ফুটবল সম্রাট পেলে জানালেন, তিনি শক্ত আছেন, তার কোলন ক্যানসারের চিকিৎসা নিয়ে তিনি প্রভূত আশাবাদী।
ছবি: Kirsty Wigglesworth/AP/picture alliance´
বিজ্ঞাপন
গত শনিবার ব্রাজিলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খবর করেছিল, ৮২ বছর বয়সি পেলের শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়েছে। তারপর সামাজিক মাধ্যমে পেলের পোস্ট আসে। ইনস্টাগ্রামে পেলে বলেছেন, ''বন্ধুরা, আমি সবাইকে শান্ত ও ইতিবাচক থাকার অনুরোধ করছি। আমি শক্ত আছি। আগের মতোই চিকিৎসার উপর পুরোপুরি ভরসা রাখছি। আমাকে যেভাবে যত্ন করা হচ্ছে, তার জন্য চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।''
পেলে জানিয়েছেন, ''ঈশ্বরের উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। আর আপনাদের কাছে ভালোবাসার বার্তা পেলেই আমার শক্তি বেড়ে যায়। আমি বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ম্যাচও দেখছি।''
হাসপাতালের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ''পেলের শরীরের অবস্থা স্থিতিশীল।তিনি চিকিৎসায় ভালো সাড়া দিচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় তার শারীরিক অবস্থার কোনো অবনতি হয়নি।'' পেলে সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ইসরায়েলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কাতার বিশ্বকাপে পেলের সুস্থতা কামনা করে বিশাল ব্যানার। ছবি: Kyodo/picture alliance
গত মঙ্গলবার তিনি তার ক্যানসার চিকিৎসার জন্য রুটিনমাফিক হাসপাতালে ভর্তি হন। ২০২১ সালে তার কোলন থেকে একটি টিউমার অস্ত্রোপচার করে বের করে দেয়া হয়।
রোববার ব্রাজিলের কোচ তিতে বলেছেন, পেলের সঙ্গে দেখা করতে গেলেই তিনি নার্ভাস হয়ে পড়েন। তিতের বক্তব্য, ''সম্ভবত এই একজন মানুষের সঙ্গে দেখা করতে গেলেই আমি কাঁপতে থাকি। আমি হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে বলছি, পেলের সঙ্গে দেখা কারাটা আমার কাছে সবচেয়ে আবেগের মুহূর্ত।''
তিতে বলেছেন, ''আমায় বলা হয়েছিল, যাও, পেলেকে জড়িয়ে ধরো। আমি থেমে যাই। কাঁপতে থাকি। আমার হাতের তালু ঘেমে ওঠে। হৃদযন্ত্রের গতি বেড়ে যায়। ওহ, আমি পেলেকে অভিবাদন করার সুযোগ পেয়েছি। হেলথ, পেলে হেলথ। আমরা তো শুধু এই কামনাই করতে পারি। আমরা সকলেই মনে করছি, এটা কঠিন মুহূর্ত।''
বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের সেরা একাদশ
এই একাদশ বাছাই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই৷ কয়েকবছর আগে বিশ্লেষক ও সাংবাদিকদের ভোটে নির্বাচিত এই একাদশ প্রকাশ করেছিল বিশ্বখ্যাত ফুটবল ম্যাগাজিন ওয়ার্ল্ড সকার৷ দেখুন কারা ছিলে ৪-৪-২ ফর্মেশন মাথায় রেখে গড়া সেই দলে৷
ছবি: AP
গোলরক্ষক: লেভ ইয়াসিন
ফুটবলে গোলরক্ষকের নাম নেয়া হবে আর লেভ ইয়াসিনের নাম আসবে না তা হতে পারে না৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই গোলরক্ষক খেলেছেন ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৬৬ বিশ্বকাপ৷ ১৯৫৬ সিডনি অলিম্পিকে জিতিয়েছিলেন দেশকে৷ ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েই একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/empics
লেফট ব্যাক: পাওলো মালদিনি
বিশ্ব ফুটবলের সেরা ডিফেন্ডার কে? অবলীলায় এই নামটি চলে আসবে৷ ভোটেও তাই হয়েছে৷ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বিগুণ ভোট পেয়েছেন তিনি৷ ১৯৯০, ১৯৯৪ ও ১৯৯৮-র বিশ্বকাপে খেলেছেন এই ইটালিয়ান ডিফেন্ডার৷ ১৯৯৪-এর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে ইটালির টাইব্রেকার হার একটুর জন্য তাঁকে শিরোপার নাগাল পেতে দেয়নি৷
ছবি: picture-alliance/AP-Photo/B. Luca
রাইট ব্যাক: কাফু
টানা তিন বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছেন তিনি৷ জিতেছেন ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপ৷ এর মধ্যে ২০০২-এ ব্রাজিল দলের নেতৃত্বে ছিলেন৷ ভোটে ডিফেন্ডারদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানটি ছিল কাফু’র৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার
ফুটবলের ইতিহাসে বেকেনবাওয়ারই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি কোচ, খেলোয়াড় বা অধিনায়ক থাকাকালে দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন৷ এই কিংবদন্তীর নেতৃত্বে জার্মানি বিশ্বকাপ জেতে ১৯৭৪ সালে৷ আর কোচ হিসেবে ডয়েচলান্ডকে আবারো শিরোপার স্বাদ দেন ১৯৯০-এ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: ববি মুর
