সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের সমাবেশে পুলিশ বাধা দেয়ায় জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন তারা৷ সেখানে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘‘এই দিন দিন নয়, আরো দিন আসবে৷ হাসিনাকেও একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে৷’’
বিজ্ঞাপন
সারা দেশে গুম-খুন-অপহরণের প্রতিবাদে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে শনিবার সকালে সমাবেশ ডাকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম৷ সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার৷
তবে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্টের সব প্রবেশ পথে অবস্থান নেয় পুলিশ৷ সমাবেশে অংশ নিতে সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অন্তত ১৬ জন আইনজীবীকে আটক করে পুলিশ৷ এ পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের একটি দল হাইকোর্ট মাজারের দিকের ফটকের সামনে অবস্থান নেয়৷ বেলা ১২টা পর্যন্ত আইনজীবীরা সেখানে অবস্থানের পর জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন৷ আর সেখানেই শেষ পর্যন্ত বক্তৃতা দেন খালেদা জিয়া৷
অন্যরকম নির্বাচন
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৫৩টি আসনে একক প্রার্থী থাকায় রবিবার অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণ হয়নি৷ নির্বাচনের দিনের কিছু ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল করতে সরকার ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করে৷ এজন্য ৫৯ জেলায় বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে চার লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়৷ বাকি পাঁচটি জেলায় নির্বাচনের প্রয়োজন পড়েনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
অলস সময়
ভোটার না থাকায় ঢাকার মিরপুরের হাজী আশ্রাফ আলী হাইস্কুলে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অলসভাবে সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোটারের জন্য অপেক্ষা
ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমি ভোটকেন্দ্রের ছবি এটি৷ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে ভোটারদের জন্য বাঁশ ও দড়ি দিয়ে নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে৷ কিন্তু ভোটার নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
এখানেও একই অবস্থা
ছবিটি হারম্যান মাইনার কলেজ কেন্দ্রের৷ পাশাপাশি স্থাপিত কয়েকটি বুথ যেন খাঁ-খাঁ করছে৷ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ, জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে জানান, ভোটার উপস্থিতি কম হবে এটাই স্বাভাবিক৷ কারণ এটি একটি ভিন্ন ধরনের নির্বাচন৷ একতরফার সঙ্গে আছে ব্যাপক সহিংসতা এবং বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিড়ম্বনার শিকার
নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম খুঁজে না পেয়ে অনেক ভোটার ফিরে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ তবে কেউ কেউ অবশ্য কষ্টটা শিকার করেই ভোট দিয়েছেন৷ ছবিতে মিরপুরের একটি কেন্দ্রে ভোটারদের সিরিয়াল নম্বর খুঁজতে দেখা যাচ্ছে৷ তাঁদের সহায়তা করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
ভোটাধিকার প্রয়োগ
ভোট দিচ্ছেন একজন ভোটার৷ অবশ্য তাঁর মতো ভাগ্যবান হতে পারেননি দেশের মোট ভোটারের শতকার ৫২ জন৷ অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এসব ভোটারের ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল না৷ এই কারণে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীও ভোট দিতে পারেননি৷
ছবি: DW/M. Mamun
নারী ভোটার
ঢাকার একটি কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগের অপেক্ষায় কয়েকজন নারী ভোটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
উৎসাহে কমতি নেই
আব্দুল হাকিম নামে ৮৯ বছরের এই ভোটার দুই ব্যক্তির সহায়তায় ঢাকার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সেনা সদস্যদের পাহারা
দুজন ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছেন৷ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সেখানে ছিলেন সেনা সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
9 ছবি1 | 9
সুপ্রিম কোর্টের রেজিষ্ট্রার এ কে এম শামসুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শনিবারে সমাবেশের জন্য কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি৷ পুলিশের রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, সমাবেশের অনুমতি না থাকায় পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে৷
তবে জবাবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে কোনো সমাবেশ করতে হলে ‘বার' থেকে অনুমতি নিতে হয়৷ বারের সভাপতি হিসেবে আমি এর মালিক৷ আমি তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছি৷ ইতোপূর্বেও এখানে বহু সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যে আইনের শাসন নেই তার প্রমাণ হচ্ছে আইনজীবী সমিতির সমাবেশে বাধা দেয়া৷ আমি বিশ্ব বিবেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি - দেখুন, বাংলাদেশে আইনের শাসন কোথায়? এদেশে গুম, খুন চলছে৷ আইনের শাসন নেই৷ এর থেকে রক্ষা করুন৷''
প্রতিবাদ সমাবেশে খালেদা
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রেসক্লাবের প্রতিবাদ সমাবেশে সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘‘এত বাড়াবাড়ি ভালো না৷ বেশি বাড়লে আল্লাহরও একটা বিচার আছে৷ এই দিন দিন নয়, আরো দিন আসবে৷ হাসিনাকেও একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে৷''
