গুলশান হামলার পর আটক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম ও ক্যানাডার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ খান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নাগালের মধ্যে আছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা৷
বিজ্ঞাপন
ঐ ঘটনার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ‘কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম' ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘হাসনাত করিম ও তাহমিদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ আমরা তাদের একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছি৷'' আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তাঁরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাগালের মধ্যেই আছেন, প্রয়োজনে তাঁদের আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷''
মনিরুল ইসলাম আরো দাবি করেন, ‘‘হয়তো যে-কোনো কারণে তাঁরা বাসায় অবস্থান না করে অন্য জায়গায় অবস্থান করছেন৷ তাঁরা কোথায় আছেন, এটা মোটামুটি আমাদের ধারণায় রয়েছে৷ আমাদের ওয়াচের মধ্যেই আছে, সার্ভিলেন্সের ভেতরেই রয়েছে৷ আমরা চাইলে তাঁদের পাব৷''
এই ব্যাপারে হাসনাত ও তাহমিদের পরিবারের সঙ্গে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ এর আগে দুই পরিবারের পক্ষ থেকেই দাবি করা হয়েছিল যে, হাসনাত ও তাহমিদ কোথায় আছেন তা তাঁরা জানেননা৷
কোথা থেকে অর্থ পাচ্ছে আইএস?
পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি, অধিকৃত এলাকায় কর চাপানো এবং প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি করে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট প্রায় ২০০ কোটি ডলার একত্র করেছে৷ তাতে তাদের আরও ২ বছর চলে যাবার কথা৷
ছবি: picture alliance/abaca
বেআইনি তেল বিক্রি
বেআইনি ভাবে পেট্রোলিয়াম বিক্রি আইএস-এর আয়ের প্রধান উৎস৷ সিরিয়া ও ইরাকে বেশ কিছু বড় তৈলকূপ আপাতত তাদের দখলে৷ মূলত তুরস্কের মধ্য দিয়েই তারা চোরাচালানের কাজ চালিয়ে থাকে৷ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, কালোবাজারে তেল বিক্রি করে আইএস-এর মাসে প্রায় ৪ কোটি ডলার আয় হয়৷
ছবি: Getty Images/J. Moore
ব্যাংক ডাকাতি
সিরিয়া ও ইরাকে কোনো এলাকা দখলের পর আইএস সবার আগে ব্যাংকগুলি কবজা করে ফেলে৷ মার্কিন প্রশাসনের ধারণা, এভাবে তারা ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছে৷ শুধু মোসুল শহর দখল করেই তারা নাকি ৬২ কোটি ডলার লুট করেছিল৷ বছরে প্রায় ৫০,০০০ জিহাদি কর্মীর বেতন দিতে এই অর্থ যথেষ্ট৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
কর আদায় ও চাঁদাবাজি
আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ৫ থেকে ১৩ শতাংশ আয়কর দিতে হয়৷ জার্মান সরকারের সূত্র অনুযায়ী, আইএস অ-মুসলিমদের কাছ থেকে জিজিয়া করও আদায় করে৷ তাছাড়া চাঁদাবাজিও তাদের আয়ের আরেকটি উৎস৷
ছবি: DW/Andreas Stahl
প্রাচীন সামগ্রী বিক্রি
‘জিহাদিরা’ আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করতে অভ্যস্ত৷ তবে বেশি দামি অ্যান্টিক সম্পদ সযত্নে সরিয়ে ফেলে কালোবাজারে বিক্রি করে তারা৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে পিছপা হয় না এই গোষ্ঠী৷ তবে বিক্রিমূল্যের সঠিক অঙ্ক জানা নেই৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Eid
মুক্তিপণ ও প্রচারণা
মানুষজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় আইএস-এর দু-মুখী চাল৷ একদিকে এটা আয়ের একটা উৎস, অন্যদিকে এর মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রচারণার কাজও হয়ে যায়৷ কিছু ‘মূল্যবান’ জিম্মির শিরশ্ছেদ করে সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপুল সাফল্য পায় আইএস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সহানুভূতি দেখাতে চাঁদা
আইএস-এর প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ গোটা বিশ্বেই ছড়িয়ে রয়েছে৷ তারা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তহবিলে আর্থিক অবদান রাখে৷ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সূত্র অনুযায়ী সৌদি আরবে ২০১০ সাল থেকে ৮৬০ জন ব্যক্তিকে সন্ত্রাসের কাজে আর্থিক সাহায্য দেবার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ সেখানে ১০০ জনের শাস্তি হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/J. Greve
6 ছবি1 | 6