ইংল্যান্ডের একমাত্র বিশ্বকাপটি (১৯৬৬) জয়ে নেতৃত্ব দেন এই কিংবদন্তী ডিফেন্ডার৷ তাঁর পায়ের দক্ষতা আর রক্ষণভাগে দেয়াল তৈরি করে প্রতিপক্ষকে কঠিন সময় উপহার দেয়ার কৌশল তাঁকে জায়গা করে দিয়েছে একাদশে৷ তবে ভোটের মাঠে এর জন্য তাঁকে ইটালির ফ্র্যাঙ্কো বারেৎসি’র সঙ্গে কঠিন লড়াই করতে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিডফিল্ডার: আলফ্রেডো ডি স্টেফানো
যে চারজন মিডফিল্ডার একাদশে জায়গা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আলফ্রেডো ডি স্টেফানো সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন৷ এই প্রতিভাবান ফুটবলারের বিশেষ দিক হলো তিনি যে কোনো পজিশনে খেলতে পারতেন৷ অসম্ভব স্ট্যামিনার অধিকারী ছিলেন৷ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিনি আর্জেন্টিনা ও স্পেনের হয়ে খেলেছেন৷ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেললেও মূল পর্বে খেলা হয়নি তাঁর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিডফিল্ডার: জিনেদিন জিদান
জিদানের পায়ের জাদু’র প্রশংসা করেন না এমন ফুটবলপ্রেমী পাওয়া মুশকিল৷ স্কিলের দিক থেকে অনেকেই তাঁকে মারাদোনা আর পেলের সঙ্গেই তুলনা করেন৷ ১৯৯৮-এর বিশ্বকাপ জয়ে ফ্রান্সের নায়ক ছিলেন তিনিই৷ এমনকি ২০০৬ বিশ্বকাপেও সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন৷ তবে সেবার ইটালির মাতেরাৎসিকে মাথা দিয়ে গুঁতো মেরে অনেক সমালোচনার ভাগীদারও হন৷
ছবি: picture-alliance/DPPI
মিডফিল্ডার: ইয়োহান ক্রুইফ
হল্যান্ডের এই কীর্তিমান ফুটবলার যে একাদশে থাকবেন তা জানাই ছিল৷ টোটাল ফুটবলের একরকম জনকই তিনি৷ তাঁর কৌশলের কাছে প্রতিপক্ষরা যেন দাঁড়াতেই পারতেন না৷ তাঁর নৈপূণ্যে ১৯৭৪ বিশ্বকাপে পূর্ব জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় হল্যান্ড৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পশ্চিম জার্মানির কাছে ধরাশায়ী হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
মিডফিল্ডার: ডিয়েগো মারাদোনা
ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিতর্ক হলো, সর্বকালের সেরা কে? পেলে, না মারাদোনা? এই ফুটবল জাদুকরের জাদু অবশ্য ১৯৮২-তেই দেখেছিল বিশ্ব৷ কিন্তু সেবার তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি৷ এরপর প্রায় একক নৈপূণ্যেই আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছিলেন ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ৷ ১৯৯০ সালেও ফাইনালে খেলেছে তাঁর দল৷ তাঁর ‘ঈশ্বরের হাত’-এর গল্প কার না জানা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্ট্রাইকার: পেলে
সর্বকালের সেরা বিতর্কের আরেক নায়ক পেলে৷ ‘কালোমানিক’ নামেও পরিচিত৷৷ ব্রাজিল ও ফুটবল উভয়কেই মহিমান্বিত করেছেন এই কিংবদন্তী৷ ১৯৬২ বিশ্বকাপে তিনি দ্বিতীয় ম্যাচে ইনজুরির শিকার হয়ে আর খেলতে পারেননি৷ তবে সেই বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল৷ পরের বিশ্বকাপে ব্রাজিল অবশ্য আগেই বাদ পড়ে যায়৷ প্রচুর ফাউলের শিকার হন পেলে৷ তবে ১৯৭০-এর বিশ্বকাপে চরম নৈপূণ্য দেখিয়ে জিতে নেন শিরোপা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্ট্রাইকার: লিওনেল মেসি
একাদশে এ সময়ের একমাত্র প্রতিনিধি হলেন লিওনেল মেসি৷ যদিও এখনো বিশ্বকাপে মেসির জাদুর প্রতিফলন তেমন একটা ঘটেনি, তারপরও তাঁর নৈপুণ্য তাঁকে সেরা একাদশে জায়গা করে দিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, পেলে ও মেসির মাঝে ব্যবধান গড়েছে মাত্র ১০টি ভোট৷
ছবি: Reuters/A. Raggio
11 ছবি1 | 11
শনিবার সাবেক ও বর্তমান ফুটবলাররা পেলেকে বার্তা দিয়ে বলেছেন, তিনি যেন দ্রুত ভালো হয়ে ওঠেন। ফ্রান্সের ফুটবলার এমবাপে তার সমর্থকদের বলেছেন, ''ফুটবলের রাজার জন্য প্রার্থনা করুন।'' ব্রাজিলের ভিনিসিয়াস জুনিয়র পেলের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছেন, তিনি যেন শক্ত থাকেন। পেলের ক্লাব স্যান্টোস এফসি বলেছে, ফুটবল-সম্রাটের পাশে আছে গোটা বিশ্ব। আর ফিফা বলেছে, ''দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।''