র্যাব – বিতর্কিত এক বিশেষ বাহিনী
শুরুটা হয়েছিল ২০০৪ সালে৷ সেসময় বাঘা বাঘা জঙ্গিদের কুপোকাত করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় ব়্যাব৷ কিন্তু অসংখ্য ক্রসফায়ার, অপহরণ, হত্যার দায়ে এখন সমালোচিত এই ‘এলিট ফোর্স’৷ র্যাব নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP
‘এলিট ফোর্স’
বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব নামক ‘এলিট ফোর্স’-এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে৷ এই বাহিনীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার একটি এলিট ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করে৷’’ তবে এই বাহিনী এখন তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সমন্বিত বাহিনী
বাংলাদেশ পুলিশ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে র্যাব গঠন করা হয়৷ এই বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাস প্রতিরোধ, মাদক চোরাচালান রোধ, দ্রুত অভিযান পরিচালনা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রদান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জঙ্গি তৎপরতা দমন
শুরুর দিকের ব়্যাবের কার্যক্রম অবশ্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷ বিশেষ করে ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে বাংলাদেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা উগ্র ইসলামি জঙ্গি তৎপরতা দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে র্যাব৷
ছবি: AP
জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় ২০০৫ সালে একসঙ্গে বোমা ফাটিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা জেএমবির শীর্ষ নেতাদের আটক ব়্যাবের উল্লেখযোগ্য সাফল্য৷ ২০০৬ সালের ২ মার্চ শায়খ আব্দুর রহমান (ছবিতে) এবং ৬ মার্চ সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় ব়্যাব৷ একাজে অবশ্য পুলিশ বাহিনীও তাদের সহায়তা করেছে৷
ছবি: DW
ভুক্তভোগী লিমন
২০১১ সালে লিমন হোসেন নামক এক ১৬ বছর বয়সি কিশোরের পায়ে গুলি করে এক ব়্যাব সদস্য৷ গুলিতে গুরুতর আহত লিমনের বাম পা উরুর নীচ থেকে কেটে ফেলতে হয়৷ এই ঘটনায় ব়্যাবের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ তবে এখনো সুবিচার পায়নি লিমন৷ উল্টো বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেছেন তিনি৷
ছবি: DW
‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’
জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য দেখালেও ক্রসফায়ারের নামে অসংখ্য ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব়্যাবের বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বাহিনী ‘সিসটেমেটিক’ উপায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷
ছবি: DW
‘ক্রসফায়ার’
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ব়্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ২৪ জন৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে কমপক্ষে সাতশো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ব়্যাব জড়িত ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলোচিত সাত খুন
২০১৪ সালের মে মাসে ব়্যাবের বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকা ঘুসের বিনিময়ে সাত ব্যক্তিকে অপহরণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে৷ নারায়ণগঞ্জে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন ব়্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ৷ এই ঘটনার পর ব়্যাবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আবারো বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
ছবি: DW
প্রতিষ্ঠাতাই করছেন বিলুপ্তির দাবি
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করেছেন৷ অথচ তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই ‘এলিট ফোর্স’৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিলুপ্তির দাবি নাকচ
বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক স্তর থেকে ব়্যাবকে বিলুপ্তির দাবি উঠলেও বর্তমান সরকার সেধরনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ বরং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ব়্যাব বিলুপ্তির দাবি নাকচ করে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘র্যাবের কোনো সদস্য আইন ভঙ্গ করলে তাদের চিহ্নিত করে বিচারিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP
10 ছবি1 | 10
তিনি বলেন, ‘‘এই অবৈধ সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই৷ এজন্য তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশও করতে দেয় না, তারা সমাবেশকে ভয় পায়৷ এই সরকার অবৈধভাবে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছে৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভোটে নির্বাচিত৷''
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ বেশি বাড়ার কারণে এখন নিজেরাই নিজেদের মারছে৷ তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না৷ অবৈধ সরকারের অবৈধ মন্ত্রীরা যেসব কথা বলছে তা গণতন্ত্রের ভাষা নয়৷''
খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সুনাম-সুখ্যাতি বলতে আজ আর কিছু নেই৷ সারা দেশে গুম আর খুন৷ চার দিকে কান্নার রোল৷ মা-বোনদের এই কান্না বৃথা যাবে না৷''
উল্লেখ্য সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ঢুকতে পুলিশের বাধার কারণে খালেদা জিয়া সেদিকে না গিয়ে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে প্রেসক্লাবে এসে অবস্থান নেন৷ আর তারপরই প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী নেতারা৷