এদিকে পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘হাসনাত করিম পুলিশের নলেজে আছেন৷ প্রয়োজন পড়লে যে-কোনো সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নেয়া হবে৷''
তবে এর আগে সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার(মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন, ‘‘আমরা তাঁদের দু'জনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছি৷ কিন্তু এখন তাঁরা আর পুলিশের কাছে নেই৷ তাঁদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ এখন তাঁরা কোথায় আছে তা আমাদের জানা নাই৷''
হাসনাত করিমের পরিবার গত মাসের মাঝামাঝিতে জানায়, ‘‘জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর গত ২ জুলাই রাতে তাঁর সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়৷ এরপর আর দেখা হয়নি৷'' পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, হাসনাত তাঁদের হেফাজতে নেই৷ তখন একই ধরণের কথা বলা হয় তাহমিদের পরিবারের পক্ষ থেকেও৷
১ জুলাই অভিযান শুরুর আগে হাসনাত করিমকে সপরিবারে এবং তাহমিদকে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারির জিম্মিদশা থেকে ছেড়ে দেয় হামলাকারীরা৷ তাহমিদ আফতাব বহুমুখী ফার্মস-এর এমডি ফজলে রহিম শাহরিয়ারের ছেলে৷ হলি আর্টিজানের পাশে বসবাসরত এক কোরিয়ান নাগরিকের ধারণ করা ভিডিওতে তাঁদের মুক্তি দেয়ার দৃশ্য দেখা গেছে৷
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
ঢাকার গুলশানের আর্টিজান ক্যাফেতে দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার জিম্মি ঘটনার অবসান হলেও মানুষের মন থেকে আতঙ্ক যাচ্ছে না৷ এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই নিহত হয়েছে ২০ জিম্মি৷ নিহত হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তাও৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
ঘটনার শুরু
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু
পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ছ'জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বলেছেন, বাকি কয়েকজনকে হয়তো বাঁচানো যায়নি৷ এই জঙ্গি হামলায় জড়িত একজন ধরা পড়েছে বলেও শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters
এ যেন দুঃস্বপ্ন
কমান্ডো অভিযানে মুক্ত গুলশানের ক্যাফে থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের ১২ ঘণ্টার ‘দুঃস্বপ্ন’ কাটছে না৷ তাঁদের চোখে মুখে ক্লান্তি ও ভীতির ছাপ৷ তারা বলছিলেন, কয়েকজনের মৃতদেহ দেখেছেন, অনেক জায়গায় রক্তের ছাপ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য
তাঁরা বলছেন, জিম্মিকারীরা বাংলাদেশি মুসলমানদের সুরা পড়তে বলে৷ সুরা পড়তে পারার পর তাঁদেরকে রাতে খেতেও দেওয়া হয়৷ যাঁরা হিজাব পরা ছিল, তাঁদের বাড়তি খাতির করা হয়৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/S. K. Das
আইএস-এর দায় স্বীকার
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে৷ এই জঙ্গি দলের মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এ সব খবরে দাবি করা হয় যে, ‘তাদের’ এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪০ জন৷
ছবি: picture-alliance/abaca
কমান্ডো অভিযান
সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে রাতভর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়৷ ৮ টা ১৫ মিনিটে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ভবনের নিয়ন্ত্রণ ও আতঙ্কের অবসান
৮ টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা৷ গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে৷ ৯ টা ১৫ মিনিটে ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
8 ছবি1 | 8
দুই শীর্ষ জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা
গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড' তামিম চৌধুরী এবং সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হককে ধরিয়ে দিতে প্রত্যেকের জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ সদরদপ্তর৷ পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন৷
আইজিপি জানান, ‘‘সাবেক (মূল) জেএমবি গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলায় জড়িত ছিল না৷ মেজর জিয়া ও তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে জেএমবির একটি নতুন ভার্সন এই হামলা চালিয়েছে৷ তারাই এই হামলার মাস্টারমাইন্ড৷ এ হামলাগুলো ওই দুজনের নির্দেশনায় হয়েছে৷''