ফের বিতর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হাসপাতাল থেকে বেরিয়েই খুলে ফেললেন মাস্ক। চিকিৎসকরা বলছেন এখনো তাঁর শরীরে করোনার সংক্রমণ আছে।
বিজ্ঞাপন
চিকিৎসকরা বলছেন তিনি এখনো সুস্থ নন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এখনো রয়েছে তাঁর শরীরে। ট্রাম্প বলছেন, তিনি সুস্থ। হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে সোমবারই তিনি পৌঁছে গিয়েছেন হোয়াইট হাউস। সেখানে ঢুকেই খুলে ফেলেছেন মাস্ক। ভিডিও বার্তায় দেশের মানুষকে বলেছেন, করোনা-আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ফিরে যেতে হবে স্বাভাবিক জীবনে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এটাই তাঁর উপলব্ধি। স্বাভাবিক ভাবেই ট্রাম্পের এই বক্তব্য এবং মাস্ক খুলে ফেলা নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে ভোট আবহের অ্যামেরিকায়।
করোনায় কাবু সরকার প্রধানরা
বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেক ব্যক্তিই করোনার কাছে হেরে গেছেন৷ এই তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে৷ সবশেষ এই দলে যোগ দিয়েছেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷
ছবি: Olivier Matthys/AP Photo/picture alliance
সোফি গ্রেগরি ট্রুডো
গত মার্চে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরি ট্রুডো৷ এরপর ১৪ দিনের কোয়ারান্টিনে ছিলেন জাস্টিন ট্রুডো নিজেও৷ তবে তিনি বা তিন সন্তানের কেউ করোনা সংক্রমিত হননি৷
ছবি: Reuters/P. Doyle
প্রিন্স দ্বিতীয় আলবার্ট
মোনাকোর প্রিন্স দ্বিতীয় আলবার্ট রাজ পরিবার এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি৷ মার্চে তার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/MediaPunch/D. Van Tine
বরিস জনসন
শুরুতে করোনাকে পাত্তা না দিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ প্রধান বিশ্ব নেতাদের মধ্যে তিনিই প্রথম করোনায় আক্রান্ত হন৷ শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে এপ্রিলের শুরুতে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়৷
ছবি: Photoshot/picture-alliance
মিখাইল মিশোস্টেন
এপ্রিলের শেষে করোনা শনাক্ত হয়েছিলেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশোস্টেন৷ ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে৷ তার অবর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন আন্দ্রেই বেলোসোভ৷
ছবি: Reuters/Sputnik/E. Shtukina
নুনো গোমেজ নাবিয়াম
এপ্রিলেই করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন গিনি-বিসাউ এর প্রধানমন্ত্রী নুনো গোমেজ নাবিয়াম৷ তার মন্ত্রীসভার তিন সদস্যেরও কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিল সেসময়৷
ছবি: DW/B. Darame
হুয়ান অর্লান্দো হার্নান্দেজ
জুনে নিউমোনিয়ার লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট হুয়ান অর্লান্দো হার্নান্দেজ৷ পরবর্তীতে করোনা শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়৷ করোনার টিকায় বিশ্বের সবার সমান অধিকার নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন তিনি৷
ছবি: AFP/O. Sierra
নিকোল পাশেনিয়ান
পুরো পরিবারসহ জুনে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশেনিয়ান৷ তবে আক্রান্তের খবর প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যেই ভাইরাসমুক্ত হয়েছেন বলে ফেসবুকে ঘোষণা দেন তিনি ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Druzhinin
জেইর বলসোনারো
শুরুর দিকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো করোনা সংকটকে ‘উদ্ভট কল্পনা’ এবং সাধারণ ফ্লু হিসেবে অভিহিত করেছেন৷ পরবর্তীতে দেশটি মারাত্মকভাবে করোনা আক্রান্ত হয়৷ জুলাইতে এসে বলসোনারো নিজেই করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন৷
ছবি: Youtube/TV BrasilGov
আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো
