বার্লিন শারিটে হাসপাতালটি চালু করা হয় ১৭১০ সালে, প্লেগ রোগীদের জন্য৷ একশ বছর পর সেটি একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়৷ আর তখন থেকে হাসপাতালটিতে অসংখ্য রোগী এবং গবেষকের স্থান হয়েছে৷ চিকিৎসা ও দেহতত্ত্ব বিষয়ে নোবেল জয়ী জার্মানদের অর্ধেকর বেশি এই হাসপাতালে চাকুরি করেছেন৷

নাৎসি জমানায় এই হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক ঔষধ বিষয়ক অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷ সেসময় আত্মহত্যা করা ইহুদি ভুক্তভোগী এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ২০ জুলাইয়ের প্রতিবাদী যোদ্ধাদের মরদেহের ময়নাতদন্তের দায়িত্ব ছিল এই হাসপাতালের৷ আর পূর্ব বার্লিনে অবস্থিত হওয়ায় বিশ্বযুদ্ধের পর হাসপাতালটি তৎকালীন জিডিআর-এর আওতায় চলে যায়৷

২০১৫ সালে আফ্রিকায় ইবোলা ছড়িয়ে পড়লে বার্লিন শারিটে হাসপাতাল ইউরোপের এসংক্রান্ত চিকিৎসাকেন্দ্রে পরিনত হয়৷ সেসময় সিয়েরা লিওনে কাজ করা এক দক্ষিণ কোরীয় চিকিৎসক ইবোলায় আক্রান্ত হলে তাকে দক্ষিণ কোরিয়ার অনুরোধে শারিটে হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়৷ কোরীয় কর্তৃপক্ষ সেই ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখতে বার্লিনে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল৷

শারিটে হচ্ছে জার্মানির প্রথম হাসপাতাল যেখানে ২০২০ সালের মার্চে স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত এক করোনা রোগী ধরা পড়ে৷ সেসময় থেকে হাসপাতালটি আলোচনায় রয়েছে কেননা এটির ভাইরোলোজি ইন্সটিটিউটের প্রধান হচ্ছেন ক্রিস্টিয়ান ড্রসডেন, যিনি করোনা প্রতিরোধে জার্মানির নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন৷

আন্তর্জাতিভাবে আলোচিত বিভিন্ন রাজনৈতিক রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করেও হাসপাতালটি নানা সময় সংবাদ শিরোনামে স্থান করে নিয়েছে৷ ২০১৪ সালের মার্চে ইউক্রেনের বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ইউলিয়া টেমোশেঙ্কো এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন৷

রাশিয়ার আলোচিত ব্যান্ড পুসি রায়টের সহযোগী এবং সেদেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সমালোচক হিসেবে পরিচিত অ্যাক্টিভিস্ট পাইওটের ভেরজিলভকে ২০১৮ সালে মস্কো থেকে বার্লিন উড়িয়ে আনা হয়৷ মস্কোতে তার শরীরে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে ধারনা করা হয়েছিল৷ তাকে চিকিৎসা করানোর পর রুশ অ্যাক্টিভিস্টদের মাঝে শারিটে হাসপাতাল বাড়তি গুরুত্ব পেতে শুরু করে৷

পুটিন সমালোচক এবং সুপরিচিত রুশ ভিন্নমতাবলম্বী অ্যালিক্সি নাভালনির শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে সন্দেহ করার পর রাশিয়ার একটি হাসপাতাল থেকে বার্লিনের শারিটে হাসপাতালে উড়িয়ে আনা হয়৷ একটি এনজিও’র সহায়তায় তাকে বিশেষ বিমানে দ্রুত জার্মানি নিয়ে আসা হয়৷ আর এই প্রক্রিয়ায় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও সহায়তা করেছেন৷