারেজ বলেছেন, তাদের এই ফল বুঝিয়ে দিচ্ছে মানুষ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। ১৩টি আসন নিয়ে পার্লামেন্টে চতুর্থ বৃহত্তম দলের জায়গা পাবে রিফর্ম পার্টি।
ভোটের ফলাফলে একটি বিষয় স্পষ্ট, মানুষ সুনাকের সরকারকে সম্পূর্ণভাবে নাকচ করে দিয়েছে। ঐতিহাসিককালের মধ্যে এত খারাপ ফলাফল করেনি কনসারভেটিভ পার্টি। যার দায় সুনাককে নিতে হবে। ভোটদাতারা বলেছেন, অর্থনীতির উন্নয়ন এবং আরেকটু ভালো জীবনযাপনের কথা মাথায় রেখে তারা ভোট দিয়েছেন। সুনাক যেভাবে অর্থনীতি সামলেছেন, তার বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা। অন্য়দিকে লেবার পার্টিও নিজেদের আগের অবস্থান থেকে খানিকটা সরে এসেছে বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে লেবার পার্টি যতটা বাম মনোভাবাপন্ন ছিল, স্টারমার ততটা রক্ষণশীল বাম নন বলেই তাদের বক্তব্য়। ইতিমধ্যেই করবিনের কাশ্মীর অবস্থান থেকে সরে এসেছেন স্টারমার। ইস্তেহারে জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রক্ষা করা তার অন্য়তম লক্ষ্য।