করোনা প্রতিরোধে যেসব দেশের সরকার তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়নি তার একটি বেলারুশ৷ দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো করোনা মহামারিকে মানসিক সমস্যা হিসেবে অভিহিত করেছিলেন৷ করোনা প্রতিরোধে ভদকা পানেরও পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি৷ জুলাইর শেষ দিকে নিজে করোনা আক্রান্ত বলে ঘোষণা দেন লুকাশেঙ্কো৷ জানান, কোভিড পজিটিভ হলেও তার তেমন কোন লক্ষণ নেই৷
ছবি: picture-alliance/Russian Look/V. Listsyn
আলেখান্দো গিয়ামাত্তে
সেপ্টেম্বরে গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্ট আলেখান্দো গিয়ামাত্তের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়৷ এরপর গোটা মন্ত্রীসভার সদস্যদের করোনা পরীক্ষার নির্দেশ দেন তিনি৷ যার মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রীরও করোনা ধরা পড়ে৷
ছবি: Johan Ordonez/AFP
ডনাল্ড ট্রাম্প
দুই অক্টোবর নিজের ও ফাস্ট লেডি মেলানিয়ার করোনা পজেটিভের খবর দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে৷ শুরু থেকেই করোনা ভাইরাসের হুমকিকে খাটো করে দেখানোর জন্য সমালোচিত হয়ে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: Carlos Barria/Reuters
এমানুয়েল মাক্রোঁ
১৭ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে৷ তার কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে এ খবর নিশ্চিত করা হয়৷ তাদের তথ্য অনুযায়ী, মাক্রোঁ সাত দিনের আইসোলেশনে রয়েছেন৷ তার বেশ কিছু বিদেশ সফর ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে৷ লেবানন সফরও রয়েছে বাতিল হয়ে যাওয়া সফরের তালিকায়৷
ছবি: Olivier Matthys/AP Photo/picture alliance
12 ছবি1 | 12
শুক্রবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন। এতটাই যে তাঁকে সেনা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল। সেখানে তাঁকে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে। তবে রোববারেই ট্রাম্প জানিয়ে দেন, তিনি ভালো আছেন। শুধু তাই নয়, করোনা নিয়েই সমর্থকদের হাত নাড়ার জন্য হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েছিলেন তিনি। বিরোধীদের বক্তব্য, ট্রাম্প গাড়িতে একা ছিলেন না। তাঁর দেহরক্ষী, নিরাপত্তা পারিষদ সকলকেই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বেরতে হয়েছিল। করোনা আক্রান্ত একজন মানুষের সঙ্গে এ ভাবে ঘোরা একেবারেই ঠিক কাজ নয়। ট্রাম্প অবশ্য কোনও বিতর্ককেই পাত্তা দেননি। রোববারের পর সোমবারই তিনি হাসপাতাল থেকে ছুটির ব্যবস্থা করেন। সেনা হাসপাতাল থেকে হোয়াইট হাউস ফিরেছেন এয়ার ফোর্স ওয়ান হেলিকপ্টারে। হোয়াইট হাউসে ঢুকেই মাস্ক খুলে ফেলে ফোটোগ্রাফারদের সামনে পোজ দিয়েছেন তিনি। যা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বহু নাগরিক। বিরোধীরাও প্রেসিডেন্টের নিন্দা করেছেন। ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন টুইট করে বলেছেন, 'অ্যামেরিকায় এই মুহূর্তে দুই লাখের উপর মানুষ করোনায় মারা গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের উচিত মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা মানুষকে বোঝানো। তিনি ঠিক উল্টোটাই করলেন।'
প্রেসিডেন্টের চিকিৎসকরাও জানিয়েছেন, ট্রাম্প এখনো সুস্থ নন। যে কোনও সময় তাঁর শরীর খারাপ হতে পারে। এবং সব চেয়ে বড় কথা, তিনি এখনও নেগেটিভ হননি। তাঁর শরীরে এখনও করোনার সংক্রমণ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়ালে সমস্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হয়েছে।
এমনিতেই ট্রাম্পের করোনা ধরা পড়ার পরে হোয়াইট হাউসের একাধিক অফিসার, কর্মীর শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আরও মানুষের শরীরে করোনা পড়বে। সোমবারও ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারির করোনা ধরা পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের আরও সচেতন হওয়া উচিত বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।